"কি হলো মাইশা? গ্লাসটা পড়লো কি করে?
" কিছু হয়নি মা। হাত ফসকে পড়ে গেছে। "
"কোথাও লাগেনি তো?"
"না কোথাও লাগেনি। "
আমি আর কিছু না বলে ছুটে চলে এলাম আমার ঘরে। তোমায় কি করে বলবো মা কোথায় লেগেছে। খুব লেগেছে মা, আমার বুকে খুব লেগেছে।
ছোটবেলা থেকে যাকে ভালোবেসে এসেছি তার সাথেই নিজের বড় বোনের বিয়ের কথা সহ্য করতে পারছি না আমি।
বুকটা ফেটে যাচ্ছে আমার। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। মনে হচ্ছে কেউ আমার হৃদপিণ্ডটায় আঘাত করছে অনবরত। ভালোবাসা হারানোর কষ্টটা বুঝি এরকমই হয়।
আমি আফিফা জান্নাত মাইশা, আমার বড় বোন আলিফা জান্নাত মালিশা, বড় ভাই আফনান মোয়াজ আর মা - বাবাকে নিয়েই আমাদের সুখী পরিবার। যার সাথে আমার বোনের বিয়ের কথা চলছে সে আমার খালাতো ভাই মিহির আহমেদ সায়ন।
যখন ভালোবাসা কি জানতাম না তখন থেকেই সায়ন ভাইয়াকে আমার ভালো লাগতো। কিন্তু ভালোবাসা কি জানার পর থেকে বুঝতাম সায়ন ভাইয়ার প্রতি ভালোলাগাটা আসলে ভালোবাসা। তখন থেকেই সায়ন ভাইয়াকে ভালোবেসেছি। আমার সব কল্পনায় শুধু সায়ন ভাইয়ার স্থান ছিলো। তাকে নিয়ে হাজারো স্বপ্ন বুনেছি আমি। আমার প্রতিটা নিশ্বাসে শুধু একটাই নাম মিশে আছে 'সায়ন'।
সায়ন ভাইয়াকে ছোট থেকে ভালোবাসলেও উনাকে জানিয়ে ছিলাম তিন বছর আগে। কিন্তু উনি আমায় মেনে নেন নি। অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন । তবুও আমি অনেকবার উনার কাছে ভালবাসার দাবি নিয়ে গেছি আর প্রত্যেকবার উনি আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন । কিন্তু হাল ছাড়িনি আমি। আমার বিশ্বাস ছিলো একদিন সায়ন ভাইয়া আমার ভালোবাসা বুঝবে। আমাকে ভালোবেসে নিজের করে নেবে।
কিন্তু আজ আমার নিজেরই বড় বোনের সাথে উনার বিয়ের কথা চলছে। সায়ন ভাইয়াও নিশ্চয়ই রাজি। উনি তো বলেছিলেন খালামনি যাকে তার জন্য পছন্দ করবে তাকেই উনি বিয়ে করবেন । আজ চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে কেনো সায়ন ভাইয়া, কেনো আমায় ভালোবাসলেন না। একটু কি ভালোবাসা যেতো না আমায়।
আপুর জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে হলে নাহয় কিছু করতে পারতাম আমি।কিন্তু এখন তো কিছুই করতে পারবো না। আপু কি এই বিয়েতে রাজি হয়ে যাবে? আমার সব স্বপ্নগুলো কি তাহলে অপূর্ণই থেকে যাবে? সায়ন ভাইয়া কি কখনো আমার ভালোবাসা বুঝতে পারবে না? আমরা তিন ভাই - বোন একে অপরকে অনেক ভালোবাসি কিন্তু এখন কি আমার আর আপুর মাঝে দূরত্ব তৈরী হবে? আর কিছু ভাবতে পারছি না আমি। মাথাটা ভাড় হয়ে আসছে আমার। একপাশে সায়ন ভাইয়া আরেক পাশে আপু। দুজনকেই যে আমি খুব ভালোবাসি।
হঠাৎ কাঁধে কারো স্পর্শে পিছনে ফিরে দেখি আপু দাড়িয়ে আছে।
"তুই কি কাঁদছিস মাইশা? "
আপুর প্রশ্নে চোখের পানি মুছে নিয়ে বললাম
" আমি কেনো কাঁদতে যাবো। চোখে কিছু একটা পড়েছে। "
"ওহ "
"তুমি কি কিছু বলবে আপু? "
"তুই কি কিছুই জানিস না? "
"কোন বিষয়ে?"
"আমার আর সায়ন ভাইয়ার বিয়ের বিষয়ে।"
আপুর কথা শুনে খুব কষ্ট হচ্ছে। তবু্ও মুখে হাসি এনে বললাম
"হ্যাঁ, খালামনির কাছ থেকে শুনলাম। "
"আমাকে মা এইমাত্র জানালো। এখন আমার মত চাইছে মা আর খালামনি। আমি রাজি থাকলে সায়ন ভাইয়ার মাস্টার্স ফাইনাল এক্সাম শেষে বিয়ের কথা চিন্তা করছে তারা।"
আমি মিথ্যে একটা হাঁসি দিয়ে বললাম "ভালোই তো তাহলে। "
"কিন্তু আমার একটা সমস্যা আছে। "
"কি সমস্যা? "
"আমি এই বিয়েটা করতে পারবো না। "
আপুর কথা শুনে মনে হচ্ছে জীবন ফিরে পেয়েছি। অনেক খুশি লাগছে।
আমার রীতিমতো লুংগী ডান্স দিতে ইচ্ছে করছে কিন্তু আপাতত ইচ্ছেটাকে সাইডে রেখে আপুর কাধে হাতটা রেখে বললাম
"কেনো আপু? তুমি কি কাওকে ভালোবাসো?"
"না। আমি অন্য যে কাওকে বিয়ে করে নেবো কিন্তু সায়ন ভাইয়াকে বিয়ে করতে পারবো না। "
"কেনো আপু?"
"কারণ সায়ন ভাইয়া অনেক রাগী। আমি উনাকে অনেক ভয় পাই। এতো রাগী মানুষের সাথে আমি সারাজীবন থাকতে পারবো না। "
"তাহলে এখন কি করবে?"
"আপাতত কিছুই বলবো না। সায়ন ভাইয়ার এক্সাম পর্যন্ত অপেক্ষা করবো ভাবছি। এতোদিনে যদি দেখি সায়ন ভাইয়ার রাগ আমি সামাল দিতে পারবো তাহলে ভেবে দেখবো। আর যদি মনে হয় সামলাতে পারবো না। তাহলে রাজি হবো না। "
তারমানে আপুর ভালো লাগলে বিয়েটা কনফার্ম। বুকটা চিনচিন করে উঠলো। তাহলে বিয়েটা হয়েই যাবে?
কিন্তু যদি আপু রাজি না হয়? তারমানে আমার কাছে এখনো সুযোগ আছে। সায়ন ভাইয়া যদি একয়দিনে আমায় ভালোবেসে ফেলে। আমার ভালোবাসা যাতে ব্যার্থ না হয় তার শেষ চেষ্টা করবো আমি।
🍁
আপু নিজের ঘরে চলে গেছে। আর আমি আয়নার সামনে চলে এলাম। খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছি নিজেকে। আমি দেখতে খুব খারাপ? কিন্তু সবাই যে বলে আমায় পুতুলের মতো সুন্দর দেখতে। কতো ছেলেরাও তো আমায় প্রপোজ করে। তাহলে সায়ন ভাইয়া কেনো ভালোবাসে না আমায়? না, এবার তো আপনাকে আমায় ভালোবাসতেই হবে। কালকে থেকেই আমার মিশন শুরু। এবার কিছুতেই হার মানবো না আমি। গেট রেডি মিস্টার সায়ন।
চলবে?.......
Perfect and excellent article dear