Going to share review for another masterpiece.
- সাতটি মহাপাপ এবং মৃত্যুর জন্য সাতটি ভয়ানক উপায়!
Seven
ধরুন এমন একটি শহর আছে, যেখানে সারাক্ষণ খুনাখুনি, মারামারি চলতে থাকে। যেদিকেই তাকাবেন শুধু হিংসা বিদ্বেষ, লোভ- লালসা, পাপ আর পাপ দিয়ে ঘেরা চারপাশ। একজনের প্রতি আরেকজন কোন সহানুভূতি নেই, সমাজের প্রতি মানুষের কোন দায়িত্ববোধ নেই। আপনি কি সেই শহরে থাকতে চাইবেন? না, এরকম শহরে আমরা কেউই থাকতে চাইবোনা।
সারাক্ষণ বৃষ্টি হয়, আকাশ মেঘলা থাকে। রাস্তার পাশে ময়লা আর প্রতিটি মানুষের চেহারায় এক বিষাদগ্রস্ত ভাব, শহুরে ক্ষয়ে দরিদ্রতা ছেয়ে গিয়েছে চারপাশে। এমন শহরে যদি হুট করে এক সিরিয়াল কিলারের আবির্ভাব হয়, পাপের শহরে সে তার খুনের উদ্দেশ্য হিসেবে "সাতটি মহাপাপকে" লক্ষ্যবস্তু হিসেবে স্থির করে নেয়, তাহলে পরিস্থিতি কেমন হবে একটু ভেবে দেখুন! একে তো বিষন্নতায় ভরা একটি শহর, তার উপরে হঠাৎ করে সিরিয়াল কিলারের আবির্ভাব! ব্যাপারটা আসলেই অনেক জঘন্য হয়ে দাঁড়ায়।
সেভেন মুভিটি তৈরি হয়েছে এমন একটি জঘন্য শহরের গল্পকে ঘিরেই, যেখানে হঠাৎ করে একজন সিরিয়াল কিলারের আবির্ভাব হয়। যার প্রতিটি খুন একটির থেকে আরেকটি কুৎসিত হতে থাকে। তাকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব দেওয়া হয় দুইজন গোয়েন্দাকে। যাদের মধ্যে একজন শহরে নতুন, আরেকজন অবসর নিয়ে বিষণ্ণতার এই শহর ছেড়ে চলে যেতে চাইছেন।
মুভির প্লট এতই চমৎকার যে, পরবর্তীতে এর প্রতিটি রহস্য সমাধান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক মিস্টেরি থ্রিলার মুভি তৈরি হয়েছে। ভালো ভালো থ্রিলার মুভির মতো এত বেশী প্রশংসা কুড়াতে না পারলেও তখনকার সময়ের থ্রিলার জন্রাকে অনেক দিক থেকেই অনুপ্রাণিত এবং বিস্তৃত করে এই মুভি। গল্পের নিপুণতা, অভিনয়ে দক্ষতা আর টানটান উত্তেজনা মিলে সেভেন নিজের জায়গা থেকে একটি আইকনিক ফিল্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শশাঙ্ক রেডেম্পশনের পর মরগান ফ্রিম্যানের করা প্রথম মুভি সেভেন। অস্কারের নমিনেশন পাওয়ার পরের বছর অভিনয়ের মান যেন তার আরো উন্নত হলো। তার অভিনয় আর চরিত্রটি দর্শকদের মনে শহরের প্রতি একটি ঘৃণ্য ভাব এনে দেয়।
গম্ভীর ভাব ফুটিয়ে তোলার জন্য সারা মুভি জুড়েই ডার্ক টোন ব্যবহার করা হয়েছে, যার কারনে হলিউডে নামকরা ডার্ক মুভির তালিকায় এটি একটি। তবে ডার্ক থিমের কারণে মুভিটির সৌন্দর্য যেনো আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার হিসেবে একটি মুভির মধ্যে যা থাকা দরকার, তার সবটুকুই খুঁজে পাওয়া যায় সেভেন মুভিটিতে। আলোআধারি মিলে অন্ধকার ভাবগুলো মনের ভেতর জটিল একটি ভয় পুষতে থাকে।
গল্প যতো গভীরে যাবে, পরিস্থিতি ততোই জমজমাট হতে থাকে। সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার মুভিগুলোর মধ্যে একটি সমস্যা থাকে, গল্পের শুরুতে যেমন প্রচণ্ড থ্রিল থাকে গল্পের শেষে তা কমে যায়। কিন্তু এই মুভির আসল চমক এর শেষ দিকে, বরং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই থ্রিল ধরে রাখে এই মুভি। আপনি জানেন সাতটি মহাপাপ কি, কিন্তু আপনি দেখতে চাইবেন এর জন্য খুনগুলো কিভাবে হচ্ছে। খুনিকে কিভাবে খুঁজে বের করা যায়, এই ব্যাপারে গোয়েন্দার সাথে আপনার মাথাও দৌড়াবে। আপনি শুরু থেকেই কিছুটা অনুমান করতে পারবেন যে সামনে কি হতে চলেছে, কখনো আপনার অনুমান মিলবে আবার কখনো মিলবেনা; ব্রেক না নিয়ে কাহিনীতে সামনে কি হবে শুধু তাই দেখতে চাইবেন।
আমার দেখা সেরা সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার মুভির মধ্যে সেভেনকে সামনে রাখবো। গল্প আর অভিনয় ছাড়া পরিবেশের ছমছমে ভাবটাও সারা মুহূর্ত জুড়ে এক অজানা ভয়ের মধ্যে রাখে। ভয় বলা যাবেনা, কারন গল্প যতো খারাপের দিকেই যাক সামনে কি হয় শুধু তা দেখতে ইচ্ছে করছিলো। থ্রিলার প্রেমী হলে এই মুভি মাস্ট ওয়াচ।
অন্ধকারাচ্ছন্ন একটি জগৎে ঘুরে আসার সাহস নিয়ে সময় করে দেখতে বসে যান সর্বকালের সেরা সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারের একটি। সময় খারাপ যাবেনা, কিন্তু মুভি শেষ হলে আপনার মাথায় বিভিন্ন জটিলতা ঘুড়ে বেড়াবে। হয়তো আপনার দেখা সেরা থ্রিলার ফিল্ম হবেনা, তবে আপনার দেখা ভালো মুভিগুলোর মধ্যে অন্যতম হবে।
তবে একটি প্রশ্ন থেকেই যায়, যতবড় পাপই হোক; পাপীকে শাস্তি দিতে নিজের হাতে পাপ তুলে নেওয়া কি ঠিক? তাছাড়া কারো মৃত্যুদণ্ড শাস্তি দেওয়ার অধিকার কি আসলেই আমাদের আছে- নাকি নেই তাও ভাবার বিষয়। দুর্বোধ্য এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজা কঠিন হলেও পাপ কাজ এড়িয়ে চলাতো সহজ। এরপরেও দৈনন্দিন জীবনে বর্জনীয়া কাজসমূহ বর্জন করে দুর্যোগকালীন এই সময়ে সাবধানে থাকুন, যতসম্ভব ঘরে থাকার চেষ্টা করুন এবং নিষ্পাপ মানুষদেরক বেঁচে থাকার সুযোগ করে দিন।
অনেক কথাই হলো। এবার আর দেরি না করে বের হয়ে যান; নিষ্ঠুর এক সিরিয়াল কিলারকে খুঁজতে, হ্যাপি ওয়াচিং ❤
Hmm...happy watching.
God bless us.
Nice article