হুমায়ূন আহমেদ এর বাবা, ফয়জুর রহমানকে পাকিস্তানি আর্মিরা খুন করেছিল ১৯৭১ সালের ৫ই মে তারিখে , পিরোজপুরে । খুন করার পর তার ডেডবডি নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।
খবরটা পৌছায় হুমায়ুন আহমেদের ফ্যামিলির কাছে। একে একে ঘটনাটা জানেন হুমায়ুন আহমেদ,মুহম্মদ জাফর ইকবাল,আহসান হাবিব,তাদের মা আয়েশা ফয়েজ এবং অন্যান্য ফ্যামিলি মেম্বর রা।
তবে ফয়জুর রহমানের স্ত্রী, আয়েশা ফয়েজ এই খবর বিশ্বাস করেন নি। তিনি বলেন,এটা হতে পারেনা । নিশ্চয়ই কোথাও ভুল হচ্ছে।
এক রাতে আয়েশা ফয়েজ অদ্ভূত স্বপ্ন দেখলেন। স্বপ্নের মধ্যে
তিনি তার স্বামী ফয়জুর রহমান কে দেখতে পান। তিনি জানান "ওরা আমাকে এ্যারেস্ট করে পশ্চিম পাকিস্তানের করাচি জেলখানায় আটক করে রেখেছে। তোমরা একটু ধৈর্য ধরো। শীঘ্রই এখান থেকে কোনো এক উপায়ে বের হয়ে তোমাদের কাছে ফিরে আসব"।
স্বপ্নটার কথা আয়েশা ফয়েজ তার ছেলেমেয়েদের জানান। বলেন, যে, তোমাদের বাবা মারা যায়নি। পাক আর্মি তাকে এ্যারেস্ট করে জেলখানায় রেখেছে। জীবিত আছেন ।একদিন অবশ্যই ফিরে আসবেন।
ছেলেমেয়েরাও স্বপ্নের কথা শুনে আশায় বুক বাধে।
১৬ই ডিসেম্বর, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে সবাই ঘটনাস্থল অনুসন্ধানে যায়। পিরোজপুর নদীর পারে এক ব্যক্তিকে পাওয়া যায়, যে নদী থেকে ভাসমান একটি লাশ তুলে কবর দিয়েছিল।তার দাবি --লাশটা পুলিশ অফিসার ফয়জুর রহমানের হতে পারে।
আয়েশা ফয়েজের উপস্থিতিতে সেই কবর খোড়া হল। লাশের শরীরের কাঠামো, কাপড় চোপড়,জুতো এবং মোজা দেখে শনাক্ত করা হল যে এটাই ফয়জুর রহমান।
আয়েশা ফয়েজ সে রাতে তার সন্তানদের কাছে ক্ষমা চাইলেন। হুদাই একটা স্বপ্নকে সত্যি মনে করে বাচ্চাদের আশা দেওয়ার জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করলেন।
( 'লীলাবতীর মৃত্যু" বইতে এই ঘটনাটা পেয়েছি। আরো অনেক বই না ইন্টারভিউ তেও হুমায়ূন আহমেদ এই ঘটনাটা বলেছেন)
২.
সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ এর লালসালু উপন্যাস।
নোয়াখালি জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলায় জন্ম গল্পের নায়ক মজিদ এর। এই এলাকায় দারিদ্র্য অনেক, কিন্তু লোকজন অনেক বেশি ধর্মীয় রিচুয়াল মেনে চলে। লেখকের ভাষায় "শস্যের চেয়ে টুপির সংখ্যা বেশি"।
দারিদ্র্য এড়াতে মজিদ একটা উপায় বেছে নেয়। গাট্টি বোচকা বেধে দেশের অন্য এলাকায় অন্য একটা প্রত্যন্ত এলাকায় হঠাত করে হাজির হয় একদিন। গ্রামের বাশঝাড়ের মধ্যে একটি পুরনো পরিত্যক্ত ভাংগা কবর ( অথবা কবরের মতই দেখতে পরিত্যক্ত শিয়ালের গর্ত বা অন্য কোনো কিছু) আবিষ্কার করে। তারপর গ্রামবাসীকে ডাক দেয়।
সবাইকে জড়ো করে কেদে কেদে জানায়, " এই কবরটা মোদাচ্ছের পীর নামক জনৈক বুজুর্গ লোকের কবর। আপনারা গ্রামবাসীরা হলেন জাহেল,বে এলেম। মোদাচ্ছের পীরের কবরটাকে এভাবে ফেলে রেখেছেন!! পীর সাহেব আমাকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলেছেন,আমার কবরটাকে ভাল করে বাধাই করে এখানে খানকা বানাও। সেখানে রেগুলার মিলাদ পড়ানোর-সিন্নি দেওয়ার ব্যবস্থা করো। এসব না করলে তোমাদের গ্রামের অনেক ক্ষতি হবে।"
কুসংস্কারাচ্ছন্ন গ্রামবাসী মজিদের বানিয়ে বানিয়ে বলা স্বপ্নের সব কথা বিশ্বাস করল। পুরনো কবর সংস্কার করে পাকা মাজার বানাল। মজিদ হল সেই মাজারের স্থায়ী খাদেম। পরবর্তী কয়েক বছর এই মাজারের ব্যবসা করে মজিদ ঘর বাড়ি করল,গোলাভরা ধান গোয়ালভরা গরু করল, বিয়েও করল একাধিক।
লালসালু গল্পটা মোটামুটি ১৯৩০/১৯৪০ এর প্রেক্ষাপটে লেখা। তবে বর্তমানেও সিচুয়েশন খুব বেশি চেঞ্জ হয়নি। এখনো দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে স্বপ্নে পাওয়া ওশুধ, তাবিজ কবজ বা পীরের গল্প শোনা যায়।
অতি সাম্প্রতিক একটা নিউজ দেই। ময়মনসিংহের খামারগাও গ্রামের শাহীন নামের এক কবিরাজ স্বপ্নে করোনা সারানোর ওষুধের ফর্মূলা পেয়েছিলেন। না, ইব্রাহিম হুজুরের স্বপ্নে পাওয়া 1.q7+6=13 এর মত ফর্মূলা নয়, একেবারে আসল ফর্মূলা। কিসের সাথে কি মিশিয়ে কিভাবে করোনার ওষুধ বানাতে হবে, সব ইন্সট্রাকশন পেয়েছিলেন স্বপ্নে।
সেই ইন্সট্রাকশন অনুযায়ী তিনি ওশুধ বানিয়ে এক শুক্রবার জুম্মার নামাজের সময় স্থানীয় মসজিদে হাজির হন। সেখানে তিনি জানান, স্বপ্নে পাওয়া আমার এই করোনার ওশুধ ১০০% কার্যকরী।। এই ওষুধ মুসলমান রা খেলে সূস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু অমুসলিমরা খেলে মারা যাবে।
(https://www.bd-pratidin.com/…/country-vil…/2020/03/29/515126)
গত ১৮ই মার্চ আরেক ঘটনা ঘটে। গুজব উঠেছিল, চরমোনাই পীর সাহেব স্বপ্নে দেখেছেন, ৩ টা থানকুনি পাতা খেলেই করোনা থেকে মুক্তি মিলবে। রাতভর থানকুনি পাতার সন্ধানে হুলস্থুল পড়ে যায়।
(https://nagorikbarta.com/news-details/115064)
৩.
মানুষ সারাদিন যা যা চিন্তাভাবনা করে, ঘুমের মধ্যেও তার মাথায় সেই চিন্তাগুলাই ঘুরপাক খায়, সেগুলাই সে দেখে।
যে জিনিস সম্পর্কে তার কোনো আইডিয়া নেই, সে সম্পর্কে একজন স্বপ্নদ্রষ্টা কখনো স্বপ্ন দেখেনা।
উদাহরনস্বরূপ বলা যায়, একজন ট্রাক ড্রাইভারের বউ সব সময় স্বপ্ন দেখে, তার জামাই রোড এক্সিডেন্ট করে মারা যাচ্ছে। সে কিন্তু কখনো স্বপ্ন দেখে না যে আমার জামাই ইলেক্ট্রিক লাইনে কাজ করতে গিয়ে মরতেছে বা নাসার এস্ট্রনট হয়ে চান্দে ক্রাশ ল্যান্ডিং করে মরতেছে। তার মাথায় সব সময় যা থাকে, যা নিয়ে সে টেনশন করে, সে সেটাই স্বপ্নে দেখে।
সিমিলারলি, গ্রামের একজন জেলে'র( Fisherman) স্ত্রী স্বপ্ন দেখে, তার জামাই পানিতে ডুবে মারা গেছে। সে কিন্তু রোড এক্সিডেন্ট এর দুঃস্বপ্ন দেখবে না কখনো।
হিন্দি সিনেমা -সিরিয়াল যারা দেখে, তারা রনবীর কাপুর, দীপিকা পাড়ুকোন,রাধিকা আপ্তে,ক্যাটরিনা কাইফ, সালমান খানদের নিয়ে রোমান্টিক স্বপ্ন দেখে। তাদের নিয়েই স্বপ্নদোষ হয় :)
অন্যদিকে, কোরিয়ান সিরিয়াল লাভারদের স্বপ্নে কোরিয়ান নায়ক নায়িকারাই আসে, হিন্দি সিনেমার ক্যারেক্টর দের সে স্বপ্নে দেখে না।
ধার্মিক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও একই কথা এপ্লিকেবল। মুসলমান ধর্মবিশ্বাসের লোকেরা আল্লাহ,রসূল,হযরত শাহজালাল (রা) বা অন্যান্য পীরদের স্বপ্ন দেখেন। হিন্দু ধর্ম বিশ্বাসের লোকেরা মা দুর্গা,কালী,শিব, মহাদেব,বিশ্বকর্মাদের স্বপ্ন দেখেন। খৃষ্টান ধর্মবিশ্বাসের লোকেরা যীশুকে স্বপ্ন দেখেন। বৌদ্ধ ধর্মবিশ্বাসের লোকেরা গৌতম বুদ্ধকে স্বপ্ন দেখেন।
ব্যতিক্রম কিন্তু খুব একটা ঘটেনা। লালননিরহাটের তুলসী রাণী যদি দেবতা বিশ্বকর্মা কে স্বপ্ন না দেখে যীশুকে, কিংবা চাকমাদের দেবতা তাতারা রাবুগা কে, কিংবা আফ্রিকান সোয়াহিলি ধর্মের বোংগা বোংগা কে স্বপ্নে দেখতেন,সেটা হত একটা ব্যতিক্রম। এমনটা ঘটার চান্স খুব কম। কারন বোংগা বোংগা দেখতে কেমন, সে সম্পর্কে তুলসী রাণীর মাথায় কোনো ইনফরমেশন নাই। তাই তার ব্রেন ওই স্বপ্ন দেখাতে পারেনি। তার মাথায় যা যা তথ্য আছে, সেগুলাই একটু সাজিয়ে গুছিয়ে ব্রেইন স্বপ্নটা দেখিয়েছে।
(ব্যক্তিগতভাবে আমার ছোট জীবনে এখন পর্যন্ত আমি স্বপ্নের মাধ্যমে আল্লাহকে দেখেছি, ইবলিস শয়তানকে দেখেছি, চাদের সবুজ রংগের এলিয়েন দেখেছি, মিশরের দেবতা থোত কে দেখেছি, আলিফ লায়লার কস্টিউম পরা জিন দেখেছি। এমনকি wwe রেসলার আন্ডারটেকার কে একরাতে "মিনহা খলাকতুম অফিহা নুইদুকুম অমিনহা নুখরিজুকুম তা রাতান উখ্রা" বলে আমাকে কবর দিতে দেখেছি। এই সবগুলা সম্পর্কেই আমার ব্রেইনে কম বেশি তথ্য ছিল, তাই স্বপ্ন গুলা দেখতে পেরেছি। যাদের সম্পর্কে আমার ব্রেইনে কোনো তথ্য নেই, তাদের নিয়ে কোনো স্বপ্ন দেখিনি)
যারা বিজ্ঞান এর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করে, তারা ঘুমের মধ্যেও ওই সব জিনিস দেখে। রসায়নবিদ দিমিত্রি মেন্দেলিভ পর্যায় সারণী বানানোর সময় একদিন স্বপ্নে দেখেছিলেন, পরমানুগুলা একটা বাড়ির বিভিন্ন রুমে নিজেদের ভর অনুযায়ী বসে আছে। ( বর্তমান পর্যায় সারণী এভাবেই সাজানো হয়েছে। এর আগে পর্যায় সারণী পারমাণবিক সংখ্যা অনুযায়ী সাজানো হত)
বিজ্ঞানী কেকুল বেঞ্জিন ( C6H6) এর কাঠামো নিয়ে কাজ করছিলেন। একদিন তিনি স্বপ্নে দেখলেন, একটা সাপ নিজেই নিজের লেজ খাচ্ছে। ( বেঞ্জিনের চাক্রিক কাঠামো এইরকমই। ৬ টা কার্বন বৃত্তকার পথে একে অপরের সাথে আটকে আছে। লেজ কামড়ানো সাপের মতই কাঠামো)
সাহিত্যেও অনেক লেখককে পাওয়া যায়, যাদের স্বপ্নে সাহিত্যের ক্যারেকটার রা, কিংবা গল্পের কোনো লাইন এসে ভীড় করে। ইরানের কবি শেখ সাদী একটা গজল লেখার সময় ৪ নাম্বার লাইন মেলাতে পারছিলেন না কোনোভাবেই। গজলের প্রথম ৩ লাইন ছিল -- বালাগাল উলা বি কামা লিহি/কাশাফাত দোজা বি জামা লিহি/ হাসনাত জামে উ খেসা লিহি।
এই অসমাপ্ত গজল নিয়ে চিন্তা করতে করতেই তিনি ঘুমাতে যান। ঘুমের মধ্যেই ছন্দ মেলানো সুন্দর একটি চতুর্থ লাইন পেয়ে যান -- সাল্লু আলাইহে ওয়া আ লিহী। বর্তমান সময়ে এটা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় একটি গজল।
৪.
তবে ঘুমের মধ্যে মাথার "লজিক" অংশটা ঠিকমত কাজ করেনা, এ কারনে মানুষ স্বপ্নের মধ্যে মাঝে মাঝে অযৌক্তিক জিনিসপত্র ও দেখতে পারে। এ কারনে স্বপ্নের মধ্যে আমেরিকান রেসলার আরবিতে কথা বলে, পশুপাখি মানুষের ভাসায় কথা বলে , গরু ছাগল আকাশে ওড়ে, ম্যাথমেশিয়ান ৩৬০ ডিগ্রি কোণ ওয়ালা ত্রিভুজ ও আকাতে পারে, এমনকি পদার্থবিজ্ঞানী জ্বালানি ছাড়াই ইঞ্জিন বানিয়ে ফেলতে পারে ।
তবে ঘুম ভেংগে গেলে, স্বপ্নকে বাস্তব ভেবে ওসব চেষ্টা করে কোনো লাভ নেই। বাস্তবে আপনি যতবার যতগুলাই ত্রিভুজ আকান না কেন, কোনোটাতেই তিন কোণের সমষ্টি ১৮০ ডিগ্রির চেয়ে কম বা বেশি হবে না।
সুতরাং, স্বপ্নের মধ্যে আমরা যাই দেখি না কেন, স্বপ্ন হিসেবেই সেটা এনজয় করা উচিত। স্বপ্নে পাওয়া আইডিয়াগুলো বাস্তব জগতেও যদি মিলে যায়, ভাল, সেগুলা কাজে লাগানো যেতে পারে ( বিজ্ঞানী কেকুল বা মেন্দেলিফের মত)। কিন্তু যদি বাস্তব জীবনের সাথে না মেলে, তাহলে তার পেছনে অযথা দৌড়াদৌড়ি করা উচিত না।
স্বপ্নে আইডিয়ার বদলে যদি সলিড তথ্য পাওয়া যায়, তাহলে সেই তথ্য পুরাই উপেক্ষা করা উচিত। পাওলো কোয়েলহোর লেখা দ্য এ্যালকেমিস্ট বইয়ের নায়ক সান্টিয়াগো একদিন স্বপ্নে দেখল , মিশরের পিরামিড এর তলায় গুপ্তধন আছে। গুপ্তধন এর খোজে সান্টিয়াগো তার ধন সম্পদ বিক্রি করে, গার্লফ্রেন্ড কে ছেড়ে মরুভূমিতে পাড়ি জমাল। মিশরে এসে জানতে পারল,পিরামিডের তলে এমন কোনো গুপ্তধন নেই।
( দ্য এলকেমিস্ট এর রিভিউ এখানে -
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1587051278137882&id=100004990757830)
দ্য এ্যালকেমিস্ট গল্পটা যদিও কাল্পনিক, তবুও এমন স্বপ্নে পাওয়া গুপ্তধন এর খোজে উদ্ধার অভিযানের গল্প মাঝে মাঝেই শোনা যায়। ২০১৩ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের সন্যাসী শোভন সরকার স্বপ্নে দেখেছিলেন, একটি দুর্গের নিচে প্রচুর স্বর্নমুদ্রা আছে। তার স্বপ্নটাকে খুব গুরুত্ব দিয়ে ভারতের আর্কিওলজিকাল ডিপার্টমেন্ট ওই দুর্গের নিচে খোড়াখুড়ি শুরু করে। বলাবাহুল্য, কোনো স্বর্নমুদ্রাই সেখানে পাওয়া যায়নি।
নিউজ লিংক--
https://www.bbc.com/bengali/news/2013/…/131018_pg_india_gold
https://bengali.abplive.com/…/karnataka-govt-may-hunt-for-t…
৫.
মধ্যযুগের বেশ কিছু কাব্যের সূচনা অংশে কবিরা লিখেছেন, দেবতা বা দেবী আমাকে স্বপ্নে এই কাব্য গ্রন্থ লিখতে আদেশ দিয়েছেন। তাই আমি এই কাব্যটা লিখছি। মনসামংগল, অন্নদামঙ্গল, চন্ডীমংগল এবং আরো বেশ কিছু কাব্য লেখা হয়েছে এই ভাবে।
সেই সময়ে বোধ হয় দেব-দেবীরা বেশি করে মানুষকে দেখা দিতেন, এখন দেখা দেন না। ( অথবা, সেই সময়ে মানুষ কম শিক্ষিত ছিল,এখন বেশি শিক্ষিত হয়েছে। এখন স্বপ্নে দেবতার আদেশের কথা বললে হয়তো খুব বেশি মানুষ বিশ্বাস করবে না)
সাম্প্রতিক কালে বুয়েটের একজন ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার, মুশতাক মুহম্মদ আরমান খান মুন্না দাবি করছেন, স্বপ্নে আল্লাহ আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন, আমিই ইমাম মেহেদি। তোমরা সবাই আমার দলে যোগদান করে জিহাদ করো।
তার স্বপ্নের কথা খুব বেশি মানুষ বিশ্বাস করছে না। বরং তাকে মেসিয়া কমপ্লেক্স, জেরুজালেম সিন্ড্রম বা অন্য কোন মানসিল রোগে আক্রান্ত রোগী বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
বোঝা যাচ্ছে, আমরা বেশ শিক্ষিত - সচেতন হচ্ছি। কয়েকশো বছর আগেও ইমাম মেহেদি দাবিদারদের অনেক শিষ্য জুটে যেত। মেসিয়া কমপ্লেক্স এবং মুশতাক খান সম্পর্কে আরো জানতে দেখুন
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1678401145669561&id=100004990757830
২০১৪ সালে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার মুনপিরিত গ্রামে নাজমুল হোসেন নামের এক বাবা স্বপ্নে আদেশ পেয়ে তার ৩ মাস বয়সী মেয়ে নুসরাত কে মেরে ফেলেন। পুলিশ তখন তাকে এ্যারেস্ট করে পাবনা মানসিক হাসপাতালে পাঠায়।
( নিউজ লিংক-http://www.sylhetview24.net/news/details/National/18083)
লক্ষনীয়,নাজমুল ইসলামের মানসিক রোগের কথা এলাকাবাসী এবং পুলিশ বুঝতে পেরেছে। কিন্তু কয়েক হাজার বছর আগে ইনকা বা এ্যাজটেক সভ্যতায় স্বপ্নে আদেশ পেয়ে নিজের বাচ্চাকে জবাই করা খুব স্বাভাবিক কাজ বলেই গন্য করা হত। তাকে কেউ পাগল বলত না। ওই সকল সভ্যতায় প্রচুর নরবলির আলামত দেখা যায়।
নাজমুল ইসলামের এই নিউজে অবশ্য কোনো ডাক্তারের মতামত নেই। সুতরাং, তার মানসিক রোগটার নাম জানা যায়নি।
তবে গুগল করে পেলাম, প্রেগ্ন্যাসি এবং ডেলিভারির পর পর মায়েদের মধ্যে ( এবং কিছু ক্ষেত্রে বাবার মধ্যে) পোস্ট পার্টার্ম সিন্ড্রোম নামে এক মানসিক রোগ দেখা যায়। এই রোগে মা তার সন্তানকে মেরে ফেলতে চায়৷
হুমায়ুন আহমেদের মিসির আলি সিরিজের "জিন কফিল" গল্পটাও পোস্ট পার্টার্ম সিন্ড্রোম ( postpurturm) এর একটা উদাহরন,যেখানে মা তার বাচ্চাকে কুয়ার মধ্যে ফেলে হত্যা করে এবং বলে "আমি কিছু করিনাই,আমার ঘাড়ে থাকা জিন বাচ্চাটাকে মাইরা ফালাইছে"।
পোসট পার্টার্ম এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ সম্ভবত আন্দ্রিয়া ইয়েটস। ২০০১ সালে এই মা তার ৫ টা বাচ্চাকে বাথটাবের পানিতে ডুবিয়ে ডুবিয়ে মেরে ফেলে।
( https://en.m.wikipedia.org/wiki/Andrea_Yates)
সো, স্বপ্নে পাওয়া আদেশ সবসময় নিরাপদ হয়না,কখনো কখোনো ভীষন ক্ষতিকর আদেশ ও পাওয়া যায় স্বপ্ন থেকে। নাটোরের নাজমুল ইসলাম তার জ্বলন্ত উদাহরন।
৬.
লালমনিরহাটের সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রথিধর তেউতি গ্রামের বাসিন্দা তুলসী রাণী দাসী। তিনি একরাতে স্বপ্নে দেখলেন দুইজন দেবতা ( মহাদেব আর বিশ্বকর্মা) এসে তাকে আদেশ দিয়েছেন হাতি পোষার জন্য।
স্বপ্নের কথা তিনি তার স্বামী, দুলাল চন্দ্র রায়কে জানালেন। দুই জন দেবতার যৌথ আদেশের কথা শুনে দুলাল মিয়া সাড়ে ১৬ লাখ টাকা দিয়ে একটা জ্যান্ত হাতি কিনে ফেললেন। ট্রাক ভাড়া করে তার গ্রামে হাতি নিয়ে আসতে খরচ হল আরো ১ লাখ টাকা। এখন হাতি পোষার জন্য মাসে মাসে তার খরচ হবে ২৫ হাজার টাকা।
এই ফ্যামিলি এর আগেও স্বপ্নে আদেশ পেয়ে রাজহাস,ছাগল আর ঘোড়া কিনেছিল। সেগুলা পুষে দৃশ্যমান কোনো উপকার হয়নি।
কিন্তু মনে হচ্ছে, দেবতারা দিন দিন তাদের চাহিদা বাড়িয়েই যাচ্ছেন । ছোট রাজহাস দিয়ে শুরু,এরপর ছাগল, ঘোড়া, তারপর হাতি। নেক্সট টাইম দেবতারা কি চাইবেন? হাতির চেয়ে বড় কি আছে? ডাইনোসর? :)
ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় তার এই হাতি কেনার খবরটা ভাইরাল হয়েছে। অনেকে এটাকে বউয়ের প্রতি প্রেমের নিদর্শন হিসেবে দেখছেন।
তবে এটাকে ভিন্ন দৃষ্টিতেও দেখা যেতে পারে।
সম্ভাব্য দুটো ঘটনা ঘটতে পারে এখানে।
১) পীর মজিদ বা মুফতি ইব্রাহিমের মতই তুলসী- দুলাল কোন এক ধরনের ব্যবসা করতে পারে। স্বপ্নের পুরা ব্যাপারটা বানানো গল্প হতে পারে। মজিদের মোদাচ্ছের পীর বা মুফতি ইব্রাহিমের মামুন মারুফের করোনা ভাইরাসের মতই বিশ্বকর্মার স্বপ্ন হয়তো পুরাই কাল্পনিক।
স্বপ্নে পাওয়া দেবতার কথিত আদেশে কেনা হাতিকে কেন্দ্র করে এলাকায় হাতির মন্দির বানিয়ে ফেলতে পারে তুলসী-দুলালরা। আগামী কয়েকদিন তাদের মুভমেন্ট দেখেই আসল উদ্দেশ্য বোঝা যাবে
২) আয়েশা ফয়েজের মত মানসিক চাপ বা নাজমুল ইসলামের মত কোনো মানসিক রোগের কারনে তুলসী রাণী র্যান্ডম স্বপ্নকে হয়তো অনেক বেশি সত্য বলে মনে করছেন। কোনো মানসিক ডাক্তারের কাছে তাকে নিয়ে গেলে বোঝা যাবে, তিনি কোনো মানসিক রোগে ভুগছেন কিনা।
আপনি কি মনে করেন? তুলসী রাণীর ঘটনাকে আপনি কোন চোখে দেখছেন?
নিউজ লিংক--
https://www.thedailystar.net/…/%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%…
https://www.rtvonline.com/…/%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%…
good