-- ভাবী আপনার বাচ্চা শুটকির তরকারি দিয়েও ভাত খায়?!!!
-- হ্যাঁ খায়, আলহামদুলিল্লাহ।
--সেদিন শুনলাম করলা ভাজিও খায়। আমি শুনে অবাক হয়ে গিয়েছি। আমি নিজেই খেতে পারি না। বাচ্চারা তো দূরে থাক। আমার বাচ্চাদের জন্য ভাবী আলাদা রান্না করতে হয়। যেটা সেটা খেতে পারে না, অভ্যাস নেই তো।
-- জি অভ্যাস নেই বলেই আশ্চর্য লাগে। অথচ আমি যখন যা খাই সেটাই আমার বাচ্চাদের খাওয়াই। প্রত্যেকটা খাবারের গুণগত মান বাচ্চাদের সঠিক গ্রোথের জন্য জরুরি। এতে আশ্চর্য হবার কিছুই নেই।
-----------
কথা বলছিলাম পাশের ফ্ল্যাটের এক ভদ্রমহিলার সাথে যিনি পেশায় একজন শিক্ষক। আমার ছেলে প্রায়শই তার বাসায় খেলতে যায় তার বাচ্চাদের সাথে। আমিও তেমন বাধা দেই না। বাচ্চারা একা থেকে করোনার দিনে এমনিতেই বিরক্ত হয়ে যায়।
তো এই মহিলা যে কারো বাচ্চাকে একা পেলেই তার কাছ থেকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে কী কী খেয়েছে, বাসায় কে কী করছে, কে আসছে যাচ্ছে। সব খবর তার চাই-ই। পুরো বিল্ডিং এর সবাই মোটামুটি তার উপর বিরক্ত। আমার লুকানোর কিছু নেই বলে তেমন একটা আমলেও নেই না। এমনিতেও সবাই সমীহ করে আমি স্ট্রেইটফরোয়ার্ড কথা বলি বলে।
আমার ছেলের কাছে তিনি জেনেছেন যে রাগিব শুটকি তরকারি খায়, করলা খায়। ইভেন ভালো বা কম ভালো যাই-ই রান্না করি সেটাতে আমার বাচ্চাদের তেমন কোন আপত্তি নেই। বিশেষ করে ওদের বাবা সবসময় আমাকে ও বাচ্চাদের উপদেশ দেন যেন বাচ্চারা সব পরিস্থিতিতে মানিয়ে চলতে শেখে। ঐ মহিলার বাচ্চারা স্পেশাল খাবার খেতেই পারে তাই বলে অন্যের বাচ্চা স্বাভাবিক খাবার খায় বলে সেটা আশ্চর্যের ভঙ্গিতে উপস্থাপন করলেও তাতে ছিল তার নিজের ব্যাপারে শোঅফ করার প্রবণতা আর অন্যের দূর্বলতাকে খোঁচানো।
অথচ আমার বাচ্চারা সব খাবারে অভ্যস্থ, এটা আমার জন্য গর্বের। সব ধরণের খাবারে যেমন খাদ্যগুণ বিদ্যমান তেমনভাবে স্বাস্থ্যের পক্ষেও উপকারি। তার উপর সব ধরণের পরিস্থিতিতে মানিয়ে চলতে শিখছে একটু একটু করে। আমি আমার বাচ্চাদের ডিপেন্ডেবল বানাতে চাই যাতে কখনো দূরে গেলে আমার ভাবতে না হয়। নিজের কাজগুলো নিজে করতে পারার মাঝে আত্মতৃপ্তি ও সুখ আছে। সবসময় তো আর তারা আমার আঁচলের তলায় থাকবে না। পড়াশুনার জন্য, নিজের মান-উন্নয়নের জন্য দূরে থাকতেও হতে পারে। কিংবা সবসময় তাদের আগলে রাখার জন্য আমরা মা-বাবা বেঁচে নাও থাকতে পারি।
অনেকেই মেয়ে সন্তানকে কাজ শেখায় এটা ভেবে যে শ্বশুরবাড়িতে কাজ করতে হবে তাই আগে থেকেই শেখা উচিত। অথচ নিজে জন্যেই রান্না ও ঘরের কাজ জানা থাকা জরুরি। আলাদা করে কারো জন্য কাজ শেখার আদৌ কোন দরকার আছে বলে আমি মনে করি না।
আমাদের সোকল্ড ভদ্রসমাজে কে কত ভালো খাচ্ছে, পরছে কিংবা ঘুরছে এটা যেন শোঅফের বিষয়। যেন এটাতেই মানুষের স্ট্যাটাস বুঝা যায়। নিজেদের চলনে-বলনে-পরনে যে যতটা শোঅফ করছে তাকে তত বেশি উঁচুদরের ভাবা হয় কিংবা তারা ভাবে তাদেরকে এতে ভীষণ জাতের হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
আরেকদিন এক ভাবী তার অনেক গয়না আমাকে দেখাতে নিয়ে আসে। এক একটা দেখাচ্ছিল আর গল্প বলছিল। নীরব শ্রোতা হিসেবে আমার সুনাম আছে। চুপচাপ শুনছিলাম। তার ছোটবোন হঠাৎ কল দেয় এবং দূর্ভাগ্যবশত কল লাউডস্পীকারে থাকায় তার বলা কথা আমি শুনে ফেলি। বোনের গয়না বিয়েতে যাবার জন্য ধার এনেছিল ভাবীটা, ওগুলো পাঠাচ্ছে না বলে ফোন দিয়েছে। আমি হাসিনি মোটেও। বয়সের সাথে সাথে অভিজ্ঞতার ঝুলিও বড় হচ্ছে। আমার এমনসব সময়ে শুধু হাই উঠে, ঘুম পায়...
সবচেয়ে বেশি আফসোস লাগে তখনই যখন শিক্ষিত মানুষগুলো এমন আচরণ করে। শিক্ষার সঠিক আলোটুকু যদি মানুষের অন্তরকেই উদ্ভাসিত করতে না পারে তবে কীসের এত শিক্ষিত হবার অহংকার? বড়লোক কিংবা উঁচুদরের মানুষ হবার আগে ভালো মানুষ হওয়াটা জরুরি। আমরা মানুষ হতে পারলাম কই?
#মনোভাব_পাল্টান_পৃথিবী_সুন্দর_হোক