বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম।
পৃথিবীর প্রথম মৃত ব্যক্তি ব্যক্তি এবং প্রথম খুন হওয়া ব্যক্তি হলেন হাবিল, যিনি ইসলামের প্রথম নবী হযরত আদম (আঃ) এর পুত্র ছিলেন। তিনি নিজ ভাই কাবিল কর্তৃক হিংসার বশবর্তী হয়ে খুন হন।
উনার পবিত্র রওজা অবস্থিত সিরিয়ার দামেস্ক শহরের অদূরে জাবাদানি উপত্যকায় 'নবী হাবিল মসজিদ' এর পাশে।
হযরত আদম (আঃ) ও হযরত হাওয়া (আঃ) বেহেশত থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর তাঁদের সন্তান জন্মলাভ করতে থাকে। তখন হযরত হাওয়া (আঃ) এর গর্ভে সন্তান জোড়ায় জোড়ায় জন্মগ্রহণ করতো। প্রতি জোড়ায় থাকতো একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে।
মহান আল্লাহ তা'য়ালা কর্তৃক তৎকালীন সময়ে বিবাহের নিয়ম ছিল, একই জোড়ার ছেলে ও মেয়েরা পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে না। বিয়ে করতে হলে ভিন্ন জোড়ার কাউকে করতে হবে।
হাবিলের জোড়ার মেয়েটি অপেক্ষাকৃত কম সুন্দরী ছিল; যতটা না সুন্দরী ছিল তার বড় ভাই কাবিলের জোড়ার মেয়েটি। তাই কাবিল বেঁকে বসলো এবং নিজের জোড়ার সুন্দরী মেয়েটিকে বিবাহ করতে চাইলো।
এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে তাদের পিতা হযরত আদম (আঃ) উভয়কে আল্লাহর নামে কুরবানী দিতে বললেন এবং যার কুরবানী মহান আল্লাহ তা'য়ালার নিকট কবুল হবে তার ইচ্ছাই কবুল হবে।
হাবিল ছিল পশুপালক তাই সে একটি মোটাতাজা দুম্বা কোরবানির উদ্দেশ্যে পেশ করলো এবং কাবিল উপস্থাপন করলো কিছু সবজি ও শস্য, সে ছিল একজন কৃষক। তারা উভয়ে তাদের কোরবানির জিনিসসমূহ একটি উঁচু স্থানে নিয়ে রাখলো।
এমন সময় আকাশ হতে একটি আগুনের গোলা এসে হাবিলের দুম্বাটি পুড়িয়ে দিল অর্থাৎ হাবিলের কোরবানি কবুল হয়েছে। বলাবাহুল্য, তৎকালীন সময়ে এভাবেই মহান আল্লাহ তা'য়ালার নিকট কোরবানি কবুল হতো। এ দ্বারা মহান আল্লাহ তা'য়ালার পূর্বের আইন ই বহাল থাকলো অর্থাৎ হাবিল বিবাহ করবে কাবিলের জোড়ার মেয়েটিকে।
কিন্তু কাবিল এই ঘটানাকে নিজের জন্য চরম অপমান হিসেবে ভেবে নিল। সে প্রচন্ড রাগান্বিত হলো এবং হাবিলকে বললো, তার ইচ্ছা সে কোনোভাবেই পূরণ হতে দিবে না; প্রয়োজনে সে হাবিলকে হত্যা করবে। কাবিলের এমন কথায় হাবিল অনেক শিক্ষামূলক একটি প্রতিত্তর দিয়েছিল, 'আল্লাহ তাদের কোরবানিই কবুল করেন যাদের উদ্দেশ্য সৎ। আর তুমি আমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে আমার গায়ে আঘাত করলেও, আমি তোমাকে কিছু করবো না। কারণ আমি আমার প্রতিপালককে ভয় করি।'
হাবিলের এহেন কথায়ও কাবিলের রাগ কমলো না। সে ক্রোধ এবং হিংসার বশবর্তী হয়ে নিজের ভাই হাবিলকে হত্যা করে ফেললো। এভাবেই নারীঘটিত কারণে পৃথিবীর প্রথম হত্যা সংঘটিত হলো।
হাবিলকে হত্যা করে কাবিল অনেক দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো এবং নিজের ভুল বোঝতে পারলো কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গিয়েছে। এমতাবস্থায় লাশটিকে সে কি করবে তা বুঝতে পারছিলো না কারণ এর পূর্বে কোনো মানুষ পৃথিবীতে মৃত্যুবরণ করেন নি।
মহান আল্লাহ তা'য়ালা কাবিলকে এই বিপদের থেকে উদ্ধারের লক্ষ্যে সেখানে একটি কাক পাঠিয়ে দিলেন। কাকটি নিজ ঠোঁট দিয়ে ঠুকরে মাটি খুরতে লাগলো। এই দেখে কাবিলের টনক নড়লো এবং দাফন সংঘটিত করে উপস্থাপিত হলো পৃথিবীর প্রথম কবর।
শিক্ষাঃ হিংসা এবং ক্রোধ উভয়ই মানুষের ধ্বংস ডেকে আনে। একইসাথে কোনো নির্দিষ্ট নারীর প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা হিতে-বিপরীত হতে পারে এবং ইহা যুগে যুগে প্রমাণিত।।
প্রমাণস্বরূপ পবিত্র কুরআন শরীফে হাবিল ও কাবিলের ঘটনা সূরা মায়েদার মধ্যে বর্ণনা করা হয়েছে।
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ ابْنَيْ آدَمَ بِالْحَقِّ إِذْ قَرَّبَا قُرْبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنْ أَحَدِهِمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ مِنَ الْآخَرِ قَالَ لَأَقْتُلَنَّكَ ۖ قَالَ إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللَّهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ
অনুবাদ: এবং (হে নবী!) তাদের সামনে আদমের দুই পুত্রের বৃত্তান্ত যথাযথভাবে পড়ে শোনাও যখন তাদের প্রত্যেকে একেকটি কুরবানী পেশ করেছিল এবং তাদের একজনের কুরবানী কবুর হয়েছিল, অন্যজনের কবুল হয়নি। সে (দ্বিতীয়জন প্রথমজনকে) বলল, আমি তোমাকে হত্যা করে ফেলব। প্রথমজন বলল, আল্লাহ তো মুত্তাকীদের পক্ষ হতেই কবুল করেন।(সূরা মায়িদা,আয়াত-২৭)
لَئِن بَسَطتَ إِلَيَّ يَدَكَ لِتَقْتُلَنِي مَا أَنَا بِبَاسِطٍ يَدِيَ إِلَيْكَ لِأَقْتُلَكَ ۖ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ رَبَّ الْعَالَمِينَ
অনুবাদ: তুমি যদি আমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে আমার দিকে হাত বাড়াও, তবুও আমি তোমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে তোমার দিকে হাত বাড়াব না। আমি তো আল্লাহ রাব্বুল আলামীরকে ভয় করি।(সূরা মায়িদা, আয়াত-২৮)
إِنِّي أُرِيدُ أَن تَبُوءَ بِإِثْمِي وَإِثْمِكَ فَتَكُونَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ ۚ وَذَٰلِكَ جَزَاءُ الظَّالِمِينَ
অনুবাদ: আমি চাই, তুমি আমার ও তোমার উভয়ের পাপভার বহন কর এবং জাহান্নামীদের মধ্যে গণ্য হও। আর এটাই জালিমদের শাস্তি।(সূরা মায়িদা, আয়াত-২৯)
فَطَوَّعَتْ لَهُ نَفْسُهُ قَتْلَ أَخِيهِ فَقَتَلَهُ فَأَصْبَحَ مِنَ الْخَاسِرِينَ
অনুবাদ: পরিশেষে তার মন তাকে ভ্রাতৃহত্যায় প্ররোচিত করল, সুতরাং সে তার ভাইকে হত্যা করে ফেলল এবং অকৃতকার্যদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।
فَبَعَثَ اللَّهُ غُرَابًا يَبْحَثُ فِي الْأَرْضِ لِيُرِيَهُ كَيْفَ يُوَارِي سَوْءَةَ أَخِيهِ ۚ قَالَ يَا وَيْلَتَا أَعَجَزْتُ أَنْ أَكُونَ مِثْلَ هَٰذَا الْغُرَابِ فَأُوَارِيَ سَوْءَةَ أَخِي ۖ فَأَصْبَحَ مِنَ النَّادِمِينَ
অনুবাদ: অতঃপর আল্লাহ একটি কাক পাঠালেন, যে তার ভাইয়ের লাশ কিভাবে গোপন করবে তা তাকে দেখানোর লক্ষ্যে মাটি খনন করতে লাগল। (এটা দেখে)সে বলে উঠল, হায় আফসোস! আমি কি এই কাকটির মতো হতে পারলাম না, যাতে আমার ভাইয়ের লাশ গোপন করতে পারি! এভাবে পরিশেষে সে অনুতপ্ত হলো।
বলাবাহুল্য খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের জেনেসিস এর ৪র্থ অধ্যায়ে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।
Thanks for reading this article for so long.
If you like it Upvote Can give.