শাড়ি না পরতে পারলে পরার কি দরকার তাই তো বুঝি না, এখন খোলা শাড়ি নিয়ে র্যাম্প ওয়াক করবে নাকি?
সাফওয়ানের কথায় মেজাজ তুঙ্গে উঠে যায় আয়াতের। এই লোকের সমস্যা কি এইটা আজ অবদি বুঝতে পারে না আয়াতের। যখনই কোনো একটা অপ্রীতিকর সিচ্যুয়েশনে পরবে সেইখানে লোকটা হাজির হবে নয়তো উনার সামনেই কোনো না কোনো অপ্রীতিকর সিচ্যুয়েশন ঘটবে। একে হিলে বেঁধে শাড়ির কুচি খুলে গেছে, উপর থেকে এনার বাক্যির শেষ নেই। দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো,
– সাফওয়ান ভাই আসলে কি বলুন তো, আমি বিয়ে থেকে পালানোর সময় ভাবি নি আমাকে ওয়ার্ল্ড রেস চ্যাম্পিয়নশিপে নিজের নামের পতাকা উড়াতে হবে!! আগে জানলে শাড়ি না উসাইন বোল্টের কস্টিউম পড়ে আসতাম।
– মুখ তো কেঁচির মতো চলে, তা তোমার বাবার সামনে মুখটা চালালে হয়তো এভাবে পালাতে হতো না!
– চালিয়েছিলাম, বিনিময়ে বা গালে থাপ্পড় আর সাত দিন রুমে আটকে রেখেছিলো।
– তোমার শাড়ির কুঁচি ঠিক হইলে কি আমরা যাইতে পারি?? তোমার বাবার বডিগার্ডরা আসলো বলে।- মধুরেণ সমাপয়েৎ
আয়াত আর কোনো কথা বললো না, বলে না কথায় কথা বাড়ে। আর এই লোকটার সাথে কথা বলতে গেলে শুধু যে কথায় কথা বাড়বে সেটা নয়, সকাল হয়ে যাবে অথচ তর্ক শেষ হবে না। শেষমেশ দেখা যাবে বাবার বডিগার্ডরা সত্যি চলে আসবে। এখন তাড়াতাড়ি কোনো ট্রান্সপোর্ট ধরে কাজী অফিস যেতে হবে। এক ঘন্টা আগেও আয়াত একরকম ভেবেছিলো কিন্তু পুরো উল্টো কাহিনী ঘটে গেলো, যাকে দু চোখে সহ্য হয় না তার সাথেই এখন পালাতে হচ্ছে।
..
এক ঘন্টা আগে,
ক্রমাগত ইফাদকে ফোন দিয়ে যাচ্ছে আয়াত। ফোন ধরা তো দূর, খালি ওয়েটিং বলে যাচ্ছে ফোন অপারেটরের মহিলাটি। হাতে সময় খুব কম, আর চার ঘন্টা পর আয়াতের বিয়ে। একটা বলদের সাথে, রামিম সাহেব অর্থাৎ আয়াতের বাবার বন্ধুর ছেলের সাথে। অনেকবার রামিম সাহেবকে বুঝাতে চেয়েছে আয়াত কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয় নি। আয়াত রামিম সাহেবকে জানিয়ে দিয়েছে, বিয়ে করলে ইফাদকেই করবে। ও বাদে কাউকে সে বিয়ে করবে না। কিন্তু রামিম সাহেবের এক কথা, উনি বেকার ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিবেন না। দরকার হলে ড্রাইভারের সাথে বিয়ে দিতেও রাজী। ইফাদ গ্রাডুয়েশনের পর বেকার বসে আছে তিন বছর, সারাদিন ক্লাব, পাবে বন্ধুদের সাথে টাকা উড়ানোই ইফাদের একমাত্র কাজ। তার কথা তার বাবার এতো টাকা যে সে সারাজীবন বেকার থাকলেও কিচ্ছু যায় আসবে না। আয়াত এবং ইফাদের রিলেশন প্রায় চার বছর হতে চললো, যতবার ই তাকে বিয়ের কথা বলে সে এড়িয়ে যায়। আয়াত তাকে বলতে বলতে মুখ ব্যাথা করে ফেলেছে অথচ তার কোনো হেলদুল নেই। আজ আয়াতের বিয়ে অথচ ছেলেটার কোনো পাত্তাই নেই। টানা বিশ বার ফোন দেওয়ার পর শেষমেশ ফোনটা তুললো ইফাদ, বিরক্তির সাথে বললো,
– কি ব্যাপার? এতো ফোন দিতে হয়? কথা বলছিলাম তো বেবি।- মধুরেণ সমাপয়েৎ
– রাখো তোমার বেবি, ইফাদ আজকে আমার বিয়ে। তোমার কি কিচ্ছু যায় আসে না? আমি সেদিন ই তোমাকে বলে দিয়েছিলাম বাবা সিরিয়াস। তুমি যদি কিছু না করো এবার সত্যি ই আমাকে হারিয়ে ফেলবে। তুমি কি সত্যি আমাকে ভালোবাসো? ইফাদ এখনো যদি কিছু না করো আর চার ঘন্টা পরে আমার বিয়ে হয়ে যাবে। তখন চাইলেও কিছু করার থাকবে না।
– তুমি এটা এখন বলছো? তুমি ই তো আমার সাথে এতোদিন যোগাযোগ করো নি
– আজ সাত দিন পর আমি আমার ফোন পেয়েছি, তুমিতো একবারও আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করো নি। এখন তোমাকে ডিসিশন নিতে হবে হয় আমাকে এখান থেকে পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করবে নয়তো আমি ওই বলদকেই বিয়ে করে ফেলবো।
– ঠিক আছে, আমি ব্যবস্থা করছি।
ফোনটা রেখে কান্নায় ভেঙে পড়লো আয়াত। ভালোবাসা কতোটুকু অসহায় করে তুলতে পারে তার প্রমাণ হাতেনাতে পাচ্ছে। দরজায় কড়া নাড়লে, চোখ মুখ মুছে দরজা খুলে দেয় আয়াত। দরজা খুলতেই তানি ভেতরে ঢুকে। তানি আয়াতের বেস্টি, তানিকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে চোখে পানি ছেড়ে দিলো আয়াত।
– তানি, আমি কি করবো?
– আমি তোকে অনেক আগ থেকেই বলেছি এই ইফাদ ছেলেটা তোকে ঝুলিয়ে দিবে, দেখলি তো?
– ও বললো ব্যবস্থা করছে।
– এখন রেডি হয়ে নে, আমাদের পার্লার যেতে হবে। আন্টি আমাকে পাঠালেন।- মধুরেণ সমাপয়েৎ
– দোস্ত, আমি ওই বলদাকে বিয়ে করবো না। westbangla.com
– বারবার বলদা বলদা কেনো বলছিস, ছেলেটার নাম হাবিব। স্ট্যাবলিসড ভদ্র ছেলে, ইফাদের চেয়ে হাজারো গুন বেটার।
– আমি পারবো না হাবিব টাবিবকে বিয়ে করতে, ইফাদ একটা ব্যবস্থা ঠিক করবে দেখিস।
– দেখা যাক। এখন চল- মধুরেণ সমাপয়েৎ
আধা ঘন্টা পর,
পার্লারে যাবার পর ইফাদের ফোন আসে আয়াতের মোবাইলে। ফোন রিসিভ করতেই ইফাদ জানায়,
– আয়াত, আমি সাফওয়ানকে পাঠাচ্ছি। এখন কোথায় আছো?
– তুমি আসবে না?
– আমি একেবারে কাজী অফিসে যাবো। ওখানে আমার শ্বশুরের কিছু স্বাস্থ্যবান বডিগার্ড আছে। সাফওয়ানকে সন্দেহ করবে না।
– আচ্ছা, আমি গুলশান একের এক পার্লারে আছি। আমি ঠিকানা এস.এম.এস করে দিচ্ছি।
মিনিট পনেরো পর সাফওয়ান এসে হাজির পার্লারের গেটে। বন্ধুত্বের খাতিরে এই জটের মধ্যে সাফওয়ানকেও জড়াতে হলো। আয়াত আর সাফওয়ানের মাঝে ছত্রিশের আকড়া, যদি আয়াত বলে ডান তো সাফওয়ানকে বাম বলতেই হবে। আয়াত যতটা এলোমেলো সাফওয়ান ততোটা গুছানো। যতবার তারা মুখোমুখি হয়েছে ততোবার ই একটা ওয়াল্ড ওয়ারের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অবশেষে তানির সাহায্যে কোনোমতে সাফওয়ান আয়াতকে নিয়ে পালাতে সক্ষম হয়। এখন আসি বর্তমানে।
বর্তমান,
রাত ৮.৩০টা,
মিরপুর ২ এর কাজী অফিসের সামনে বিগত এক ঘন্টা যাবৎ দাঁড়িয়ে আছে সাফওয়ান এবং আয়াত। গুলশান থেকে সরাসরি মিরপুর চলে আসে তারা, যাতে বডিগার্ডদের হাতে না পরতে হয়। অথচ এখনো ইফাদের কোনো খোঁজ নেই। বাহিরের বেঞ্চিতে বসে ঝিম ধরে বসে আসে আয়াত। সাফওয়ান ক্রমান্বয়ে ফোন করে চলেছে ইফাদকে অথচ তার ফোন বেজেই চলেছে, কেউ রিসিভ করছে না। একটা বড় নিশ্বাস ফেলে আয়াতের পাশে গিয়ে বসে সাফওয়ান। মেয়েটার মুখটা চুপসে গেছে, যেখানে কিছুক্ষণ আগেও ঝগড়া যাচ্ছিলো অথচ এখন চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে। সারাদিন কিছু পেটে পড়েছে কিনা সন্দেহ। সাফওয়ান পাশে বসতেই বলে উঠে,
– সাফওয়ান ভাই, আমি কি কোনো ভুল করে ফেলেছি?
– কেনো বলোতো?
– এই দেখুন না, বাবা-মার সম্মান জ্বলাঞ্জলি দিয়ে ভালোবাসাকে পেতে চলেছিলাম। কি হলো? সেও আমাকে মাঝ রাস্তায় একা করে দিলো
– আচ্ছা আমিতো কথা বলেছি, উনারা আর আধা ঘন্টা খোলা রাখবেন বলেছেন। আর না হলে কাল বিয়েটা করে নিও। ইফাদকে আমি চিনি, ও ঠিক চলে আসবে।
– শান্তনা দিচ্ছেন?
– উহু, ও আর যাই করুক তোমাকে ঠকাবে না।- মধুরেণ সমাপয়েৎ
সাফওয়ানের কথায় মলিন হাসি হাসে আয়াত। মেয়েটার হাসিটা দেখে সাফওয়ানের হৃদয় কিঞ্চিত কম্পন দিয়ে উঠে। পুনরায় ইফাদকে ফোন দিতে থাকে সাফওয়ান।
রাত ১১টা,
ইফাদের ফোন বন্ধ আসছে, কাজী অফিস বন্ধ। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাফওয়ান আয়াতকে বলে,
– আয়াত আমার মনে হয় তোমার বাড়ি যাওয়া উচিত। তোমার বাবা-মা হয়তো পাগল প্রায় হয়ে তোমাকে খুজছেন।
– আপনি বাড়ি চলে যান, ইফাদ এখনো আসতে পারে।
– পাগলামি করো না, বাড়ি যাও ( খানিকটা রেগে)
– বাবা খুন করে ফেলবেন আমায়, আমার বাবার রাগ সম্পর্কে আপনার ধারণা নেই।
– আচ্ছা, উনি ইফাদকে অপছন্দ কেনো করেন?
– বাবা ড্রাইভারের সাথেও আমাকে বিয়ে দিতে রাজী কিন্তু বেকার ছেলেকে নিজের মেয়ে জামাই সে কিছুতেই করবেন না। মার জন্য টেনশন হচ্ছে না জানি চিন্তায় বেহুশ হয়ে যাচ্ছে।
– তাহলে এখন কোথায় যাবে?
– জানি না, তানির বাসায় যেতে পারবো না। রাতে ওর অহেতুক একটা ঝামেলা হবে, এর থেকে আমি একটা হোটেলে থেকে নিবো। দেখি সকালে কি করা যায়।
– আর ইউ শিউর?
– হুম।
একটা সস্তা হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তারা। এতো রাতে কোনো ভালো হোটেলে যাবার মতো ওয়ে নেই সাথে টাকাও। শুধু যাতায়াতের টাকা, ভোটার আইডি আর কিছু ডকুমেন্টস বাদে আর কোনো টাকা নিয়ে বের হয় নি আয়াত। মনটা খচখচ করছে সাফওয়ানের; মেয়েটাকে এভাবে হোটেলে একা ফেলে যেতেও মন সায় দিচ্ছে না তার। হোটেলের ভেতর যেতে নিলেই সাফওয়ান হাত টেনে ধরে আয়াতের। পিছনে ফিরে চোখে চোখ রাখতেই দৃঢ় কন্ঠে সাফওয়ান বলে উঠে,
– আমি ব্যাচেলর থাকি, এক রুমের চিলেকোঠা। কিন্তু এই হোটেলের থেকে মাচ মাচ বেটার। ইফ ইউ ওয়ান্ট ইউ ক্যান কাম উইথ মি। আমি নিচে বিছানা করে শুতে পারবো। এসব হোটেলে থাকাটা সুবিধার হবে না। প্লিজ কাম
– না না, একজন ছেলের সাথে রাতে আমি থাকতে পারবো না।
আয়াতের অস্বস্তি দেখে শান্ত গলায় সাফওয়ান বলে,
– ইউ ক্যান ট্রাস্ট মি। দরকার হলে আমি ছাদেই থাকবো। শুধু ল্যান্ড লর্ডকে নিয়ে একটু সমস্যা, আই উইল হ্যান্ডেল। রাত অনেক হয়েছে, বাড়ি পৌছাতে পৌছাতে সাড়ে বারো তো বাজবেই। ঐ মোটা ষাড় ঘুমিয়ে যাবে ততক্ষণে। চলো, প্লিজ
অবশেষে আয়াত রাজী হলো, সোডিয়ামের লাইটে পাশাপাশি হেটে চলেছে আয়াত-সাফওয়ান। দুজনের গন্তব্য এক কিন্তু লক্ষ্য আলাদা। রেললাইনের দুটো আলাদা লোহার লাইনের মতো পাশাপাশি হেটে যাচ্ছে তারা। জানে না কেউই আগামীতে কি তাদের জন্য অপেক্ষা করছে! রাস্তার পাশের খড়কুটোহীন মানুষেরা বস্তা পেতে ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছে তো আরেকদল মানুষ রাত জেগে চেঁচিয়ে সবাইকে শান্তনা দিচ্ছে, “ঘুমিয়ে পড়ো আমরা জেগে আছি”। রিক্সা না পেয়ে প্রচুর হাটতে হচ্ছে তাদের। হিল পড়ে পায়ে ঠসা পড়ে গেছে আয়াতের। আর না পেরে হিল খুলে ফেললো সে, নিচে জিন্স থাকায় শাড়িটা খানিকটা উপরে তুলে নিলো। হঠাৎ পেছন থেকে দুজন টহল পুলিশের বাঁশির শব্দ এবং চিৎকারে ভয়ে জমে গেলো তারা। না জানি কি বিপদ আসতে চলেছে। পুলিশদের একজন চেঁচিয়ে যাচ্ছে,
– এই এতো রাতে কি আকাম করতেছো, এই দাঁড়াও?
ভয়ে সাফওয়ানের ডান হাত আকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে পড়লো আয়াত। ধীর গলায় বলতে লাগলো,
– এখন কি হবে? সারা রাত থানায় কাঁটাবো নাকি?
– কিচ্ছু হবে না, তুমি চুপ থাকবে তাহলেই হবে।
পুলিশেরা তাদের কাছে এসেই……
চলবে
২য় পাঠ পরতে চাইলে কমেন্ট করুন.......
অনেক সুন্দরগল্প