#তোর_শহরে_ভালোবাসা💜 পর্ব-২১ ফাবিহা নওশীন 🍀🍀 সামু ৪দিনের জায়গায় আজ ৫দিন যাবত বাবার বাড়ি আছে।আদি রেগে বোম হয়ে আছে।গতকাল থেকে ওর সাথে কথা বলেনা।আজ সকালে আসার কথা।আদি রুমে পাইচারি করছে।আজ আর অফিসে যাবেনা।রাগের মাথায় যদি উল্টো পাল্টা কিছু করে ফেলে তাই বাড়িতেই আছে।তখনই সামুর ফোন।এসময়ে সামুর ফোন দেখে চমকে যায় আদি।তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করে,, --হ্যালো,, সামু নিশ্চুপ।বিষয়টি আদির ঠিক লাগছেনা। তারপর চিতকার করে বললো, --কথা বলছো না কেন?আই থিংক তুমি আরো কিছুদিন থাকার পাইতারা করো।ডোন্ট টেল মি,,যে তুমি আজ আসছোনা। সামু একটা ঢুক গিলে বললো, আদি রাগ করোনা প্লিজ।অনেক দিন পড়ে এসেছি,,সবাই অনেক জোর করছে।তাই,, --তাই কি,,সবাই জোর করছে।সবার কথা বলছো তুমি আর আমি,,আমি কি?আমি কেউ না?আমার প্রজেক্টের কাজ চলছে তুমি জানতে আমি কতটা বিজি কাজটা নিয়ে,,তবুও তুমি তোমার মতো গেলে,,ওকে ফাইন গিয়েছো,,ভালো কথা। কিন্তু কি করছো তুমি, তোমার এতো থাকার ইচ্ছে তুমি পরে যেতে আমাকে নিয়ে,, আর কি বলেছিলে পরে আবার যাবে আমাকে নিয়ে,,কিন্তু কি করলে তুমি,,? --আদি আমি সরি।প্লিজ আর একদিন আগামীকাল সকালে চলে আসবো। আদি রাগে শক্ত করে জানালার পর্দা মুঠো করে ধরে রেখেছে।তারপর একটান দিয়ে ছিড়ে ফেলে বললো, --তোর ডানা গজিয়ে গিয়েছে না,,?অনেক উড়ছিস তুই।দাড়া আমি আসছি তোর ডানা কাটতে। --আদি প্লিজ আমার,, আদি খট করে ফোন কেটে দিলো।সামান্তা ভয়ে জমে যাচ্ছে।ওর ভয় আদিকে নিয়ে না বরং আদি যদি এখানে এসে উল্টো পাল্টা কিছু করে বসে। আদি নিচে গিয়ে জানালো কিছুক্ষণ পর ই সামুকে আনতে যাচ্ছে।তাই আদির মা যাবার সব ব্যবস্থা করলেন।ছেলে বিয়ের পর প্রথম বার শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে।উপহার,ফল,মিষ্টি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যবস্থা করে ফেললেন।সামুকে ফোন করে সব বুঝিয়ে দিলেন।সামু নিজে এ বাসায় জানিয়ে দিলো আদি আসছে।বাড়িতে জামাই আপ্যায়নের তোড়জোড় ব্যবস্থা চলছে। দুপুর বেলা আদি গিয়ে উপস্থিত।আদি ভিতরে গিয়ে সবার সাথে কুশল বিনিময় পর্ব সাড়লো।সামু শুধু আল্লাহ আল্লাহ করছে।কিন্তু না আদি সম্পুর্ন ঠান্ডা। সামু আম্মু বললো, --সামু আদিকে উপরে নিয়ে যা।আমি নাস্তা পাঠিয়ে দিচ্ছি। --আচ্ছা। সামু আদির দিকে তাকিয়ে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছে আদিও ওকে অনুসরণ করছে। সামুর বুক ঢিপঢিপ করছে।আদি যে একটা হাঙ্গামা করবে সেটা শিওর,, রুমে ঢুকতেই আদি দরজা লাগিয়ে লক করে দিলো।সামু ঘুরে দাড়াতেই আদির রক্তবর্ণ চেহেরা দেখলো।চোখ লাল হয়ে আছে।আদি সামুর দুবাহু চেপে ধরে চোয়াল শক্ত করে বললো, --কি বলে এসেছিলি?কি বলে দিয়েছিলাম তোকে? আসলে তোকে আসতে দেওয়াই ঠিক হয়নি,, সামু কাচুমাচু হয়ে বললো, --আদি,, --চুপ একদম চুপ,,কথা বলবিনা।তুই একটা মিথ্যেবাদী।তুই তো ভালো করেই আমাকে জানিস,,তুই জানিস না আমি তোকে ছাড়া এতদিন থাকতে পারবোনা। --আমি জানি কিন্তু এরাও তো পরিবার।এদের চাওয়া পাওয়া নিয়েও তো আমাকে ভাবতে হবে।সবাই খুব মন খারাপ করছিলো, --মন খারাপ করলে আজীবন থেকে যাবি?হু?বিয়ে হয়েছে এখন আমার বাড়িই তোর সব।বাপের বাড়ি আসবি দুদিন থাকবি ব্যাস।একা এসে এতদিন থাকছিস,,জামাই ছাড়া। --তোমাকে তো বলেছিলাম,, --কি বলেছিলি?তুই জানতি আমি আসতে পারবোনা কতটা পেরায় আছি,,দায়সারা হয়ে বলেছিস। --আদি আমি মন থেকেই বলেছি। --আমার এখন এসব জানার দরকার নেই।সন্ধ্যায় আমরা ব্যাক করছি।এখন বাজে ২টা,,৬টায় রওনা দিবো।এতক্ষণে যত কথা যত ব্যথা সব বাড়ির মানুষের সাথে শেয়ার কর।তারপর প্যাকিং কর। --আজ প্রথমবার এসেছো এভাবে চলে গেলে সবাই কি বলবে? --আই ডোন্ট কেয়ার।আমরা আজই যাচ্ছি।তুই যদি না যাস থাক,,মানা করবো না আমি চলে যাবো। --ঠিক আছে,চলে যাবো তোমার সাথে। (ছলছলে চোখে) আদি সামুকে ছেড়ে দিলো।সামু নিচে চলে গেলো।কিছুক্ষণ পর নাস্তা নিয়ে এসে দেখে আদি ফুল স্পিডে ফ্যান ছেড়ে শার্টের বোতাম সব খোলে খাটে বসে আছে।সামু বুঝতে পারলো ওর গরম লাগছে। তাই ট্রে রেখে ওয়াশরুমে গিয়ে তোয়ালে ভিজিয়ে এনে আদির গলা মুছতে গেলেই আদি সরিয়ে দেয়।সামু আবার মুছতে যায়। আদি এক ঝাটকায় সরিয়ে দেয়।তারপর বলে, --এতো ভালোবাসা দেখাতে হবেনা,,এতদিন এই ভালোবাসা কই ছিলো? সামু থমকে যায়।তারপর আবার জোর করে মুছতে যায়।আদি কিছু বলতে যাবে তখনই শীতল কণ্ঠে বলে, --এতো রাগ করছো কেন?তোমার কথা তো মেনেই নিয়েছি,,ঢাকা ব্যাক করছি।তাহলে এমন করছো কেন?(তোমার কষ্ট আমাকে স্পর্শ করলেও আমার কষ্ট তোমাকে কেন স্পর্শ করেনা।কেন তুমি স্বার্থপরের মতো নিজের কথাই কেবল ভাবো?আমার কথা একটু ভাবতে পারোনা) আদি আর কিছু বললো না।সামু ওর পুরো শরীর মুছে দিয়ে ঘরের দক্ষিনের জানালা খোলে দিলো।ঝড়ের বেগে বাতাস আসছে।আদি অবাক হয়ে সেদিকে চেয়ে রইলো।পুরো ঘর মুহুর্তেই ঠান্ডা হয়ে গেলো। যাকে বলে আল্লাহর রহমত। সামু মিষ্টি হেসে বললো, এমনই,,আল্লাহর রহমত।আমার রুমে ফ্যান ছাড়া লাগে না।সবসময় আল্লাহর রহমত বহে। দুপুরের খাবারের পর সামু ওর আম্মুকে চলে যাওয়ার কথা বলতেই ওর আম্মু শকড,, --কি বলছিস,,জামাই এতদিন পর এলো।আর তুই বলছিস আজকেই চলে যাবি।আমি আদির সাথে কথা বলবো। --আম্মু বলে লাভ হবেনা।ও একটা প্রজেক্ট নিয়ে অনেক বিজি আছে।এত ব্যস্ততার মধ্যে শুধু আমাকে নিতে এসেছে।থাকার জন্য আসেনি।অন্য সময় আসবো। --তবুও, --আম্মু প্লিজ বাদ দেও,,মেয়েকে বিয়ে দিয়েছো সে এখন পর হয়ে গেছে।আসবে দুদিন থাকবে এই,, সামুর আম্মু সামুর চোখে অভিমান দেখতে পেলো।ওর ভিতরে যে ঝড় বইছে বুঝতে পারছে। --তুই অনেক বদলে গেছিস সামু,,নিজেকে আড়াল করতে শিখে গেছিস।তোর চঞ্চলতাও হারিয়ে গেছে। সামু এবার ডুকরে কেঁদে উঠে।আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বলে, --তোমাদের সামু বিলীন হয়ে গেছে আম্মু,, --কাদেনা,,,বোকা মেয়ে কাদিস কেন?শোন আদি তোকে চোখে হারায় তাই এমন পাগলামি করে।দেখিস না কাজ ফেলে তোকে নিতে ছুটে এসেছে। তিনি সামুকে শান্তনা দিচ্ছেন। সামুকে জড়িয়ে তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে। অবশেষে সামু আদির সাথে বাসায় ফিরে।সামু শাশুড়ী মায়ের সাথে টুকটাক কথা বলে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো। ফ্রেশ হয়ে চাদর জড়িয়ে শুয়ে পরলো।রাতে খাবে না বলে দিয়েছে।কেউ যেন না ডাকে।কিছুক্ষণ পর আদি সামুর পাশে বসে ওর মাথায় বিলি কাটছে।সামুর এই মুহুর্তে আদিকে প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে।এত কষ্ট দিয়ে এখন সোহাগ দেখাচ্ছে।তাই হাত সরিয়ে দিয়ে বিরক্তিকর মুখে বললো, --প্লিজ বিরক্ত করোনা,ভালো লাগছেনা। --আমি তোমাকে বিরক্ত করছি?আমাকে এখন তোমার বিরক্ত লাগছে??বাহ ভালো। বলেই আদি উঠে চলে গেলো।আদি যে রাগ করলো সেটা সামু বুঝতে পারলো কিন্তু এ নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই।চাদরটা মাথা পর্যন্ত তুলে শুয়ে পরলো।জার্নির কারণে ক্লান্তিতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে।হটাৎ মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলো।পাশ ফিরে আদিকে খোজছে কিন্তু আদি নেই।সামু উঠে বসে।বিছানা দেখে বুঝাই যাচ্ছে এখানে কেউ শুয়নি।সামু উঠে ওয়াশরুম চেক করলো।সেখানেও নেই।বারান্দার দরজা খোলা।বারান্দায় গিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে পড়লো। আদি বারান্দায় বেডে শুয়ে আছে। --উফফ এই ছেলেকে নিয়ে পারিনা,,এত্ত অভিমান।আমি রাগ করেছি কই আমার রাগ ভাংগাবে তা না নিজেই অভিমান করে বসে আছে।জীবনটা তেজপাতা। সামু আদির পাশে গিয়ে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো।আদিকে জড়িয়ে ধরতেই আদি বললো, --কেন এসেছো এখানে? সামু চমকে গেলো।মনে হচ্ছে ভূত দেখেছে। --এই তুমি এখনো ঘুমাওনি? --না,,ঘুম আসছে না।তুমি কেন এসেছো?আমি তো শুধু তোমাকে বিরক্ত করি। --আদি তুমি কবে বুঝবে আমাকে?কেন বুঝো না?তুমি আমার সাথে কি ব্যবহার করেছো ভুলে গেলে?আমি তোমার ব্যবহারে কষ্ট পেয়েছি।বাড়ি থেকে এসেছি মন খারাপ ছিলো।আর তুমি এ নিয়ে উল্টো রাগ করে আছো? --তাহলে কার সাথে রাগ করবো?তুমি জানো না তোমাকে ছাড়া আমার সব শূন্য লাগে।তবুও কেন এতদিন থাকলে?আরো থাকতে চাইলে?তুমি তো আমাকে একটুখানিও মিস করোনি। --কে বলেছে করিনি,,মিস করেছি কিন্তু,, --থাক আর বলতে হবে না।কি মিস করেছো জানা আছে,, --তুমি জানো তুমি অনেক স্বার্থপর,,শুধু নিজেরটা বুঝো। --নিজেরটা বুঝবো না তো রাস্তার মানুষের টা বুঝবো?আর নিজের মানে কি,,?আমি তোমার খেয়াল রাখি না? --হ্যা রাখো,,আচ্ছা বাদ দেও।ঘুমাও অফিস আছে তোমার।আজকে অফিসে যাওনি। --হুম। এভাবে কেটে গেছে আরো অনেক সময়।সামান্তার ফার্স্ট ইয়ার এক্সাম শেষ।তাই ভার্সিটি অফ।বাসায় বেকার কি করবে,,,আদিকে বলেছিলো পরীক্ষার পর একসাথে ওদের বাড়িতে যাবে কিন্তু আদি যে সিনক্রিয়েট করেছে তাতে সামুর আর ইচ্ছে হয়না।সামু ভাবছে রুমের ডেকোরেশন চেঞ্জ করবে। তাই শুরু হলো।নিশি আর সামু মিলে সব পছন্দ করলো।তারপর ডেকোরেশন শুরু।আদি অফিস থেকে এসে রুমে ঢুকে থ,, --এ কার রুম?আমার রুম তো,,না ভুলে অন্য রুমে এসে পড়েছি।তখনই চোখ গেলো বেডের সাথের দেয়ালে বড়সড় করে ঝুলানো ওদের বিয়ের ছবিটা।বিভিন্ন জায়গায় ওদের ছবি। না সব ই তো ঠিক আছে।তার মানে আমার রুম ই।ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে সামু বেডে বসে পা ঝুলাচ্ছে। সামুকে দেখে হালকা হেসে বললো, --আমি তো ভেবেছিলাম ভুল করে অন্য কারো রুমে চলে এসেছি।তুমি তো দেখছি আমার রুম পুরো পাল্টে দিয়েছো।চিনায় যাচ্ছেনা। সামু ভ্রু কুচকে বললো, --তোমার রুম মানে?বিয়ের পর ছেলেদের আর নিজের রুম থাকে না।বউয়ের হয়ে যায় সব।পুরো রুমের সবকিছুর মালিক সে।সো,,এই রুম আর এই রুমের সবকিছুর মালিক থুরি মালকিন আমি।তুমি গেস্ট। আদি সামুর দুহাত তুলে নিজের সাথে মিশিয়ে বললো, --তোমার লজিকে ভুল আছে।মানলাম সবকিছু তোমার।কিন্তু বউটা তো আমার।আর বউয়ের সম্পদ মানে আমার সম্পদ।তাই বউয়ের সাথে এই রুমের ও মালিক আমি। --তাই তো,,এই লজিক আমার মাথায় আগে আসেনি কেন? --কারণ তুমি বোকা।হিহি, --হিহি,,তুমি আমাকে যতটা বোকা ভাবো জনাব আমি ততটা বোকা নই।প্রুফ চাও,,ওয়েট। এই ধরো তুমি বাইরে যেমন ভিতরে অন্য রকম।বাইরে হাসিখুশি সাদাসিধা বাচ্চা একটা ছেলে দেখাও কিন্তু ভিতরে খুবই চালাক প্রকৃতির মানুষ।যেমন তেমন চালাক নয় ভয়ংকর চালাক।কোনো কিছুতেই তোমার কিছু যায় আসেনা।নিজেরটা ঠিক থাকলেই হলো।আর এই যে এত ভালোবাসা দেখাও তুমি,,তোমার ভালোবাসার চাইতে পাগলামি বেশি। --তুমি বলতে চাও আমি তোমাকে ভালোবাসি না? --বাসোনা কে বলেছে বাসো।তবে ভরসা করোনা।অনেক ইনসিকিউরড ফিল করো।বেধে রাখতে চাও।জানো তো অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না।বাট আমি ভিতরে যেমন বাইরে তেমন।তুমি আমার ভিতর বাহির দুটোই জানো।একদম খোলা মেলা বই।কিন্তু আমি তোমার ভিতরটা এখনো ছুতে পারিনি।তুমি ছুতে দেওনি।আমি শক্ত মনের হলেও আমারও কিছু দূর্বলতা আছে।যেখানে আঘাত করলে আমি শত শত টুকরো হয়ে যাবো যার টুকরো খোজেও পাওয়া যাবেনা।আমি ধ্বংস হয়ে যাবো।তার মধ্যে অন্যতম দূর্বলতা তুমি।তুমি যদি আমাকে ছেড়ে দেও তবে আমি,,, --সামু কি বলছো আমি তোমাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারিনা।এসব ভাবতেও চাইনা।আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। --তুমি আমাকে ছাড়বে না।তোমার উপর আমার সে বিশ্বাস থাকলেও তোমার রাগ,জেদের উপর আমার বিশ্বাস নেই।তুমি রাগের বশে যা খুশি করতে পারো।ভালোবাসার কাছে হারলেও রাগের কাছে তুমি হারবেনা।সেটাই আমার ভয়।অনেক ভয় হয় জানো তো,, আদি আর কিছু ভাবতে পারছেনা।সত্যিই এই রাগ ওর জীবন ধ্বংস করে দিবে না তো? 🍂🍂🍂 দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে এক সপ্তাহ ধরে।ক্লাস শেষে জানভি সামুকে বললো, --দোস্ত আমার একটু তোর হেল্পের প্রয়োজন। --হ্যা,বল। --আম্মুর জন্য ওষুধ নিতে হবে,,কিন্তু ওষুধটা এখানে পাওয়া যায়না।কিছুটা দূরে যেতে হবে।আমার একা যেতে ইচ্ছে করছে না,তুই সাথে চল না প্লিজ। --কিন্তু আমাকে তো এখন বাসায় যেতে হবে। --ওষুধ টা আমার নিতেই হবে।খুব দরকার।প্লিজ চল। সামু কিছুক্ষণ ভেবে বললো, --ঠিক আছে চল। ওদের গাড়ি একটা বিল্ডিংয়ের সামনে এসে থামলো।এখানে ফার্মেসী আছে বলে মনে হচ্ছে না।তাই সামু জানভিকে জিজ্ঞেস করলো, --ওই কোথায় এসেছিস?এখানে কি ওষুধ পাওয়া যাবে? --হুম এখানেই পাওয়া যাবে।চল। কিছুক্ষণ ইতস্তত করে সামুর ইচ্ছে না থাকা স্বত্তেও বন্ধুর মন রাখতে যাচ্ছে।দুতলা বিল্ডিংয়ে উঠে কাচের একটা বড় গেইট দেখতে পেলো।সেখানে একজন ওয়াচম্যান দাড়িয়ে আছে।সামু জানভিকে ফিসফিস করে বললো, --ওই এখানে কি?? --এখানেই পাওয়া যাবে।না পেলে আমি শেষ।তুই ভয় পাস না। সামু কিছুই বুঝতে পারছেনা।জানভি একটা কার্ড বের করে ওয়াচম্যানকে দেখাতেই ওদের ঢুকতে দিলো।ভিতরে ঢুকে কিছুটা জায়গা ফাকা তারপর দেখলো কিছুটা শোরগোল শুনা যাচ্ছে।সামু জানভির হাত চেপে ধরে। --জান আমার ভয় লাগছে।কোথায় এসেছি।আগে জানলে আমি আসতাম না। --বেকুব ভয় পাচ্ছিস কেন?ভিতরে যাবো কথা বলে নিয়ে চলে আসবো,, --কিসের মেডিসিন বলতো? জানভি কিছুটা হেসে বললো, --তুই বুঝবি না।নাম শুনলে হার্ট এটাক করবি।তাই চুপচাপ থাক। চারদিকে অনেক ছেলে মেয়ে,,সবাই মর্ডান ড্রেস পড়া।হৈ-হুল্লোড় করছে।গান বাজছে।সামু বুঝে গেলো ও কোনো ক্লাবে আছে।কিন্তু এই ক্লাবে কি নিতে এসেছে জানভি।জানভিকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই জানভি ওকে দাড়াতে বলে কয়েকজন ছেলে মেয়ে একটা টেবিলে গোল করে বসে আছে তাদের দিকে এগিয়ে গেলো।সেখানে গিয়ে কথা জোরে দিলো।কি বলছে সামু শুনতে পারছে না।সামু ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। ওর খুব ভয় লাগছে।কিছুক্ষণ পরে আর না পেরে জানভিকে ডাকতে লাগলো কিন্তু জানভি চিন্তিত ভংগীতে কি যেন বলছে ওদের সাথে।সামুর কথা শুনছেই না।কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে জানভিকে ফোন দিলো কিন্তু রিসিভ করছে না।কত মানুষ জন ওকে ওভার টেক করে যাচ্ছে সামুর আর ভালো লাগছেনা।চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।কিন্তু ওখান থেকে বেরিয়ে গেইটের সামনে যেতে নিলেই একটা ছেলে ওর সামনে এসে দাড়ায়।কি যেন বিরবির করে বলছে।সামুর বিষয়টি ভালো ঠেকছেনা।তাই অন্য পাশে গিয়ে দাড়ালো।কিন্তু ছেলেটা সেখানেও চলে গেলো।ওর কাছে গেলেই সামু দু'হাতে জোরে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় ছেলেটাকে।ছেলেটা এতে ক্ষেপে যায় আর আজেবাজে কথা বলতে থাকে।সামু কিছুটা ঘাবড়ে যায়।ওর সামনে আরো দুজন ছেলে এসে দাড়ায়।এমন একটা জায়গায় তিনজন নেশাগ্রস্ত মানুষের সাথে লড়াই করা ওর পক্ষে সম্ভব নয়।তাই উল্টো দিকে হাটা ধরে ওরাও ওকে ফলো করছে।সামুর হাত পা,শরীর কাপছে।পা আটকে যাচ্ছে বারবার।সামনে একটা ওয়াশরুম দেখতে পেয়ে দৌড়ে ঢুকে যায় ভিতরে।ছেলেগুলোও দৌড় দেয় কিন্তু ততক্ষণে সামু দরজা লক করে ফেলছে।সামুর ভয়ে সারা শরীর কাটা দিয়ে উঠছে।ওরা দরজা ধাক্কাচ্ছে।সামু তাড়াতাড়ি জানভিকে ফোন দিলো।কিন্তু জানভি ফোন তুলছে না।মেসেজ করেও কাজ হচ্ছেনা।এদিকে ওরা দরজা ধাক্কাচ্ছে মনে হচ্ছে ভেঙে ফেলবে।সামুর মাথা কাজ করছেনা।ও আদিকে ফোন করলো।এদি জানতে পারলে ওকে খুন করবে তবুও এখন আদির চেয়ে ওরা বেশি ডেঞ্জারাস।আদিকে ফোন দিতেই রিসিভ করলো।আদি অফিস থেকে বাসায় ফিরছে। --হ্যালো,,সামু, সামু কাদতে কাদতে বললো, --কোথায় তুমি? আদি সামুর কান্না শুনে ব্রেক কষে বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো, --সামু কি হয়েছে জান আমার কাদছো কেন? ---আদি আমি বিপদে পরেছি। সামুর কথা শুনে আদি ঘাবড়ে গেলো। --সামু কি হয়েছে,,,কোথায় তুমি?তুমি কি ভার্সিটিতে না রাস্তায়?টেল মি ডেম ইট। সামু কান্না করতে করতে বললো, --আমি জানি না কোথায় আছি,,জানভি আমাকে ওষুধ কিনার কথা বলে একটা ক্লাবে নিয়ে এসেছে।আমি যখন দেখলাম এটা ক্লাব আমি ওকে রেখে একাই চলে আসছিলাম।তখন কয়েকটা ছেলে আমার পিছু নেয়। অজানা ভয়ে আদির হাত-পা কাপতে শুরু করে, --ছেছেছে,,,লে,,? --হ্যা,আমি ওয়াশরুমে দরজা লক করে আছি।ওরা বাইরে। আমার খুব ভয় করছেম --সামু রিলেক্স,ভয় পেওনা।আগে বলো কিভাবে ওখানে গিয়েছো,,জায়গাটা কোথায়?আমি আসছি। --ড্রাইভারকে নিয়ে এসেছি।মেইনরোডের সামনে ৫তলা বিল্ডিংয়ের ২তলায়। --আচ্ছা আমি ড্রাইভারের কাছ থেকে ঠিকানা নিচ্ছি।তুমি ফোন কাটবেনা। --আচ্ছা,তুমি তাড়াতাড়ি এসো। আদি ড্রাইভারের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে রকেটের গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে।ড্রাইভারকে বলছে ক্লাবের যেতে কিন্তু কার্ড ছাড়া ওনাকে ঢুকতে দিচ্ছেনা।ছেলেগুলো দরজার বাইরে থেকে নানান কথা বলছে।আদি এত স্পিডে গাড়ী চালাচ্ছে তবুও মনে হচ্ছে রাস্তা শেষ হচ্ছেনা।সামুর সাথে ফোনে কানেক্টেড ছিলো।বিল্ডিংয়ের সামনে গাড়ি থামিয়ে দৌড়ে দুতলায় উঠে গেলো।গেইটের সামনে গিয়ে ওয়াচম্যানকে সজোরে ধাক্কা মেরে ভিতরে ঢুকে গেলো। সামু,,আমি ক্লাবে এসে পরেছি।ভয় পেওনা।কোনদিকে আছো সেটা বলো। সামুর ভয় পুরোপুরি কেটে গেছে।ও আদিকে সবটা বললো। আদি ওয়াশরুমের বাইরে ৩জন ছেলে দেখতে ওদেরকে হালকা ধোলাই দিয়ে সামুকে বললো, --আমি দরজার বাইরে,বাইরে এসো। সামু আস্তে আস্তে দরজা খোলে আদিকে দেখে দৌড়ে বের হয়ে এসে আদিকে জাপটে ধরে।সামুর সারা শরীর কাপছে।আদি ভয়ে,চিন্তায় ঘেমে একাকার।ও সামুকে ধরে মাথায় চুমু খেয়ে বললো, --ভয় পেওনা,আমি এসে গেছি জান। তারপর সোজা করে দাড় করিয়ে ছেলেগুলো কে দেখিয়ে বললো, এরা? সামু হ্যা বললো।আদি সামুকে ছাড়িয়ে ওদের একজনকে ধরে কাচের টেবিলে মাথা বারি দিলো।সাথে সাথেই ছেলেটা রক্তাক্ত মাথা নিয়ে মেঝেতে পড়ে গেলো।বাকি দুইজনকে ধরে দেয়ালে আঘাত করে চিতকার করে বললো, --কুকুরের বাচ্চারা,,তোরা আমার বউয়ের দিকে হাত বাড়িয়েছিস?বাজে নজর দিয়েছিস?তোদের চোখ তুলে নিবো। ততক্ষণে ভিড় জমে গেছে।মারামারির এক পর্যায়ে কিছু লোক আদিকে ওদের থেকে দূরে সরাচ্ছে।ভীর ঠেলে জানভি এলেই আদি ওকে দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।ওর গালে সজারো একটা থাপ্পড় মেরে বলে, --তোকে যদি আর সামুর আসেপাশে দেখি কেটে কুচিকুচি করে ফেলবো।মনে রাখবি। বলেই সামুকে টানতে টানতে বেরিয়ে গেলো। চৌধুরী বাড়ির লিভিংরুমে পিনপতন নীরবতা বিরাজমান।সবাই বসে আছে আর সামু মাথা নিচু করে ভয়ে ভয়ে তাকাচ্ছে। আদি হাতের মুঠো শক্ত করে এদিক সেদিক পাইচারি করছে।মাঝেমধ্যে কপালে আংগুল ঘষছে যাতে রাগটা কমাতে পারে। আদি নীরবতা ভেঙে বললো, --বাবা বুঝতে পারছো কি সাংঘাতিক বন্ধু পাতিয়েছে।ওই মেয়ে ড্রাকস খায়।ড্রাকস নিতে ক্লাবে গিয়েছিলো আর সেখানে সামু নাচতে নাচতে চলে গেছে। আদির বাবা বললো, --ও তাও বলছে ও এসবের কিছুই জানেনা।ওকে মায়ের মেডিসিনের কথা বলে জোর করে নিয়ে গিয়েছে। --যাবে কেন?কত বড় অঘটন ঘটতে যাচ্ছিলো বুঝতে পারছো? সামুর পাশ থেকে নিশি বললো, --ভাইয়া,সামু তো ঠিক আছে।এখন আর ওকে বকাবকি করিস না।আসার পর থেকেই বকে যাচ্ছিস।এমনিতেই ভয় পেয়ে আছে। আদির বাবা বললো, --হ্যা,,অনেক হয়েছে।বলছে তো ভুল হয়েছে আর এমন হবেনা।এবার ছাড় মেয়েটাকে। আদির মা বললো,সামু যা ফ্রেশ হয়ে নে। সামু আড়চোখে তাকাতেই আদি হনহন করে উপরে চলে গেলো।সামুও পিছু পিছু হাটা ধরলো। আদি কপালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বেডে শুয়ে আছে।গভীর ভাবে কিছু ভাবছে।সামু আস্তে আস্তে ওর কাছে গিয়ে বসে ওর চুলে হাত বুলিয়ে বলল, --তুমি কি এখনো রেগে আছো? আদি হাত সরিয়ে চোখ মেলে বললো,নো,,কেন এখন কি আমাকে বকবে,,না মানে সবসময় তো এমনি করো।আমার রাগ কমলে তোমার রাগ দেখানো শুরু হয়। সামু আদির মাথায় মাথা ঠেকিয়ে বললো, --না,,কারণ এবার দোষ আমার ছিলো। আদি একটানে সামুকে বুকে মিশিয়ে নিয়ে বললো, --জানো কত ভয় পেয়েছিলাম আমি।আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছিলো। --আমারও,, আমার মনে হচ্ছিলো আমি আর তোমার কাছে ফিরতে পারবোনা।অনেক ভয় পেয়েছিলাম। --থাক ভুলে যাও এসব। কিছুক্ষণ পর-- --সামু,, --হুম। --আমি ভাবছি আমরা বেবি নিবো। --বেবি!!আদি কি বলছো তুমি?আমার পড়াশোনা,,, --আই নো তোমার গ্রাজুয়েশন শেষ হয়নি।বয়স ২০হয়নি,,আমার ২৭হয়নি কিন্তু আমার বেবি চাই।প্লিজ না করোনা।সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে।পড়াশোনার কোনো ক্ষতি হবে না।আমার এক ফ্রেন্ডের বেবি হয়েছে অনেক কিউট।ওকে দেখে,, --ওকে দেখে তোমারও ইচ্ছে হচ্ছে।তাই তো,,আচ্ছা ঠিক আছে। --রিয়েলি,,চলো বেবির নাম ঠিক করি,, --আমি ঠিক করে ফেলেছি।আমার প্রথম মেয়ে হবে।আর আমাদের প্রিন্সেসের নাম হবে আদিবা।আদির মেয়ে আদিবা,, --ওয়াও,,ওকে ডান। (সরি বেব,,এখন আমিও বেবি চাইনি কিন্তু তোমাকে ঘরবন্দী করার এর চেয়ে ভালো কোনো ওয়ে নেই।আমি চাই তোমার লাইফ আমি, আমার পরিবার আর এই বাড়ির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকুক।আর একমাত্র বেবিই পারে তোমার স্টাডি বন্ধ করে বাসায় রাখতে।তোমাকে নিয়ে আমি কোনো রিক্স নিতে চাইনা) এক সপ্তাহ পর রাতের বেলা -- আদি লিভিং রুমে ওর মা-বাবার সাথে বসে আছে।আহনাফ চৌধুরী বুঝতে পারছে গুরুতর কিছু। --বাবা,,সামু আর স্টাডি করবেনা? --কিহ!! --হ্যা,,আমি চাইনা সামু আর স্টাডি করুক। --আদি তোর মাথা ঠিক আছে।সামু এসব বলেছে?ও বললেও আমি শুনবোনা। --না সামু বলেনি,,আমি বলেছি।আমি চাইনা ও আর পড়ুক।ওর বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। --আদি তুই ওই সামান্য ঘটনার জন্য এমন করছিস?আমি তোর এই অন্যায় আবদার মেনে নিবোনা। --বাবা আমার বউ,,আমি ডিসিশন নিবো। --আদি!!সামু আমার মেয়ে।ওর সাথে কোনো অবিচার আমি হতে দেবোনা। চিতকার শুনে সবাই ড্রয়িং রুমে চলে এলো। সামু সিড়িতে দাড়িয়ে সব শুনেছে।সামু এগিয়ে এসে বলল, --আদি তুমি এই ডিসিশন নেওয়ার আগে আমাকে জিজ্ঞেস করেছো,? --আমি তোমার ভালোটাই ভেবেছি। --এতো ভালোই ভেবেছো যে আমার স্বাধীনতা ক্ষুন্ন করছো। আমাকে ঘরবন্দী করতে চাইছো? --আমি বলেছি তুমি আর পড়বে না ব্যাস পড়বেনা। --আদি আমি তোমার স্ত্রী,দাসী নই।তুমি যা বলবে তাই মেনে নিবো?তোমার অনেক অন্যায় আবদার এতোদিন মেনে এসেছি।টু শব্দ করিনি।কিন্তু তুমি আজ অনেক বাড়াবাড়ি করছো,,। --অন্যায় আবদার?তুমি,, --হ্যা নয়তো কি,,এটা করোনা,ওটা করোনা।পার্টিতে যাবেনা,,বাপের বাড়ি বেড়াবে না,,তাহলে সারাজীবন থেকে যাও,,কোচিং-এর স্যার ফোন করেছে কেন,,ওই কোচিং-এ আর পড়বেনা,কাদবে না,,কাদলে খুন করে ফেলবো,,তাই আর তোমার সামনে কাদিনি,আড়ালে কেদেছি।কিন্তু সে কান্না তোমাকে স্পর্শ করেনি কখনো।অনেক কাদিয়েছো,কষ্ট দিয়েছো,,এখন ফ্রেন্ড ড্রাগস নেয় তাই আমি পড়বোনা।তোমার কথামতো উঠছি বসছি তুমি কি করেছো। আর হ্যা,,বেবি,,ওইসব বানানো গল্প তাই না আদি?আর কত এভাবে আমাকে বোকা বানাবে?কেন আদি কেন?তুমি আমার অস্তিত্বের বিলীন করে দিয়েছো দিনের পর দিন। আমি আর পারছিনা,,আদি,,তুমি আর কত আমার সাথে এমন করবে?(কাদতে কাদতে) সবাই সামুর কথা শুনে স্তব্ধ।আদি সামুর সাথে এসব করেছে,এত অন্যায় করেছে,,কেউ কিচ্ছু জানেনা। আদি বাবা ক্ষেপে উঠলেন। --আদি তুই দিনের পর দিন মেয়েটাকে এভাবে কষ্ট দিয়েছিস?তুই এতবড় অমানুষ?তুই আমার ছেকে?তোর জন্য এই পরিবারের জন্য কি না করেছে ও? --আমি ওর হাসব্যান্ড আমার জন্য করবেনা তো বাইরের লোকের জন্য করবে?কার জন্য করবে তুমি সামু? --আদি তুমি সিক।তোমার সাথে কোনো সুস্থ মানুষ থাকতে পারেনা,, --কি বললে,,?(সামুর দিকে তেড়ে গিয়ে) --তোর মতো অমানুষ ওকে ডিজার্ভ ই করেনা।অসভ্য ইতর ছেলে।আমি নিজের হাতেই ওর জীবনটা নষ্ট করেছি। --তাই নাকি সামু?(সামুর দিকে তাকিয়ে) সামু মাথা নিচু করে রেখেছে। আদি চিতকার করে উঠলো,, কথা বলো সামু,, সামুরও প্রচন্ড রাগ উঠে গেলো। --কি বলবো?কি শুনতে চাও?তুমি আমার বিশ্বাস ভালোবাসা নিয়ে খেলা করেছো,,তোমার সাথে কি করে থাকবো আমি যেখানে আমার ইচ্ছে অনিচ্ছার কোনো মূল্য নেই তোমার কাছে।সারাজীবন কি কি করবে আমার সাথে তা আর বুঝতে বাকি নেই।এমন করলে কিভাবে থাকবো তোমার সাথে? আদির মাথা গরম হয়ে গেলো।কপালের রগ ফুটে উঠেছে।মাথায় রক্ত টগবগ করছে। --কি বললি তুই আমার সাথে থাকা যায়না? বলেই সামুর গালে সর্বশক্তি দিয়ে থাপ্পড় মারলো।সামু ছিটকে পড়ে গেলো।নিশি ওকে তুলে দাড় করালো। সাথে সাথেই আদির বাবা আদির দুগালে দুটো থাপ্পড় দিলো।পুরো বাড়ি স্তব্ধ হয়ে গেলো সামু ঘটনা বুঝতে পেরে ডুকরে কেঁদে ওঠে। --কুলাঙ্গার,বদমাইশ ছেলে, তুই এসব করছিস ওর সাথে এতদিন?তোর সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাই আমার সামনে এভাবে তুই সামুর গায়ে হাত তুললি? কোন পাপে যে তুই আমার ছেলে হয়ে জন্ম নিয়েছিলি,,আর দ্বিতীয় পাপ করেছি তর মতো কুলাঙ্গারের সাথে সামুর মতো মেয়েকে বিয়ে দিয়ে।ওর সাথে অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি।এই অপরাধের ক্ষমা হয়না।দূর হয়ে যা,,আমার সামনে থেকে। আদি সামুর দিকে বিস্ফোরিত চোখে একবার চেয়ে উপরে চলে গেলো।সামু আদির পিছনে যেতে নিলেই আদির বাবা ওকে আটকে দেয়। --তুই আজকে আর ওর আশেপাশে যাবিনা।গেস্ট রুমে থাকবি। আর পারলে আমাকে ক্ষমা করিস। বলেই তিনি চোখের কোনে পানি মুছে নিজের রুমে চলে গেলেন।সামু বাবার কথা অমান্য করতে পারেনি।তাই একবার উপরের দিকে চেয়ে নিচের গেস্ট রুমে চলে গেলো। আদি অনেক রাত পর্যন্ত রুমে পাইচারি করছে।সামুর আসলে ওর সাথে কঠোর বুঝাপড়া আছে।কিন্তু সামু আসেনি,, মাঝরাতে আদি কাউকে ফোন করে বললো, আগামীকাল সকালের ফ্লাইটে সিডনির টিকিট কনফার্ম করতে।আর্জেন্ট। তারপর উকিলকে ফোন করে বলে, --ডিভোর্স পেপার রেডি করুন।আগামীকাল সকালেই সব রেডি চাই।আমি ইমেইল করে ডিটেইলস পাঠিয়ে দিচ্ছি। তারপর ফোন রেখে দিয়ে বললো, --আমার সাথে থাকা যায়না।তাহলে থাক তুই তোর মতো। চলবে... (ভাভাগো ভাভা রোজা থেকেও অনেক বড় পর্ব লিখেছি।তবুও অনেকেই আজকে আমাকে নোবেল না দিয়ে বকা দিবো)
0
10