তোমায় পাব বলে

0 11
Avatar for hsnbijoy
4 years ago

#তোমায়_পাবো_বলে

#পর্ব_০৫

.

তাম্মি চৌধুরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

___"তুমিই নিনিতা?"

নিনিতার এই প্রশ্ন শোনার পর অস্বস্তি হতে লাগলো।ও প্রশ্নটা শুনে এতোটা অস্বস্তিবোধ করতো না।অস্বস্তিবোধ করার কারণ হচ্ছে তাম্মি চৌধুরী কটমট করে আশফাক চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে আছেন।আচ্ছা তাহিনের ভাইরাল হওয়ার বিষয়টা কি তিনি স্বাভাবিকভাবে নেননি?আশফাক চৌধুরী তো বললো এতে তাদের উপকার হয়েছে তবে কেনো তিনি এমনভাবে স্বামীর দিকে তাকিয়ে আছেন?নাকি অন্যকিছু?নিনিতা ইতস্তত করতে করতে বললো,

___"জ্বি আমি নিনিতা।"

তাম্মি কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে আশফাক চৌধুরীকে বললেন,

___"এ যদি নিনিতা হয়,তবে তুমি এর সাথে ফোনে কথা বলতে!একটা হাঁটুর বয়সী মেয়ের প্রেমে পড়তে তোমার লজ্জা করলো না!এতো আমার ছেলে তাহিনের চাইতেও ছোট।"

নিনিতা অবাক হয়ে গেলো।আশফাক চৌধুরী নিনিতার প্রেমে পড়েছে!এটা আদোও সম্ভব!

আশফাক চৌধুরী কাচুমাচু করে বললেন,

___"ছিঃ এগুলা কি বলো?নিনিতা তো আমার আম্মা।"

তাম্মি রেগে আগুন হয়ে বললেন,

___"যেই ধরা পড়লে ওমনি ও তোমার আম্মা হয়ে গেলো।বাহ!"

আশফাক চৌধুরী নিনিতাক বললেন,

___"নিনিতা আমি না তোমায় আম্মা ডাকি?"

নিনিতা জোরে জোরে মাথা নাড়ালো।যার অর্থ হ্যাঁ ওকে আশফাক চৌধুরী আম্মা ডাকে।

তাম্মি চৌধুরী কিছুটা নিভলো।তারপর বললেন,

___"ঠিক আছে,ঠিক আছে।এবারের মতো ক্ষমা করলাম।পরের বার এরকম কিছু শুনলে প্রথমে তোমাকে খুন করবো তারপর নিজে বিষ খাবো।কথাটা মনে থাকে যেন।"

আশফাক চৌধুরী একটু হেসে বললেন,

___"তোমার কাছে এ আজগুবি খবর গুলো কে দেয় বলো তো?এখন কি আমার নিনিতার প্রেমে পড়ার বয়স?হ্যাঁ নিনিতার মা হলে অন্য কথা ছিল।"

তাম্মি চৌধুরী রণচণ্ডী রূপ নিয়ে তার সামনে দাড়ালেন।আশফাক চৌধুরী ভুল মানুষের সামনে ভুল কথা বলে ফেলেছেন।তিনি গুটি গুটি পায়ে চোরের মতো ড্রয়িংরুম থেকে চলে গেলেন।

নিনিতা এতোক্ষণ হওয়া কোনোকিছুরই মানে বুঝতে পারলো না।

তাম্মি চৌধুরী নিনিতাকে নিয়ে সোফায় বসলেন।নিনিতার দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন,

___"কেমন আছো?"

কি সুন্দর হাসি!এই যে একটু আগে রাগারাগি করলেন এখন তার চোখে-মুখে কোনো রাগ নেই।অপরূপ সুন্দরী একজন মহিলা।

নিনিতা হাসি মুখে বললো,

___"আলহামদুলিল্লাহ।"

আশফাক চৌধুরী রুম থেকে বেড়িয়ে বললেন,

___"শুধু গল্প করবে।ওদিকে তোমার গুণী সন্তান যে তোমায় কখন থেকে ডাকছে শুনছো না?"

তাম্মি চৌধুরী সামান্য বিরক্তি নিয়ে উঠে চলে গেলেন।আশফাক চৌধুরী নিনিতার অপজিট সোফায় বসে বললেন,

___"তুমি কিছু মনে করো না।তাম্মি বুড়ো বয়সেও আমাকে হারানোর ভয় পায়।"

আশফাক চৌধুরী উচ্চস্বরে হেসে দিলেন।তার সাথে তাল মিলালো নিনিতা।

আশফাক চৌধুরী হাসিটা কোনোরকম ভাবে থামিয়ে বললো,

___"তোমার আন্টি বিয়ের আগে আমার বন্ধুদের থেকে খবর নিতো,আর এখন নেয় সুমনের থেকে।সুমন একটা গর্দভ ওর জন্যই তোমাকে এ সিচুয়েশনে পড়তে হলো।গর্দভটা তাম্মিকে বলেছে নিনিতা নামের এক মেয়েকে আমি ফুলের বুকে পাঠিয়েছি।কি কারণে পাঠিয়েছি,তোমার বয়স কত এসব নিয়ে কিছু বলেনি।সেই থেকে তোমার সাথে দেখা করার জন্য বাসায় ঝড় তুলেছে,গতকাল আমি ইচ্ছে করে তাম্মিকে জ্বালানোর জন্য তোমায় ভিডিও কল করেছিলাম।তুমি আম্মা মাইন্ড করো না।তাম্মির মাঝে ছেলেমানুষী এখনো রয়ে গেছে।ওর হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি।"

নিনিতা এতোক্ষণ মজা নিয়ে এসব কথা শুনছিলো।আশফাক চৌধুরীর শেষ কথা শুনে নিনিতা বললো,

___" না, না,না।আমি কিছু মনে করিনি।ক্ষমার কথা বলে আমাকে ছোট করবেন না।"

আশফাক চৌধুরী সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললেন,

___"জানো নিনিতা ভাইরাল হওয়ার বিষয়টা নিয়ে যদি তোমার কোনো ক্ষতি হতো।ক্ষতিটার কারণ সবার প্রথম আমি হতাম।"

নিনিতা আৎকে উঠলো।মুখের হাসিটা বিলীন হয়ে গেল।আশফাক চৌধুরী নিনিতার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন,

___"ভয় পেও না।এখন আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না।ইনফ্যাক্ট, সারাজীবন আমার দ্বারা তোমার এক চিমটি ক্ষতি হবে না।তাহিন যতই বিগড়ে যাক।ও তো আমারই সন্তান।যখন নিউজটা ভাইরাল হলো,মুহুর্তের মাঝেই আমি তোমার ঠিকুজিকোষ্ঠীর খবর নিয়ে নিয়েছিলাম।যখন বিষয়টা সবাই পজিটিভলি নিয়েছে তখন আমি শান্ত হয়েছি।মনে হয়েছে বিগড়ে যাওয়া ছেলেটা সঠিক পথে আসুক।কিছু একটা করুক আমি আর কয়দিনই বা থাকবো?তোমাকে ধন্যবাদ।কথাগুলো বলতাম না বলার কারণ জানো?"

নিনিতা মাথা নাড়ালো।যার অর্থ সে জানে।নিনিতা নিচু স্বরে বললো,

___"আমি জানি আঙ্কেল ছবিগুলো পোস্ট করার আগে আমার অনুমতি নেয়া প্রয়োজন ছিলো।আমার মাথায় তখন পজিটিভ চিন্তাভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছিলো।আর আমি তো কোনো জার্নালিস্টকে হেল্প করবো, কিংবা আপনার মান-সম্মান নিয়ে খেলবো,আমার এরকম বাজে উদ্দেশ্য ছিলো না।ওইরকম বাজে উদ্দেশ্য নিয়ে আমি ছবিগুলো তুলিনি।বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আব্বুকে বলে এসেছি আপনার আর আন্টির কাছে এটা নিয়ে ক্ষমা চাইবো।আ'ম সরি।"

আশফাক চৌধুরী হাসি দিয়ে বললেন,

___"ইটস ওঁকে, মাই চাইল্ড।

তাম্মক চৌধুরী এলে তারা তিনজন মিলে একসাথে হল্প গুজব করতে লাগলো।

______________________

খাওয়ার টেবিলে,,,

তাম্মি চৌধুরী তাহিনকে খাইয়ে দিচ্ছেন।আশফাক চৌধুরীর পাশে নিনিতা বসেছে।

তাম্মি চৌধুরী বললেন,

___"তোমার বাবা কি করেন নিনিতা?"

নিনিতা খাবার নাড়তে নাড়তে জবাব দেয়,

___"রিটায়ার্ড সিনিয়র ব্যাংকার।এখন এলুমিনিয়ামের বিজনেস করছেন।"

___"আর মা?"

নিনিতা শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাম্মিকে বললো,

___"মা নেই।আমি এতিম।"

তাম্মির অনেক খারাপ লাগলো।তাহিন অবাক হয়ে গেল, কারণ তাহিনের কাছে খবর আছে নিনিতার মা আছেন।আশফাক চৌধুরী নিনিতার দিকে একপলক তাকিয়ে কিছু বললো না।

তাহিন খাবার টেবিল থেকে উঠে গেল।কিছুক্ষণ বাদে আশফাক চৌধুরী উঠে গেলেন।টেবিলে তাম্মি চৌধুরী আর নিনিতা।নিনিতা মাথা নিচের দিকে দিয়ে প্লেটের দিকে তাকিয়ে আছে।চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে প্লেটে পড়লো।তাম্মি চৌধুরী নিনিতার মুখের সামনে লোকমা ধরলো।তিনি বললেন,

___"ভাত সামনে রেখে কাঁদতে নেই।"

নিনিতার গলা পাকিয়ে কান্না আসছে।কোনো এতিম, মা বিহীন সন্তান জানে,চোখের সামনে কোনো মা যদি তার সন্তানকে খাইয়ে দেয়।তখন মা বিহীন মানুষটার বুকের ভেতর কিভাবে মোচড় দেয়,রক্তক্ষরণ হয়।সেই সাথে কলিজাটা কেঁপে বুকের ভেতরে ব্যাথাগুলো পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে।

নিনিতা ভাতের লোকমা মুখে না তুলে কেঁদে দিলো।সেই সাথে তাম্মিকে জড়িয়ে ধরলো।তাম্মিও বাম হাত দিয়ে নিনিতার পিঠে হাত বুলিয়ে দিলেন।

বিকেলে তাম্মি চৌধুরী নিনিতাকে যেতে দিলেন না।একেবারে ডিনার করে তাহিন বাসায় পৌঁছে দিবে বলেছেন।তিনি এখন নিনিতার জন্য পিঠে বানাচ্ছেন।

তাহিন নিনিতাকে নিয়ে ছাদে গেল।নিনিতা দোলনায় বসলো।তাহিন বললো,

___"এখানে প্রতিরাতে আম্মু-আব্বু বসে।দুজনে একসাথে হাসে-খেলে-গান গায়।সে কি এক সুন্দর দৃশ্য তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না।দেখলে বুঝতে।"

নিনিতা বললো,

___"আপনি তাদের সন্তান হয়ে এরকম কেনো?"

তাহিন চুপ।নিনিতা দোল খেতে খেতে বললো,

___"থ্যাঙ্কিউ।"

তাহিন ভ্রু কুঁচকে তাকালো নিনিতার দিকে।নিনিতা বললো,

___"আন্টি বলেছেন।আমাকে বাসায় আনার প্ল্যানটা আপনার ছিলো।আন্টি শুধু আঙ্কেলকে ফোর্স করেছেন।"

তাহিন হালকা হেসে মাথার চুল চুলকালো।নিনিতা দোলনার একপাশে তাহিনকে বসার জন্য জায়গা দিলো।তাহিন ঝটপট বসে পরলো।নিনিতা আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,

___"জীবনের প্রথম আমি একটা পরিবারের সাথে এতোটা গভীরভাবে মিশতে পারলাম।এতোটা সময় স্পেন্ড করলাম,আঙ্কেল-আন্টি খুব ভালো মনের মানুষ।আমি কখনো মায়ের আদর পাইনি।আন্টি আমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছে,আধঘন্টা সময় নিয়ে মাথায় তেল দিয়ে দিলেন।বিকেলে ঘুমোনের সময় কাছে টেনে জড়িয়ে ধরলেন।ছাদে উঠার আগে আঙ্কেল আমার সাথে দাবা খেললেন।তিনি জিতেও হেরে গিয়ে আমাকে জিতিয়ে দিলেন।তাহিন আপনার জীবনটা কতটা মধুর তা উপলব্ধি করতে পারলাম।আপনাকে ভালোবাসার কতগুলো মানুষ আছে।জানেন আফসোস হচ্ছে আমার জীবনেও যদি এমন মানুষ থাকতো।ট্রাস্ট মি তাহিন, আমি তাদের কখনোই হার্ট করতাম না।সারাজীবন আগলে রাখতাম।"

তাহিন কিছু বললো না।চুপ করে রইলো।দোলনা থেকে উঠে নিনিতা ছাদের রেলিং ধরে অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে রইলো।বেশকিছু সময় কাটিয়ে তাহিন বললো,

___"নিচে যাওয়া যাক।"

নিনিতা অন্ধকারে চোখ মুছে তাহিনের সাথে নিচে নেমে গেল।

তাম্মি চৌধুরী নিনিতার জন্য পিঠেপুলি, পাটিসাপটা পিঠে বানিয়েছেন।আশফাক চৌধুরীকে দিয়ে আগেই খেজুরের রস আনিয়েছেন।নিনিতার বেশ ভালো লাগছে।

রাত এগারোটার দিকে

তাহিন নিনিতাকে বাসায় পৌঁছে দেয়ার জন্য বাসা থেকে বের হলো।নিনিতা বললো,

___"আপনি শুধু শুধু কেনো কষ্ট করতে যাবেন, ড্রাইভারই তো আমাকে বাসায় দিয়ে আসতে পারে।"

তাহিন ভ্রু কুঁচকে বললো,

___"আমি গেলে কি খুব বেশি অসুবিধে হবে?"

___"এমা অসুবিধে হবে কেন?আমি তো আপনার কথা ভেবে বললাম।"

___"আমার কথা এতো তাড়াতাড়ি ভাবতে হবে না।আমাকে নিয়ে পরে ভাবলেও চলবে।"

তাহিন গাড়ির দরজা খুলে নিনিতাকে বসার জন্য বললো।নিনিতা তাহিনের দিকে তাকালো।তাহিন এবার সাহস নিয়ে নিনিতার হাত ধরে বললো,

___"ভয় পেও না।তুমি যতোটা বাজে ভাবছো আমি ততোটা বাজে নই।কেউ কাছে না টানলে আমি কাছে যাই না।"

নিনিতা বসে পড়লো।তাহিন ড্রাইভ করতে লাগলো।দুজনেই চুপ।তাহিন বললো,

___"শুধু চুপ করেই থাকবে?কিছু তো বলো।"

সামনের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে পাশ ফিরে দেখে নিনিতা জানালার কাঁচে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছে।তাহিন গাড়ি থামিয়ে বেশ কিছুক্ষণ নিনিতার দিকে চেয়ে রইলো।নিনিতার মাথাটা নিজের কাঁধে রাখলো। তারপর বাঁকা হাসি দিয়ে গাড়ি চালাতে শুরু করলো।

নিনিতার বাসার সামনে গাড়ি থেমেছে প্রায় পনের মিনিট।তাহিন জানালা খুলে দিলো।তাহিন নিনিতার সিট বেল্ট বাম হাত দিয়ে খুলে ফেলল।নিনিতা এবার ঘুমের ঘোরে নড়েচড়ে তাহিনকে জাপ্টে ধরলো।তাহিনের মেরুদণ্ড বেয়ে শীতল ঠান্ডা হাওয়া বয়ে গেল।তাহিন ডান হাত দিয়ে নিনিতার খোঁপা খুলে দিলো।নিনিতার চুল গুলো ঠান্ডা হাওয়ায় উড়তে লাগলো।তাহিন নিনিতার গাল ছুঁতেই হাতটা কেঁপে উঠলো।নিনিতার গাল ঠান্ডা বরফ।তাহিন আস্তে আস্তে নিনিতাকে ডাকতে লাগলো,

___"নিনিতা,এই নিনিতা উঠো।তোমার বাসায় পৌঁছে গেছি।"

নিনিতা নড়েচড়ে তাহিনকে দেখে আর তাহিনের সাথে লেপ্টে আছে দেখে তাহিনকে ধাক্কা দিলো,নিজেও গাড়ির ভেতরে ছিটকে দূরে সরে গেল।তাহিন ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বললো,

___"কুল,কুল।কিচ্ছু হয়নি।আমি এক্সপ্লেইন করছি,তুমি ঘুমিয়ে গিয়েছিলে।বার বার জানালার সাথে বারি খাচ্ছিলে দেখে আমি তোমার মাথাটা আমার কাঁধে রাখি।আর তোমার বাসার সামনে এসে তোমাকে ডাকতেই তুমি নড়েচড়ে আমাকে ধরো।ইজ সিম্পল ম্যাটার।লিভ ইট।"

নিনিতা গাড়ি থেকে নামলো।তাহিনও নেমে দাঁড়ালো।নিনিতা তাহিনকে থ্যাংকস বলে চলে যাচ্ছিলো।তাহিন নিনিতাকে ডাক দিলো।তারপর বললো,

___"বলেছিলাম না তোমায়,বাজে ছেলে হতে পারি কিন্তু ধর্ষক নই।আমি বাঘ-ভালুক নই তোমার মতো রক্তে মাংসে গড়া মানুষ।"

কথাগুলো বলে তাহিন নিনিতাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেল।

______________________________________

একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে তাহিন,নবীন,নিনিতা।নবীন বেশ কিছুক্ষণ পরে বললো,

___"সমস্যা কি নিনিতা,একটা মাত্র অ্যালবামের গানই তো।"

___"ভাই আমি ক্যামেরার পিছনে থাকা মানুষ।ক্যামেরার সামনে না।তাছাড়া তাহিনেরও তো শুটিং আছে।"

নবীন তাহিনের দিকে তাকালো।তাহিন বললো,

___"আমার সমস্যা নেই।ডিরেক্টর কামাল শেখ অসুস্থ।তিনি চিকিৎসার জন্য জাপান গেছেন।আপাতত শুটিং বন্ধ।"

নিনিতা নবীনকে বললো,

___"ভাইয়া আমি তোমায় নতুন মডেলের সন্ধান দিতে পারি।"

নবীন রেগেমেগে বললো,

___"তুই চুপ থাক।একটা কথাও বলবি না।আসছে নতুন মডেল দিতে।মডেলয়ালি।"

___"ভাইয়া তুমি শুধু শুধু হাইপার হচ্ছো।তাহিন আমি ভাইয়ার সাথে একটু কথা বলবো।"

___"ইয়াহ সিউর।ইউ ক্যারি অন।"

তাহিন উঠে চলে গেল।

নিনিতা নবীনকে বললো,

___"পাগলামি করছো কেনো?তুমি জানো আমার মাঝে অভিনয় করার ক্ষমতা নেই,ফিলিংস নেই।হোয়াই ইউ ফোর্স মি?"

___"বিকজ আই ওয়ান্ট।তোর মাঝে ফিলিংস আসুক তুই ভালো থাক।আর এটা মাত্র তিন মিনিটের গান শুট করতে কতক্ষণ লাগবে শুনি?"

___"তুমি পাগল হয়ে গেছো।তুমি তো সবটাই জানো তবুও এই পাগলামি করছো।আমার রঙচঙ ক্যামেরার পিছনেই ভালো লাগে,সামনে না।তবুও তুমি যেহেতু ফোর্স করছো কাজটা আমি করতাম।কিন্তু তাহিন আর আমার মধ্যে কেমিস্ট্রি ভালো না।"

নবীনের মুখে হাসির ঝিলিক। নবীন বললো,

___"কেমিস্ট্রি ভালো হয়ে যাবে।ডোন্ট ওয়ারি।"

নিনিতা ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই নবীন বললো,

___"আই ক্যান নট সে লাভ কেমিস্ট্রি।ফ্রেন্ডলি হয়ে যাবি ওটা বললাম।"

___"ওকে ডান।"

নবীন নিনিতাকে খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরলো।এবার নবীনের পরিচয় দেই।নবীন হলো নিনিতার ফুফাতো ভাই।তিনি ছয়টি গান দিয়ে একটা অ্যালবাম বানাবেন।একটা গানে নিনিতা এবং তাহিনকে রাখতে চান।

তাহিন দূর থেকে দেখলো।নবীন নিনিতাকে জড়িয়ে ধরেছে।তাহিন কিছু বললো না।চট্টগ্রাম যেতে হবে।বাকি কাজ চট্টগ্রাম।

নিনিতা-তাহিন একসাথে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন গেল।রাতে ট্রেনেই চট্টগ্রাম যাবে।রাত ৯:৩০ নয়টায় ট্রেন ছাড়বে।মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠে খুব সহজেই নবীনদের পেয়ে গেল।নিনিতা অবাক হয়ে বললো,

___"ভাইয়া হানিমুনে যাচ্ছো নাকি?কেমন আছো ভাবি?"

নবীন বললো,

___"জোড় ভেঙ্গে বিজোড় হবার প্রচেষ্টায় যাচ্ছি।"

নবীনের স্ত্রী মাধুবী নবীনের কথায় অনেক লজ্জা পেল।নিনিতাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

___"আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো?"

___"আলহামদুলিল্লাহ।"

তাহিন নবীনের স্ত্রী আছে দেখে খুশি হলো।এরই মধ্যে কেউ একজন বললো,

___"আমি যে চিতায় এখনো উঠিনি তার খেয়ালকি আছে?"

নিনিতা 'আরে শিবুদা' বলে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলো।

শিবুকে হাত মিলাতে দেখে একটা মেয়ে কড়া গলায় বললো,

___"শিবু তুমি কার হাত ধরেছো?"

শিবু ভয়ে ভয়ে বললো,

___"পূর্ণা,উনি আমার দিদি।"

পূর্ণা মিষ্টি হেসে নিনিতাকে বললো,

___"নমস্কার দিদি।"

নিনিতা আহাম্মক হয়ে গেল।ও শিবুদার দিদি কবে হলো।মাধুবী নিনিতার কানে কানে বললো,

___"শিবুর গার্লফ্রেন্ড পূর্ণা।হেব্বি ডেঞ্জারাস।আমাদের শিবু এবার ফেঁসে গেছে।"

অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা চললো।বেচারা শিবু আড্ডাতে উপস্থিত থাকতে পারলো না।তাহিন আর নিনিতা পাশাপাশি বসেছে।অনেক আগেই তাহিন ঘুমিয়ে গেছে।নিনিতা তাহিনের মাথা নিজের কাঁধে রাখলো।তাহিনের নিঃশ্বাস ঘাড়ে পরতেই সেদিনের মতো ভয়ংকর অনুভূতি হতে লাগলো।হাত-পা বরফের মতো জমে আসছে।ভেতরটা কাঁপছে।নিনিতা কাঁপা কাঁপা হাতে তাহিনের মাথাটা সরিয়ে দিলো।

ট্রেনের সবাই ঘুমিয়ে গেছে।সামনে থাকা নবীন-মাধুবী কি সুন্দর একে অপরকে ধরে ঘুমিয়ে আছে।ট্রেন দ্রুত গতিতে সামনে এগুচ্ছে।

নিনিতাও এক সময় জানালার সাথে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে যায়।

রাত ১: ২০ মিনিটে তাহিনের ঘুম ভাঙে।সবাই তখন গভীর ঘুমে।তাহিন ব্যাগ থেকে পাতলা চাদর বের করে নিনিতাকে কাছে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরে।নিনিতার মাথা তাহিনের বুকে।নিনিতা ঘুমের ঘোরে তাহিনের বুকে নাক দিয়ে ঘষা দেয়।তাহিন তখন শক্ত হয়ে বসে থাকে।তারপর আস্তে আস্তে নিনিতার মুখটা উপরে তোলে।তারপর নিনিতার গালে ঠোঁট ছোঁয়ায়।তাহিনের মনের মাঝে একপ্রকার তরঙ্গ সঞ্চার ঘটে।ও নিনিতার চোখে-মুখে-নাকে ঠোঁট ছোঁয়ায়।পুরো মুখে দশ পনেরটা চুমু দিয়ে নিনিতাকে বুকের সাথে চেপে রাখে।

তাহিন মনে মনে বললো,

___"জীবনে তো আর কম পাপ করিনি।এর থেকে মারাত্মক পাপ করেছি।তবুও এটাকে ভয়ংকর বলে মনে হচ্ছে।"

কথাটা বলে নিনিতার কপালে চুমু দিলো।তারপর তাহিন চোখ বুজে রইলো।

.

.

চলবে,,,,,,,

1
$ 0.00
Avatar for hsnbijoy
4 years ago

Comments

মানুষ আশা নিয়েই সবসময় বেঁচে থাকে। তার আশা কখনোই পূর্ণ হবে না এটা জেনেও সে আশা নিয়েই বেঁচে থাকে। স্বপ্ন দেখে স্বপ্নকে সত্যি করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে

$ 0.00
4 years ago