আলোয় অন্ধকার১২

0 14

#আলোয়_অন্ধকার🍁

#part ১২

ডেনিয়াল প্রচুর রেগে যায় টিয়ার কোথায়! টিয়া কথা শেষ করার আগেই ডেনিয়াল থাপ্পড় বসিয়ে দেয় টিয়ার গালে! এতো বড় ঈগল এর হাতের থাবা খেয়ে ছোট্ট টিয়া পাখি ছিটকে পড়তে নেয় ! কিন্তু পড়ার আগেই ডেনিয়াল টিয়ার হাত ধরে হ্যাঁচকা টানে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে এক হাতে টিয়ার গাল চেপে ধরে হিসহিসিয়ে বলে উঠে!

-- হাউ ডেয়ার ইউ টক টু মি লাইক দিস! একদম আমায় রাগাবা না! আমার রাগ নেওয়ার এবেলিটি হয় নি তোমার!!

টিয়ার মাথা ঘুরছে ডেনিয়ালের থাপ্পড় এ! ভয়ে এক্টু খানি হয়ে গেছে টিয়া! কান্না করার সাহসটাও পাচ্ছে না শব্দ করে! তাও চোখ দিয়ে পানি পড়ছে অনবরত! গালে অসম্ভব ব্যাথা হচ্ছে! মনে হচ্ছে এক গাল জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে তার উপর ডেনিয়াল গাল চেপে ধরে আছে! ভয়ে ব্যাথায় টিয়া আর কিছু বলতে পারছেনা! তার উপর এই শয়তান ঈগলটা এতো কাছে ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে টিয়ার!

ডেনিয়াল রেগে টিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে! গাল চেপে ধরে রাখায় পুরো মুখ লাল হয়ে গেছে টিয়ার! সেটা খেয়াল করেই ছেড়ে দেয় টিয়ার গাল! ডেনিয়াল গাল ছাড়তেই ভয়ে টিয়া দূরে সরে দাড়ায় ডেনিয়াল এর থেকে! সেটা দেখে ডেনিয়াল বাঁকা হেসে বললো!

-- ভুলে যেতে বলেছিলা তোমায় স্তব্ধকে! কিন্তু তুমি সেটা না করে আমার সামনে স্তব্ধকে ভালোবাসি বলছো?? তোমার সাহস দেখে অবাক হচ্ছি! নেক্সট টাইম এমন হলে তোমার সাহস আমি দেখে নিবো!

টিয়ার প্রচুর ঘৃণা হচ্ছে ডেনিয়ালের কথায়! সাথে ভয়ও! ডেনিয়াল কথা গুলো বলে টিয়ার দিকে এক্টু এগুতেই টিয়া দৌড়ে যেই রুম থেকে এসেছিলো! সেই রুমে চলে যায়! ডেনিয়াল টিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো!

-- পালিয়ে কোথাও যেতে পারবেনা একবার যখন এসেছো ডেনিয়ালের রাজ্যে! আর তোমার স্তব্ধকেও আমি দেখে নিবো!!

বলেই ক্রিশ্চানকে চিৎকার করে ডাকে! ডেনিয়াল এর গলা ফাটানো ডাকে ক্রিশ্চান নামের মেয়েটা দৌড়ে আসে সব সময় এর মতন! ডেনিয়াল রেগেই বলে উঠে!

-- টিয়ার রুমে লাঞ্চ নিয়ে যাও! কাল ডক্টর যেই মেডিসিন দিয়ে গিয়েছে সেই মেডিসিন এর সাথে! এটা ও খাইয়ে দিবে! গো!

ক্রিশ্চিয়ান ডেনিয়াল এর হাত থেকে মেডিসিনটা নিয়ে বলে উঠে,

-- ওঁকে স্যার!

ডেনিয়াল একবার উপরে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে চলে যায় বাড়ী থেকে বেরিয়ে।

.

.

ক্রিশ্চান হন্তদন্ত হয়ে টিয়ার রুমে খাবার নিয়ে ঢুকলো! টিয়া বেডে উপুড় হয়ে শুয়ে ফুপিয়ে কাদছে! ক্রিশ্চিয়ান আস্তে করে বললো!

-- ম্যাম আর ইউ ওকে???

টিয়া বুঝতে পারেনি তার রুমে কেউ ঢুকছে!! ক্রিশ্চান এর গলায় টিয়া ভয়ে লাফ দিয়ে উঠে দাড়িয়ে ক্রিশ্চানকে দেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে উঠে!

-- ইয়াহ আই এম ওকে!

ক্রিশ্চান ঠোঁট প্রশারিত করে বললো,

-- ম্যাম আপনার লাঞ্চ!

টিয়া দেখলো ছোট টেবিলে খাবার রাখা! কিন্তু টিয়ার খেতে ইচ্ছা করছে না! তাই বললো,

-- আমি পড়ে খেয়ে নিবো! তুমি যেতে পারো!

ক্রিশ্চান মুখটা কালো করে বললো,

-- ম্যাম প্লিজ এখুনি খেয়ে নিন! না হয় আমার জবটা যাবে!

ক্রিশ্চান এর কোথায় টিয়া নিজের চোখ ভালো করে মুছে ক্রিশ্চান দিকে তাকালো! ক্রিশ্চান এর বয়স ২৩/২৪ হবে! লোম্বা ভালোই দেখতে বেশ সুন্দরী আর স্মার্ট! একদম ধবধবে সাদা চামরার এই মেয়েটি এই বাসায় সার্ভেন্টের জব করে ভাবা যায়? অবশ্য এটা আমেরিকা এখানে সব স্বাভাবিক! কিন্তু এই মেয়ের তুলোনায় টিয়া নিজেও কিছুনা। এই মেয়ের পাশে দাড়ালে তাকে কালো! কুচকুচে কালো লাগবে! টিয়ার মাথায় এলো না ডেনিয়াল তার বাসায় এত সুন্দর মেইড রেখে! তাকে কেনো লাইক করলো?? যত যন্ত্রণা আর অদ্ভুত মানুষ তার কপালে জুটে যায়! এক স্তব্ধ নামক ছাড়ু একেই আদো বুঝতে পারলো না টিয়া! তার উপর নতুন এসে জুটেছে দ্যা ডেনিয়াল ঈগল! কি হবে তার? এই দুই টার চিপায় পড়ে টিয়ার জীবন টাই শেষ হয়ে যাচ্ছে! টিয়া এসব ভাবছে আর খাচ্ছে! সাথে বিড়বিড় করে নিজেকে নিজেই বকছে!

টিয়ার খাওয়া শেষ হতেই ক্রিশ্চান মেডিসিন দিলো টিয়ার হাতে খেতে!! টিয়ার মেডিসিন দেখেও কথা বাড়ালো না কারণ এই মেডিসিন খাবে না বলায়। ডেনিয়াল তাকে মারতে বসেছিলো! না সে মরতে চায়না এখুনি! আগে তার মনের সব প্রশ্নের উত্তর চাই কেনো তার সাথে এসব হচ্ছে...

মেডিসিন খাওয়ার দুই মিনিট পরেই টিয়া বেডে পড়ে গেলো অচেতন হয়ে! তা দেখে ক্রিশ্চান রুম থেকে চলে গেলো.......

.

.

স্তব্ধ বসে আছে সোফায় তার পাশে তার পালিত কুকুর পোর্টার বসে আছে!! আর তাদের সামনের সোফায় বসে আছে! অভিজিৎ রায় তিনি একজন পুলিশ অফিসার!! স্তব্ধ তার কুকুর পোর্টার এর মাথায় হাত বুলাচ্ছে!দৃষ্টিও কুকুর এর দিকেই!

কিন্তু অভিজিৎ এর দৃষ্টি স্তব্ধের দিকে! এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে অভিজিৎ স্তব্ধের দিকে ! কারণ অভিজিৎ এতো বড় একটা অভিযোগ করলো স্তব্ধের নামে! যে স্তব্ধ ৪ জনকে খুন করেছে! তাও স্তব্ধের চোখে মুখে না আছে আতংক না ভয় না অন্যকিছু! না ঘাবড়ে যাওয়া ভাব! স্তব্ধের এমন গায়ে না লাগা ভাব অভিজিৎ এর ভালো লাগেনি! তার ও একটা কারণ আছে!

সাধারণ মানুষকে এরকম একটা প্রশ্ন বা অভিযোগ করে থাকলে! সে খুন করুক বা নাই করুক ভয়ে হাত পা কাপা কাপি শুরু করে দিতো এতক্ষণে! সেই জায়গায় স্তব্ধকে এরকম একটা প্রশ্ন করে! এতক্ষণ যাবত স্তব্ধের চোখে তাকিয়ে থেকেও একটু ভয় খুজে পেলোনা অভিজিৎ রায়! তাই তার ব্যাপার টা ভালোলাগছেনা। এখন অভিজিৎ এর ভাবনায় স্তব্ধ হতে পারে ৪ জনের মিসিং এ কোনও হাত নেই! আবার হতে পারে স্তব্ধ সাধারণ কেউ নয়! কিন্তু তার পাওয়া স্তব্ধের ডিটেইলস অনুযায়ী অভিজিৎ এর স্তব্ধকে একজন সাধারণ কেউই মনে হয়েছে। তবে স্তব্ধের দর্শন পেয়ে সম্পূর্ণ ভীন্নই কিছু মনে হচ্ছে অভিজিৎ রায় এর!

বেশকিছু ক্ষণ পড় অভিজিৎ রায় প্রশ্ন করলো স্তব্ধকে,

-- আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে??

স্তব্ধ সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে অভিজিৎ এর দিকে তাকিয়ে বললো,

-- নো...

অভিজিৎ এর দ্রুত উল্টো প্রশ্ন,

-- তবে বিবাহিত আপনি?

স্তব্ধ একটু ভেবে বললো,

-- নো..

-- অহ ভালো! আচ্ছা তাহলে বলুন? রায়হান, প্রত্যয়, মাহাবুব, রিমন এরা কোথায়??

স্তব্ধ ভ্রু কুঁচকে বললো,

-- হোয়াট অফিসার?? এখুনি আপনি বললেন? অরা খুন হয়েছে! আবার এখুনি আমায় জিজ্ঞেস করছেন অরা কোথায়??

অভিজিৎ রায় হাল্কা হেসে বললো,

-- আসলেই আমার ভুল হয়েছে। একচুয়্যালি অরা মিসিং প্র‍্যত্তেক এর ফ্যামিলি মিসিং কমপ্লেইন করেছে! আমরা তাদের খুজতে তাদের ডিটেইলস নিয়ে যানতে পারি! সবাই আপনার পরিচিত....

স্তব্ধ অভিজিৎ এর কথা শেষ না হতেই বললো,

-- কাম অন অফিসার! পরিচিত হলেই কি প্রমাণ হয়ে যায় তাদের আমি মেরেছি বা মিসিং করেছি?? আপনি বরং প্রমাণ নিয়ে আবার আসবেন যে ওদের সবাইকে মিসিং করে আমি মেরেছি! ওকে??

অভিজিৎ মাথা দুলিয়ে বললো,

-- আমাদের থেকে যখন আমাদের সামনে বসা ব্যাক্তি শক্তিশালী হয়! তখন প্রমাণ নিয়েই কথা বলতে হয়! আপনার সাথে আমার আবার দেখা হবে মিঃ খান !

স্তব্ধ কাধ ঝাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলে উঠে,

-- অবশ্যই দেখা হবে!

বসা থেকে উঠে দাড়ায় অভিজিৎ রায় সাথে স্তব্ধ ও। অভিজিৎ রায় স্তব্ধের সাথে হাত মিলিয়ে বেরিয়ে যায় আর কিছু না বলে!! অভিজিৎ রায় হেসে গিয়ে গাড়ীতে বসে স্তব্ধের ছোট ডুপ্লেক্স বাড়ীটায় তাকায়! পাশে বসা তীর্থ বলে উঠে!

-- স্যার কি বললো স্তব্ধ খান???

অভিজিৎ রায় চিন্তিত কণ্ঠে বললো,

-- আচ্ছা এই ছোট বাড়ীতে ৩ জন কাজের লোক এর কি দরকার??

তীর্থ বললো,

-- কোন দরকার নেই স্যার! এত গুলা কাজের লোক এর! তবে স্তব্ধ খান যদি বিবাহিত হয়ে থাকে তাহলে মহিলা কাজের লোক ১ /২ টা হলেই যথেষ্ট! সেখানে তিন টা কাজের ছেলের প্রশ্নই আসেনা!

অভিজিৎ দ্রুত বললো,

-- স্তব্ধ বলেছে সে বিবাহিত নয়!!

-- তাহলে স্যার তিন টা কাজের লোকের প্রশ্নই আসে না! অন্য ব্যাপার আছে!

-- হ্যাঁ এই স্তব্ধ খানের বিহেভিয়ার ও তাই বলে কিন্তু সে খুব কনফিডেন্সে এর সাথে বললো! প্রমাণ নিয়ে কথা বলতে! হয় তো সে কিছু করেনি! না হয় সবি সেই করেছে কিন্তু সে জানে তাকে কেউ ধরতে পারবেনা!

তীর্থ সায় দিয়ে বললো,

-- ঠিক বলেছেন স্যার !

-- এই ছেলের সব ডিটেইলস আমার চাই খুটিনাটি এভরিথিং! আর এই প্রত্যয় স্তব্ধের ঠিক কতটা ক্লোজ বন্ধু ছিলো সেটাও!

তীর্থ হেসে বললো,

-- হয়ে যাবে স্যার!!!

-- এখন থানায় চলো!

তীর্থ গাড়ী স্টার্ট দিয়ে বললো,

-- জ্বী স্যার!!!

.

.

স্তব্ধ এখনো সোফায় বসে! হাতে সিগারেট একটু পর পর সিগারেট এ টান লাগাচ্ছে আর কিছু ভাবছে ! আস্ফি হল রুমে এসে সোফায় বসতেই স্তব্ধ উঠে দাড়িয়ে বললো।

-- আমি বাবার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি!

বলেই স্তব্ধ বাইরের দিকে পা বাড়ায়। পিছন পিছন পোর্টার ও লেজ দুলিয়ে দুলিয়ে স্তব্ধের সাথে যাচ্ছে! আস্ফি স্তব্ধের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করলো। কল লাগালো পিউ কে। দুই বার রিং হতেই পিউ রিসিভ করলো।

পিউ বললো,

-- হ্যালো?

আস্ফি রেগে বললো,

-- কোথায় তুই দুই দিন ধরে ফোন দিচ্ছি ধরছিস না কেনো???

পিউ হেসে বললো,

-- রাখ তোর ফোন... একটা গুড নিউজ আছে!!

আস্ফি সোফায় শুয়ে মিউট করা টিভিতে তাকিয়ে ছিলো! পিউ এর কথায় অজানা ভয়ে উঠে বসে বললো,

-- কি গুড নিউজ???

-- আমি বিয়ে করছি সামনের সাপ্তাহে হিহি! সবার আগে তোকে জানালাম....

পিউ আরো অনেক কিছু বলছে কিন্তু ঐসব কিছুই আস্ফির কানে আসছেনা না! তার কানে বাজছে আমি বিয়ে করছি!!

চলবে।

1
$ 0.00

Comments