#আমার_সংসার #লেখাঃ_নুসরাত_জাহান #সিজনঃ_২ #পর্বঃ_২৭_অন্তিম_পর্ব আপনি কি শুনছেন..? আমি কি বলছি..! আপনি শুনতে পারছেন নাকি অন্যমনস্ক হয়ে গেছেন। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, - তুমি বল, আমি শুনছি। - হুম তাহলে বলছি। মানুষের জীবনটা একটা রঙ্গমঞ্চ তাই না! সব সময় নিজের চাওয়া-পাওয়া বিসর্জন দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার নাম জীবন। জীবন এত সস্তা নয়। আমার জীবনের পিছনে একটা গোপন তথ্য আছে। বলব কিন্তু কেনো জানি সাহস পাচ্ছি না। যদি আপনি আমাকে ভুল বুঝেন তাহলে আমি মনে করব এটা আমার ভাগ্যে এটা লেখা ছিল। তবুও আমাকে কথাটা বলতে হবে। সত্যি কখনও চাপা থাকে না। আজ না হয় কাল প্রকাশ পাবে। আমি এখন যদি আপনাকে জানিয়ে রাখি পরে যদি সত্যিটা জানতে পারেন তবুও আমাকে ভুল বুঝবেন না। সোনিয়া টেনশন হচ্ছে খুব। তাড়াতাড়ি বল প্লিজ। - হ্যাঁ বলবো। তন্ময় নামের একটা ছেলের সাথে আমার রিলেশন ছিল কয়েক মাসের। প্রথমে আমি রিলেশন করতে রাজি হয়নি পরে তন্ময় সুইসাইড করার হুমকি দিয়ে আমাকে বাধ্য করে রিলেশনে আবদ্ধ হতে। তবে অনিচ্ছা স্বত্বেও আমি রিলেশন করেছি তন্ময়ের সাথে। রিলেশনের কয়েক মাস পরেই তন্ময়ের ভাবসাব আমার ভালো লাগছিল না। তার শুধু আমার শরীরের প্রতি ঝোঁক ছিল। কয়েকদিনের কথাবার্তায় বুঝতে পারি। তবুও আমি রিলেশন টিকিয়ে রাখার জন্য তন্ময়কে অনেকভাবে বুঝালাম। কিন্তু তন্ময়কে বুঝিয়ে কোন লাভ হয়নি। যতদিন যাচ্ছিল সে আরও বেশি করে আমাকে ইমোশনাল ব্লাক মেইল করতে লাগল। বারবার বলতে থাকে তার সাথে ফিজিক্যাল রিলেশন করতে না হলে সে কিছু একটা করে বসবে। এক পর্যায়ে আমি ভীষণ বিরক্ত হয়ে যাই কারণ তন্ময় বারবার আমাকে সুইসাইড করবে বলে হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল। তারপর থেকে কথা বলা কমিয়ে দিলাম। একদিন রাত প্রায় দু'টো বাজে তখন ফোনটা বেজে উঠল। প্রতিদিন রাত বারোটা বাজলেই ফোন বন্ধ করে রাখি আর সকালে ঘুম ভাঙার পরে ওপেন করি। কিন্তু ঐদিন কিভাবে যেন বন্ধ করতে মনে ছিল না তাই কল ঢুকছে দেখে মেজাজটা পুরোই চড়ে গেল। রাগান্বিত হয়ে ফোনটা হাতে নিলাম। স্ক্রিনের উপরে তন্ময়ের নামটা ভাসছে। এতরাতে সে কল দেয়াতে মেজাজটা আরও বিগড়ে গেল। কলটা ধরতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসল তন্ময়ের কন্ঠস্বর। তন্ময় হাসছিলো। আমি বললাম, - তুমি এতরাতে কল দিয়েছো কেনো..? সমস্যা কি তোমার..? - কোন সমস্যা নেই। তুমি কি ভেবেছিলে তোমাকে ছাড়া আমি অন্য কাউকে পাবো না...? তাহলে ভুল ভাবছিলে...? আমি তোমার মতো ভিক্ষারীর মেয়েকে নিয়ে পড়ে থাকব সেটা তুমি বুঝলে কি করে..? আমার পাশে তুহিনা বসে আছে কেনো জানো..? আমি বলছি তোমার জানার প্রয়োজন নেই তবুও বলছি। আজ রাতে বেড শেয়ার করব বলেই হাসলো তন্ময়। কথাটা শোনার পরে আমি তন্ময়কে বললাম, - ভালোই হয়েছে তোমার আসল চেহারাটা তুমি নিজেই সামলে নিয়ে আসলে। আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তোমার সাথে বেড শেয়ার করব। কিন্তু দেখ আল্লাহর কি অশেষ রহমত আমাকে তোমার মতো লম্পট চরিত্রের হাত থেকে বাঁচিয়েছে। জীবনে চলার পথে চলতে গিয়ে আমার এই মুখ তোমাকে আর কোনদিন দেখাবো না। আর তুমি যদি তোমার মায়ের বুকের দুধ খেয়ে থাকো আমাকে আর বিরক্ত করবে না বলেই কল কেটে দিলাম। কিছুদিন পরে সিমটা পাল্টে ফেলি। সেদিনের পর থেকে তন্ময়ের সাথে আজ অব্দি আমার দেখা হয়নি। সাহিলের চোখ বড় বড় হয়ে যায়। মনে হচ্ছে সোনিয়ার কাহিনীর সাথে সে আগে থেকেই পরিচিত। তাই সে সোনিয়াকে বলল, - সোনিয়া তোমাকে তন্ময় রেড রোজ বলে ডাকাত..? সাহিলের কথায় আমার মুখ হা হয়ে গেল। হতভম্ব হয়ে আমতা আমতা করে বললাম, - হ্যাঁ। কিন্তু আপনি কি করে জানলেন..? - কারণ তন্ময় আমার বন্ধু। সেদিন যে কল করেছিল সে তোমার এক্স বয়ফ্রেন্ড। - সাহিল প্লিজ এক্স বলে দয়া করে আমার ভালোবাসাকে অপমান করবেন না। আমি আপনাকে ভালোবাসি। অনেক ভালোবাসি। সারাজীবন বাসবো। আর তন্ময় ছিল আমার একটা দুঃস্বপ্ন। তাই আমাদের পবিত্র বন্ধনের মাঝে অশুভ ছায়াকে মনে করবেন না। সাহিল আমার কাছে এসে বুকে জড়িয়ে ধরে তারপর বলল, - তুমি কোন চিন্তা করো না আমি তোমাকে কখনও ভুল বুঝবো না বা ছেড়ে যাবো না। তুমি এতটুকু বিশ্বাস রাখতে পারো আমার উপরে। আরেকটা কথা সোহানের বিয়েতে আমরা যাচ্ছি না ঠিকাছে। - কেনো যাবেন না..? - তন্ময় আসবে বিয়েতে। তোমার মুখ থেকে পুরো ঘটনা শোনার পরে আমি চাই না যে তন্ময়ের সাথে আবার তোমার দেখা হোক। পুরনো প্রেম দেখা হলে একবার না একবার উতলে উঠবে তন্ময়ের ভিতরে। তোমাকে দেখলে এতদিনের চেপে থাকা আগুনটা আবার দাউ দাউ করে জ্বলবে। তাই আমি কোন কিছুর বিনিময়ে ঝামেলা চাই না। আর সবচেয়ে বড় কথা তোমাকে হারাতে চাই না। কারণ নিজের জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসি তোমায়। আচ্ছা সোনিয়া তুমি থাকো আমি আরমানের কাছে যাচ্ছি। - এখুনি যাবেন..? - হুম। না হলে পরে আরও দেরী হয়ে যাবে। রানীকে যেভাবেই হোক বাঁচাতে হবে। - আচ্ছা তাহলে যান জলদী আসবেন। মাথাটা নাড়িয়ে ঠোঁটের কোণে অস্ফুট হাসি এনে তারপর রুম থেকে বেরিয়ে যায় সাহিল। বেলা গড়িয়ে বিকেল হয়ে এলো সাহিল এখন আসছে না দেখে চিন্তার ছাপ চোখে মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে আমার। মনে হচ্ছে হাজার বছর সাহিলের সাথে দেখা হয়নি। বুকের ভেতরটা হাহাকার করছে। চারদিকটা অন্ধকারে ছেয়ে গেছে এখুনি বৃষ্টি শুরু হবে। সময় যত গড়াচ্ছে বুকের ভেতরটা আরও ছটফট করছে। মোবাইলটা হাতে নিলাম সাহিলকে কল করব কিন্তু সাহস পাচ্ছিলাম না। কল করব কি করব না এটা নিয়ে দ্বিধা-দন্দে পড়ে গেলাম। আরেকটু অপেক্ষা করি কারণ সে তো কাজের জন্যই বের হলো। তাই এভাবে তাকে বিরক্ত করাটা ঠিক মনে করিনি বলে মোবাইলটা ওয়াডড্রবের উপরে রাখলাম। ভালো লাগছে না দেখে বিছানার উপরে কাৎ হয়ে শুয়ে পড়তেই ঘুমিয়ে যাই। কারও স্পর্শে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি সাহিল। স্বপ্ন ভেবে ভ্রুক্ষেপ না করে আবার শুয়ে পড়তেই কারও আওয়াজ শুনে চমকে উঠলাম। এবার পুরো ঘুম গায়েব হয়ে গেল। বসা ছেড়ে উঠে বসে তাকিয়ে দেখি রানী। রানীকে দেখে চমকে উঠলাম। বিছানা দিয়ে নিচে নেমে রানীকে জড়িয়ে ধরলাম অনেকক্ষণ। সাহিল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসছে। রানী তুই আমার কাছে দাঁড়িয়ে আছিস আমি তো ভাবতেই পারছি না। আমি সাহিলের দিকে তাকালাম। সাহিল বলল, - সোনিয়া তোমাকে বলেছিলাম না যেভাবেই হোক রানীকে উদ্ধার করে আনবো। দেখ আমি সফল হয়েছি। নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে। এতটাই গর্বিত যেটা বলে বুঝানো যাবেনা। তবে রানীর সাহসিকতার জন্য আমরা রানীকে এ নরক থেকে বের করে আনতে পেরেছি। সোনিয়া তুমি কল্পনাও করতে পারবে না আমরা সকাল থেকে রাত আব্দি রানীকে বের করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে গেছি। কতবার যে পুলিশ নিয়ে ওই বাড়িতে সার্চ করিয়েছি তুমি চোখে না দেখলে বিশ্বাস করবে না। আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে ওরা রানীকে ফ্লাটের গোপন রুমে বন্দি করে রাখে। তিনবার খোঁজ করার পরে রানীকে না পেয়ে আমরা যখন চলে আসতে নিব তখনি ছোট্ট একটা কাগজের টুকরা বিছানার পাশের টেবিলের উপরে গ্লাস চাপা দিয়ে রাখা ছিল। অনেক বুদ্ধি খাটিয়ে কাগজের টুকরাটা নিলাম। বাহিরে এসে খুলে দেখি কাগজে লেখা, আপনারা আমাকে পাবেন না আমাকে এখানেই গোপন রুমে আটকে রেখেছে। রাত ৮ টার পরে আমাকে এই জায়গা থেকে অন্যত্র নিয়ে যাবে এমন কিছু শোনা যাচ্ছে। আমি কখনও এই নরক থেকে বের হতে পারবো না। বুঝতে পারলাম এটা রানীর লেখা। ফ্লাট থেকে বেরিয়ে আমরা দূরে ফাঁদ পেতে ছিলাম যে কখন ওরা রানীকে নিয়ে নামবে। আরমান পুলিশ ফোর্স খবর দিয়ে রেখেছিল। রাত তখন ৮.৪৫ বাজে তখনি দুইজন লোক রানীকে নিয়ে নিচের দিকে নামতেই আগে থেকে পুলিশ প্রস্তুত রাখা ছিল তারা এসে সবাইকে এ্যারেস্ট করে নিলো। সেখান থেকেই রানীকে নিয়ে থানায় গেলাম এফ. আই. আর লিখে সোজা তোমার কাছে নিয়ে এলাম সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য। তবে একটা কথা আমার মাথায় আসলো না। - কি কথা..? - আমি যে এত রাত পর্যন্ত বাসায় আসিনি তুমি তো একবারের জন্যও কল দাওনি। আমি কোথায় আছি এটা জানার জন্য। - আমি কল দেয়নি কারণ আমার মনে একটু সন্দেহ হচ্ছিলো আপনি তো গুরুত্বপূর্ণ কাজে গেছেন আমারর একটামাত্র কল আপনার ভোগান্তি কারণ হতে পারে। - সোনিয়া তুমি খুব জিনিয়াস একটা মেয়ে। তুমি কল না দিয়ে অনেক ভালো করেছো, না হলে অনেক বিপদে পড়তাম। রানীকে উদ্ধার করে রানীর বাবাকে কল করে বলেছি সে তো কেঁদেই দিয়েছে। অসুস্থ থাকার কারণে এখন আসতে পারবে না। কাল সকালে এসে রানীকে নিয়ে যাবে। রানীর মুখে হাসির ঝলক ফুটে উঠেছে। আমরা তিনজনে হাসতে লাগলাম। ঠিক সেই মূহুর্তে তাহিয়া এসে দরজায় ঠকঠক আওয়াজ করল, - আমি কি ভিতরে আসতে পারি...? সাহিল হাসিমাখা মুখে বলল, - হ্যাঁ তাহিয়া আয়। তোর হাতের চা খাওয়ার জন্য আমরা ওয়েট করছি। - আমিও জানতাম, সবার মনের ইচ্ছা জেগেছে ঠান্ডা আবহাওয়াতে এক কাপ গরম গরম চা হলে মন্দ হয় না। তাই তো দেরি না করে নিয়ে চলে আসলাম। এবার ফটাফট খেয়ে নিন তারপর টেবিলে খাবার পরিবেশন করব। রাত তো অনেক হয়েছে। তাহিয়া সবার হাতে চায়ের মগগুলো হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, - আপনারা চা খেতে খেতে গল্প করুণ আমি তরকারি গরম করে টেবিলে রাখছি। তবে হ্যাঁ গল্প একটু কম করবেন না হলে তরকারি ঠান্ডা হয়ে বরফ জমে যাবে। তাহিয়ার কথা শুনে না হেসে পারলাম না। আমার হাসি দেখে সবাই হাসতে লাগলো। কোন রকমে হাসি থামিয়ে বললাম, - চা খেয়ে নিন। না হলে পানি হয়ে যাবে। চা পান করা হয়ে গেলে আমি রানীকে বললাম, - আমি আলমারি খুলে আমার এক সেট ড্রেস বের করে রানীর হাতে দিলাম। রানী তুই ফ্রেস হয়ে ড্রেস চেইঞ্জ করে আমার ড্রেস পড়ে নে। - হুম। রানী চা খেয়ে ড্রেস হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো। তারপর বেরিয়ে আসলো। - রানী, চল এবার খেতে যাবো। - হ্যাঁ চল। ডিনার শেষ করে রানীকে তাহিয়ার রুমে দিয়ে আমরা রুমে গেলাম। রুমে গিয়ে বসে আছি তখন সাহিল এসে দাঁত ব্রাশ করে আমার পাশে বসলো। আমি আড়চোখে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম। মুখটা দেখলে খুব বিশ্বস্ত মনে হয়। সাহিল বুঝতে পারল আমি তাকে দেখছি তবুও কিছু না বলে আমার মুখ থেকে শোনার অপেক্ষা করছে। দুজনে অনেকক্ষণ নিশ্চুপ থাকার পরে তার কথা ভাবলাম সারাদিন তো ঝামেলার ভিতরে ছিল। দুপুরবেলা না খেয়ে কাটিয়ে এখন ক্লান্ত। তাই নিজের বিবেক জাগ্রত হলে প্রথমেই সাহিলকে বললাম, - আপনি শুয়ে পড়েন সারাদিন খাটাখাটুনি করে এসেছেন। সাহিল মাথাটা ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে নিচু করে থাকে। অনেকক্ষণ পরে অনুনয়ের সুরে বলল, - শুতে পারি তবে এক শর্তে! শর্তের কথা শুনে খানিকটা চমকে গিয়ে আস্তে করে বললাম, - কি শর্ত..? আচ্ছা আপনি এত প্যাঁচান কেনো...? আগে তো এমন ছিলেন না। তাহলে এখন এত বাঁচাল হলেন কেনো..? সত্যি আপনাকে যত দেখছি ততই অবাক হচ্ছি কারণ কি জানেন...? মাথাটা তুলে চোখদুটো এতটাই বড়বড় করে তাকালো সাহিল, দেখেই ভয় পেয়ে আমার কথা বলা মুখটা বন্ধ হয়ে গেল। আমি মুখটা কালো করে বিছানার উপরে শুয়ে পড়লাম তখনি সাহিল আমার পাশে শুয়ে গায়ের উপরে হাত পা দিয়ে বলল, - বাহ্! আমার কোলবালিশটা তো বড্ড নরম হয়ে গেছে। যাক ভালোই হলো জড়িয়ে ধরতে কষ্ট হবে না। আমার সাধের কোলবালিশ। সাহিল পা তুলে দেয়ায় আমি নড়তে পারছিলাম না। তাই চুপচাপ চেপে শুয়ে থাকি। সাহিল ব্যাপারটা বুঝতে পরে আমার চুলগুলো সরিয়ে খোলা পিঠে চুমো খেতেই সমস্ত শরীর শিউরে উঠল। সাহিলের দিকে কোন রকমে ফিরে বললাম, - কি করছেন এসব..? - বাহ্ রে কি আর করছি, আমার একমাত্র বউকে আদর করছি। আমি হাসলাম। সাহিল ও হাসলো। আমি সাহিলের দিকে লজ্জা রাঙা মুখ নিয়ে তাকালে সাহিল চোখ টিপ মারলো। আমি সাথে সাথে দুহাত দিয়ে চোখ ঢেকে দিলাম। আমার হাত দুটো সরিয়ে নিয়ে চোখের উপরে কিস করতেই সমস্ত শরীর কাপন দিয়ে উঠলো। মনে হচ্ছে শরীরটা ছেড়ে দিয়েছে। একটুও শক্তি নেই। একটু বাদে কপাল থেকে ঠোঁট অব্দি একাধারে চুমো খেল। আমার তো লজ্জায় মরে যাওয়ার উপক্রম তৈরী হয়েছে। দিশাবিশা না পেয়ে সাহিলকে জড়িয়ে ধরলাম। সাহিল আমার চোখের ভাষা বুঝতে পেরে আমায় আরও বেশি উত্তেজিত করল। উত্তেজিতর এক পর্যায়ে দুজন দুজনের মাঝে ডুব দিলাম। আমি সাহিলের মাঝে আর সাহিল আমার মাঝে। হারিয়ে গেলাম অথৈ সমুদ্রের তলদেশে। মধ্যরাতে, দুজনে উঠে লজ্জায় কেউ কারও দিকে তাকাতে পারছিলাম না। একটুবাদে সাহিল বলল, - এবার চল, দুজনে একত্রে শাওয়ার নিব। যেই বলা সেই কাজ। আমাকে কোলে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকল। ঝরণার পানি ছেড়ে দিয়ে তারপর সাবান গায়ে মেখে শাওয়ার নিয়ে দুজনে এক টাওয়ালে পেঁচিয়ে বেরিয়ে আসলাম। আলমারি খুলে কাপড় বের করে দুজনে পড়ে নিলাম। ফজরের আযান দিলে দুজনে দুপাশে নামায আদায় করে ছাদে উঠলাম। ছাদে বসে সাহিল আমাকে বলল, -সোনিয়া,, - হুম। - তোমার নিজেরও সন্তান হবে এটা সত্যি কিন্তু তোমার কাছে শুধু একটাই অনুরোধ সানিকে কখনও সৎ ছেলে মনে করে অবহেলা করবে না। আমি করুণ চোখে সাহিলের কাঁধে হাত দিয়ে বললাম, - আপনি এটা নিয়ে চিন্তা করবেন না আমি কখনও সন্তান নিবো না। সানি আমার সন্তান। - না সোনিয়া এমনটা করবে না কখনও। তুমি একজন মেয়ে তাই তোমারও মা হওয়ার অধিকার আছে। তাই নিজের সন্তান হলেও সানিকে নিজের সন্তান মনে করে মায়ের ভালোবাসা দিবে। সানি যেন কখনও বুঝতে না পরে তুমি সানির আপন মা নও। তোমার কাছে শুধুমাত্র এটাই চাওয়া। - আমার প্রতি বিশ্বাস রাখতে পারেন। নিজের সর্বস্ব উজার করে দিয়ে আগলে রাখবো আমার সন্তানকে। আমাকে জড়িয়ে ধরলো সাহিল। তারপর সাহিল বলল, - সোনিয়া নিচে চল। রানীকে নাস্তা করিয়ে আমরা ওর বাসায় দিয়ে আসবো। - ঠিকাছে চলুন। রানীকে ডেকে নাস্তা খাওয়ালাম। সাথে আমরাও খেলাম। নাস্তা খাওয়া শেষ হলে রানীকে বললাম, - রানী রেডী হও তোকে আমরা তোর বাসায় দিয়ে আসবো। আন্টি তোর জন্য পাগল প্রায়। আংকেলকে কষ্ট করে আসতে হবে না এতদূরে। আমরা গিয়ে তোকে দিয়ে আসি। সাহিল রানীকে বলল, - রানী আমার অফিসে তোমার জন্য একটা জবের ব্যবস্থা করেছি। তুমি বাসায় গিয়ে সুস্থ হয়ে কাজে জয়েন্ট করবে কেমন। - সত্যি বলছেন ভাইয়া। - হ্যাঁ সত্যি। এই নাও আমার ভিজিটিং কার্ডটা রাখো। জয়েন্ট করার আগেরদিন আমাকে কল করবে। সোনিয়া এবার চল। আমরা রানীকে নিয়ে বাসায় যেতেই রানীকে দেখে রানীর মা সুস্থ হয়ে উঠলো। তারপর আমরা সেখান থেকে আমার বাবার বাড়িতে গেলাম। বাবার সাথে দেখা করে তারপর বাসায় আসতে লাগলাম। রাস্তায় জ্যাম থাকার কারণে গাড়িটা দাঁড় করায় তখনি চোখ পড়ল রানা অন্য একটা মেয়ের হাত ধরে হাঁটছে। সাহিল রানাকে ডাকাল। রানা আমাদের দেখে তারপর গাড়ির কাছে আসতেই সাহিল রানাকে গাড়িতে বসতে বলল। রানা গাড়িতে বসলো। সাহিল গাড়ি স্টার্ট দিল। তারপর রানাকে বলল, - রানা তানহা কেমন আছে..? - জানিনা। - কেনো..? - আমি তানহাকে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছি। আর আগামী মাসে নাদিয়াকে বিয়ে করব। - তানহাকে ডিভোর্স দিয়েছো কেনো..? - ডিভোর্স দিবো না তো কি করবো..? তানহা তোমাকে ভুলতেই পারছিল না। তার উপরে আমার সাথে কোন ফিজিক্যাল রিলেশন করতে আগ্রহী ছিল না। আমি একটা পুরুষ আমার ও শারীরিক চাহিদা আছে। এতদিন ধৈর্য ধরেছি কিন্তু যখন দেখলাম তানহা শুধরাচ্ছে না তখন ডিভোর্স ছাড়া আর কোন পথ খোলা ছিল না আমার কাছে। তাই ডিভোর্স দিয়ে দিলাম। সাহিল এইখানে রাখ। আমরা এখানে নামবো। রানার কথায় সাহিল গাড়ি একপাশে দাঁড় করালো। রানা তার হবু বউকে নিয়ে গাড়ি থেকে নামলো। সাহিল আর আমি রানার যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে তাকলাম। সাহিল দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর বলল, - কষ্ট লাগছে তানহার করুণ পরিণতির জন্য। সাহিল গাড়ি ড্রাইভ করে বাড়িতে আসলো। রুমে এসে বিছানার উপরে টানটান হয়ে শুয়ে আছে। আমি সাহিলে পাশে গিয়ে বসলাম। কপালে হাত দিয়ে চুল টেনে দিয়ে বললাম, - চিন্তা করবেন না প্লিজ। অতীতকে মনে করে কষ্ট পাওয়া বোঁকামী ছাড়া আর কিছু না। তাই সবারই বর্তমানে কি হচ্ছে তার দিকে ফোকাস করা উচিত নতুবা জীবনে কেউ সুখি হতে পারবে না। বিশ্বাস এমন একটা জিনিস একবার ভেঙে গেলে যতই জোরা তালি দেয়ার চেষ্টা করেন কিছুতেই কাজ হবে না। জোরা লাগবে ঠিকি আবার দু'দিন পরে ভেঙে যাবে। সাহিল আমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণে একরাশ হাসি এনে বলল, - সোনিয়া আমার বর্তমানে দুনিয়া তুমি। জান আর পরাণও তুমি। এছাড়া আর কিছু ভাবছি না আর ভাববো না। এখন শুধু স্বপ্ন একটাই মায়ের সেবা করা। দ্বায়িত্ব হলো, ছোট বোনটা দু'টোর বিয়ে দেয়া, সানিকে মানুষ করা আর, আর... - আর আর করছেন কেনো বলুন... - আর হলো আমার যেন একটা কণ্যা সন্তান হয় তার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি আর বউকে সারাক্ষণ আদর-সোহাগ করা বলেই সাহিল আমার ঠোঁটের উপরে তার ঠোঁট ডুবিয়ে দিল। আমি কিছু বলার জন্য মুখটা খুলতে পারলাম না। মনেমনে ভাবলাম যাক লুচু একটা স্বামী পেলাম। যে শুধুমাত্র আমাকে ভালোবাসার জন্য মরিয়া হয়ে থাকে। আমারও ভালো লাগে সাহিলের খুনসুটিগুলো। সত্যি এমন স্বামী পেয়ে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে। গল্পটা দিয়ে শিখলাম যেমন কর্ম তেমন ফল। কারও সাথে বেঈমানি করে কেউ কখনো সুখি হতে পারে না। ধৈর্যের ফল সব সময়ই মিষ্টি হয় সেটা আবারও প্রমাণ পেলো গল্পটায়। জানিনা কেমন লেগেছে গল্পটা তোমাদের। তবুও চেষ্টা করেছি নিজের সবটা দিয়ে উপস্থাপন করার। সমাপ্ত
0
12