The Chaser (2008)

6 48
Avatar for rdredoy131260
3 years ago

ধরুন কেউ একজন আপনার সম্মুখে বসে আছে৷ তার হাতে মাঝারি সাইজের একটি দুমুখো সরু হাতুড়ি; যার একপাশ তীক্ষ্ণ ধারালো তো অপর পাশ ভোঁতা আকৃতির। উপবিষ্ট ব্যাক্তি হাতুড়ি হাতে বসে আছে কারন কিছুসময় পর সে আপনার মাথায় আঘাত হানতে যাচ্ছে৷ হাতুড়ির উভয়দিক ব্যাবহার করে সে আপনার মাথার খুলি ভেঙেচুরে একাকার করে দিবে। খুলির থেকে ফিনকি দিয়ে বেরুনো রক্ত তার মুখাবয়ব রাঙানো আগ পর্যন্ত সে একের পর এক আঘাত করেই যাবে৷ ক্ষান্ত হবেনা। এতেই সে তার আনন্দ খুঁজে পাবে। দমে রাখা অযাচিত তীব্র কামনারা পূর্নতা পাবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো; গোটা ব্যাপারটা আপনার তাকিয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার থাকবেনা৷ কারন আপনার হাত পা বাঁধা৷ মুখে এক টুকরো কাপড় গুঁজা৷ এমতবস্থায় সম্মুখে বসে থাকা ঘাতক আপনাকে জিজ্ঞাসা করছে; 'তোমার বেঁচে থেকে কি লাভ'? 'কেন বাঁচতে চাও এই ক্ষয়ে যাওয়া সমাজের মাঝে?' তখন আপনার অনুভুতি কেমন হবে? ঘাতকের হাত থেকে বাঁচতে ঠিক কি উত্তরের আশ্রয় নিবেন বা কি পন্থা অবলম্বন করবেন? আর এরকম সজ্ঞানে সচক্ষে নিজ পটল তোলার সময় আপনিই বা প্রশ্নের উত্তর খোঁজার মতন মানসিক অবস্থায় থাকবেন? বাস্তব জীবনের এরকম এক নরপিশাচের গল্পকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে দ্য চেজার। নব্বই দশকের কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার ইউ ইউন-চুলের জীবনী থেকে ইন্সপায়ার্ড হয়ে পরিচালক না জিন-হুন এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন। তার ডিরেকশনাল ডেবিউ হিসেবে প্রথম অবস্থায় বেশ ভালোভাবে উতরে গেছেন এখানে তিনি।

মুভির শুরুতে দেখা যায় একজন এক্স ডিটেকটিভ হুকার সার্ভিসের ব্যবসা করে আসছে বছর কয়েক ধরে৷ কিছুদিন যাবত তার ব্যবসায় অর্থনৈতিক মন্দা দেখা যাচ্ছে৷ তার কারণ তার ব্যাবসা চালিয়ে নেয়া হুকাররা একেএকে পালিয়ে যাচ্ছে সব৷ অন্যদিকে যখন তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের ব্যাবসা রমরমা তখন এদিকে সে তার ব্যাবসা চালিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে। সে তার আন্ডারে কর্মরত মেয়েদের ধরে রাখতে টাকার পরিমাণ দিগুণ করে দিচ্ছে তারপরও মেয়েরা সব পালিয়ে যাচ্ছে একে একে৷ কিন্তু কেনো এমনটা করছে তারা? সে তো তাদের দেখভালের কোনো কমতি রাখছেনা। তো পালিয়ে যাবার কারণ কি বর্তায়! একপর্যায়ে তার সন্দেহপ্রবন মন নাড়াচাড়া দিয়ে ওঠে। ঘটনাক্রমে একরাতে একজন গ্রাহকের কল আসে তার কাছে৷ মেয়ে লাগবে৷ অবশিষ্ট একটি মাত্র মেয়ে আছে তার কাছে৷ অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও সে মেয়েটিকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে পাঠায় গ্রাহকের ঠিকানায়৷ অার ঠিক তখন থেকেই শুরু হয় থ্রিলের চাকা ঘুরা যেটা আপনাকে মুভি শেষ হতে হতে কয়েক ঘাটের পানি খাইয়ে ছাড়বে।

টু বি অনেস্ট, এই মুভি দেখে কোরিয়ানদের আরেকবার সালাম ঠুকলাম। আপনেরা পারেনও ভাই। হিংস্রতা, বর্বরতা এতো কাঁচাভাবে পর্দায় আর কাউকে দেখাতে দেখিনি। পারফেক্ট বিল্ড আপ আর পারফেক্ট পে অফ। প্রথম এক ঘন্টায় যত নোংরামি আর অমানুষিকতা দেখে চোখ সরিয়ে নিতে গিয়ে মনে মনে ভাববেন; বাস্তবের নরপিশাচগুলো বুঝি এধরণের অমানবিক অত্যাচারের হালটানে ভিক্টিমদের ওপর! শেষ ৫৫ মিনিট তাই কড়ায় গন্ডায় শোধ হতে দেখেও ইচ্ছা হবে না বলতে, ভাই অনেক হইছে এবার থামেন আপনারা। তার কারণ ধরনটা আগেই দাঁড় করানো হয়ে গেছে। রাকঢাক যখন হয়নি, হবেও না। রক্ত ঝড়বে, কুমড়ো ফাঁটবে, সাথে কপালে চোখও উঠবে।

'সাইকোপ্যাথ' চরিত্রে হা জুং-উ তার চরিত্রটা কে অন্য পর্যায়ে নিয়ে ছেড়েছেন তিনি। হাল ছাড়বার পাত্র নন তিনি। নিজ চরিত্র যথাযথভাবে ফুটিয়ে তুলতে নিজেকে বাউন্ডারির শেষ রেখা পর্যন্ত পুশ করেন তাতে যতো কিছুই বিসর্জন দেয়া লাগুক না কেনো। এই জন্যই বোধহয় লোকটা কে এতো ভালো লাগে আমার। আগে বেশকিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করে থাকলেও দ্য চেজারে সাইকোপ্যাথের চরিত্রে অভিনয় করার পর তার জনপ্রিয়তা পান। বড়ো বড়ো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর নজরে আসেন। তার স্বভাবসুলভ মেথড অভিনয়ের কারণে কিছুকিছু টেইকের টেকনিক্যাল দূর্বল দিকগুলো দৃষ্টি গোচর হয়েও হয়নি।

'সাবেক পুলিশ ডিটেকটিভ' চরিত্রে কিম ইউন-সিউক। এই ভদ্র লোকের পারফরম্যান্স কে কিভাবে ব্যাক্ত করবো আমি! মুভির কিছুকিছু জায়গায় এতোটা নিখুঁত অভিনয় করেছেন যে, তার অভিনয় দেখে আমিই স্নায়ুতে চাপ অনুভব করা শুরু করে দিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সিকুয়েন্সগুলো তে ফেসের ওপর একটা অ্যাংগ্রি টেনশন ভাব টেনে ছোটো ছোটো চোখদুটো দিয়ে নিবিড় চাহনি রীতিমতো কলিজায় কামড় বসিয়ে দেবার যোগাড়! বা ওপেনিং সিনে সিগারেট ফুঁকেফুঁকে তাচ্ছিল্যের সাথে ঠোঁটের কোণে ক্ষণিকের মুচকি হাসি সিকুয়েন্সটার প্রতি যেকারো দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে যথেষ্ট। তার এলোমেলো চুলের সাথে ভবঘুরে ঠান্ডা চাহনি যেকারো রক্তহিম করে দেবার সামর্থ্য রাখে। বিশেষ করে ক্লাইম্যাক্সে তার ও সাইকোপ্যাথের ফাইট সিনটা আমার দেখা কোরিয়ান ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম হ্যান্ড টু হ্যান্ড কমবাটগুলোর একটা। এই ফাইনাল সিকুয়েন্স শুট করতে গিয়ে তাদের উভয়ের কেউ ইনজুরড হয়ে থাকলেও অবাক হবো না আমি।

পরিচালক না জিন-হুনের প্রথম মুভি। টুকটাক শর্টফিল্ম ও স্ক্রিন রাইটিং দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও 'দ্য চেজার'র মাধ্যমে বড়পর্দায় অভিষেক করেন। বলাবাহুল্য যে, এই মুভিতে মুভির প্রটাগোনিস্ট ও অ্যান্টগোনিস্টের কেমিস্ট্রি না জিন-হুনের এতো ভালো লেগেছিলো যে তিনি তার পরবর্তী মুভির জন্য তাদের দুইজন কে অর্থাৎ, কিম ইউন-সিউক ও হা জুন-উ কে কাস্ট করে ফেলেন। এই ট্রিয়োর কম্বিনেশনে দ্য চেজারের দুইবছর পর অর্থাৎ, ২০১০ সালে এসে আমরা পাই আরেকটা ক্রাইম থ্রিলার 'দ্য ইয়ালো সি'। না দেখে থাকলে তালিকাভুক্ত করে নিন। এই মুভি মিস করা মানে থ্রিলারের স্বাদ চেখেও না চাখা।

পরিচালক পুরো মুভিটি শুট করেছেন রাফ এন্ড টাফ মুডে। দর্শকদের টানটান উত্তেজনার মাঝে রেখে গল্প বলেছেন। গল্পে বিন্দুমাত্র ছাড় দেননি। আর মুভিতে ব্যাবহৃত ডার্ক কালার গ্রেডিং যা কিনা দারুণ অস্বস্তিকর একটি শীতল অনুভূতি জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। অত্যন্ত শৈল্পিক সিনেমাটোগ্রাফির কারণে ভায়োলেন্সের সিনেমা হওয়া সত্ত্বেও সিনেমাটি চোখে খানিকটা প্রশান্তির দোলা দিয়ে যাবে। সিনেমাটিতে ডিটেইলের দিকে ভালো নজর দেয়া হয়েছে। বেশ কিছু টপশট ব্যবহারের কারণে আশেপাশের বিষয়বস্তু বুঝতে সুবিধে হয়েছে।

১২৫ মিনিটের মুভিটি তে প্রধান দুই চরিত্রের ওপর ফোকাস করা ছাড়াও মেয়ের প্রতি মায়ের ভালোবাসার এক ইমোশনাল ন্যারেটিভ দেখানোর পাশাপাশি কাঠামোর দিক থেকে বেশ শক্তপোক্ত লেগেছে মুভিটি কে আমার। আর শেষের দিকে একটু বেশি টেনেছে মনে হয়েছে। কিছুটা প্রেডিক্টেবল ছিলো, কিন্তু প্রচ্চুর ব্লাডি ফানের দেখা মিলবে। সবশেষে সমাজের ঘৃণ্য বাস্তবতার নগ্ন প্রতিচ্ছবি এমনভাবে ফুটে ওঠে, যা সুস্থ স্বাভাবিক লোকজন দেখলে একটু হলেও প্রতিশোধের জ্বলুনি অনুভব করবে। আর হ্যাঁ, মুভির প্রথম ও শেষ অ্যাক্টে এমন কিছু দৃশ্য আছে, যা আপনার চোখ ছানাবড়া করে দিবে।

IMDb Rating : 7.8/10🎬 The Chaser (2008)

ধরুন কেউ একজন আপনার সম্মুখে বসে আছে৷ তার হাতে মাঝারি সাইজের একটি দুমুখো সরু হাতুড়ি; যার একপাশ তীক্ষ্ণ ধারালো তো অপর পাশ ভোঁতা আকৃতির। উপবিষ্ট ব্যাক্তি হাতুড়ি হাতে বসে আছে কারন কিছুসময় পর সে আপনার মাথায় আঘাত হানতে যাচ্ছে৷ হাতুড়ির উভয়দিক ব্যাবহার করে সে আপনার মাথার খুলি ভেঙেচুরে একাকার করে দিবে। খুলির থেকে ফিনকি দিয়ে বেরুনো রক্ত তার মুখাবয়ব রাঙানো আগ পর্যন্ত সে একের পর এক আঘাত করেই যাবে৷ ক্ষান্ত হবেনা। এতেই সে তার আনন্দ খুঁজে পাবে। দমে রাখা অযাচিত তীব্র কামনারা পূর্নতা পাবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো; গোটা ব্যাপারটা আপনার তাকিয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার থাকবেনা৷ কারন আপনার হাত পা বাঁধা৷ মুখে এক টুকরো কাপড় গুঁজা৷ এমতবস্থায় সম্মুখে বসে থাকা ঘাতক আপনাকে জিজ্ঞাসা করছে; 'তোমার বেঁচে থেকে কি লাভ'? 'কেন বাঁচতে চাও এই ক্ষয়ে যাওয়া সমাজের মাঝে?' তখন আপনার অনুভুতি কেমন হবে? ঘাতকের হাত থেকে বাঁচতে ঠিক কি উত্তরের আশ্রয় নিবেন বা কি পন্থা অবলম্বন করবেন? আর এরকম সজ্ঞানে সচক্ষে নিজ পটল তোলার সময় আপনিই বা প্রশ্নের উত্তর খোঁজার মতন মানসিক অবস্থায় থাকবেন? বাস্তব জীবনের এরকম এক নরপিশাচের গল্পকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে দ্য চেজার। নব্বই দশকের কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার ইউ ইউন-চুলের জীবনী থেকে ইন্সপায়ার্ড হয়ে পরিচালক না জিন-হুন এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন। তার ডিরেকশনাল ডেবিউ হিসেবে প্রথম অবস্থায় বেশ ভালোভাবে উতরে গেছেন এখানে তিনি।

মুভির শুরুতে দেখা যায় একজন এক্স ডিটেকটিভ হুকার সার্ভিসের ব্যবসা করে আসছে বছর কয়েক ধরে৷ কিছুদিন যাবত তার ব্যবসায় অর্থনৈতিক মন্দা দেখা যাচ্ছে৷ তার কারণ তার ব্যাবসা চালিয়ে নেয়া হুকাররা একেএকে পালিয়ে যাচ্ছে সব৷ অন্যদিকে যখন তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের ব্যাবসা রমরমা তখন এদিকে সে তার ব্যাবসা চালিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে। সে তার আন্ডারে কর্মরত মেয়েদের ধরে রাখতে টাকার পরিমাণ দিগুণ করে দিচ্ছে তারপরও মেয়েরা সব পালিয়ে যাচ্ছে একে একে৷ কিন্তু কেনো এমনটা করছে তারা? সে তো তাদের দেখভালের কোনো কমতি রাখছেনা। তো পালিয়ে যাবার কারণ কি বর্তায়! একপর্যায়ে তার সন্দেহপ্রবন মন নাড়াচাড়া দিয়ে ওঠে। ঘটনাক্রমে একরাতে একজন গ্রাহকের কল আসে তার কাছে৷ মেয়ে লাগবে৷ অবশিষ্ট একটি মাত্র মেয়ে আছে তার কাছে৷ অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও সে মেয়েটিকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে পাঠায় গ্রাহকের ঠিকানায়৷ অার ঠিক তখন থেকেই শুরু হয় থ্রিলের চাকা ঘুরা যেটা আপনাকে মুভি শেষ হতে হতে কয়েক ঘাটের পানি খাইয়ে ছাড়বে।

টু বি অনেস্ট, এই মুভি দেখে কোরিয়ানদের আরেকবার সালাম ঠুকলাম। আপনেরা পারেনও ভাই। হিংস্রতা, বর্বরতা এতো কাঁচাভাবে পর্দায় আর কাউকে দেখাতে দেখিনি। পারফেক্ট বিল্ড আপ আর পারফেক্ট পে অফ। প্রথম এক ঘন্টায় যত নোংরামি আর অমানুষিকতা দেখে চোখ সরিয়ে নিতে গিয়ে মনে মনে ভাববেন; বাস্তবের নরপিশাচগুলো বুঝি এধরণের অমানবিক অত্যাচারের হালটানে ভিক্টিমদের ওপর! শেষ ৫৫ মিনিট তাই কড়ায় গন্ডায় শোধ হতে দেখেও ইচ্ছা হবে না বলতে, ভাই অনেক হইছে এবার থামেন আপনারা। তার কারণ ধরনটা আগেই দাঁড় করানো হয়ে গেছে। রাকঢাক যখন হয়নি, হবেও না। রক্ত ঝড়বে, কুমড়ো ফাঁটবে, সাথে কপালে চোখও উঠবে।

'সাইকোপ্যাথ' চরিত্রে হা জুং-উ তার চরিত্রটা কে অন্য পর্যায়ে নিয়ে ছেড়েছেন তিনি। হাল ছাড়বার পাত্র নন তিনি। নিজ চরিত্র যথাযথভাবে ফুটিয়ে তুলতে নিজেকে বাউন্ডারির শেষ রেখা পর্যন্ত পুশ করেন তাতে যতো কিছুই বিসর্জন দেয়া লাগুক না কেনো। এই জন্যই বোধহয় লোকটা কে এতো ভালো লাগে আমার। আগে বেশকিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করে থাকলেও দ্য চেজারে সাইকোপ্যাথের চরিত্রে অভিনয় করার পর তার জনপ্রিয়তা পান। বড়ো বড়ো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর নজরে আসেন। তার স্বভাবসুলভ মেথড অভিনয়ের কারণে কিছুকিছু টেইকের টেকনিক্যাল দূর্বল দিকগুলো দৃষ্টি গোচর হয়েও হয়নি।

'সাবেক পুলিশ ডিটেকটিভ' চরিত্রে কিম ইউন-সিউক। এই ভদ্র লোকের পারফরম্যান্স কে কিভাবে ব্যাক্ত করবো আমি! মুভির কিছুকিছু জায়গায় এতোটা নিখুঁত অভিনয় করেছেন যে, তার অভিনয় দেখে আমিই স্নায়ুতে চাপ অনুভব করা শুরু করে দিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সিকুয়েন্সগুলো তে ফেসের ওপর একটা অ্যাংগ্রি টেনশন ভাব টেনে ছোটো ছোটো চোখদুটো দিয়ে নিবিড় চাহনি রীতিমতো কলিজায় কামড় বসিয়ে দেবার যোগাড়! বা ওপেনিং সিনে সিগারেট ফুঁকেফুঁকে তাচ্ছিল্যের সাথে ঠোঁটের কোণে ক্ষণিকের মুচকি হাসি সিকুয়েন্সটার প্রতি যেকারো দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে যথেষ্ট। তার এলোমেলো চুলের সাথে ভবঘুরে ঠান্ডা চাহনি যেকারো রক্তহিম করে দেবার সামর্থ্য রাখে। বিশেষ করে ক্লাইম্যাক্সে তার ও সাইকোপ্যাথের ফাইট সিনটা আমার দেখা কোরিয়ান ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম হ্যান্ড টু হ্যান্ড কমবাটগুলোর একটা। এই ফাইনাল সিকুয়েন্স শুট করতে গিয়ে তাদের উভয়ের কেউ ইনজুরড হয়ে থাকলেও অবাক হবো না আমি।

পরিচালক না জিন-হুনের প্রথম মুভি। টুকটাক শর্টফিল্ম ও স্ক্রিন রাইটিং দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও 'দ্য চেজার'র মাধ্যমে বড়পর্দায় অভিষেক করেন। বলাবাহুল্য যে, এই মুভিতে মুভির প্রটাগোনিস্ট ও অ্যান্টগোনিস্টের কেমিস্ট্রি না জিন-হুনের এতো ভালো লেগেছিলো যে তিনি তার পরবর্তী মুভির জন্য তাদের দুইজন কে অর্থাৎ, কিম ইউন-সিউক ও হা জুন-উ কে কাস্ট করে ফেলেন। এই ট্রিয়োর কম্বিনেশনে দ্য চেজারের দুইবছর পর অর্থাৎ, ২০১০ সালে এসে আমরা পাই আরেকটা ক্রাইম থ্রিলার 'দ্য ইয়ালো সি'। না দেখে থাকলে তালিকাভুক্ত করে নিন। এই মুভি মিস করা মানে থ্রিলারের স্বাদ চেখেও না চাখা।

পরিচালক পুরো মুভিটি শুট করেছেন রাফ এন্ড টাফ মুডে। দর্শকদের টানটান উত্তেজনার মাঝে রেখে গল্প বলেছেন। গল্পে বিন্দুমাত্র ছাড় দেননি। আর মুভিতে ব্যাবহৃত ডার্ক কালার গ্রেডিং যা কিনা দারুণ অস্বস্তিকর একটি শীতল অনুভূতি জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। অত্যন্ত শৈল্পিক সিনেমাটোগ্রাফির কারণে ভায়োলেন্সের সিনেমা হওয়া সত্ত্বেও সিনেমাটি চোখে খানিকটা প্রশান্তির দোলা দিয়ে যাবে। সিনেমাটিতে ডিটেইলের দিকে ভালো নজর দেয়া হয়েছে। বেশ কিছু টপশট ব্যবহারের কারণে আশেপাশের বিষয়বস্তু বুঝতে সুবিধে হয়েছে।

১২৫ মিনিটের মুভিটি তে প্রধান দুই চরিত্রের ওপর ফোকাস করা ছাড়াও মেয়ের প্রতি মায়ের ভালোবাসার এক ইমোশনাল ন্যারেটিভ দেখানোর পাশাপাশি কাঠামোর দিক থেকে বেশ শক্তপোক্ত লেগেছে মুভিটি কে আমার। আর শেষের দিকে একটু বেশি টেনেছে মনে হয়েছে। কিছুটা প্রেডিক্টেবল ছিলো, কিন্তু প্রচ্চুর ব্লাডি ফানের দেখা মিলবে। সবশেষে সমাজের ঘৃণ্য বাস্তবতার নগ্ন প্রতিচ্ছবি এমনভাবে ফুটে ওঠে, যা সুস্থ স্বাভাবিক লোকজন দেখলে একটু হলেও প্রতিশোধের জ্বলুনি অনুভব করবে। আর হ্যাঁ, মুভির প্রথম ও শেষ অ্যাক্টে এমন কিছু দৃশ্য আছে, যা আপনার চোখ ছানাবড়া করে দিবে।

IMDb Rating : 7.8/10🎬 The Chaser (2008)

ধরুন কেউ একজন আপনার সম্মুখে বসে আছে৷ তার হাতে মাঝারি সাইজের একটি দুমুখো সরু হাতুড়ি; যার একপাশ তীক্ষ্ণ ধারালো তো অপর পাশ ভোঁতা আকৃতির। উপবিষ্ট ব্যাক্তি হাতুড়ি হাতে বসে আছে কারন কিছুসময় পর সে আপনার মাথায় আঘাত হানতে যাচ্ছে৷ হাতুড়ির উভয়দিক ব্যাবহার করে সে আপনার মাথার খুলি ভেঙেচুরে একাকার করে দিবে। খুলির থেকে ফিনকি দিয়ে বেরুনো রক্ত তার মুখাবয়ব রাঙানো আগ পর্যন্ত সে একের পর এক আঘাত করেই যাবে৷ ক্ষান্ত হবেনা। এতেই সে তার আনন্দ খুঁজে পাবে। দমে রাখা অযাচিত তীব্র কামনারা পূর্নতা পাবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো; গোটা ব্যাপারটা আপনার তাকিয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার থাকবেনা৷ কারন আপনার হাত পা বাঁধা৷ মুখে এক টুকরো কাপড় গুঁজা৷ এমতবস্থায় সম্মুখে বসে থাকা ঘাতক আপনাকে জিজ্ঞাসা করছে; 'তোমার বেঁচে থেকে কি লাভ'? 'কেন বাঁচতে চাও এই ক্ষয়ে যাওয়া সমাজের মাঝে?' তখন আপনার অনুভুতি কেমন হবে? ঘাতকের হাত থেকে বাঁচতে ঠিক কি উত্তরের আশ্রয় নিবেন বা কি পন্থা অবলম্বন করবেন? আর এরকম সজ্ঞানে সচক্ষে নিজ পটল তোলার সময় আপনিই বা প্রশ্নের উত্তর খোঁজার মতন মানসিক অবস্থায় থাকবেন? বাস্তব জীবনের এরকম এক নরপিশাচের গল্পকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে দ্য চেজার। নব্বই দশকের কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার ইউ ইউন-চুলের জীবনী থেকে ইন্সপায়ার্ড হয়ে পরিচালক না জিন-হুন এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন। তার ডিরেকশনাল ডেবিউ হিসেবে প্রথম অবস্থায় বেশ ভালোভাবে উতরে গেছেন এখানে তিনি।

মুভির শুরুতে দেখা যায় একজন এক্স ডিটেকটিভ হুকার সার্ভিসের ব্যবসা করে আসছে বছর কয়েক ধরে৷ কিছুদিন যাবত তার ব্যবসায় অর্থনৈতিক মন্দা দেখা যাচ্ছে৷ তার কারণ তার ব্যাবসা চালিয়ে নেয়া হুকাররা একেএকে পালিয়ে যাচ্ছে সব৷ অন্যদিকে যখন তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের ব্যাবসা রমরমা তখন এদিকে সে তার ব্যাবসা চালিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে। সে তার আন্ডারে কর্মরত মেয়েদের ধরে রাখতে টাকার পরিমাণ দিগুণ করে দিচ্ছে তারপরও মেয়েরা সব পালিয়ে যাচ্ছে একে একে৷ কিন্তু কেনো এমনটা করছে তারা? সে তো তাদের দেখভালের কোনো কমতি রাখছেনা। তো পালিয়ে যাবার কারণ কি বর্তায়! একপর্যায়ে তার সন্দেহপ্রবন মন নাড়াচাড়া দিয়ে ওঠে। ঘটনাক্রমে একরাতে একজন গ্রাহকের কল আসে তার কাছে৷ মেয়ে লাগবে৷ অবশিষ্ট একটি মাত্র মেয়ে আছে তার কাছে৷ অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও সে মেয়েটিকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে পাঠায় গ্রাহকের ঠিকানায়৷ অার ঠিক তখন থেকেই শুরু হয় থ্রিলের চাকা ঘুরা যেটা আপনাকে মুভি শেষ হতে হতে কয়েক ঘাটের পানি খাইয়ে ছাড়বে।

টু বি অনেস্ট, এই মুভি দেখে কোরিয়ানদের আরেকবার সালাম ঠুকলাম। আপনেরা পারেনও ভাই। হিংস্রতা, বর্বরতা এতো কাঁচাভাবে পর্দায় আর কাউকে দেখাতে দেখিনি। পারফেক্ট বিল্ড আপ আর পারফেক্ট পে অফ। প্রথম এক ঘন্টায় যত নোংরামি আর অমানুষিকতা দেখে চোখ সরিয়ে নিতে গিয়ে মনে মনে ভাববেন; বাস্তবের নরপিশাচগুলো বুঝি এধরণের অমানবিক অত্যাচারের হালটানে ভিক্টিমদের ওপর! শেষ ৫৫ মিনিট তাই কড়ায় গন্ডায় শোধ হতে দেখেও ইচ্ছা হবে না বলতে, ভাই অনেক হইছে এবার থামেন আপনারা। তার কারণ ধরনটা আগেই দাঁড় করানো হয়ে গেছে। রাকঢাক যখন হয়নি, হবেও না। রক্ত ঝড়বে, কুমড়ো ফাঁটবে, সাথে কপালে চোখও উঠবে।

'সাইকোপ্যাথ' চরিত্রে হা জুং-উ তার চরিত্রটা কে অন্য পর্যায়ে নিয়ে ছেড়েছেন তিনি। হাল ছাড়বার পাত্র নন তিনি। নিজ চরিত্র যথাযথভাবে ফুটিয়ে তুলতে নিজেকে বাউন্ডারির শেষ রেখা পর্যন্ত পুশ করেন তাতে যতো কিছুই বিসর্জন দেয়া লাগুক না কেনো। এই জন্যই বোধহয় লোকটা কে এতো ভালো লাগে আমার। আগে বেশকিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করে থাকলেও দ্য চেজারে সাইকোপ্যাথের চরিত্রে অভিনয় করার পর তার জনপ্রিয়তা পান। বড়ো বড়ো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর নজরে আসেন। তার স্বভাবসুলভ মেথড অভিনয়ের কারণে কিছুকিছু টেইকের টেকনিক্যাল দূর্বল দিকগুলো দৃষ্টি গোচর হয়েও হয়নি।

'সাবেক পুলিশ ডিটেকটিভ' চরিত্রে কিম ইউন-সিউক। এই ভদ্র লোকের পারফরম্যান্স কে কিভাবে ব্যাক্ত করবো আমি! মুভির কিছুকিছু জায়গায় এতোটা নিখুঁত অভিনয় করেছেন যে, তার অভিনয় দেখে আমিই স্নায়ুতে চাপ অনুভব করা শুরু করে দিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সিকুয়েন্সগুলো তে ফেসের ওপর একটা অ্যাংগ্রি টেনশন ভাব টেনে ছোটো ছোটো চোখদুটো দিয়ে নিবিড় চাহনি রীতিমতো কলিজায় কামড় বসিয়ে দেবার যোগাড়! বা ওপেনিং সিনে সিগারেট ফুঁকেফুঁকে তাচ্ছিল্যের সাথে ঠোঁটের কোণে ক্ষণিকের মুচকি হাসি সিকুয়েন্সটার প্রতি যেকারো দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে যথেষ্ট। তার এলোমেলো চুলের সাথে ভবঘুরে ঠান্ডা চাহনি যেকারো রক্তহিম করে দেবার সামর্থ্য রাখে। বিশেষ করে ক্লাইম্যাক্সে তার ও সাইকোপ্যাথের ফাইট সিনটা আমার দেখা কোরিয়ান ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম হ্যান্ড টু হ্যান্ড কমবাটগুলোর একটা। এই ফাইনাল সিকুয়েন্স শুট করতে গিয়ে তাদের উভয়ের কেউ ইনজুরড হয়ে থাকলেও অবাক হবো না আমি।

পরিচালক না জিন-হুনের প্রথম মুভি। টুকটাক শর্টফিল্ম ও স্ক্রিন রাইটিং দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও 'দ্য চেজার'র মাধ্যমে বড়পর্দায় অভিষেক করেন। বলাবাহুল্য যে, এই মুভিতে মুভির প্রটাগোনিস্ট ও অ্যান্টগোনিস্টের কেমিস্ট্রি না জিন-হুনের এতো ভালো লেগেছিলো যে তিনি তার পরবর্তী মুভির জন্য তাদের দুইজন কে অর্থাৎ, কিম ইউন-সিউক ও হা জুন-উ কে কাস্ট করে ফেলেন। এই ট্রিয়োর কম্বিনেশনে দ্য চেজারের দুইবছর পর অর্থাৎ, ২০১০ সালে এসে আমরা পাই আরেকটা ক্রাইম থ্রিলার 'দ্য ইয়ালো সি'। না দেখে থাকলে তালিকাভুক্ত করে নিন। এই মুভি মিস করা মানে থ্রিলারের স্বাদ চেখেও না চাখা।

পরিচালক পুরো মুভিটি শুট করেছেন রাফ এন্ড টাফ মুডে। দর্শকদের টানটান উত্তেজনার মাঝে রেখে গল্প বলেছেন। গল্পে বিন্দুমাত্র ছাড় দেননি। আর মুভিতে ব্যাবহৃত ডার্ক কালার গ্রেডিং যা কিনা দারুণ অস্বস্তিকর একটি শীতল অনুভূতি জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। অত্যন্ত শৈল্পিক সিনেমাটোগ্রাফির কারণে ভায়োলেন্সের সিনেমা হওয়া সত্ত্বেও সিনেমাটি চোখে খানিকটা প্রশান্তির দোলা দিয়ে যাবে। সিনেমাটিতে ডিটেইলের দিকে ভালো নজর দেয়া হয়েছে। বেশ কিছু টপশট ব্যবহারের কারণে আশেপাশের বিষয়বস্তু বুঝতে সুবিধে হয়েছে।

১২৫ মিনিটের মুভিটি তে প্রধান দুই চরিত্রের ওপর ফোকাস করা ছাড়াও মেয়ের প্রতি মায়ের ভালোবাসার এক ইমোশনাল ন্যারেটিভ দেখানোর পাশাপাশি কাঠামোর দিক থেকে বেশ শক্তপোক্ত লেগেছে মুভিটি কে আমার। আর শেষের দিকে একটু বেশি টেনেছে মনে হয়েছে। কিছুটা প্রেডিক্টেবল ছিলো, কিন্তু প্রচ্চুর ব্লাডি ফানের দেখা মিলবে। সবশেষে সমাজের ঘৃণ্য বাস্তবতার নগ্ন প্রতিচ্ছবি এমনভাবে ফুটে ওঠে, যা সুস্থ স্বাভাবিক লোকজন দেখলে একটু হলেও প্রতিশোধের জ্বলুনি অনুভব করবে। আর হ্যাঁ, মুভির প্রথম ও শেষ অ্যাক্টে এমন কিছু দৃশ্য আছে, যা আপনার চোখ ছানাবড়া করে দিবে।

IMDb Rating : 7.8/10

6
$ 0.00
Sponsors of rdredoy131260
empty
empty
empty
Avatar for rdredoy131260
3 years ago

Comments

It was perfect review

$ 0.00
3 years ago

Such a great explanation of the movie. Well written

$ 0.00
3 years ago

nice

$ 0.00
3 years ago

really awesome article

$ 0.00
3 years ago

Well written dear

$ 0.00
3 years ago