তুলার উৎপাদন বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ

0 7
Avatar for nipa7
Written by
4 years ago

তুলার উৎপাদন বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ

 

বিশ্ব তুলা দিবস আজ। দিবসটিতে তুলা উন্নয়ন বোর্ড ওয়েবিনার, কর্মশালা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্প পরিসরে রাজধানীসহ দেশের তুলা উৎপাদনকৃত এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করছে। দিবসটি বাংলাদেশে তুলা চাষ সম্প্রসারণ এবং দেশের উৎপাদিত তুলা দিয়ে গার্মেন্টস শিল্পের কাঁচামাল তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তুলা একটি আন্তর্জাতিক মানের শিল্প ফসল, যা বিশ্বব্যাপী 'সাদা সোনা' হিসেবে পরিচিত। তুলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঐতিহ্য, ইতিহাস, সভ্যতা ও অর্থনীতি। এটি আমাদের দ্বিতীয় মৌলিক চাহিদা, বস্ত্রের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়।

বিশ্বে প্রায় ৭৫টি দেশে তুলা চাষ করা হয়। বিশ্বে তুলা উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ৪০তম অবস্থানে রয়েছে। তুলা উৎপাদনে প্রতিনিধিত্বকারী দেশগুলোর মধ্যে ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান ও ব্রাজিল অন্যতম। বাংলাদেশে তিনটি শস্য মৌসুমের মধ্যে খরিফ-২তে মাত্র ০.৫২ শতাংশ জমিতে তুলা চাষ করা হয়। তুলা থেকে আঁশ ছাড়াও ভোজ্য তেল, খইল, জ্বালানি উপজাত হিসেবে পাওয়া যায়। ভোজ্য তেলে খুব কম পরিমাণে কোলেস্টরেল থাকে এবং তুলার বীজ থেকে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হারে তেল পাওয়া যায়, যা উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ এবং সয়াবিন তেলের চেয়েও পুষ্টিকর। খইলে রয়েছে উচ্চ প্রোটিন ২৪ শতাংশ, উচ্চ ফ্যাট ২০ শতাংশ হারে এবং ৪০ শতাংশ ক্রুড আঁশ, যা পশু ও মৎস্যখাদ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

তুলার ইতিহাস অনেক দিনের। ব্রিটিশ আমলের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের ঘরে ঘরে কার্পাসের চাষ হতো, ঘরে ঘরে চরকায় সুতা তৈরি হতো, তাঁতিরা কাপড় বুনে দেশের চাহিদা মেটাত। বিশ্ববিখ্যাত মসলিন কাপড় ও অন্যান্য সুতি বস্ত্র সমগ্র ইউরোপে রপ্তানি হতো। বিনিময়ে এসেছে বহু মূল্যবান ধাতু। সে সময় বাংলাদেশের নিতান্ত দীনহীন নারী-পুরুষের গায়েও দেখা যেত সোনা রুপোর আংটি, অলংকার, মন্দিরে মন্দিরে দেব-দেবীর স্বর্ণমূর্তি। ম্যানচেষ্টারের কাপড় বাংলাদেশি কাপড়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কুলিয়ে উঠতে পারত না বলে ইংল্যান্ডে বাংলাদেশি কাপড় নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১৪ ডিসেম্বর তুলা উন্নয়ন বোর্ড গঠন করেন। পাকিস্তানে নেওয়া ৩২৫ জন চাষিকে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে নিয়ে আসেন এবং ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে ৭৯৬ একর জমি তাদের মধ্যে তুলা চাষের জন্য বরাদ্দ প্রদান করেন। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে তুলা চাষের শুভ সূচনা ঘটে। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও তুুলা উন্নয়ন বোর্ডের কোনো নিজস্ব ভবন ছিল না। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তুলা উন্নয়ন বোর্ডের জন্য একটি নিজস্ব ভবনের জায়গা ও অর্থ বরাদ্দ করেন। এ বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর বর্তমান কৃষিমন্ত্রী তুলা ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১০ সাল থেকে তুলা চাষের দিকে বর্তমান সরকার গুরুত্ব দেওয়ার কারণে তুলার আবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশে এক লাখ সাতাত্তর হাজার বেল তুলা উৎপাদিত হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে চাহিদার প্রায় ২০ শতাংশ তুলা উৎপাদনের কর্মকৌশল হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে চাষ উপযোগী জমি নির্ধারণ করা হয়েছে ২.৫ লাখ হেক্টর এবং তুলার উন্নত জাত ও হাইব্রিড জাত তৈরির জন্য নেওয়া হয়েছে গবেষণা প্রকল্প, যা এরই মধ্যে একনেকের অনুমোদন পেয়েছে। তা ছাড়া বিটি কটনের ট্রায়াল সম্পন্নপূর্বক এ বছরে অনুমোদন পেতে যাচ্ছে চাষাবাদের জন্য।

তুলাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক তন্তুর গবেষণা, সংরক্ষণ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও তুলা চাষ সম্প্রসারণের জন্য একটি মেগা প্রকল্প তৈরির কাজ শুরু করেছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড। সব কার্যক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশেই ২০ লাখ বেল তুলা উৎপাদন ২০৪১ সালের মধ্যেই সম্ভব হবে।

তুলা বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। বর্তমান বার্ষিক জিডিপির ১১.১৬ শতাংশ আসে এই বস্ত্র খাত থেকে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই সেক্টরে আয় করেছিল ৩৪.১৩ বিলিয়ন ডলার। বর্তমান বছরে কভিড-১৯-এর কারণে অর্জন কিছুটা কম হলেও বাংলাদেশ আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব তুলা দিবস-২০২০ উদযাপনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের তুলার সঙ্গে সম্পর্কিত সব কার্যক্রম আরও বেগবান হবে এবং অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, এই হোক আজকের দিনের অঙ্গীকার।

বাংলাদেশ তুলা আমদানিকারক দেশ হিসেবে বিশ্বের দ্বিতীয়। আফ্রিকা, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ উল্লেখযোগ্য দেশ থেকে তুলা আমদানি করা হয়।

বিশ্ব তুলা দিবসের গুরুত্ব হলো তুলার সঙ্গে সংশ্নিষ্ট সবাইকে একটি প্ল্যাটফর্মে আনা, তুলার সঙ্গে সম্পৃক্ত তুলা উৎপাদনকারী, জিনার, মিলার, গার্মেন্টস মালিকপক্ষ, গবেষক ও গ্রাহকের মধ্যে সমন্বয় ঘটানো এবং তুলাকে স্বীকৃতি প্রদান ও দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে পালনে জাতিসংঘকে অনুরোধ করা। বাংলাদেশে এই দিবস উদযাপনের মধ্য দিয়ে তুলা চাষের সম্প্রসারণ, গবেষণা জোরদারকরণ, তুলার সঙ্গে সম্পৃক্ত সব অংশীজনের সঙ্গে সমন্বয়, দেশীয় তুলার সর্বোচ্চ ব্যবহার সর্বোপরি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

1
$ 0.00
Avatar for nipa7
Written by
4 years ago

Comments