নৈতিকতার অবক্ষয়ের চূড়ান্ত রূপ ধর্ষণ
আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে প্রতিবারই ধর্ষকরা বেরিয়ে যায়। বাংলাদেশের চলমান আইন সংশোধন করতে হবে।
পরিবার হলো মানুষের প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র। পরিবার থেকে প্রতিটি মানুষ প্রাথমিকভাবে নৈতিকতার শিক্ষালাভ করে থাকে। নৈতিকতাবিহীন মানুষ পশুর সমান। নৈতিকতা না থাকলে মানুষ যে কোনো অপকর্মে লিপ্ত হতে পারে। ধর্ষণের মতো নৈতিকতা বিবর্জিত এবং নীতিগর্হিত কর্মকান্ড সংগঠিত হয় কেবল নৈতিকতার অভাবে।
নৈতিকতা এবং সামাজিক অবক্ষয় মানুষকে পশুতে রূপান্তরিত করে। তখন সেই পশুরূপী নিকৃষ্ট মানুষ ধর্ষণের মতো জঘন্য কাজে লিপ্ত হয়। ধর্ষণ হীন এবং নীচ মানসিকতার পরিচয়। প্রতিটি ধর্ষক সমাজ ও রাষ্ট্রের জঞ্জাল। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেশের প্রতিটি শান্তিকামী মানুষের কাম্য। সমাজ ও রাষ্ট্র যদি ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি সুনিশ্চিত করতে পারে তাহলে সমাজ এবং রাষ্ট্রে ধর্ষণ উলেস্নখযোগ্যহারে কমবে। পারিবারিকভাবে পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে নৈতিকতার শিক্ষা সুনিশ্চিত করতে হবে। আধুনিক সমাজব্যবস্থায় ধর্ষণ কখনো কাম্য নয়। সমাজে ধর্ষককে বয়কট করতে হবে এবং তাকে 'সেক্স অফেন্ডার' ট্যাগ লাগিয়ে দিতে হবে যাতে সে অন্য কোনো এলাকায় স্থানান্তরিত হলে সে সব অঞ্চলের থানায় এবং নাগরিকদের বাসায় চিঠি চলে যায় তার চরিত্র সম্পর্কে। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে এমন সিস্টেম চালু আছে। ধর্ষণ একটি ঘৃণ্য সামাজিক ব্যাধি এবং এ ব্যাধি আমাদেরই সমাজ এবং দেশ থেকে বিতাড়িত করতে হবে।
একজন ধর্ষিতাই জানে সমাজে তার প্রতি কটু মনোভাবের কষ্ট। সমাজের মানুষের উচিত ধর্ষণের শিকার হওয়া মানুষটির পাশে দাঁড়ানো এবং মানুষটিকে মেন্টাল সাপোর্ট দেওয়া। আর ধর্ষককে ঘৃণা করা। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে ধর্ষণ প্রমাণিত হলেই সরাসরি মৃতু্যদন্ড কার্যকর করা হয়। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে, বিষপান করিয়ে, বুলেটের আঘাতে, শিরশ্ছেদ করে, সাপের কামড়ে, হিংস্র পশুর খাঁচায় ভরে প্রভৃতি উপায়ে মৃতু্যদন্ডাদেশ কার্যকর করা হয়। যার ফলে সে সব দেশে ধর্ষণের পরিমাণ উলেস্নখযোগ্যহারে কমে এসেছে। ধর্ষণ একটি বিবেকহীন, নৈতিকতাহীন এবং নেশাগ্রস্ত মানুষের চরম বহির্প্রকাশ। আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ধর্ষণের মনোভাব নিয়ে লুকিয়ে আছে হাজারো মনুষ্যরূপী নরপিশাচ। এদের প্রতিহত করে ধর্ষণমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়তে হবে যেখানে নারীর প্রতি জুলুম-নির্যাতন হবে না, অত্যাচার হবে না, হবে না কোনো সম্ভ্রমহানি। নীতি-নৈতিকতার দিক থেকে বাংলাদেশ থাকবে সবার সম্মুখভাগে- এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।
আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে প্রতিবারই ধর্ষকরা বেরিয়ে যায়। বাংলাদেশের চলমান আইন সংশোধন করতে হবে।
একজন ধর্ষক আইনের মারপঁ্যাচে পার পেয়ে গেলে তৈরি হয় অন্য একজন নতুন ধর্ষক। মধ্যপ্রাচ্যের এবং উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো ধর্ষকদের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পরিশেষে বলা যায়, সমাজ এবং দেশ থেকে ধর্ষণ নির্মূল করতে হলে আইনের মাধ্যমে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং পারিবারিক শিক্ষা জোরদার করে ব্যক্তিকে নৈতিকতাবান হওয়ার পরামর্শ দিতে হবে।