[bad iframe src]
বছর ঘুরে আবারো ফিরে এসেছে হিজরি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মুহাররমুল হারাম বা পবিত্র মহররম মাস। মহররম শব্দের অর্থ পবিত্র বা মর্যাদাপূর্ণ। হাদিসে মহররমকে 'শাহরুল্লাহ' বা আল্লাহর মাস বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত চারটি মর্যাদাপূর্ণ মাসের মধ্যে মুহাররম অন্যতম।
আশুরার দিনে রোজার গুরুত্ব : মহররম মাসের ১০ম দিবসকে 'আশুরা' বলা হয়। 'আশুরা' অর্থ দশম। এটি যেকোন মাসের দশম দিবস হতে পারে, তবে ইসলামি পরিভাষায় মহররম মাসের দশম দিবসটি 'আশুরা' নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আশুরার কিছু ফজিলতের কথা হাদিসে আছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘রমযানের পর সর্বশ্রেষ্ঠ রোযা হচ্ছে আল্লাহর মাস মুহাররমের রোযা ।’ (মুসলিম, হাদিস : ১/৩৬৮; তিরমিজি, হাদিস : ১/১৪৭)
এক বছরের পাপ মোচন : আশুরার রোজার কারণে আল্লাহ তাআলা আগের এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি আশাবাদী যে, আশুরার রোজা দ্বারা আল্লাহ অতীতের এক বছরের গুনাহ মাফ করবেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ১/৩৬৭; তিরমিজি, হাদিস : ১/ ১৫৮)
আগে বা পরে আরেকটি রোজা রাখা : আশুরার দিন রোজার রাখা পাশাপাশি আগের দিন বা পরের দিন রোজা কর্তব্য। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখো এবং ইহুদীদের সাদৃশ্য ত্যাগ করে আশুরার আগে বা পরে আরো একদিন রোজা রাখো।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১/ ২৪১)
রাসুল (সা.)-এর হাদিসের ওপর আমল করে কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে নফল রোজার বিষয়ে যত্নবান হন তাহলে তা অনেক সৌভাগ্যের বিষয়। আর ‘আশহুরে হুরুম’ বা সম্মানিত চার মাসের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে কেউ এ মাসে গুনাহ থেকে বাঁচতে বিশেষভাবে চেষ্টা করে এবং নেক আমলে বেশী যত্নবান হয়, তা তাঁর জন্য প্রভূত কল্যাণ বয়ে আনবে।
সুন্নাহপরিপন্থী কাজ পরিহার : কিন্তু সহজ আমলের পরিবর্তে একশ্রেণির মানুষ আনুষ্ঠানিকতা নির্ভর বিভিন্ন কাজের প্রতি বেশি আগ্রহী। যার অনেক কিছু অর্থহীন আনুষ্ঠানিকতাই শুধু নয়, নানা নিষিদ্ধ ও গর্হিত কাজও বটে। যেমন- তাজিয়া, শোকগাঁথার আবশ্যকীয় পাঠ, শোকপালন, মিছিল ও র্যালি বের করা, শোক প্রকাশার্থে শরীর রক্তাক্ত করা ইত্যাদি।
সামাজিক কুসংস্কার পরিহার : মহররম মাস নিয়ে সমাজে অনেক কুসংস্কারও বিদ্যামন।মহররম মাসে বিয়ে-শাদি থেকে বিরত থাকা ও এ মাসকে অশুভ মনে করার প্রবণতাও অনেকের মধ্যে দেখা যায়। এটা ঠিক যে, এ মাসে প্রিয়নবী (সা.)-এর দৌহিত্র ও সাহাবি হুসাইন (রা.) মর্মান্তিকভাবে শাহাদাত বরণ করেছেন। একজন মুসলিমের জন্য এ শোক সহজ নয়, কিন্তু একে কেন্দ্র করে শোক পালন করা, মাতম করা স্বয়ং নবী (সা.)-এর বর্ণিত শিক্ষার বিপরীত।
শোক প্রকাশে মহানবীর কথা : নিজ সন্তান মারা গেলে রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই চোখ অশ্রু সিক্ত, হৃদয় ব্যথিত, তবে আমরা মুখে এমন কিছু উচ্চারণ করি না, যা আমাদের রবের কাছে অপছন্দনীয়’।
মহানবী (সা.) আরো বলেছেন, ‘তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই, যারা মুখ চাপড়ায়, কাপড় ছিঁড়ে আর জাহেলি যুগের কথা বলে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১২৯৮)
ভিত্তিহীন কথা পরিহার করা : আশুরার দিন আরেকটি বর্জনীয় বিষয় এই যে, এ মাসের বিশেষত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে অনেক অমূলক কথা বর্ণনা করা হয়। অথচ ইতিহাসে এর কোনো ভিত্তি নেই। কেউ কেউ তা হাদিস হিসেবেও এসব ভিত্তিহীন কথা বর্ণনা করেন। বলাবাহুল্য, শরীয়তের দৃষ্টিতে এটাও মারাত্মক গুনাহ ও বর্জনীয় কাজ। না জেনে কোনো কথা বলা, আসর জমানোর জন্য ভিত্তিহীন কাহিনী বর্ণনা করা, ভিত্তিহীন চিন্তা-বিশ্বাস পোষণ করা এবং অপ্রয়োজনীয় ও গর্হিত আনুষ্ঠানিকতায় ব্যস্ত হওয়া অনেক সময় ইসলামী শরিআতের পরিপন্থী হিসেবে সাব্যস্ত। বিখ্যাত সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেছেন, ‘হে লোকেরা! যার কোনো বিষয় ভালভাবে জানা আছে সে যেন তা বলে আর যে জানে না সে বলবে, ‘আল্লাহই ভাল জানেন’। কারণ যা জানা নেই সে সম্পর্কে এ কথা বলা যে, আল্লাহ ভাল জানেন, এটা ইলমেরই অংশ। (তাফসিরে ইবনে কাসির, ৪/৪৪)
হাদিসে বর্ণিত মহররমে সংঘটিত দুটি ঘটনা : হাদিসের বর্ণনা মতে মহররমে মাসে দুটি ঘটনা সংঘটিত হয়। এক. এই দিনে আল্লাহর নবী মুসা (আ.) ও তাঁর সঙ্গীরা তৎকালীন জালেম শাসক ফেরাউন ও তার সৈন্যদের থেকে মুক্তি পেয়েছেন। আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে সমুদ্রের মধ্যভাগে রাস্তা তৈরি করে অপর পাড়ে নিরাপদে পৌঁছে দিয়েছেন। দুই. এই পথ দিয়ে অতিক্রমকালে আল্লাহ তাআলা ফেরাউন ও তার সৈন্যদেরকে সমুদ্রে ডুবিয়ে ধ্বংস করেছেন। এই দুটি ঘটনা বিভিন্ন সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
অনর্থক কাজ পরিহার ইসলামের সৌন্দর্য : মুসলিমদের জীবন-যাত্রায় দ্বীন পালনে বাধাগ্রস্ত করে এমন অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয় কাজ পরিহার করা উচিত। যেকোনো কাজের লৌকিকতা এবং আনুষ্ঠানিকতাও নিন্দনীয়। ইসলামি শরিআত পরিপন্থী কাজকর্ম থেকে বিরত থাকা চাই। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মানুষের ইসলামের সৌন্দর্যের একটি দিক, অপ্রোয়জনীয় কাজ ত্যাগ করা।’ (বেখারি ও মুসলিম)
ইসলামের শিক্ষা ও জীবনব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল, সহজতা ও স্বাভাবিকতা। কিন্তু মুসলিম উম্মাহর বর্তমান জীবন যাত্রায় এর বিপরীত দৃশ্যই বেশী দেখা যায়। সামাজজীবনের সবকিছুতেই অধিকাংশ মুসলিমের জীবন আনুষ্ঠানিকতা নির্ভর হয়ে গেছে। অথচ ইসলামের মূল শিক্ষা হলো সহজ সরল জীবন-যাত্রা। এটাই উম্মাহর পূর্বসূরী সালাফ-সালেহিনদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
ইসলামের মূল শিক্ষাগুলো মুসলিম সমাজ থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। অপ্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতায় ব্যস্ত হয়ে পড়ঝে সবাই। অনেকে ‘বিদআত’ তথা ইসলামী শরিআতের নেই এমন কাজও সওয়াবের আশায় পালন করছে। প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য, জীবনের সব ক্ষেত্রে ইসলামের মূল শিক্ষাকে অনুসরণ করা ও ধারণ করা। ইসলামের মর্যাদাপূর্ণ আশুরা দিনে শরিআত পরিপন্থী কাজ থেকে বিরত থাকা সব মুসলিমের কর্তব্য। আল্লাহ সবাইকে সঠিক উপলব্ধি দান করুন।
Perfect article. But @moli why have you not approve the sponsorship?