বৃষ্টি মূখর দিন

7 20
Avatar for mottakin123
4 years ago

আকাশে আষাঢ় এলো; বাংলাদেশ বর্ষায় বিহ্বল/মেঘবর্ণ মেঘনার তীরে তীরে নারকেল সারি/ বৃষ্টিতে ধূমল’; বুদ্ধদেব বসুর এই কবিতার নিটোল-সজল-নিবিড় প্রকৃতির লাবণ্যস্নিগ্ধ এক বর্ষাকালের দৃশ্যপটের ভিতর জ্যৈষ্ঠের মধুর দহনকাল সমাপন হয়েছে। বাংলাদেশ পা রাখলো বর্ষার বৃষ্টি ধূমল চৌকাঠে। গত ক’দিনে ঘনিয়ে আসা মেঘপুঞ্জ আর বৃষ্টির বিড়ম্বনা জানান দিয়েছে বর্ষার আগমন বার্তা। প্রকৃতিতে গ্রীষ্মের ‘পিঙ্গল জটা’ ভেদ করে জীমূত-মন্দ্রে বর্ষার কাল নিয়ে এলো আষাঢ়। পঞ্জিকার অনুশাসনে আজ আষাঢ়ের পয়লা দিন। প্রকৃতিতে গ্রীষ্মের রুদ্র দহন ছিন্ন করে বর্ষার দিন এলো। তৃষ্ণা কাতর জনপদ  বর্ষায় ফিরে পায় প্রাণের স্পন্দন। পুরো প্রকৃতি তার রূপ ও বর্ণ বদলে ফেলে। বর্ষায় রবীন্দ্রনাথের বাউল হূদয় গেয়ে ওঠে : ‘হূদয় আমার নাচেরে আজিকে, ময়ূরের মত নাচেরে’। কেতকীর মনমাতানো সুগন্ধ আর কদম ফুলের চোখ জুড়ানো শোভা অনুষঙ্গ হয়ে আছে আষাঢ়ে। কদম কেতকী ফুটবে,আকাশজুড়ে চলবে মেঘের আনাগোনা।  জীবনানন্দ দাশ আষাঢ়কে বলেছেন, ‘ধ্যানমগ্ন বাউল-সুখের বাঁশি’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায় বরষা এসেছে সামগ্রিক রূপবিভঙ্গে:‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে/আসে বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে/এই পুরাতন হূদয় আমার, আজি/পুলকে দুলিয়া উঠিছে আবার বাজি/নূতন মেঘের ঘনিমার পানে চেয়ে/রহিয়া রহিয়া বিপুল মাঠের পরে/ নব তৃণদলে বাদলের ছায়া পড়ে/এসেছে, এসেছে— এই কথা বলে প্রাণ, এসেছে, এসেছে উঠিতেছে এই গান/নয়নে এসেছে, হূদয়ে এসেছে ধেয়ে’।...

বর্ষার আবেগে ভেসে যাওয়া কাজী নজরুল ইসলাম বর্ষাকে দেখেছেন, ‘বাদলের পরী! কাজল মেয়ে, ‘জলের দেশের কন্যা’ প্রতিরূপে। ‘ওগো বাদলের পরী!/যাবে কোন্ দূরে ঘাটে বাঁধা তব কেতকী পাতার তরী!/তোমার কপোল-পরশ না পেয়ে পাণ্ডুর কেয়া-রেণু/কুমারী ভিরু-বেদনা-বিধূর প্রণয়-অশ্রুসম। নজরুল বরষার আকাশপানে তাকিয়ে আপ্লুত-রিমঝিম রিমঝিম ঐ নামিল দেয়া/শুনি শিহরে কদম, বিদরে কেয়া/ঝিলে শাপলা, কমল ঐ মেলিল দল....

সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের মন্দাক্রান্তা ছন্দে লেখা ‘যক্ষের নিবেদন’ কবিতায়:‘পিঙ্গল বিহ্বল ব্যথিত নভতল কই গো কই /মেঘ উদয় হও/ সন্ধ্যার তন্দ্রার মুরতি ধরি আজ মন্দ্র মন্থর বচন কও’

বর্ষা মানব মনে বিচিত্র অনুভূতির জন্ম দিলেও হতদরিদ্র সাধারণ মানুষের জীবনে মহাদুর্যোগ ও দুর্বিপাক বয়ে আনে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এখন বর্ষা আর গ্রীষ্মকে আলাদা করে চিহ্নিত করা দিনে দিনে দুরূহ হচ্ছে। আষাঢ় বরণ করে নেবার সামর্থ্য হোক আমাদের সবার। কদম কেতকী আর মেঘমেদুর বরষার অমল রূপের মাধুরীতে ভরে উঠুক আমাদের চারপাশ। বর্ষার রূপশোভা ডানা মেলুক, নীপবন-ছায়াবীথি আমাদের সবার হোক। বর্ষার রূপসুষমা আমাদের ঘিরে রাখুক। আষাঢ়-দিনের বর্ষাবন্দনা অদ্ভুত, মিথ্যা,অলীক আর আষাঢ়ে গল্প হয়ে যেন না থাকে। কবিতার ভাষায়:‘আমরা চাই আমাদের পৃথিবী ভরে উঠুক তরুলতায়, ফলে ফুলে, নদী ফিরে পাক তার জীবন, পদ্মা মেঘনা সুরমা কপোতাক্ষ মগরা ধনু জলাঙ্গী মধুমতি মুক্তি পাক দখলদারদের কালো থাবা থেকে, কারখানার বর্জ্য আর কেমিক্যালের অত্যাচার বন্ধ হোক চিরতরে, স্বচ্ছতোয়া নদীজলে মাছেরা উল্লাস করুক অতীতের মতো ।

9
$ 0.00
Avatar for mottakin123
4 years ago

Comments

Joss😍

$ 0.00
4 years ago

😍😍😍😍

$ 0.00
4 years ago

Love It

$ 0.00
4 years ago

Fine

$ 0.00
4 years ago