করোনা ভাইরাস আক্রান্ত এই পৃথিবীতে এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন মানুষের জীবনের মূল উদ্দেশ্য কি হওয়া উচিত? সবথেকে বড় প্রশ্ন কেন বেঁচে আছি? সবথেকে বড় প্রশ্ন আমি কি বেঁচে আছি?
সত্যি! আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য কি হওয়া উচিত?
গত ছয় মাস ধরে পৃথিবীতে তাণ্ডব করে চলেছে করোনাভাইরাস। কয়েক লক্ষ প্রাণ চলে গেল অপঘাতে। হ্যাঁ! অপঘাতে। এই করোনা ভাইরাসের আক্রমণ টাকে আমি অপঘাত ছাড়া আর কিছু বলতে পারছিনা।
চীনের উহান প্রদেশ থেকে সংক্রমিত হওয়া এই ভাইরাস টা চীন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চাইলে ওই অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে পারতো। কিন্তু তেমনটা হয়নি। ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে এই ভাইরাস বিস্ফোরণ করা হয়েছে বিশ্বব্যাপী। গোটা পৃথিবীর স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে গেছে। ভেঙে গেছে অর্থনীতি। লক ডাউন এর মধ্যে বন্দি গোটা বিশ্ব। আর এই বন্দিদশা থেকে জন্ম নিয়েছে উদ্বেগ আর হতাশা।
গোটা পৃথিবীতে করোনা ভাইরাসের কারণে কতজন মারা গেছে তার মোটামুটি একটা তালিকা আপনি সহজেই পেয়ে যাবেন। কিন্তু করনা ভাইরাস এর সাইড ইফেক্ট বিশ্বের কত মানুষের প্রাণ নিয়েছে তার হিসেব কোথায়? হিসেব নেই।
এই হিসেব প্রকাশ করতে বিশ্বের কোন স্বাস্থ্য সংস্থা অথবা সরকার আগ্রহী নয়। কিন্তু করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হবার উদ্বেগে যে প্রাণ গুলো হার্ট অ্যাটাকে চলে গেল তাদের পরিবার জানে বিষয়টা কতটা গম্ভীর। আমি সেই হতভাগ্যদের একজন। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের যন্ত্রণা। বুকে হাত দিয়ে মৃত্যুবরণ করতে দেখেছি আমার একমাত্র কাকাকে। সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষ। কয়েক সেকেন্ড আগেও সুস্থ ছিলেন। হঠাৎ বুকে যন্ত্রণা। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে শেষ।
সারা এলাকায় হাতে-পায়ে ধরেও একজন ডাক্তার জোগাড় করতে পারিনি ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য। শেষে কর্পোরেশনের ডাক্তার এসে দিল ডেথ সার্টিফিকেট।
আজ এই আর্টিকেল পড়ার পর অনেকেই বলবেন এটা একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে হওয়া ব্যতিক্রমী ঘটনা। আসলে ডাক্তার ভগবানের স্বরূপ।
হ্যা, ভগবানের স্বরূপ। তোমার সৃষ্টি করা সমস্ত ধর্মীয় ভগবান যেমন নিষ্ঠুর নির্দয় কঠোর তারই স্বরূপ। পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার ক্ষমতা সম্পন্ন নার্সিংহোম এর বিল তার আশীর্বাদ।
ঠিক আছে আমার ব্যক্তিগত এই ঘটনার কথা বাদ দিন কিন্তু এরকম আরো অনেকগুলো ঘটনার কথা আমার এবং আপনার জানা আছে। আমি যে কোন গল্প কথা বলছি না তার প্রমাণ আপনাদের অভিজ্ঞতা। উদ্বেগ জনিত কারণে হৃস্পন্দন বন্ধ হয়ে চলে গেল অনেকগুলো প্রাণ।
ডাক্তারের অভাবে। চিকিৎসার অভাবে। আরো কত প্রাণ গেছে শুধু শুধু।
হতাশার কারণে আত্মহত্যা করে প্রাণ ত্যাগ করেছেন এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। প্রত্যেকটা আত্মহত্যার পিছনে অবশ্যই খুনি রয়েছে। কিন্তু, আইনের বিচারে সেই খুনের তদন্তে অভিযুক্ত সবসময়ই হয় আত্মহত্যাকারী। পৃথিবীর সমস্ত আত্মহত্যা মানসিক অস্ত্রের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করা একটা দেহের শেষ পরিণতি।
কত পরিবার আর্থিক সংকটের খাদ্যের অভাবে অপুষ্টিতে ধুঁকতে ধুঁকতে শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তার হিসেব কে রাখে? সরকার রাখে? রাজনৈতিক নেতারা রাখে? ফেকু রাখে? পাপ্পু রাখে? দিদি রাখে? ওপার বাংলার মাসি পিসি সরকারের কেউ কি রাখ? কেউ রাখেনা।
কত যুবক বেকারত্বের জ্বালা জ্বলছে এবং ভবিষ্যতে জ্বলবে তার কোন স্ট্যাটিসটিকস নেই।
আমার মত বুড়ো-হাবড়ার হাফ দামরাদের কথা বাদ দিন। জীবনের সিকিভাগ থেকে অর্ধেক অতিক্রম করে ফেলেছি আমরা। পৃথিবীর সমস্ত দেশের সমস্ত সরকার আমাদের মত ভোটার মানবসম্পদ এর জন্য কতটা চিন্তিত তার প্রমান আপনি গত ছয় মাসে তো পেয়েই গেছেন। কিন্তু বিশ্ব মানবতার ভবিষ্যৎ আমাদের শিশুদের কথা কি বাদ দিন বলে, ছেড়ে দেওয়া যায়?
ছয় মাস ধরে লক্ ডাউন এর জন্য ঘরে বন্দী শিশুদের শৈশব যে উদ্দেশ্যহীন হয়ে গেল। ভোরের ঘাসে শিশির, প্রজাপতির পিছনে ছোটা, বিকেলের গোধূলির ধুলোমাখা, রাতে জোনাকির আলো দেখার ছেলেবেলা মেয়েবেলা কে ফিরিয়ে দেবে তাদের? তাদের কোন মহাপুরুষের হিতোপদেশ শুনিয়ে তৈরি হবে আমাদের ভবিষ্যৎ পৃথিবীর উদ্দেশ্য?
জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর!
ইবাদত কর সেই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের!
কে ঈশ্বর? কেন তাকে সেবা করতে যাব? করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত গোটা সৃষ্টি যখন কাতর আর্তনাদে চিৎকার করছে তখন কোথায় সেই সৃষ্টিকর্তা? হাসপাতালে মাটিতে শুয়ে হাঁসফাঁস করতে করতে মৃত্যুর কোল ঢলে পড়া ওদের সহপাঠির ওপর অলৌকিক শক্তির মালিক সর্বশক্তিমান কেন অবিচার করলেন? সমস্ত ধর্মের সৃষ্টিকর্তা কি এতটাই ভয়ঙ্কর এতটাই নিষ্ঠুর এতোটাই পাষাণ? এতটাই নির্দয়?
এই প্রশ্নের উত্তর কে দেবে ওদের? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করার পর কে তাদের শেখানোর যোগ্যতা পাবে জীবনের উদ্দেশ্য?
ধর্ম, এই ধর্ম সনাতন। ওই ধর্ম না পালন করলে জান্নাত নসিব হয় না। ওই ধর্মের পিতার পুত্র তোমার জন্য প্রাণ দান করেছেন।
ভন্ডামি! বুজরুকি। ধর্মের ব্যবসায়ীদের দোকানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মানত করা পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে ওরা কেন শুনবে জীবনের উদ্দেশ্য গড়ার হিতোপদেশ?
আমি মনে করি না এই যুগের বিশ্ব নাগরিক হওয়ার পরে আমার আর কোন যোগ্যতা আছে জীবনের উদ্দেশ্য কি হওয়া উচিত সেই সম্পর্কে কোন মন্তব্য প্রকাশ করার।
তবুও সাহস করে এইটুকু শুধু বলতে পারি, আমি আমার জীবনের উদ্দেশ্য পূরণে লক্ষ্যভ্রষ্ট। আগামী তোমরা মানুষ হবার উদ্দেশ্যটিকে জীবনে প্রাধান্য দিও। নিজেকে ঈশ্বর জ্ঞানে পুজো করে সৃষ্টিকর্তা স্বরূপ হওয়ার লক্ষ্য স্থাপন করো। তোমার পূর্বসূরী মানুষরা এই পৃথিবী কে তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করে সমগ্র প্রকৃতির প্রতি অত্যাচার করেছিল সেটা দমন করাকে মনে করো তোমার জীবনের উদ্দেশ্য। জীবনের আদর্শ করো, তোমার এবং তোমার সহ বিশ্ব নাগরিকদের জীবন আনন্দময় করে তোলার উদ্দেশ্যে। মারনস্ত্র, পরমাণু অস্ত্র, ভাইরাস অস্ত্র মুক্ত একটা পৃথিবী গড়ার স্বপ্নে নিজের জীবনের উদ্দেশ্য স্থির করো। জীবনের উদ্দেশ্য হিসেবে বলার সাহস রেখো, রাজা তুমি উলঙ্গ।
আমরা যেগুলো পারিনি সেই না পারা গুলোকে পারা তোমার জীবনের উদ্দেশ্য।
Thanks to everyone for reading my article