তোমার ছেলেকে তোমার মতোই হতে হবে, এমন কোনও নিয়ম কি আছে?
অনেক বিখ্যাত মানুষের ছেলে তাঁদের মতো হয়নি, তাতে কার কী?
যে চোর কিংবা ডাকাত, তুমি কি চাও, তার সন্তান চোর অথবা ডাকাতই হোক?
সব ডাক্তারের সন্তান যেমন ডাক্তার হয় না, তেমন অনেক ডাক্তারই আছেন, যাঁদের সন্তান তাঁদের মতোই ডাক্তার হয়েছেন।
সন্তান কী হবে, তার চাইতে বড়ো বিষয় বোধহয়, সন্তানের ভেতর মনুষ্যত্ববোধটা ঠিক থাকবে কি না, সেটা। অনেক বাবা-মাকে দেখেছি, তেমন কিছু পড়াশোনা করেননি অথবা কিছুদূর করেছেন, তারপরও তাঁরা তাঁদের সন্তানদের অনেক ধৈর্য নিয়ে, অনেক আদর ভালোবাসা দিয়ে মানুষ করেছেন। আবার এমনও দেখেছি, বাবা-মা দুজনেই অনেক ভালো পজিশনে আছেন, কিন্তু সন্তান এতটাই অসভ্য, বেয়াদব আর অনৈতিক, যা বলারও বাইরে।
আমি জানি না, সবসময় যখন তুমি সন্তান নিয়ে এই কথাটিই বারে বারে বলো, যে সন্তানকে তার বাবা-মায়ের মতো হতে হবে, তার অর্থ আসলে কী! আরেকটা কথা বলতে চাই। সন্তানকে আদর-ভালোবাসা দিয়ে মানুষ করলে আর যা-ই হোক না হোক, ভালো একজন মানুষ তো হবে, এটাই কি যথেষ্ট না?
নিজেকে নিজের সন্তানের কাছে যত বড়ো বলে জাহির করবে, ততই তুমি তার ভেতরে একটা অদৃশ্য দেয়াল তৈরি করবে। তোমার সন্তানের বড়ো পরিচয়, সে তোমার সন্তান। এরপর যদি সে তোমাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে, তাহলে তোমার আরও একটা পরিচয় প্রকাশ পাবে তোমার সন্তানের মধ্য দিয়ে। তুমি হয়তো একজন ভালো বাবা হিসেবেও পরিচিতি পাবে। তাই বলে কি তুমি মানুষের ঊর্ধ্বে চলে যেতে পারবে? তুমি অনেক ভালো অবস্থানে আছ, তার অর্থ এটাই যে তুমি নিজেকে খুব ভালো করে ইউটিলাইজ করতে পেরেছ, তোমার সন্তান যদি নিজে নিজেকে ভালো করে ইউটিলাইজ করতে না পারে, তাহলে বাইরে থেকে খুব চেষ্টা করেও তুমি কতটা কী করতে পারবে? আর যখন তুমি বলো, অমুকের একটা সন্তানও অমুকের মতো হয়নি, তখন আসলে তুমি নিজের সন্তানকে তোমার মতো হতে অদৃশ্য এক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দাও। এটা কি যৌক্তিক?
তুমি হয়তো পড়েছ, আমাদের মধ্য দিয়ে যারা আসে, তারা আসলে আমাদের সন্তানই নয়, তারা এই পৃথিবীর সন্তান। পৃথিবী তার নিজ প্রয়োজনে হয় তাকে গুছিয়ে নেবে, নয়তো তাকে ধ্বংস করে দেবে; সেটাও একটা উদ্দেশ্যেই। আমার মনে হয়, আমাদের সন্তান যদি আমাদের মতো না হয়ে থাকে, সেটা বড়ো একটা আশীর্বাদ, কেননা তা না হলে পৃথিবীতে যত গুণী মানুষ এসেছেন, তাঁদের চাইতে অমানুষের সংখ্যাই বেশি দেখে যে আসছি, ফলে তাঁদের সন্তানেরা সবাই যদি তাদের বাবার পথ ধরে হাঁটত, তাহলে ভেবে দেখো, পৃথিবীর অবস্থাটা কী হতো!
আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে দুটো জিনিস নিয়ে, তা যতই আমার মনের মতো হোক না কেন, কখনও গর্ব করতে নেই। সে দুটো হচ্ছে সন্তান আর জীবনসঙ্গী। যে-কোনও সময় যে-কোনও মুহূর্তে এই দুটো মানুষ পুরোপুরি বদলে যেতে পারে ঠিক মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের মতো। মানুষ বাবা-মা যেমনি নির্ধারণ করতে পারে না, তেমনি সন্তানকেও তার নিজের পছন্দের জীবনটা যাপন করতে দেওয়া কি অপরাধ? একা এসেছি, একাই চলে যাব, যেতেই হবে। যদি থাকেও মৃত্যুর পরে কোনও জীবন, তবে সে-পারেও তো নিজের হিসেব নিজেকেই ভোগ করতে হবে। যদি তাই-ই হয়, তাহলে কে আমার সন্তান আর কে অন্যের, তাতে কী এসে যায়? আর যদি না থাকে তেমন কিছু, তবে নিজের ইচ্ছেপুতুল করে রেখে দিয়ে সন্তানের জীবনটাকে নিজের মতো করে গড়তে গিয়ে তাকে তার জীবনে বাঁচতে না দেওয়ার তুমি কে? তুমি নিজে কতটা বেঁচেছ তোমার বাবা-মায়ের মনের মতো করে? এমনকি তুমি যদি তোমার বাবার মতোও হতে, তাহলে আর যা-ই হোক, তুমি যদি তখনও খুব ভালো একজন অন্য মানুষও হতে, তবুও কি আমরা আজকের তোমাকে পেতাম? যেহেতু উত্তরটা ‘না’, সেহেতু কখনও সন্তান নিয়ে, সে যেমনই হোক---ভালো অথবা খারাপ, তোমার মতো অথবা তোমার চাইতেও বেশি কিংবা তোমার বিপরীত; এসবের কিছুতে, কোনও প্রতিক্রিয়ায় কী এসে যায়? মৃত্যুর পর একটা ভালো বাবাও একটা খারাপ সন্তান রেখে গেলে যেমনি তিনি খারাপ হয়ে যান না, তেমনি একজন খারাপ বাবাও একজন ভালো সন্তান রেখে গেলে তার দুষ্কর্মের বোঝা কি পারেন নামিয়ে ফেলতে?
বাবা-মায়ের জন্য সন্তান হয়তো তত বড়ো কিছু নয়, কিন্তু সন্তানের কাছে বাবা-মা অনেক অনেক বড়ো কিছু। কারণ তোমার হাতে যে শিশুকে অস্তিত্ব তুলে দিয়েছ, সে দায় পারবে কি এড়িয়ে যেতে? তোমার হয়তো আছে অঢেল, কিন্তু তার কী মূল্য, যদি তা সন্তানের কোনও কাজে না আসে? তোমার বাবা তোমাকে পড়াশোনা না করিয়ে যদি মুহুরির দলিললেখার কাজে নামিয়ে দিতেন, তাহলে কী করতে তুমি? তুমি যেখানে এসেছ, সেখানে তোমার বাবার কিছুটা অবদান, কিছুটা তোমার নিজের, বাকিটা হয়তো অদৃষ্টের। স্রষ্টায় বিশ্বাস করো কি না জানি না, অদৃষ্টে বিশ্বাস করো তো? না কি কেবলই পরিশ্রমে বিশ্বাসী? তাহলে যাও, কৃষিকাজে নেমে দেখো হয় কি না! নয়তো ক্রিকেট-প্র্যাকটিসে কী দোষ, স্ট্যামিনা তো ভালোই আছে তোমার!
তোমার বাবা তোমার প্রতি যে দায়িত্ব পালন করেছেন, কেবল সেই দায়িত্বটুকু যথাযথ পালন করার দায়িত্বটুকু নিয়ে দেখো তো? বাকিটা সন্তানের উপরেই নাহয় ছেড়ে দিয়ো। যদি ভালো-খারাপ সৎ-অসৎ সবাইকে ওই মাটিতে মাটির সাথেই মিশে যেতে হয়, তাহলে কীসের এত হিসাব! মৃত্যুর পর কী হয়েছে, কী হচ্ছে, যারা মরে গেছে যুগ যুগ ধরে, তাদের কে দেখেছে? তোমার সব কিছু যদি তোমার সন্তানের পছন্দ না হয়, তখন? তবে কি, সে তোমাকে অন্য বাবাদের উদাহরণ দেবে, এটা চাও? তুমি কতটা স্বীকার করবে তোমার অপারগতা? সবসময় নিজেকে সন্তানের সাথে বিচার করে তুমি যে আগেই ওকে গভীর এক গর্তের সামনে এগিয়ে নিচ্ছ, সে খেয়াল আছে? তুমি পারবে তো বলতে জীবনশেষে, তুমি একজন ভালো বাবা হতে পেরেছ, যতদিন বেঁচেছ?
সবশেষে বলি, নিজের সন্তানকে কেবল একজন মানুষ ভাবলে হয়তো এই কনফ্লিক্টগুলো মন থেকে চলে যাবে। এতক্ষণ যা যা বললাম, তার কোনওটাতেই মন ভরল না। জানি না কেন মনে হচ্ছে, অনেক কথা না বলাই থেকে গেল।
আমার জীবনে যা-কিছু তোমার চোখে সুন্দর, তার সবই তোমার কাছে থেকে থেকেই শেখা। আমাকে অন্য কেউ কখনও কিছু শেখায়নি অথবা যা শেখানো হয়েছে, ওভাবে চললে আর যা-ই হোক, মানুষের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে বাঁচতে পারতাম না। অনেক কিছুর পরও আমি মানুষকে ভালোবাসতে পারি, এটা কোনও না কোনওভাবে তোমার দেওয়া একটা শিক্ষা। যত দিন যাচ্ছে, ততই চারপাশটা আরও রুদ্ররূপ ধারণ করে আমার সামনে এসে যায়, আর আমার পরীক্ষা আরও কঠিনতর হয়ে পড়ছে। হেরে যাব কি না জানি না, কিন্তু কেবলই টিকে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যতদূর মনে হচ্ছে, যতদূর চোখ যাচ্ছে, যতদূর বুঝতে পারছি, তা হলো, তুমি আমাকে সন্ন্যাসী বানিয়েই ছাড়বে!
তোমার ছেলেকে তোমার মতোই হতে হবে, এমন কোনও নিয়ম কি আছে?
অনেক বিখ্যাত মানুষের ছেলে তাঁদের মতো হয়নি, তাতে কার কী?
যে চোর কিংবা ডাকাত, তুমি কি চাও, তার সন্তান চোর অথবা ডাকাতই হোক?
সব ডাক্তারের সন্তান যেমন ডাক্তার হয় না, তেমন অনেক ডাক্তারই আছেন, যাঁদের সন্তান তাঁদের মতোই ডাক্তার হয়েছেন।
সন্তান কী হবে, তার চাইতে বড়ো বিষয় বোধহয়, সন্তানের ভেতর মনুষ্যত্ববোধটা ঠিক থাকবে কি না, সেটা। অনেক বাবা-মাকে দেখেছি, তেমন কিছু পড়াশোনা করেননি অথবা কিছুদূর করেছেন, তারপরও তাঁরা তাঁদের সন্তানদের অনেক ধৈর্য নিয়ে, অনেক আদর ভালোবাসা দিয়ে মানুষ করেছেন। আবার এমনও দেখেছি, বাবা-মা দুজনেই অনেক ভালো পজিশনে আছেন, কিন্তু সন্তান এতটাই অসভ্য, বেয়াদব আর অনৈতিক, যা বলারও বাইরে।
আমি জানি না, সবসময় যখন তুমি সন্তান নিয়ে এই কথাটিই বারে বারে বলো, যে সন্তানকে তার বাবা-মায়ের মতো হতে হবে, তার অর্থ আসলে কী! আরেকটা কথা বলতে চাই। সন্তানকে আদর-ভালোবাসা দিয়ে মানুষ করলে আর যা-ই হোক না হোক, ভালো একজন মানুষ তো হবে, এটাই কি যথেষ্ট না?
নিজেকে নিজের সন্তানের কাছে যত বড়ো বলে জাহির করবে, ততই তুমি তার ভেতরে একটা অদৃশ্য দেয়াল তৈরি করবে। তোমার সন্তানের বড়ো পরিচয়, সে তোমার সন্তান। এরপর যদি সে তোমাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে, তাহলে তোমার আরও একটা পরিচয় প্রকাশ পাবে তোমার সন্তানের মধ্য দিয়ে। তুমি হয়তো একজন ভালো বাবা হিসেবেও পরিচিতি পাবে। তাই বলে কি তুমি মানুষের ঊর্ধ্বে চলে যেতে পারবে? তুমি অনেক ভালো অবস্থানে আছ, তার অর্থ এটাই যে তুমি নিজেকে খুব ভালো করে ইউটিলাইজ করতে পেরেছ, তোমার সন্তান যদি নিজে নিজেকে ভালো করে ইউটিলাইজ করতে না পারে, তাহলে বাইরে থেকে খুব চেষ্টা করেও তুমি কতটা কী করতে পারবে? আর যখন তুমি বলো, অমুকের একটা সন্তানও অমুকের মতো হয়নি, তখন আসলে তুমি নিজের সন্তানকে তোমার মতো হতে অদৃশ্য এক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দাও। এটা কি যৌক্তিক?
তুমি হয়তো পড়েছ, আমাদের মধ্য দিয়ে যারা আসে, তারা আসলে আমাদের সন্তানই নয়, তারা এই পৃথিবীর সন্তান। পৃথিবী তার নিজ প্রয়োজনে হয় তাকে গুছিয়ে নেবে, নয়তো তাকে ধ্বংস করে দেবে; সেটাও একটা উদ্দেশ্যেই। আমার মনে হয়, আমাদের সন্তান যদি আমাদের মতো না হয়ে থাকে, সেটা বড়ো একটা আশীর্বাদ, কেননা তা না হলে পৃথিবীতে যত গুণী মানুষ এসেছেন, তাঁদের চাইতে অমানুষের সংখ্যাই বেশি দেখে যে আসছি, ফলে তাঁদের সন্তানেরা সবাই যদি তাদের বাবার পথ ধরে হাঁটত, তাহলে ভেবে দেখো, পৃথিবীর অবস্থাটা কী হতো!
আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে দুটো জিনিস নিয়ে, তা যতই আমার মনের মতো হোক না কেন, কখনও গর্ব করতে নেই। সে দুটো হচ্ছে সন্তান আর জীবনসঙ্গী। যে-কোনও সময় যে-কোনও মুহূর্তে এই দুটো মানুষ পুরোপুরি বদলে যেতে পারে ঠিক মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের মতো। মানুষ বাবা-মা যেমনি নির্ধারণ করতে পারে না, তেমনি সন্তানকেও তার নিজের পছন্দের জীবনটা যাপন করতে দেওয়া কি অপরাধ? একা এসেছি, একাই চলে যাব, যেতেই হবে। যদি থাকেও মৃত্যুর পরে কোনও জীবন, তবে সে-পারেও তো নিজের হিসেব নিজেকেই ভোগ করতে হবে। যদি তাই-ই হয়, তাহলে কে আমার সন্তান আর কে অন্যের, তাতে কী এসে যায়? আর যদি না থাকে তেমন কিছু, তবে নিজের ইচ্ছেপুতুল করে রেখে দিয়ে সন্তানের জীবনটাকে নিজের মতো করে গড়তে গিয়ে তাকে তার জীবনে বাঁচতে না দেওয়ার তুমি কে? তুমি নিজে কতটা বেঁচেছ তোমার বাবা-মায়ের মনের মতো করে? এমনকি তুমি যদি তোমার বাবার মতোও হতে, তাহলে আর যা-ই হোক, তুমি যদি তখনও খুব ভালো একজন অন্য মানুষও হতে, তবুও কি আমরা আজকের তোমাকে পেতাম? যেহেতু উত্তরটা ‘না’, সেহেতু কখনও সন্তান নিয়ে, সে যেমনই হোক---ভালো অথবা খারাপ, তোমার মতো অথবা তোমার চাইতেও বেশি কিংবা তোমার বিপরীত; এসবের কিছুতে, কোনও প্রতিক্রিয়ায় কী এসে যায়? মৃত্যুর পর একটা ভালো বাবাও একটা খারাপ সন্তান রেখে গেলে যেমনি তিনি খারাপ হয়ে যান না, তেমনি একজন খারাপ বাবাও একজন ভালো সন্তান রেখে গেলে তার দুষ্কর্মের বোঝা কি পারেন নামিয়ে ফেলতে?
বাবা-মায়ের জন্য সন্তান হয়তো তত বড়ো কিছু নয়, কিন্তু সন্তানের কাছে বাবা-মা অনেক অনেক বড়ো কিছু। কারণ তোমার হাতে যে শিশুকে অস্তিত্ব তুলে দিয়েছ, সে দায় পারবে কি এড়িয়ে যেতে? তোমার হয়তো আছে অঢেল, কিন্তু তার কী মূল্য, যদি তা সন্তানের কোনও কাজে না আসে? তোমার বাবা তোমাকে পড়াশোনা না করিয়ে যদি মুহুরির দলিললেখার কাজে নামিয়ে দিতেন, তাহলে কী করতে তুমি? তুমি যেখানে এসেছ, সেখানে তোমার বাবার কিছুটা অবদান, কিছুটা তোমার নিজের, বাকিটা হয়তো অদৃষ্টের। স্রষ্টায় বিশ্বাস করো কি না জানি না, অদৃষ্টে বিশ্বাস করো তো? না কি কেবলই পরিশ্রমে বিশ্বাসী? তাহলে যাও, কৃষিকাজে নেমে দেখো হয় কি না! নয়তো ক্রিকেট-প্র্যাকটিসে কী দোষ, স্ট্যামিনা তো ভালোই আছে তোমার!
তোমার বাবা তোমার প্রতি যে দায়িত্ব পালন করেছেন, কেবল সেই দায়িত্বটুকু যথাযথ পালন করার দায়িত্বটুকু নিয়ে দেখো তো? বাকিটা সন্তানের উপরেই নাহয় ছেড়ে দিয়ো। যদি ভালো-খারাপ সৎ-অসৎ সবাইকে ওই মাটিতে মাটির সাথেই মিশে যেতে হয়, তাহলে কীসের এত হিসাব! মৃত্যুর পর কী হয়েছে, কী হচ্ছে, যারা মরে গেছে যুগ যুগ ধরে, তাদের কে দেখেছে? তোমার সব কিছু যদি তোমার সন্তানের পছন্দ না হয়, তখন? তবে কি, সে তোমাকে অন্য বাবাদের উদাহরণ দেবে, এটা চাও? তুমি কতটা স্বীকার করবে তোমার অপারগতা? সবসময় নিজেকে সন্তানের সাথে বিচার করে তুমি যে আগেই ওকে গভীর এক গর্তের সামনে এগিয়ে নিচ্ছ, সে খেয়াল আছে? তুমি পারবে তো বলতে জীবনশেষে, তুমি একজন ভালো বাবা হতে পেরেছ, যতদিন বেঁচেছ?
সবশেষে বলি, নিজের সন্তানকে কেবল একজন মানুষ ভাবলে হয়তো এই কনফ্লিক্টগুলো মন থেকে চলে যাবে। এতক্ষণ যা যা বললাম, তার কোনওটাতেই মন ভরল না। জানি না কেন মনে হচ্ছে, অনেক কথা না বলাই থেকে গেল।
আমার জীবনে যা-কিছু তোমার চোখে সুন্দর, তার সবই তোমার কাছে থেকে থেকেই শেখা। আমাকে অন্য কেউ কখনও কিছু শেখায়নি অথবা যা শেখানো হয়েছে, ওভাবে চললে আর যা-ই হোক, মানুষের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে বাঁচতে পারতাম না। অনেক কিছুর পরও আমি মানুষকে ভালোবাসতে পারি, এটা কোনও না কোনওভাবে তোমার দেওয়া একটা শিক্ষা। যত দিন যাচ্ছে, ততই চারপাশটা আরও রুদ্ররূপ ধারণ করে আমার সামনে এসে যায়, আর আমার পরীক্ষা আরও কঠিনতর হয়ে পড়ছে। হেরে যাব কি না জানি না, কিন্তু কেবলই টিকে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যতদূর মনে হচ্ছে, যতদূর চোখ যাচ্ছে, যতদূর বুঝতে পারছি, তা হলো, তুমি আমাকে সন্ন্যাসী বানিয়েই ছাড়বে!
Thanks for your valuable time.