গল্পঃ ভাবি যখন বউ
পর্ব_10
লিমা আমার ডেস্ক থেকে চলে গেলো। আমি অবন্তীকে কল দিলাম। কল দিয়ে কথাটা বললাম, অবন্তী শুনেই বললো….
অবন্তীঃ হইছে আর ঢং করতে হবে না। টাকা হাতে পেলে তারপর বলবে।
এ কথা বলে মোবাইল টা রেখে দিলো। লিমা কিছুক্ষণ পর ম্যানেজার এর রুম থেকে বের হলো….
লিমাঃ এই জুয়েল!
আমিঃ হুম বল।
লিমাঃ আমি ম্যানেজারকে বলে দিয়েছি, দেখ উনি কি বলে।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
লিমাঃ হুম ম্যানেজার হয়তো তোকে ডাকবে, যদি জিজ্ঞেস করে টাকা কেন দরকার তাহলে বলবি যে বাসার কাজ চলতেছে।
আমিঃ ওকে।
লিমাঃ আরো একটা গুড নিউজ আছে!
আমিঃ কি?
লিমাঃ আজকে সানি আসবে, আমি ওরে নিয়ে আসার জন্য যাচ্ছি।
আমিঃ সানি কে?
লিমাঃ তোর দুলাভাই, আমার হবু,,,,,
আমিঃ বাহ! বিয়ের আগেই এতো প্রেম, বিয়ের পর কি করবি?
লিমাঃ তুই আর অবন্তী যেটা করবি আমরাও সেটা করবো।
আমিঃ আমাকে একটু বলিস, তোরা কি কি করস।
লিমাঃ মাইর খাবি ফাজিল। আচ্ছা আমি গেলাম,,,,
আমিঃ ওকে, আল্লাহ হাফেজ,,,
লিমা চলে গেলো। আমি বসে বসে কাজ করতে লাগলাম, দুপুর শেষ হয়ে বিকাল হয়ে গেলো, কিন্তু ম্যানেজারের কোনো খবিশ নাই। আমি ভাবতেছি টাকা হয়তো দিবে না।
ছুটি হওয়ার প্রায় ২০ মিনিট আগে পিয়ন আসলো আমার কাছে।
পিয়নঃ স্যার আপনাকে ডাকছে..
আমিঃ কে?
পিয়নঃ ম্যানেজার স্যার। এখন গিয়ে দেখা করেন।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে আপনি যান আমি আসছি।
এক বুক আশা নিয়ে ম্যানেজারের রুমে গেলাম,,,
আমিঃ স্যার আসবো?
ম্যানেজারঃ মি.জুয়েল! আসুন ভিতরে আসুন।
আমিঃ থেংক ইউ স্যার।
ম্যানেজারঃ হুম, বসুন।
আমি বসলাম।
ম্যানেজারঃ আপনার নাকি টাকার খুব প্রয়োজন?
আমিঃ জ্বি স্যার।
ম্যানেজারঃ কতো?
আমিঃ ৩ লক্ষ হলে হবে।
ম্যানেজারঃ এতো টাকা দিয়ে কি করবেন?
আমিঃ স্যার বাসার কাজ চলতেছে।
ম্যানেজারঃ কিন্তু মি.জুয়েল আপনি জয়েন করেছেন যে এখনো একমাস হয়নি। আমরা এই মুহূর্তে আপনাকে এতো টাকা দিতে পারি না।
আমিঃ কেন স্যার, অন্যান্য কোম্পানি গুলোতে তো যারা কর্মকর্তা তাদের কে লোন দেয়,আর মাস শেষে বেতন থেকে কেটে নিয়ে যায়। আমার ক্ষেত্রেও একই টা করিয়েন।
ম্যানেজারঃ হুম লোন দেয়, আমরাও দিই। কিন্তু সেটা পুরাতন লোকদের কে। আপনি যে এই অফিসে সারাজীবন কাজ করবেন তার কোনো গ্যারান্টি আছে?
আমিঃ সেটা না হয় ঠিক আছে, কিন্তু আমি তো আর এই মুহূর্তে চলে যাচ্ছি না। আর আমার সব কাগজপত্র আপনাদের কাছে আপনারা ওগুলো না দিলে তো আমি অন্য কোথাও চাকরি করতে পারবো না।
আমি যদি এই অফিস থেকে চলেও যাই তাহলে আপনাদের টাকা শোধ করে তারপরেই যাবো।
ম্যানেজারঃ সেটা নাহয় বুঝলাম। কিন্তু এতো গুলো টাকার জন্য আপনাকে কিছু ডোকোম্যান্ট জমা দিতে হবে।
আমিঃ কি?
ম্যানেজারঃ আপনাদের বাড়ির কাগজপত্র, যদি কোনো কারনে আপনি টাকা না দিয়ে চলে যান আমরা আপনার বাড়ি দখল করবো।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে দিবো।
ম্যানেজারঃ হুম, আর আপনার বর্তমান বেতন ২৫ হাজার টাকা, আমরা প্রতি মাসে ৫ হাজার কেটে নিবো। বাকি ২০ হাজার পাবেন।
আমিঃ ওকে স্যার।
ম্যানেজারঃ ওকে কালকে আসার সময় বাড়ির কাগজপত্র নিয়ে আসবেন।
আমিঃ আসি স্যার।
সালাম দিয়ে বের হয়ে গেলাম। তারপর বাসায় চলে গেলাম।
রাতে বসে বসে ভাবতেছি কি করে আব্বু আম্মুকে কাগজের কথা বলবো।
খাওয়ার সময় আব্বুকে বলেই দিলাম দলিলের কথা। বাবা কিছুই বললো না খাওয়া শেষ করে আমি রুমে চলে গেলাম।
কিছুক্ষণ পর আব্বু একটা ফাইল নিয়ে আমার রুমে আসলো। আমার হাতে দিয়ে বললো….
আব্বুঃ এখানে সব কিছু আছে। আমি জানি তুই খারাপ কিছু করবি না। আমি তোকে আমানত দিলাম,,,,,,
আমি কিছুই বললাম না। ফাইলটা রেখে দিলাম। অবন্তীকে কল দিলাম। কিছুক্ষণ কথা বলে মোবাইল রেখে দিলাম।
তারপর ঘুমিয়ে গেলাম,সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে অফিসে চলে গেলাম। সোজা ম্যানেজারের রুমে গেলাম। ফাইলটা উনার হাতে দিয়ে আমি আমার ডেস্কে গিয়ে কাজ করতে শুরু করলাম।
১১ টার দিকে পিয়ন এসে ডেকে নিয়ে যায় ম্যানেজার নাকি আমাকে ডাকতেছে।
ম্যানেজার এর রুমে গেলাম। উনি আমাকে একটা চেক কেটে দিলো।
আমি তো খুশিতে শেষ। যাইহোক ম্যানেজার থেকে ১ ঘন্টার জন্য ছুটি নিলাম। নাহলে বিকালবেলা ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাবে। আয়মানকে কল দিয়ে আসতে বললাম তারপর আয়মান আসলো।
ওরে নিয়ে টাকা টা ব্যাংক থেকে নিয়ে আসলাম। তারপর আবার অফিসে চলে গেলাম।
কাজ শেষ করে বাসায় চলে আসলাম। রাতে অবন্তীকে কল দিলাম।
অবন্তীঃ বলেন সাহেব! সারাদিন কোনো খবর ছিলো না আপনার এখন মনে হয়েছে তাই না?
আমিঃ সরি, কাজে ছিলাম তো তাই। তুমিও তো দাও নি
অবন্তীঃ মোবাইলে টাকা ছিলো না। তোমারে তো বলেছিলাম টাকা পাঠাতে বাট তুমি তো পাঠাও নি।
আমিঃ সরি, মনে ছিলো না।
অবন্তীঃ কয়দিন পর দেখা যাবে আমি যে তোমার বউ সেটাও মনে থাকবে না।
আমিঃ সেটা ভুলবো না। আচ্ছা শোনো।
অবন্তীঃ হুম বলো।
আমিঃ কালকে বিকালে একটু দেখা করিও তোমার সাথে খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে
অবন্তীঃ কি কথা এখন বলো।
আমিঃ মোবাইলে বলা যাবে না। সরাসরি বলবো।
অবন্তীঃ আচ্ছা ঠিক আছে। খাইছো?
আমিঃ না মাত্র বাসায় আসলাম। তুমি?
অবন্তীঃ না খাবো,একটু পর। তুমি খেয়ে ঘুমিয়ে যাও।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর খাওয়াদাওয়া করে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে ফ্রেশ হয়ে অফিসে চলে গেলাম।
এর মাঝে কয়েকবার অবন্তীকে কল দিলাম ওরে বললাম শাড়ি পড়ে আসতে।
বিকালবেলা আমাদের কলেজের সামনেই আসতে বললাম।
আমি কাজ শেষ করে সোজা কলেজের সামনে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ পর অবন্তী আসলো।
আমিঃ কি ব্যাপার এতো দেরি হলো কেন?
অবন্তীঃ এই সরি সরি, আসলে শাড়ি পরতে দেরি হয়ে গেছে।
আমিঃ মানে?
অবন্তীঃ তুমি তো জানো আমি শাড়ি পড়তে পারি না। কারো না কারো হেল্প লাগে। আজকে আম্মুও বাসায় নেই মামার বাড়ি গেছে। একটা কাজিন কে বলেছিলাম আসার জন্য। সে আসতে দেরি করে ফেললো। তাই আমারও দেরি হয়ে গেলো।
আমিঃ এতো কষ্ট হলে শাড়ি পরার কি দরকার ছিলো?
অবন্তীঃ না আসলে তো তোমার চেহারার দিকে তাকানো যেতো না। বলবে যে একটা রিকুয়েস্ট করেছি সেটাও রাখেনি।
আমিঃ আচ্ছা এবার বসো। বলো কি খাবে?
অবন্তীঃ আগে বলো তুমি যে এখানে আসছো আব্বু আম্মুকে বলেছো।
আমিঃ না বলার সময় পাইনি। অফিস থেকে সোজা এখানে চলে এসেছি।
অবন্তীঃ এটা কোনো কথা হলো?
আমিঃ সমস্যা নাই, আমি বাসায় গিয়ে বলে দিবো।
অবন্তীঃ এবার বলো কি এমন কথা যেটা মোবাইলে বলা যাবে না, সরাসরি বলতে হবে!
আমিঃ লোন তো পেয়ে গেছি।
অবন্তীঃ বাহ! আগে বলোনি কেন?
আমিঃ এখন তো বললাম। এখন কথা হচ্ছে আমি কয়দিনের ছুটি নিবো?
অবন্তীঃ ছুটি কেন?
আমিঃ আরে পাগল! বিয়ের জন্য কেনাকাটা করতে হবে, তারপর বিয়ের অনুষ্ঠান কোন দিন হবে সেটা তো ঠিক করতে হবে নাহলে আমি আন্দাজি ছুটি কিভাবে নিবো?
অবন্তীঃ তুমি এক সপ্তাহের জন্য ছুটি নাও।
আমিঃ এতো দিন দিবে না। সর্বোচ্চ দিলে ৩ দিন দিবে।
অবন্তীঃ তাহলে তোমার বিয়ে করার দরকার নেই।
আমিঃ আরে ধুর এগুলো কি বলো।
অবন্তীঃ ঠিকই তো বললাম, আচ্ছা তুমি কালকে অফিস করো। তারপরের কয়েকদিনের জন্য ছুটি নিও।
আমিঃ ওকে, শপিং কোন দিন করবে?
অবন্তীঃ শপিংয়ে যাবো পরশুদিন।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
অবন্তীঃ আচ্ছা শোনো বাসায় কেউ নেই, আমি চলে যাচ্ছি। রাতে মোবাইলে কথা হবে, আর পরশুদিন তো দেখা হচ্ছেই।
আমিঃ এখন চলে যাবা?
অবন্তীঃ হুম।
আমিঃ এই যাওয়ার আগে একটা দিয়ে যাওনা!
অবন্তীঃ কি?
আমিঃ….. (গাল দেখিয়ে দিলাম)
অবন্তীঃ মাইর খাবা, বিয়ের আগে এগুলো কিচ্ছু হবে না। আসি আমি,,,,
অবন্তী চলে যাচ্ছে আমি ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি আর ভিতরে ভিতরে হাসতেছি।
তারপর আমিও বাসায় চলে গেলাম। রাতে আব্বু আম্মুকে সব কিছু বললাম…
আম্মুঃ তোর বলা লাগবে না। অবন্তী আমাদের সব বলেছে।
আমিঃ ও, তাহলে তো ভালোই।
আম্মুঃ হুম, তুই ছুটে বেশি করে নিতে পারিস কিনা দেখিস।
আমিঃ এটাও বলেছে?
আব্বুঃ বলবে না কেন, ও কি তোর মতো হারামি নাকি?
আমিঃ আমি হারামি?
আম্মুঃ হুম আমাদের আদরের হারামি। যা বাবা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যা।
তারপর রুমে গিয়ে কিছুক্ষণ অবন্তীর সাথে কথা বললাম।
তারপর ঘুমিয়ে গেলাম। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে অফিসে চলে গেলাম। সোজা ম্যানেজার এর রুমে গেলাম…
আমিঃ স্যার আসতে পারি?
ম্যানেজারঃ মি. জুয়েল! আসুন।
আমিঃ ধন্যবাদ স্যার।
ম্যানেজারঃ হুম কি অবস্থা বলেন?
আমিঃ এইতো স্যার আছি মোটামুটি।
ম্যানেজারঃ কিছু বলবেন নাকি?
আমিঃ জ্বি স্যার একটা কথা বলার ছিলো।
ম্যানেজারঃ হুম বলেন।
আমিঃ স্যার আমার কয়েকদিন ছুটি লাগবে। আমি দরকার হলে পরের দিন গুলোতে কাজ বাড়িয়ে করে দিবো।
ম্যানেজারঃ সেটা নাহয় বুঝলাম। কিন্তু ছুটি কয়দিনের জন্য চাচ্ছেন?
আমিঃ স্যার ১ সপ্তাহ।
ম্যানেজারঃ এতো দিন কি করবেন?
আমিঃ আসলে স্যার আমার বিয়ে। (মাথা নিচু করে বললাম)
ম্যানেজারঃ congratulations,,,,
আমিঃ থেংক ইউ স্যার।
ম্যানেজারঃ তো বিয়ে কখন?
আমিঃ আপনার ছুটির উপর নির্ভর করবে।
ম্যানেজারঃ আচ্ছা ঠিক আছে দিলাম।
আমিঃ ধন্যবাদ স্যার, আপনার আর আপনার পুরো ফ্যামিলির দাওয়াত রইলো অবশ্যই আসবে। স্যার বিয়ের কার্ড এখনো বানানো হয়নি তাই দিতে পারিনি। আজকে গিয়েই বানাবো আর প্রথমটা আপনাকে দিবো।
ম্যানেজারঃ আচ্ছা ঠিক আছে দিয়েন। (হাসতে হাসতে)
আমিঃ ওকে স্যার আমি আসি তাহলে।
ম্যানেজারঃ আজকে কি কাজ করবেন?
আমিঃ জ্বি স্যার, কালকে থেকেই ছুটি কাটাবো
ম্যানেজারঃ ওকে যান।
তারপর বেরিয়ে গেলাম। নিজের ডেস্কে গিয়ে কাজ করলাম।
কাজ শেষ করে বাসায় চলে গেলাম। মনের মধ্যে অন্যরকম একটা আনন্দ বইতেছে।
রাতে খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিলাম।
আয়মানকে কল দিয়ে আমাদের বাসায় আসার জন্য বললাম। আব্বু আম্মুকেও রেড়ি হতে বললাম।
অবন্তীকে কল দিলাম…
অবন্তীঃ হ্যালো জুয়েল! তোমার নাম্বার অফ ছিলো কেন?
আমিঃ রাতে বন্ধ করে ঘুমাইছিলাম। রেড়ি হইছো?
অবন্তীঃ না হইতেছি।
আমিঃ আসার সময় আব্বু আম্মুকে নিয়ে আসিও।
অবন্তীঃ আমার কাজিন প্রেমা আসতে চাইছে।
আমিঃ ওকে নিয়ে আসো।
অবন্তীঃ হুম, কোথায় আসবো?
আমিঃ গ্র্যান্ড হক টাওয়ারের সামনে আসো, আমরা ওখানে থাকবো।
অবন্তীঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
আমিঃ ওকে।
কল কেটে দিয়ে আমিও ফ্রেশ হয়ে রেড়ি হয়ে গেলাম। তারপর একটা CNG ডেকে আব্বু আর আম্মুকে পিছনে বসতে দিলাম। আমি আর আয়মান সামনে দিয়ে বসলাম।
তারপর শপিংমলে চলে গেলাম। অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি অবন্তীর আসার কোনো খবর নাই। যাইহোক ৩০ মিনিট পর ওরা আসলো। বেয়াই বেয়ান একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো, কিছুক্ষণ কথাবার্তা বললো, আমারও ইচ্ছা হয়েছিলো অবন্তীকে জড়িয়ে ধরি কিন্তু পাব্লিক প্লেসে এগুলো করা যাবে না।
যাইহোক তারপর ভিতরে গেলাম। প্রথমে আব্বু আম্মুর জন্য কেনাকাটা শুরু করলাম।
আব্বুর জন্য পাঞ্জাবি, পায়জামা, গেঞ্জি, জুতা আরো কিছু জিনিষ নিলাম। আম্মুর জন্য শাড়ি, ব্লাউজ সহ আরো অনেক কিছু নিয়েছে। শ্বশুর শাশুড়ির জন্যও সেম জিনিষ নিলাম।
তারপর আয়মানকে নিতে বললাম কিন্তু সে নিচ্ছে না। অনেক জোরাজুরি করে একটা পাঞ্জাবি নিলাম, সেম কালারের আমিও একটা নিলাম।
প্রেমাকে বলার আগেই কেনাকাটা শুরু করে দিলো। আসলে মেয়েদের শখ একটু বেশিই, সেটা যদি জামাকাপড় এর উপর হয় তাহলে তো কথাই নাই।
প্রেমাও অনেক গুলো জামা নিলো। এরপর আমার সিরিয়াল আসলো।
আমার জন্য সব কিছু অবন্তী নিজেই চয়েস করলো। আব্বু আম্মুর জন্যও অবন্তী চয়েস করলো।
আমি অল্প কিছু নিলাম কারন টাকা টা হিসাবের মধ্যে রাখতে হবে পরে যাতে টানাটানি না হয়।
এরপর অবন্তীর পালা আসলো।
অবন্তী একটা নীল শাড়ি পছন্দ করলো।
আমিঃ বিয়েতে কেউ নীল পড়ে? বিয়েতে তো লাল পড়ে।
অবন্তীঃ আমার নীল পছন্দ। আর কোথাও লেখা আছে যে বিয়েতে শুধু লাল পড়তে হবে, অন্য কোনো কালারের শাড়ি পড়া যাবে না!
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে যেটা ভালো লাগে সেটাই কিনো।
অবন্তীর জিনিষ কিনতে কিনতে হয়রান হয়ে গেছি। অন্তত ৫০ টা দোকান গেছে। মেয়েদের যে এতো জিনিষ লাগে বিয়ে না করলে বুঝতাম না।
দীর্ঘ ৪ ঘন্টা শেষ অবন্তীর শপিং শেষ হলো। তারপর সবাই মিলে একটা হোটেলে গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম।
এরপর যে যার মতো বাসায় চলে আসলাম। আগামী কাল মেহমানদের দাওয়াত করতে হবে, পরশুদিন গায়ে হলুদ আর পরের দিন বিয়ে।
বাসায় এসে ঘুমিয়ে গেলাম। সারাদিন ঘুরাঘুরির কারনে ক্লান্ত লাগছিলো তাই শোয়ার সাথে সাথেই ঘুম চলে আসলো।
পরের দিন ঘুম থেকে উঠে আয়মানকে সাথে নিয়ে বিয়ের কার্ড বানাতে গেলাম। তারপর কার্ড গুলো রেড়ি করে আত্নীয় স্বজন, বন্ধু বন্ধক সবাইকে দাওয়াত দিলাম। আব্বুর হাতে অনেক গুলো কার্ড দিয়ে দিলাম উনার পরিচিত যারা আছে তাদের দাওয়ার দেওয়ার জন্য।
আয়মান ডেকোরেশন করার জন্য সব রকম ব্যবস্থা করা শুরু করে দিলো।
পরের দিন মানে হলুদের দিন, সকাল থেকেই বাসা সাজানো শুরু করে দিলো। চারপাশে লাইট, ফুল দিয়ে বাসাটা অন্যরকম ভাবে সাজানো হলো।
অনেক দিন পর এই বাসায় একটু কোলাহল শুরু হলো। আত্নীয় স্বজনরা এক এক করে আসতে শুরু করলো।
আমি আর আয়মান বাজারে গেলাম। গিয়ে বাজার করে নিয়ে আসলাম।
বিকালবেলা অবন্তীকে কল দিলাম, তারপরেই…….
বিকালবেলা অবন্তীকে কল দিলাম, কিছুক্ষণ পর অবন্তী কল ধরলো….
আমিঃ ওই কল ধরতে এতো দেরি করো কেন?
অবন্তীঃ ধুর বইলো না, বাচ্চাকাচ্চা গুলা পুরা পাগল করে দিচ্ছে। আমার সব জিনিষ এলোমেলো করে ফেলেছে।
আমিঃ ও,,,
অবন্তীঃ এই জুয়েল!
আমিঃ হুম বলো!
অবন্তীঃ কি করো?
আমিঃ এতোক্ষন কাজ করলাম তাই তোমার খবর নিতে পারিনি, তাই এখন কল দিলাম।
অবন্তীঃ ও আচ্ছা।
আমিঃ তুমি কি করো?
অবন্তীঃ এই তো পার্লারে যাবো রেড়ি হচ্ছি।
আমিঃ আমি আসবো?
অবন্তীঃ তুমি আসবা কেন?
আমিঃ তোমাকে কিভাবে সাজায় দেখবো, আর সাজালে কেমন লাগে সেটাও দেখবো।
অবন্তীঃ অতো দেখতে হবে না। সারা জীবন দেখছো, ভবিষ্যতেও দেখবা। সো টেনশন করার দরকার নেই।
আমিঃ হুম।
অবন্তীঃ আচ্ছা রাখি, পরে কথা বলবো।
কলটা কেটে দিলো। বিকাল থেকেই মেহমান আসতে শুরু করে দিয়েছে। একে একে সবাই আসলো। আয়মানও ব্যস্ত…..
আয়মানঃ কিরে তুই এখানে?
আমিঃ হুম, আচ্ছা তুই আমাদের বন্ধের সবাইকে কল দিয়ে দেখতো ওদের কি অবস্থা! কখন আসবে?
আয়মানঃ আচ্ছা দিতেছি। লিমা আসবে?
আমিঃ যাহ শালা! আমি তো লিমার কথা ভুলেই গেছিলাম। দাঁড়া কল দিই, ও না থাকলে আমার বিয়েও হতো না।
লিমাকে কল দিলাম,,,,,
আমিঃ হ্যালো লিমা!
লিমাঃ হুম দোস্ত বল।
আমিঃ কিরে তুই আসছিস না।
লিমাঃ আমি এসে কি করবো, তোরা সেরে নে। আমি নাহয় কালকে আসবো।
আমিঃ কালকে আসবি মানে!আমি এতো কিছু বুঝি না। তুই এক্ষুনি আসবি।
লিমাঃ কিন্তু আমার সাথে তো সানি আছে।
আমিঃ তো সমস্যা কোথায়? সানিরেও নিয়ে আয়।
লিমাঃ আচ্ছা ঠিক আছে,নিয়ে আসছি।
আমিঃ হুম তাড়াতাড়ি আয়।
কল কেটে দিলাম। তারপর আরো কিছু কাজ সেরে নিলাম। সন্ধ্যায় গোসল করে নিলাম। এরপর রেড়ি হলাম, আয়মান আমাকে সাজিয়ে দিলো। দুজনে একই পাঞ্জাবি পরলাম।
রাত ১১ টা পর্যন্ত গান বাজনা হলো। আমার বন্ধুরা হাকিম, ফাহাদ, ফারুক, সাদ্দাম সবাই উরাধুরা নাচলো। ওদের সাথেও আমিও নাচলাম। আসলে নিজের বিয়েতে নিজে নাচার মধ্যে অন্যরকম একটা আনন্দ আছে।
কিছুক্ষণ পর লিমা আসলো, আমি ওর সাথে কথা বলে নিলাম, ও সানির সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দেয়। তারপর ওদের ভিতরে যেতে বলি।
১১ টার পর হলুদের কাজ শুরু হলো। শুরুতেই আব্বু আম্মু দুজনে আসলো, আমাকে মিষ্টি খাইয়ে দিয়ে যখন হলুদ মাখতে যাবে তখনই দুজনে কাঁধতে শুরু করলো আমাকে জড়িয়ে ধরে।
আমিও নার্ভাস হয়ে গেলাম। তারপর আয়মান হাকিম ফাহাদ এসে উনাদের সব বুঝিয়ে আবারও পরিস্থিতি ঠিক করলো।
তারপর আয়মান, হাকিম, ফাহাদ, লিমা, সানি, সাদ্দাম একে একে এসে হলুদ মেখে গেলো। আত্নীয় স্বজন সবার হলুদ দেওয়া শেষ শুধু একজন ছাড়া,যে জীবনেও আমাকে হলুদ দিতে পারবে না। সে হচ্ছে আমার ভাই, ভাইয়া বেঁচে থাকলে হয়তো ভাইয়া সবার আগে আমাকে হলুদ দিতো।
ভাইয়ার কথা মনে পরতেই মন টা খারাপ হয়ে গেলো।
আমার মন খারাপ দেখে বন্ধুরা সবাই আসলো….
আয়মানঃ কিরে আপসেট কেন?
আমিঃ এমনি।
হাকিমঃ মামা একটা কাজ কর।
আমিঃ কি?
হাকিমঃ চল তোর বউকে হলুদ দিয়ে আসি।
আমিঃ আরে ধুর জামাই কখনো বউকে হলুদ দিতে দেখেছিস?
ফাহাদঃ আরে ব্যাটা কয়জন জামাই পারবে নিজের বউকে গায়ে হলুদ দিতে। চল এটা হবে অন্যরকম গায়ে হলুদ।
আমিঃ তারপরেও….
হাকিমঃ আরে ব্যাটা এতো কথা বলদ কেন? চলতো,,,
আমিঃ এতো রাতে গাড়ি কোথায় পাবি?
আয়মানঃ গাড়ি লাগবে না, বাইক আছে। আমার টা আর ফাহাদের টা নিলে হয়ে যাবে।
আমিঃ আচ্ছস ঠিক আছে চল।
এরপর বাইক নিয়ে আমি আর হারামি গুলা অবন্তীদের বাসার দিকে রওনা দিলাম। পুরো রাস্তা ফাঁকা, গভীর রাত হওয়ায় রাস্তায় গাড়ি তেমন নেই।
স্পিডে চালিয়ে অবন্তীদের বাসার সামনে চলে গেলাম।
গেইট পার হয়ে ভিতরে গেলাম। চারপাশে কেমন হইচই,আমার এক প্রকার লজ্জাও করতেছে।
হলুদের রাত কোথায় জামাই নিজের বাসায় থাকবে সেটা না করে বউয়ের বাসায় চলে এসেছে। মানুষ কি বলবে আল্লাই জানে।
আমাদের কে দেখে সবাই একটু অবাক হলো। আসলে হওয়ারই কথা, অবন্তীর বাবা এগিয়ে আসলো।
শ্বশুরঃ আরে জুয়েল! বাবা আসো আসো…
হাকিমঃ জুয়েলের অনেক ইচ্ছা হইছে, সে নাকি অবন্তীকে মানে আপনার মেয়েকে হলুদ লাগাবে।
শ্বশুর হাসতে লাগলো, হারমিটা আমাকে জায়গা মতো বাঁশ দিলো।
শ্বশুর সামনে দিয়ে হাটতে লাগলো আর আমরা পিছনে,,,
আমিঃ এই শালা আমি এসেছি নাকি তোরা নিয়ে আসছিস?
ফাহাদঃ ঠিক আছে চল তাহলে তোর হলুদ দেওয়া লাগবে না।
আমিঃ মানে কি! তাহলে নিয়ে আসলি কেন?
হাকিমঃ এই চুপ থাক। আমরা এসেছি ভালো কোনো মেয়ে পাই কিনা সেটা দেখার জন্য।
আমিঃ শালা, এতোক্ষনে তোদের মতলব বুঝেছি। দাঁড়া আমি সবাইকে বলে দিবো।
ফাহাদঃ তাহলে বলবো তুই বাসা থেকে চুরি করে এখানে এসেছিস। কাওকে না জানিয়ে, পিছনের দরজা দিয়ে চোরের মতো বের হয়ে এখানে এসেছিস।
আমিঃ ব্যাল্ক মেইল করছি।
আয়মানঃ এই চুপ থাক। আগে ভিতরে চল।
ভিতরে গেলাম। সবাই অবন্তী কে হলুদ লাগাতে ব্যস্ত। আমাদের কে দেখে একটু টাসকি খেলো।
ভিতরে গিয়ে বসলাম। অবন্তীর হলুদ লাগানো প্রায় শেষ পর্যায়ে। আর কয়েকজন বাকি আছে।
অবন্তীর আত্নীয়রা সবাই এসে আমাদের সাথে কথা বলতে শুরু করলো। যথেষ্ট আপ্যায়ন করা হলো।
অবন্তী আমাকে দেখে বার বার তাকাতে লাগলো। আর অবন্তীর দিক থেকে চোখ অন্য কোথাও ফিরাচ্ছি না। কারন অবন্তীকে অসাধারণ লাগছে।
আমরা গিয়ে কয়েকটা চেয়ার নিয়ে বসলাম। আমাদের কে হলুদ দেওয়ার জন্য ডেকে নিলো।
প্রথমে সাদ্দামকে পাঠালাম, তারপর ফাহাদ, হাকিম, আয়মান সব শেষে আমি।
আমি গিয়ে অবন্তীর পাশে বসলাম। কানে কানে বললাম…..
আমিঃ সারপ্রাইজ টা কেমন দিলাম?
অবন্তী মুছকি মুছকি হাসছে, একটু পর হাকিম এসে আমার কানে কানে বললো….
” বাটির মধ্যে যতো গুলো হলুদ আছে সব গুলো একসাথে মাখবি, যদি একটুও কম হয় তাহলে এখানে চিৎকার দিয়ে এমন বাঁশ দিবো কল্পনাও করতে পারবি না।
আমি পুরা আবুল হয়ে গেলাম। বাকি হারামি গুলোর দিকে তাকালাম ওরা ইশারায় সেটা করতে বললো।
কি করবো বুঝতে পারছি না। এমন সময় অবন্তী একটা মিষ্টি আমার মুখের সামনে তুলে ধরে। আমার দিকে তাকিয়ে মুছকি একটা হাসি দিলো, আমি খেয়ে নিলাম তারপর ওরেও খাইয়ে দিলাম।
তারপর অবন্তী অল্প একটু হলুদ নিয়ে আমার মুখে আর গলায় মেখে দেয়, আমি ওই হারামী গুলোর দিকে তাকালাম। সবাই ইশারায় বলতেছে সব গুলো লাগিয়ে দেওয়ার জন্য।
তারপর আমি অবন্তীকে ইশারায় অন্য দিকে তাকাতে বললাম, সে যখন অন্য দিকে তাকালো। আমি পুরো বাটির হলুদ নিয়ে ওর মুখে মেখে দিলাম। অবন্তী তো পুরা টাসকি খেয়ে গেলো। তারপর অবন্তী ওর মুখ থেকে কতো গুলো হলুদ নিয়ে আমার চোখ, কান গলা আর কোথাও বাকি রাখেনি।
হাকিম, ফাহাদ আর আয়মান আমার কাছে আসলো, তারপর ওরাও আমাকে পুরো শরীরে হলুদ লাগাতে শুরু করলো।
আয়মান আমাকে ডাক দিয়ে সাইডে নিয়ে আসে। গিয়ে দেখি বাকিরাও আছে।
আমিঃ কিরে এখানে নিয়ে আসলি কেন?
আয়মানঃ জুয়েল বন্ধু আরো একটা কাজ বাকি আছে।
আমিঃ আবার কি?
ফাহাদঃ তুই অবন্তীকে কোলে নিয়ে রুমে দিয়ে আসবি।
আমিঃ মানে কি! এতো মেহমানের সামনে ওরে কোলে নিলে সবাই কি বলবে?
হাকিমঃ আরে ব্যাটা লোকে বলুক তাতে তোর সমস্যা কোথায়? তুই তোর বউকে কোলে নিবি।
আমিঃ আরে না এটা হয় না।
ফাহাদঃ হবে হবে, সব হবে।
আমিঃ কেমনে?
হাকিমঃ সবার সামনে গিয়ে বলবো আপনাদের আদরের জামাই এখানে আসার আগে মদ খেয়ে আসছে, যার কারনে এগুলো করতেছে।
আমিঃ মানে কি! সবাই তো জানে আমি ভালোবেসে এগুলো করছি।
ফাহাদঃ তোমার ভালোবাসার উপর একটু পরই ঠাডা পড়বে।
আমিঃ না ভাই এগুলো করিস না। আমার একটা ইজ্জত আছে।
হাকিমঃ তোর ইজ্জতের গুষ্টি গিলাই। যেটা বলছি সেটা কর,,,
আমিঃ তুই অন্তত আমাকে সাপোর্ট দে,, (আয়মানকে)
আয়মানঃ আরে রাখ তোর সাপোর্ট, ওরা যেটা বলেছে সেটাই কর।
আমিঃ এই সাদ্দাইম্মা, তুই অন্তত আমার পক্ষে থাক।
সাদ্দামঃ আমি তোর পক্ষে থাকি আর ওরা সবাই আমাকে মারুক, দরকার নেই ভাই। ওরা যেটা বলেছে সেটাই কর।
পড়ে গেলাম মাইনক্যা চিপায়।
আমিঃ আচ্ছা দাঁড়া! একটু পর।
আয়মানঃ আগে স্টেজে চল।
তারপর আবারও স্টেজের সামনে আসলাম। দেখলাম অবন্তী ওর কাজিন আর বান্ধবীদের সাথে নাচতেছে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি,,,,
আয়মানঃ কিরে তুই নাচবি নাকি?
আমিঃ আর বাঁশ দিস না ভাই, এমনিতে যেগুলো দিছস সারা জীবন মনে থাকবে।
হাকিমঃ এই জুয়েল! মামা এবার যা,,, সবাই বাসায় চলে যাচ্ছে।
আমিঃ একটু পর যাই।
ফাহাদঃ শালা এখন যাবি নাহলে,,,,,
আমিঃ না না ভাই যাচ্ছি।
শালা তোরা বন্ধু নামের শত্রু, এতো সুন্দর করে সাজিয়ে আমাকে বাঁশ দিবে কল্পনাও করিনি।
যাই হোক ৫০০ গ্রাম সাহস নিয়ে অবন্তীর সামনে গেলাম।
সে আমাকে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো “কি”!!
আমি কোনো উত্তর না দিয়ে ওরে একটা টান দিতে কোলে তুলে নিলাম। বিয়ে বাড়ির সবাই তো আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
এদিকে আয়মান, হাকিম, ফাহাদ তালি দেওয়া শুরু করলো, ওদের তালি দেওয়া দেখে বাকিরাও তালি দেওয়া শুরু করলো।
অবন্তী লজ্জায় লাল হয়ে যায়, তারপর আমার বুকে মাথা লুকিয়ে ফেলে। আমি অবন্তীকে কোলে নিয়ে ওর রুমে নিয়ে গেলাম।
খাটের উপর রাখলাম। তারপর আস্তে আস্তে ওর কাছে গেলাম।
অবন্তীঃ ওই কি করো?
আমিঃ কিছু না, জাস্ট একটু!!!
অবন্তীঃ এই না, এখন না। গায়ে হলুদে এগুলো কেউ করে না।
আমিঃ সমস্যা কোথায়, কালকে তো বিয়ে হবেই।
অবন্তীঃ জ্বি না মশাই, কালকেই করিয়েন।
আমিঃ আজকে এখানে থেকে যাই?
অবন্তীঃ কোনো দরকার নেই। আজকে চলে যাও, কালকে তো দেখা হচ্ছেই।
আমিঃ তাহলে একটা আদর দাও।
অবন্তীঃ মাইর খাবা বলে দিলাম। যাও এখন কেউ চলে আসবে, দরজাও খোলা।
আমিঃ দাঁড়াও দরজা লাগিয়ে দিয়ে আসি।
যখন উঠে দরজার কাছে গেলাম। দেখলাম অবন্তীর কাজিনরাই সবাই আসতেছে।
ধুর সবাই জায়গায় আমি ব্যার্থ, অবন্তীর দিকে একরাশ হতাশা নিয়ে তাকালাম সে আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছে।
তারপর ওর রুম থেকে চলে আসলাম। বাইরে এসে সবার থেকে বিদায় নিয়ে আবারও আমাদের বাসার দিকে রওনা দিলাম।
আমি বাইকের পেছনে বসে আছি। আয়মান ড্রাইভ করতেছে আর বাকি হারামি গুলা আমারে নিয়া ট্রল করতেছে।
একটা ভালো লাগা কাজ করতে লাগলো। যদিও বাঁশ দিয়েছে কিন্তু আমারই উপকার হয়েছে।
যাইহোক অবশেষে বাসায় চলে আসলাম। এসে ওদের সবাইকে রুম দেখিয়ে দিলাম ঘুমানোর জন্য।
আমি রান্না ঘরে গেলাম, কোথাও হলুদ আছে কিনা দেখার জন্য।
হুম একটা ছোট বাটির মধ্যে অল্প একটু আছে।
আমি ওগুলো নিয়ে বের হয়ে গেলাম। সবাই হলুদ দিয়েছে শুধু একজন ছাড়া। তার কাছেই যাচ্ছি,,,,,
আমি ভাইয়ার কাছে যাচ্ছি। সব কিছু ভুলে গেলেও আমার ভাইয়ার কথা আমি ভুলিনি, এতো আনন্দের মধ্যেও ভাইয়ার শূন্যতা আমি অনুভব করি।
হাটতে হাটতে ভাইয়ার কবরের পাশে গিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম, তারপর বলতে শুরু করলাম।
“”” ভাইয়া কেমন আছিস? আমি জানি তুই অভিমান করে আছিস। প্লিজ ভাই অভিমান করিস না। আমি ব্যস্ত ছিলাম তাই আসতে দেরি হয়ে গেছে। কিন্তু বিশ্বাস কর তোর কথা আমার মনে ছিলো।
ভাইয়া তুই তো জানিস আজকে আমার গায়ে হলুদ। সত্যি বলতে আজকে গায়ে হলুদের কোনো কথা ছিলো না। কারন আমার বিয়েটা অনেক আগেই হয়ে গেছে। হুম অনুষ্ঠান ছাড়া হয়েছে, কিন্তু ছোট বেলার ইচ্ছা আর অবন্তীর জন্যই এই অনুষ্ঠান টা করতেছি।
ভাইয়া সবাই তো আমাকে হলুদ দিলো, তুই দিবি না? জানি তুই অভিমান করে আছিস কারণ আমি তোর অবন্তী কে বিয়ে করছি তাই।
কিন্তু বিশ্বাস কর আমি জীবনেও কল্পনা করিনি এমনটা হয়ে যাবে। আমারও ইচ্ছা ছিলো তোর মতো ভালো চাকরি পেয়ে তারপর মেয়ে দেখে বিয়ে করবো।
তোদের পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করবো এটাই ইচ্ছা ছিলো। আমি সব সময় ভাবতাম আমার বিয়েতে তুই কি পরিমাণ ব্যস্ত থাকবি।
তোর মনে আছে ভাইয়া তোর বিয়েতে সবার শেষে আমিই তোকে হলুদ দিয়েছিলাম আর পুরো বাটি দিয়ে দিয়েছিলাম। তুইও আমাকে দিয়েছিলি। তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরেই ঘুমিয়েছিস।
আজকে যখন আমি অবন্তীকে পুরো হলুদ মেখে দিলাম তখন অবন্তীর চেহারায় আমি তোকে দেখেছিলাম।
জানিস ভাইয়া আমার বুক ফেটে কান্না আসতে ছিলো কিন্তু কাওকে কিছু বুঝতে দিই নি।
ভাইয়া তুই তো আমাকে হলুদ দিতে যাসনি, তাই আমিই চলে আসছি, দিবিনা ভাইয়া আমাকে হলুদ? দেখ সত্যিই আমি আসছি। নিবি না আমাকে বুকে জড়িয়ে, ডাকবি না জুয়েল বলে। আর একবার ডাকনা ভাইয়া তোর মুখ থেকে আবার জুয়েল ডাকটা শুনতে চাই।
দেনা ভাইয়া আমাকে একটু হলুদ লাগিয়ে, অল্প একটু দে ভাইয়া। আচ্ছা তোর দেওয়া লাগবে না। আমিই তোকে লাগিয়ে দিচ্ছি,,,,,,
তারপর বাটি থেকে হলুদ গুলো নিয়ে কবরের উপরে ভাইয়ার মুখ বরাবর মেখে দিলাম। না পারলাম না আর চোখের পানি ধরে রাখতে। চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা দেখতে লাগলাম।
আমি ভাইয়ার কবরের কাছে বসে আছি এমন সময় আব্বু কল দিলো।
আব্বুঃ কিরে কোথায় তুই?
আমিঃ এই তো বাইরে আসছি।
আব্বুঃ একটু পর ফজরের আজান দিবে, তুই বাইরে কি করিস? তাড়াতাড়ি বাসায় আয়।
আমিঃ আসছি!
কল কেটে দিলো। আমি ভাইয়ার পাশে আরো কিছুক্ষণ বসে রইলাম তারপর উঠে বাসার দিকে হাটতে শুরু করলাম।
কিন্তু মনে হচ্ছে ভাইয়া আমাকে যেতে দিচ্ছে না, পেছন থেকে টানতেছে। আসলেই আমার ভাইয়া আমাকে যেতে দিচ্ছে না।
কারন আমি জানি এখানে আমার ভাইয়া খুব একা, যে ভাই বাসায় থাকতে আমাকে ছাড়া ঘুমাতো না রাতে কোথাও গেলে আমাকে সাথে নিয়ে যেতো। ভুতের ভয়ে বেশি রাতে বাসার বাইরে যেতো না সেই ভাই এখানে একা একা কি করে থাকবে।
আমি স্বার্থপরের মতো হাটা দিলাম। ভাইয়ার কথা যতো মনে পরছে ততোই চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে।
অতঃপর আমি বাসায় চলে আসলাম, বাবার সাথে কথা বলে নিলাম। বাবা হয়তো বুঝতে পেরেছে আমি কোথায় গিয়েছি কারন পাঞ্জাবিতে মাটি লেগে আছে,,, বাবা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো, উনার চোখেও আমি স্পর্শ পানি দেখলাম। তারপর বললো ” যা বাবা, অনেক রাত হয়েছে। ঘুমিয়ে পর”
আমি কোনো কথা না বলে রুমে গিয়ে আয়মানের পাশে ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালে ঘুম ভাঙ্গলো অবন্তীর কলে…..
অবন্তীঃ কি ব্যাপার, নতুন জামাই ঘুমাচ্ছে নাকি?
আমিঃ হুম!
অবন্তীঃ ভালো, ভালো! এখন উঠে যাও। অনেক কাজ আছে।
আমিঃ হুম, রেড়ি হবে কখন?
অবন্তীঃ মাত্র উঠলাম, কিছুক্ষণ পর পার্লারে যাবো সেখান থেকে সোজা কমিউনিটি সেন্টারে,,,,
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
অবন্তীঃ তাড়াতাড়ি উঠে যাও, আব্বু আম্মুকে একটু হেল্প করো।
আমিঃ ওকে।
অবন্তীঃ আচ্ছা রাখি এখন।
অবন্তী কল কেটে দিলো। আমি হারামি গুলার দিকে তাকালাম। একটার শরীর খাটে পা ফ্লোরে, সাদ্দাম হা করে আছে। হাকিমের লুঙ্গি মাথার উপরে উঠে গেছে।
আয়মানের মোবাইলটা নিয়ে সবার একটা ছবি তুললাম। শালারা এতোদিন আমাকে বাঁশ দিয়েছে। এবার দেখ আমি তোদের কিভাবে বাঁশ দিই।
ছবি তুলে ওদের ডেকে দিলাম। আমি চলে গেলাম ফ্রেশ হতে।
বাইরে এসে দেখি সবাই উঠে গেছে, আমি গিয়ে নাস্তা করে আবার রুমে আসলাম। কমিউনিটি সেন্টারে কল দিলাম কি অবস্থা জানার জন্য, সেখানে আব্বু আর মামা আছে। যাক তাহলে আর সমস্যা নাই।
হারামি গুলা এখনো ঘুমাচ্ছে। লাথি দিয়ে সবাইকে তুললাম। ওরা উঠে গেলো। নাস্তা করে নিলো।
লিমা আর সানিকে দেখতেছিনা, তাই কল দিলাম।
আমিঃ কিরে কই তোরা???
লিমাঃ আমরা তো কালকে রাতেই চলে আসছি। তোকে খুঁজেছিলাম। কিন্তু কোথাও পাইনি পরে আংকেল আন্টিকে বলে চলে আসছি।
আমিঃ ও আচ্ছা। তো এখন চলে আয়,,
লিমাঃ নারে আমরা সেন্টারে থাকবো।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আসিস,,,
হারামি গুলা নাস্তা করে আসলো।
আয়মানঃ জুয়েল!
আমিঃ বল,,
আয়মানঃ তোর তো দুলাভাই নাই?
আমিঃ না কেন?
হাকিমঃ তোরে গোসল দেওয়ার জন্য।
আমিঃ আমার গোসল কেন দুলাভাই দিবে?
ফাহাদঃ আরে বিয়ের গোসল দুলাভাইরা দেয়।
আমিঃ আমারটা আমিই দিবো।
হাকিমঃ চল আমরা দিয়ে দিচ্ছি।
আমিঃ তোরা কেন দিবি?
আয়মানঃ চুপ থাক, চল এখন।
ওরা জোর করে নিয়ে গেলো, তারপর টাউটারি করতে করতে গোসলটা শেষ করলো। রুমে এসে ফাটাফাটি করে রেডি করে দিলো। আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই ক্রাশ খেলাম।
কিছুক্ষণ পর এই হারামি গুলো আমার সামনে এসে হাত পেতে দাঁড়িয়ে আছে।
আমিঃ কিরে কি হইছে?
হাকিমঃ টাকা দে!
আমিঃ কিসের টাকা?
ফাহাদঃ গোসল করালাম যে!
আমিঃ অদ্ভুত গোসল করালে টাকা দিতে হবে নাকি? আমার কাছে কোনো টাকা নাই।
হাকিমঃ টাকা দিবি নাকি জায়গা মতো আমরা তোকে বাঁশ দিবো।
আমিঃ আরে তুই বাঁশ দিবি আমিই তোদের বাঁশ দিবো।
হাকিমঃ তাকি নাকি, দেখি তো তুই কি বাঁশ দিস।
আমি আয়মানের কাছ থেকে মোবাইলটা নিয়ে হাকিমের লুঙ্গি উঠা ছবিটা দেখালাম, ওরা তো হাসতে হাসতে শেষ।
আমিঃ টাকা আর নিবি?
হাকিমঃ…. (মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে)
তারপর সবাই রেড়ি হলো, আমি আর বন্ধুরা সবাই মেহমানদের কে গাড়িতে উঠিয়ে দিলাম।
সবার শেষে আমি আর হারামি গুলা একসাথে গেলাম।
আমি গিয়ে বসে আছি কিন্তু অবন্তীর কোনো খবর নাই, কল দিলাম সে নাকি এখনো পার্লারে।
মেয়েদের এতো কিসের সাজ আল্লাই ভালো জানে।
খাওয়াদাওয়া শুরু হলো, হারামি গুলা আমাকে রেখে খেতে বসে গেলো। ওদের খাওয়া দেখে আমারও খেতে ইচ্ছা করছে কিন্তু দুলা তো খাওয়ার সিস্টেম নাই।
প্রায় ১ ঘন্টা ৩৫ মিনিট পর অবন্তীকে নিয়ে আসলো। আমি ওরে দেখে হা করে তাকিয়ে আছি।
আয়মান এসে একটা টোকা দিয়ে বললো….
আয়মানঃ ওই হা করে না থেকে ওর পাশে গিয়ে বস। যা,,,
আমি গিয়ে ওর পাশে বসলাম, অবন্তী আমার কানের কাছে ওর মুখ এনে বললো..”””এই যে মি. জুয়েl