............
আমাদের বিবাহিত জীবনের বেশ কয়েক মাস কেটে গেছে....
সময়ের সাথে সাথে আমার আর শুভ্রর মানসিক দূরত্বটা কমে গিয়েছে। এতে অবশ্য আমার শাশুরী আর ননদের বিশেষ ভূমিকা আছে। এ দুজন মিলে আমাকে শুভ্রর পছন্দ অপছন্দের তালিম দিয়ে ওর মন জয় করতে সাহায্য করেছে।
এতদিনে শুভ্র বুঝে গেছে যে আমি দুষ্টামী মাখা কথা এমনিই বলি, কোনো কুটিল উদ্দেশ্য নিয়ে নয়।
আমার আম্মু আমাকে একদিন বলেছিল যে, স্বামীর সাথে যতই মনোমালিন্য হোক না কেন, পরস্পরের বিছানা যেন আলাদা না হয়। কারন, বিছানা আলাদা হওয়াটাই নাকি সংসার ভাঙার সূত্রপাত ঘটায়।
আম্মুর এ কথাটা আমি মেনে চলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। এখন পর্যন্ত শুভ্রর সাথে অনেকবারই ঝগড়া হয়েছে, কিন্তু দিনশেষে দুজন পাশাপাশি বালিশে মাথা ঠেকিয়েই রাত কাটিয়েছি।
বিয়ের আগে বাস্তবিক কারো সাথে প্রেম করা হয় নি আমার, তবে কল্পনায় একজন ছিলো। শুভ্রর সাথে তার অনেকটাই মিল আছে, আবার অনেকটা অমিলও আছে।
কিশোরী বয়সে মনের মধ্য পুষে রাখা কাল্পনিক চরিত্রকে যদি কোনো এক ভাবে পরিণত বয়সে নিজের করে পাওয়া যায়, তাহলে মনে হয় তার প্রতি বিশেষ ভাললাগাটা একটু বেশি মাত্রায়ই কাজ করে।
আমার ক্ষেত্রেও হয়তো সেটাই হয়েছে। নয়তো একসময়ের অচেনা, অদেখা ছেলেটা কিভাবে আমার সবটুকু দখল করে নিল?! খুব ঘুমকাতুরে হওয়া সত্ত্বেও এখন আমি রাত জাগি শুভ্রর সাথে গল্প করার লোভে। যে আমি খিদা লাগলেই খাওয়া শুরু করে দিতাম কোনো বাছবিচার না করে, সেই আমিই এখন শুভ্রর জন্য বসে থাকি খাবার নিয়ে।
আমি শুভ্রর জন্য না খেয়ে বসে থাকলে মা বকা দিলেও মনে মনে যে খুশি হয় সেটা বুঝি আমি। মা আমাকে একদিন গল্প করার ছলে বলেছিল সব ছেলেই চায় খাবার সময় তার স্ত্রী সামনে বসে থেকে পরিবেশন করে খাওয়াবে। এসব ছোটোখাটো জিনিসেও নাকি স্বামী স্ত্রীর মধ্য ভালোবাসা বাড়ে। আমি মাকে সেদিন বলেছিলাম, "আর কি কি করলে প্রেম বাড়বে বলুন না মা"। উনি হাসতে হাসতে বলেছিলেন, "ফাজিল মেয়ে শাশুরীর কাছে এসেছে প্রেমের তালিম নিতে "।
কে যেন বলেছিল, প্রেমে পরলে প্রিয় মানুষটার সবকিছুতেই সৌন্দর্য আবিষ্কৃত হয় নিজের কাছে ; এখন আমি কথাটার সত্যতা খুঁজে পাই নিজের কাছে।
ওর ছোট ছোট কাজগুলোতেও আলাদা কিছু খুঁজে পাই আমি।
আচ্ছা, শুভ্রও কি এভাবে আমাকে উপলব্ধি করে?
নিজেকে প্রশ্ন করে কোনো উত্তর পাই না সঠিক। কখনো মনে হয় ও আমাকে খুব ভালোবাসে, আবার কখনো মনে হয় ও এতদিন পরেও কি যেন এক সন্দেহে ভুগে আমাকে নিয়ে।
Nice story