প্রতি ১০০ বছরেই কেন বিশ্বব্যাপী মহামারি দেখা দেয়?

2 4
Avatar for ilias1996
3 years ago

এগুলো কি শুধুই কাকতালীয়? নাকি প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নিচ্ছে? ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে যেখানেই মানুষের আনাগোনা কমেছে, পরিবেশ দূষণও কমতে শুরু করেছে। প্রকৃতি কি তাহলে তার ওপর আরোপিত অযাচিত দূষণ কমাতে নিজের পথ তৈরি করে নিয়েছে?

১৭২০ সালের প্লেগ, ১৮২০ সালের কলেরা, ১৯২০ সালের স্প্যানিশ ফ্লু, ২০২০ সালের করোনাভাইরাস... এভাবে প্রতি ১০০ বছরেই কেন বিশ্বব্যাপী মহামারি দেখা দেয়?

ফ্রান্সভিত্তিক ওয়েবপোর্টাল মেজুওল ডট কম একটা ইন্টারেস্টিং আর্টিকেল প্রকাশ করেছে সম্প্রতি। সেখানে তারা বলছে, প্রতি ১০০ বছরে একটা করে বৈশ্বিক মহামারি ছড়িয়ে পড়ছে। অন্তত গত ৪০০ বছরের ইতিহাস সে সাক্ষী দেয়। আসুন সংক্ষেপে জেনে নেয়া যাক সে ইতিহাস, তারপর না হয় প্রাসঙ্গিক আলাপে যাওয়া যাবে।

১৭২০ খ্রিষ্টাব্দ

বৃহৎ আকারে বৈশ্বিক বিবনিক প্লেগ দেখা গিয়েছিলো ১৭২০ সালে। এটাকে ‘দ্য গ্রেট প্লেগ অফ মার্সেইল’ বলা হয়। রেকর্ড অনুযায়ী এ ব্যাকটেরিয়াজনিত এ প্লেগে ১ লাখের বেশী মানুষ মারা গিয়েছিলো। ধারণা করা হয়ে থাকে, এ প্লেগের ব্যাকটেরিয়া মাছির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়েছিলো।

১৮২০ খ্রিষ্টাব্দ

বিশ্বের সর্বপ্রথম কলেরা মহামারি দেখা দেয় ১৮২০ সালে। এশিয়ার থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া হয়ে বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়েছিলো এ কলেরা। শুধুমাত্র এশিয়াতেই এক লাখের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছিলো। উক্ত ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত পানি পান করেই এ কলেরা ছড়িয়েছিলো।

১৯২০ খ্রিষ্টাব্দ

ঠিক ১০০ বছর আগে ১৯২০ সালে ঘটে যাওয়া এ মহামারি- পৃথিবীর ইতিহাসে সবচাইতে ভয়ঙ্কর মহামারি ছিলো। ৫০ কোটি আক্রান্তের মধ্যে ১০ কোটি মারা গিয়েছিলো এ স্প্যানিশ ফ্লুতে। এইচ১এন১ স্ট্রেইনের এই ইনফ্রুয়েঞ্জা জেনেটিক মিউটেশনের মাধ্যমে এ মহামারি ঘটিয়েছিলো। ঠিক এ ঘরানার বাকী স্ট্রেইনের ফ্লুর প্রাদুর্ভাব চীনেও দেখা গিয়েছে সাম্প্রতিককালে করোনাভাইরাস চলাকালে।

২০২০ খ্রিষ্টাব্দ

গত ৪০০ বছরের ইতিহাসে প্রতি শতকে মহামারির প্রাদুর্ভাবের কী শুধুই কাকতালীয়? সম্প্রতি চীনের উহান থেকে বিশ্বজুড়ে ছড়ানো করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখেরও বেশি মানুষ। মৃত্যুবরণ করেছেন ৮ হাজারেরও বেশী। না জানি এই লাশের মিছিল কোথায় গিয়ে থামবে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বিশ্বম্যাপ

গলছে বরফ- উন্মুক্ত হচ্ছে ভাইরাস

অ্যান্টার্কটিকার গ্লেসিয়ারগুলোকে বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর ‘প্রাকৃতিক ফ্রিজার’, যেখানে কয়েক হাজার বছরের পুরোনো মৃতদেহগুলো অনেকটা অক্ষত অবস্থায় বরফের নিচে চাপা রয়েছে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে গ্লেসিয়ারগুলো গলতে শুরু করায় উন্মুক্ত হতে শুরু করেছে সেই মৃতদেহগুলো। জমাটবদ্ধ বরফে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াগুলো এত বছর যাবত সুপ্ত অবস্থায় থাকলেও বরফ গলার সাথে সাথে সেগুলো পুনরায় জীবন্ত হতে শুরু করেছে।

বিজ্ঞানীরা এই অণুজীবগুলোর নাম দিয়েছেন ‘টাইম ট্রাভেলিং ভাইরাস’, ২০১৫ সালে তিব্বতের গলিত গ্লেসিয়ারের ওপর গবেষণা চালান সালে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের একটি দল। ১৫৪ ফুট গভীর গর্ত করে তারা ১৫ হাজার বছরের পুরোনো নমুনা সংগ্রহ করেন। ল্যাব পরীক্ষার পর সেই নমুনা থেকে ৩৩ ধরণের ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়, যার মধ্যে ২৮টি ভাইরাস বিজ্ঞানীদের কাছে একদমই নতুন। ২০১৬ সালে সাইবেরিয়ার তুন্দ্রা অঞ্চলে ১২ বছরের এক বালকের মৃত্যু ঘটে এবং একইসাথে আরও কিছু মানুষ অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন, যারা মূলত ‘বরফে জমাটবদ্ধ থাকা অ্যানথ্রাক্স ভাইরাস’ এ আক্রান্ত হয়েছিলেন। বিবিসির রিপোর্টে তথ্যগুলোর সত্যতা মিলেছে।

কালের বিবর্তনে উষ্ণতা বৃদ্ধির সাথে সাথে গলতে থাকবে অ্যান্টার্কটিকার আরও অনেক গ্লেশিয়ার এবং সমুদ্রের পানিতে মিশতে থাকবে নাম না জানা আরও কিছু ভাইরাস, যেখানে এক ‘করোনাভাইরাস’ নিয়ন্ত্রণেই বিজ্ঞানী ও গবেষকদের সর্বশক্তি ব্যর্থ হচ্ছে।

করোনায় আক্রান্ত হবার আগে ও পরের- পৃথিবীর পরিবেশ দূষণের স্যাটেলাইট থার্মাল ইমেজ

করোনায় আক্রান্ত হবার আগে ও পরের- পৃথিবীর পরিবেশ দূষণের স্যাটেলাইট থার্মাল ইমেজ গুগল করে চেক করে দেখুন প্লিজ। দেখলে মনে হবে, পৃথিবী নিজেই নিজেকে শান্ত করার মরণপণ চেষ্টা করছে। নিজেকে শান্ত করার এই চেষ্টায় একদিন হয়তো পৃথিবী নিজেকেই ধ্বংস করে ফেলবে। কী মনে হয়, কিছুদিন পর পর প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো কি অযথাই হয়? শুধু গজব বলে চালিয়ে দিলে হবে? সেই গজবের কারণ খুঁজে বের করতে হবে না?

প্রাসঙ্গিকভাবে আবারো ঐ একই প্রশ্ন এসে যায়, এগুলো কি শুধুই কাকতালীয়? নাকি প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নিচ্ছে? আরেকটা বিষয় তুলে ধরি তাহলে। গত কিছুদিন ধরে করোনার মহামারিতে ইতালি লকডাউন করে দেয়া হয়েছে। এই লকডাউনের ফলাফল কি জানেন? ভেনিসের নালার পানিগুলো পরিস্কার হতে শুরু করেছে। সেখানে মাছের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। হাঁস সাঁতার কাটছে। কোস্টাল এরিয়াগুলোতে ডলফিনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ, ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে যেখানে মানুষের আনাগোনা কমেছে, পরিবেশ দূষণও কমতে শুরু করেছে। প্রকৃতি কি তাহলে তার ওপর আরোপিত অযাচিত দূষণ কমাতে নিজের পথ তৈরি করে নিয়েছে?

অ্যানিমেইটেড ফিল্ম কুংফু পান্ডায় মাস্টার উগুয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছিলেন। সেটা মনে করিয়ে এ আলাপের ইতি টানছি আপাতত- ‘দেয়ার আর নো অ্যাক্সিডেন্টস্। ওয়ান অফেন মিটস্ হিজ ডেস্টিনি অন দ্য রোড হি টেকস্ টু অ্যাভোয়েড ইট।’

সবাই সতর্ক থাকুন। সতর্ক রাখুন। ভাল থাকুন। ভালো রাখুন। শুভকামনা ও প্রার্থনা অবিরাম।

2
$ 0.00
Avatar for ilias1996
3 years ago

Comments

subscribe please. i subscribed you

$ 0.00
3 years ago

okay dear I doing ss

$ 0.00
3 years ago