ঘৃনার মেরিন

0 14
Avatar for hsnbijoy
3 years ago

ঘৃণার মেরিন

part : 19 (last)

season : 2

writer : বিজয়

.

নীড় ঠাস করে থাপ্পর মারলো। সবাই তো হা।

নীড় : এসবের মানে কি?

মেরিন: আপনার মুক্তি...

নীড় : মানে মেরিন কখনো কিছু ভোলেনা.... হতে পারি খারাপ কিন্তু আপনাকে ভীষন ভালোবাসি। আপনাকে মুখে বলা কথাই আমার জন্য অনেক। তারমধ্যে আপনাকে ছুয়ে কথা দিয়েছি। সেটার বরখেলাপ কি করে করি.... আপনি মুক্তি চেয়েছেন তাই আপনাকে মুক্তি দিবো...

.

নীড়ের মনে পরলো সেই রাতের কথা যেদিন মেরিন ওকে ছুয়ে কথা দিয়েছিলো যদি নীড় কনিকাকে খুজে আনে তবে মেরিন নীড়কে মুক্তি দেবে। মানে divorce ... নীড় ভেবেছিলো ওটা কেবলই আবেগের প্রলাপ ছিলো। ভুলেই গিয়েছিলো কথাটা।

মেরিন : ক্ষমা চাইছি কালকেই কথাটা পূরন করতে পারিনি। আমি signature করে দিয়েছি... আপনার যোগ্য কাউকে খুজে নেবেন। যাকে আপনি ভালোবাসেন। আর যে আপনাকে ভালোবাসে.... মেরিন চোখ নামিয়ে কথা গুলো বলছে। তাই নীড়ের ভয়ংকর রাগী চোখ ২টা দেখেনি... কথাগুলো বলেই মেরিন যেই নীড়ের দিকে তাকালো। আর চমকে উঠলো।

নীড় : বলা শেষ?

মেরিন: হামম। আরেকটা কথা... ক্ষমা। জানি আমি ক্ষমার অযোগ্য। তবুও ক্ষমা চাইছি। আমাকে please ক্ষমা করে দেবেন।

নীড় আর কোনো কথা না বলে মেরিনকে টেনে রুমে নিয়ে গেলো।

.

নীড় মেরিনের দিকে তাকিয়ে আছে । আর মেরিন নিচে দিকে। কারন নীড়ের দিকে তাকানো এখন সম্ভব না।

নীড়: আমার দিকে তাকাও....

মেরিন: ....

নীড় : তাকাতে বলেছিনা....

নীড় মেরিনের গাল চেপে মাথা ওপরে তুলল।

নীড় : আমার মুখটা কি আর ভালো লাগছেনা... যে নিচের দিকে তাকিয়ে আছো....

মেরিন: ....

নীড় : কথা বলছো না কেন?

মেরিন: ভালো লাগলে কি হবে? আর তো দেখতে পারবোনা এই ভালোলাগার মুখ।

নীড় : কেন দেখতে পারবিনা কেন? বল দেখতে পারবিনা কেন?

মেরিন : কারন di....

আর বলতে পারলোনা নীড় মেরিনের ঠোট জোরা দখল করে নিলো।

.

একটুপর....

নীড়: আরেকবার divorce এর d ও উচ্চারন করলে কি করবো নিজেও জানিনা।

বলেই divorce paper টা টুকরো টুকরো করে আগুনে পুরিয়ে দিলো।

নীড় দেখলো মেরিন চুপচাপ দারিয়ে আছে। আর স্থির চোখে পুরে যাওয়া দেখছে।

নীড় : কি হলো ? কথা বলছোনা কেন?

মেরিন : কখনো দেখেছেন বর্ষা শেষে বন্যার ধংব্সলীলা... আমি এখন বর্ষা শেষে সেই স্থির বন্যা, শান্ত বন্যা... যেমনটা আপনি বলেছিলেন সেদিন,,, যেমনটা চেয়েছিলেন...

নীড় : আমি বর্ষা শেষে শান্ত বন্যা চাইনা....

আমি গ্রীষ্মের শুরুতে আগমনী বন্যা কেই চাই।

যার কথা ভেবেই শুরু হয় আতংক। যার আরেক নাম ভয়...

মেরিন : ভুল করলেন না তো ... সারাজীবন কিন্তু বোঝা নিয়ে বেরাতে হবে....

নীড় : কি বললা? তুমি আমার বোঝা?

মেরিন: হামম। বোঝা। এখন পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে

নীড় : 🤬।

নীড় কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো।

.

মেরিন : যায় জ্যোতি যায় যাক না জীবন... ছারবো না তোরে...

কি ভেবেছিলেন মিস্টার চৌধুরী.... আপনাকে আমি মুক্তি দিবো। ঘৃণার মেরিন আমি... ঘৃণা থেকে কখনো মুক্তি পাওয়া যায়না। আমার দাদুভাইকে kidnap করে আমার অতীত জেনেছেন...

আমার আম্মুকে ফিরিয়ে এনেছেন...

কেন করেছেন জানিনা বুঝি?

ভালোবাসেন আমাকে...

কিন্তু বলছেন না... 😒..

ভালোবেসেছি আপনাকে.... কি করে আপনাকে ছারতে পারি.... নিঃশ্বাস আপনি আমার এই কথার তীর তো কেবল আপনার মুখে ভালোবাসি শোনার জন্য । আর ৩দিন দূরে থাকার শাস্তি।

হায় কি রাগ.... আজকে সাদা শাড়ি পরেছি আজকে কি রক্ত দিয়ে রং খেলা ঠিক হবে?

তখন জন ফোন করলো ।

মেরিন: hello ...

জন: ম্যাম... সেতু-নীরাকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা....

মেরিন : what?

জন: yes... mam...

মেরিন: যেভাবেই হোক ওদের খুজে বের করো...

.

বিকালে....

দাদুভাই : নিহাল...

নিহাল : জী স্যার...

দাদুভাই: কিসের স্যার? কাকা ডাকো....

নিহাল: ok... কাকা...

দাদুভাই : আমি আমার নাতনিকে বাসায় নিয়ে যেতে পারি?

নিহাল : হ্যা কাকা... কিন্তু ১বার নীড় এসে নিক...

দাদুভাই : নীড় কখন আসবে জানিনা... এখন নিয়ে গেলাম। দাদুভাই আসলে বলো যে আমি নিয়ে গেলাম।

.

খান বাড়িতে.....

কনিকা মেরিনকে খাইয়ে দিচ্ছে। কবির দূর থেকে দেখছে । খুব ইচ্ছা হচ্ছে স্ত্রী সন্তানের সাথে বসে কিছু মুহুর্ত পার করার। কিন্তু অপরাধবোধের জন্য ওদের সামনে যেতেই সাহস পাচ্ছেনা।

.

রাতে....

মেরিন মাকে জরিয়ে ধরে শুয়ে আছে। কিন্তু ঘুম হচ্ছেনা। গতরাতে তো কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে গেছে। কিন্তু আজকে কিছুতেই ঘুম আসছেনা। নীড়কে ছারা... অথচ কতো ইচ্ছা ছিলো মায়ের বুকে ঘুমাবে। খেয়াল করে দেখলো কনিকা কাদছে। কনিকা মনে করেছিলো মেরিন ঘুমিয়ে পরেছে। কান্নার আভাস পেয়ে মেরিন ধরফরিয়ে উঠলো।

মেরিন : আম্মু তুমি কাদছো কেন?

কনিকা: কই না তো...

মেরিন: বললেই হলো। বলো কাদছো কেন?

কনিকা: sorry রে মা.... তোমার জীবনটা নষ্ট করে ফেলেছি, সুন্দর করে সাজাতে পারিনি... কিছুই করতে পারিনি.... ক্ষম...

মেরিন: এই... পাগল নাকি? কি বলছো কি? তোমার কোন দোষ নেই আম্মু... দোষ ওই

সেতু, আর কবির খানের... ওদের ২জনের আমি এমন হাল করবো... ওই কবির খানকে তো আমি এমন মৃত.....

কনিকা : না মা অমন কথা বলেনা... সে তোমার বাবা...

মেরিন : বাবা my foot...

কনিকা : মামনি আমি জানি কবির তোমার অপরাধী । আমারও অপরাধী ... কোনোদিনও ক্ষমা করতে পারবোনা.... কিন্তু তাই বলে.... মামনি খুন করা কি ঠিক ? কারো জীবন নেয়া যে হারাম.... তারওপর সে তোমার বাবা....

মেরিন : আম্মু বাদ দাও তো...

কনিকা : মামনি.... কবিরকে আমি ঘৃণা করি... কিন্তু ও তোমার বাবা... পিতার হত্যাকারী খেতাব পেতে দিতে পারিনা....

মেরিন : আম্মু তুম...

কনিকা : কথা দাও তুমি কবিরের কোনো ক্ষতি করবেনা...

মেরিন : আম্মু তুমি ওই লোকটাকে বাচাতে চাইছো...?

কনিকা: না মা... আমি তোমাকে ভালোবাসি.... জানি সে অনেক আঘাত দিয়েছে তোমাকে.....

মেরিন : আমার থেকে কয়েক গুন বেশি কষ্ট তোমাকে দিয়েছে। তবুও তুমি ওই লোকটাকে ক্ষমা করে দিলে...

কনিকা : কে বলেছে ক্ষমা করেছি.... যে লোকটা আমার জীবনের ১২টা বছর কেরে নিয়েছে। সেই লোকটাকে ক্ষমা... যে আমার বাচ্চাটার জীবনটা বিষিয়ে দিয়েছে তাকে ক্ষমা করবো? কোনোদিনও না...

কনিকা কান্না করতে লাগলো। মেরিন মাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে ঘুম পারালো । এরপর বারান্দায় গিয়ে দারালো।

.

মেরিন : তোমার চরম শাস্তির সময় ঘনিয়ে এসেছে মিস্টার কবির ফয়সাল খান... শুধু ১বার তুমি ক্ষমা চাও আমার মামনির কাছে... এরপর দেখো আমি তোমায় কেমন ক্ষমা দেই? সেই সময়টার অপেক্ষা যেদিন তুমি ক্ষমা চাইবে? কিন্তু সেতু আর নীরা কোথায় গেলো? ও...

তখন কেউ পেছন থেকে হঠাৎ ওর মুখে কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলো । এরপর হাত বেধে কাধে তুলে নিয়ে কোথাও যেতে লাগলো।

.

গাড়িতে...

গাড়িতে বসিয়ে মেরিনের চোখের বাধন রাখা হলেও মুখের বাধন খুলে দেয়া হলো। মেরিন মোচরা মোচরি করছে।

মেরিন : নীড় ভালো হচ্ছেনা কিন্তু..

নীড় : ...

মেরিন: চুপ থাকলে লাভ হবেনা কিন্তু। আমি জানি এটা আপনি...

নীড় মেরিনের চোখের বাধন খুলে দিলো। ২জনের চোখই রাগে লাল হয়ে আছে।

২জন একসাথে

বলল : এসবের মানে কি?

মেরিন : আপনার সাহস কিভাবে হয় আমাকে এভাবে তুলে আনার?

নীড় : তোমার সাহস কিভাবে হয় আমাকে না বলে এই বাসায় আশার?

মেরিন : মানে? মেরিন বন...

নীড় : জানি জানি ....

মেরিন : মেরিন বন্যা খান কোনো কাজ কারো অনুমতি নিয়ে করেনা....

নীড় : wait wait... মেরিন বন্যা খান মানে?

মেরিন : মেরিন বন্যা খান মানে মেরিন বন্যা খান ।

নীড়: তোমার কি আমার থাপ্পর খেয়ে মন ভরে না? মেরিন বন্যা খান নামে এখন কেউ নেই। মেরিন বন্যা নীড় খান চৌধুরী আছে।

মেরিন : ....

নীড় : চুপ কেন?

মেরিন : বাসায় যাবো... আমার হাত খুলে দিন....

নীড়: 🙄।

মেরিন : কিছু বলেছি তো...

নীড় : শুনেছি তো... 😏।

মেরিন : ধ্যাত...

নীড় : আচ্ছা আমি তোমাকে বাসায় রেখে গেলাম শাড়ি পরা এখন আবার এই অবাঙালি পোশাক কেন?

মেরিন : mind your own business ..

নীড়: সেটাই করছি...

.

একটুপর...

নীড় গাড়ি থামালো। ১টা বাড়ির সামনে। এরপর কোলে করে মেরিনকে ভেতরে নিয়ে যেতে লাগলো।

মেরিন : এটা কার বাড়ি?

নীড়: তোমার জামাইর। মানে তোমার ।

মেরিন : 😒...

নীড় মেরিন ১টা রুমে নিয়ে নামালো। এরপর ১টা লাল টুকটুকে শাড়ি হাতে ধরিয়ে দিয়ে

বলল: যাও এটা পরে আসো।

মেরিন: এই রাত সারে ১২টা বাজে আপনি আজিরা পেচাল পারছেন?

নীড় : হ্যা। পরবে কি পরবেনা?

মেরিন: না।

নীড় : তুমি কি কোনো কথাই ১বারে শুনতে পারোনা?

মেরিন : না। আর এই শাড়ি আপনি গিয়ে নীরাকে দিন।

নীড় : আরেকবার নীরার নাম নিলে খবর আছে। শাড়িটা পরে নাও ।

মেরিন :না বলেছিনা।

নীড় বাধ্য হয়েই নিজেই মেরিনকে শাড়ি পরিয়ে দিলো। এরপর সাজিয়ে দিলো। ভীষন সুন্দর লাগছে মেরিনকে। এরপর আবার মেরিনকে কোলে তুলে গাড়িতে বসালো। কালো কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে দিলো। মেরিনের মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

.

কিছুক্ষন পর আবার গাড়ি থামলো । নীড় মেরিনকে গাড়ি থেকে নামালো। হাতের বাধন কিছুটা হালকা করলো।

নীড় : দারাও ... আসছি....

বলেই নীড় চলে গেলো। মেরিন গুতাগুতি করতে করতে হাতের বাধন খুলে ফেলল।

মেরিন মনে মনে: হালকাই তো ছিলো। তাহলে এতোক্ষন খুলতে পারলাম না কেন?

এরপর চোখের বাধন

টা খুলবে আর ঠিক তখনই গিটারের আওয়াজ পেলো। ১টানে চোখের বাধন খুলল। আর দেখলো সামনে আলোর মেলা সেই সাথে গোলাপের পাপড়ির তেরি করা পথ। পথের কিনারা দিয়ে আছে প্রদীপ.... মাথার ওপর পূর্নিমার চাদের আলো। নদীর স্নিগ্ধ বাতাস। মাতাল করা গিটারের সুর...

🎶🎵🎶

সারারাত ভর...

চোখের ভেতর

স্বপ্নে তোমার আনা গোনা..

নেমে আসে ভোর

থাকে তবু ঘোর...

হাওয়ায় হাওয়ায় জানাশোনা

তুমি দেখা দিলে তাই মনে

জাগে প্রেম প্রেম কল্পনা...

আমি তোমার হতে চাই

এটা মিথ্যে কোনো গল্পনা...

🎶🎵🎶....

মেরিন একেবারে নীড়ের সামনে এসে পরেছে । চারিদিক সুন্দর করে সাজানো। সাদা গোলাপ দিয়ে। সামনে ১টা ভ্যানিলা কেক রাখা। নীড়কেও অনেক সুন্দর লাগছে। কালো shirt-pant... চুল স্পাইক করানা।। নরমাল। বাতাসে উরছে। গান শেষ করে নীড় মেরিনের সামনে এসে ১হাতে মেরিনের কোমর জরিয়ে সামনে এনে অন্যহাত দিয়ে ওর মুখের ওপর থেকে চুল সরিয়ে মেরিনের কপালে চুুমু দিয়ে

বলল: happy anniversary আমার বউটা....

.

মেরিন অবাক হলো এটা জেনে যে নীড়ের মনে ছিলো।

নীড় : অবাক হলে? কি ভেবেছো আমার মনে নেই?

মেরিন : ....

নীড় : চলো কেক কাটি।

২জন কেক কাটলো। ২জন ২জনকে wish করলো। আবার নীড় হাওয়া হয়ে গেলো। পরক্ষনেই আবার ঝরের বেগে এলো। ১গুচ্ছ গোলাপ নিয়ে। হাটু গেরে বসলো...

নীড়: হয়তো তোমার মতো কখনো ভালোবাসতে পারবোনা। কারন মেরিনের মতো ভালোবাসার ক্ষমতা কারো নেই....

তবে আমি আমার সবটুকু দিয়ে তোমাকে ভালোবাসবো । কখনো কোনো অভিযোগের সুযোগ দিবোনা। যতোদিন বেচে আছি... পাশে থাকবো । ১টা কথাই বলতে চাই...

তুমি আমার

#ঘৃণার_মেরিন না ।

#ভালোবাসার_মেরিন....

১টা সুযোগ দিবে.... please ....

তোমাকে ভালোবাসার...

মেরিন নিজের চোখ আর কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা.... নীড়কে জরিয়ে ধরেকাদতে লাগলো।

নীড় : আরে পাগলি কাদছো কেন?

মেরিন : i love you.. love you... love you... love you a lot...

নীড় : & i love you too....

মেরিন : কখনো আমাকে ছেরে যাবেন না... please ...

নীড় : মাথা খারাপ না পাগল ... আমি তো আজীবন আমার বউটার সাথে থাকবো। কথা দিলাম....

.

কিছুদিনপর...

চৌধুরী বাড়িতে...

মেরিন: কাহিনি কি বলো তো? কি লুকাচ্ছো?

নীড় : কোথায় ? কিছু নাতো...

মেরিন: কিছু তো আছে ঘাপলা...

নীড় : জান তুমি কি আমার ওপর সন্দেহ করছো...

মেরিন : ধ্যাত কি যে বলো না। আচ্ছা শোনো... আজকে ওই বাসায় যাবো কিন্তু।

নীড় : আচ্ছা...

বলেই নীড় মেরিনের কপালে চুমু দিয়ে চলে গেলো।

নীড় মনে মনে : জান... ঘাপলা তো করছি... কিন্তু প্রমান না পেলে তো আর সম্ভব না। কালকেই সব clear হবে। ইনশাল্লাহ।

বিকালে ওরা খান বাড়িতে গেলো।

.

পরদিন....

কনিকা কাজ করছে....

নীড় office এ। মেরিন রুমে বসে অফিসের কাজ করছে। দাদুভাই-দীদা বসে চা খাচ্ছে। কবির অনেক সাহস জুগিয়ে কনিকাকে ডাক দিলো।

কবির : কনা...

কনিকার সময় ওখানেই থেমে গেলো। কতোদিন পর সেই ভালোবাসার ডাক.... কিন্তু কনিকা আবেগকে প্রশ্রয় দিলোনা।

কবির : একটু কথা বলতে চাই...

কনিকা যেন শুনতেই পায়নি।

কবির : শোনো না please ...

মেরিন : কি শুনবে আপনার কথা? আরো কোনো অপবাদ-অপমান শোনা বাকি আছে কি?

কবির: ...

মেরিন: কি হলো এখন চুপ কেন? ১২বছর ধরে যাকে দুনিয়ার সব বাজে বাজে কথা বলেছেন আজকে তার সাথে আরো কথা আছে? যার জীবন থেকে আপনি ১২টা বছর কেরে নিয়েছেন তার সাথে কথা বলতে চান? যাকে ঘৃণা করে এসেছেন , যার অস্তিত্বকে ঘৃণা করে এসেছেন তার সাথে কথা বলতে চান? যাকে কখনোই ভালোইবাসেন নি তার সাথে কথা বলতে চান? আসলে আপনি just আম্মুর রুপের মোহয় পরে বিয়ে করেছিলেন....

কবির : মেরিন....

কবির মেরিনকে থাপ্পর মারার জন্য হাত তুলেও নামিয়ে নিলো।

মেরিন: নামালেন কেন? মারুন আমাকে.... কসম আল্লাহর ওই হাত কেটে কুকুরদের খাওয়াবো....

তখন ওখানে নীড় এলো ।

কবির: হামম। খাওয়াবেই তো। আচ্ছা তুমি তো সবাইকে শাস্তি দাও... মেরেও ফেলো। আমাকে দিলেনা কেন? মারলেনা কেন?

মেরিন : দিবো তো শাস্তি... আগে সেতু আর নীরাকে খুজে বের করে নেই। ওদেরকে ওদের পাওনা বুঝিয়ে নেই... আপনার চোখের সামনে ওদেরকে নৃশংস্র ভাবে খুন করে নেই। এরপর..

নীড় : খুন হওয়াদের আর কি খুন করবে মেরিন....

মেরিন পিছে ঘুরলো।

.

মেরিন: একি তুমি? কখন এলে?

নীড় : মাত্র।

মেরিন : যাও fresh হয়ে নাও...

নীড় : হবো... তার আগে কিছু কাজ আছে। সেটা complete করতে হবে....

মেরিন: মানে?

নীড় : খুব সহজ... সেতু আর নীরা আর বেচে নেই। মরে গেছে। খুবই বাজে ভাবে মরেছে...

মেরিন: মরে গেছে? অসম্ভব... ওদের মৃত্যু এভাবে হতে পারেনা।

নীড় : কিন্তু হয়েছে। গতকালই । জানতে চাও ওদের মৃত্যু কিভাবে হয়েছে? ওদের হাত-পা প্রথমে আগুনে পুরে দেয়া হয়েছে। পরে সেগুলোতে আবার ঔষধ দেয়া হয়েছে। এরপর আবার পোরানো হয়েছে। এরপর একটু ঔষধ লাগিয়ে তাদেরকে কুমির ভরা পুকুরে ছেরে দেয়া হয়েছে। ক্ষনিকের মধ্যেই ২জনের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে।

মেরিন:কি? কে করলো এমন?

নীড়: তোমার সামনে দারিয়ে আছে।

মেরিন: মানে?

নীড় কবিরের সামনে গিয়ে কবিরের কাধে হাত রেখে বলল : বাবা....

দাদুভাই, দীদা ,কনিকা,মেরিন, জন তো অবাক।

মেরিন: কি বলছো কি? আজেবাজে কথা বন্ধ করো..

নীড় : আজেবাজে কথা বন্ধ না। সেতু-নীরা-নিলয়কে যতোটা তুমি ঘৃণা করো তার থেকে অনেক বেশি ঘৃণা বাবা করে।

মেরিন: stop nonsense....

নীড়: না... আমি একদম ঠিক বলছি... সব গল্পেরই এপিঠ ওপিঠি থাকে। বাবার সত্যটা কেউ জানোনা।

মেরিন: সত্য?

নীড়: হ্যা সত্য... আচ্ছা মেরিন তোমার মনে কি কখনো এই প্রশ্নটা আসেনি যে বাবা যদি আম্মুকে ভালোইনাবাসতো, যদি ঘৃণাই করতো তবে ২য় বিয়ে কেন করেনি? ১২ টা বছর কেন একাই কাটিয়ে দিলো।

বাকীরা সবাই ভাবলো : হ্যা তাই ই তো....

নীড় : কারন হলো বাবা কেবল আর কেবল আম্মুকেই ভালোবাসে।

মেরিন: নামের ভালোবাসা... দাদুভাইয়ের ভয়ে করেনি...

নীড় : seriously ? কবির ফয়সাল খানের মতো ১জন talented & educated business icon চাইলেই নিজে আলাদাভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারতেন না? পারতেন। কিন্তু ইচ্ছা করেই কিছু করেননি?

মেরিন:...

নীড় : আমি জানি তুমি আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসো। কিন্তু হঠাৎ যদি আমি কিছুদিন ধরে তুমি আমাকে না জানিয়ে কোনো কাজ করো। like না বলে কোথাও যাওয়া, late করে ফেরা.... আমার কি খটকা লাগবেনা? বাবার তো তবুও কখনোই সন্দেহ হয়নি। কিন্তু যদি কোনো স্বামী কারো সাথে তার স্ত্রীর অমন ছবি দেখে এমনকি এটা জানতে পারে যে সন্তানটাও তার না...তখন সেই স্বামীর মনের অবস্থা কেমন হতে পারে? সব মিলিয়ে কি তার রাগ করাট জায়েজ নয়? তার মনের অবস্থা কি হতে পারে? অমন অবস্থা নিয়ে ঠিক ভুল বিবেচনা করা যায়?

সবাই:....

নীড়: তুমি যে আমায় এতো ভালোবাসো , তবুও যদি আমার এমন কিছু জানতে পাও তবে ওই মুহুর্তে তুমি কিভাবে react করবে?

মেরিন :....

.

নীড়: ১২ বছর আগে বাবা সেদিন আম্মুকে অনেক অপমান করেছিলো ঠিকই। কিন্তু যখন মাথাটা ঠান্ডা হলো তখন বিষয়ের গভীরে যায়। প্রমান পেয়েও যায় সত্য। কিন্তু সেই সাথে এটাও জানতে পারে যে দীদা ওদের কব্জায়। তাই ওদের কিছু বলতে পারেনা। ওদের সাথে মিলে থাকার নাটক করে। দীদাকে আমি পেলেও আম্মুর খোজ বাবার জন্যেই পেয়েছি।

মেরিন : মিথ্যা কথা.... সব মিথ্যা....

নীড় : না। সব সত্য। বাবা আজও আম্মুকে ভালোবাসে। আর তোমাকেও...

মেরিন: ক...

নীড় : কোনো কথা না। আগে আমার কথা শোনো....

জন...

জন: জ স্যার....

নীড় : ১টা কথা বলো তো মেরিনের under এ তো তুমি কাজ করো । but মেরিনের under এ কাজ করার জন্য তোমাকে কে কাজ করতে বলেছে? কে তোমাকে মেরিনের ছায়া হয়ে থাকতে বলেছে ? কে তোমাকে মেরিনের সাহায্য করতে বলেছে?

জন:...

নীড় : বলো...

জন: জানিনা স্যার.. তার সাথে কেবল আমার ফোনে কথা হয়। আর মাস শেষে salary দেয় ...।সে বলেছে যে করেই হোক আমি যেন ম্যামকে একা না ছারি... আলাদা না ছারি.... যেন সবসময় রক্ষা করি...

নীড় : সে পুরুষ না মহিলা?

জন: পুরুষ....

নীড় : সবাই জানতে চাও সে কে? সে এই কবির ফয়সাল খান.... হ্যা মেরিনের সাথে সে খারাপ ব্যাবহার করেছে। আর সেসবের জন্যেই আজ মেরিন the মেরিন হতে পেরেছে। স্বর্নকে পুরিয়ে যেমন খাটি করা হয় তোমনি কষ্ট পেয়ে মেরিন... বন্যা হতে পেরেছে..... জানতো যে বাবা নিজে মেরিনকে save করতে পারবেনা। দাদুভাইয়েরও বয়স হয়েছে। তাই মেরিনের strong হওয়ার দরকার ছিলো। সে কারনেই....

মেরিন : ...

নীড় : ৫বছর আগে তোমার car accident হয়েছিলো। তোমাকে রক্ত দিয়ে কে বাচিয়েছিলো জানো? বাবা....

মেরিন: ...

নিহাল : আরো আছে...

সবাই পিছে তাকালো। দেখলো নিহাল-নীলিমা দারিয়ে আছে।

.

নিহাল মেরিনের সামনে গিয়ে ওর মাথায় হাত রাখলো।

বলল : ভাবির সত্যিটা কবির আমাকে আরো আগেই বলেছে। সব সত্যই বলেছে। কারন সেদিন আমি তোমাকে বাজে কথা বলেছিলাম.... আমাকে কবির বলেছিলো যেন আমি তোমাকে বাবার ভালোবাসা দেই। তুমি ভালোবাসা কাঙাল কিন্তু যেন পলকেই পরিবর্তন না হই তাহলে তুমি বুঝে যাবে.... তুমি কবিরের দুনিয়া... কবিরের হাতে দেখো । তোমার প্রতি জন্মদিনে ও নিজেকে আঘাত করেছে। যার চিহ্ন আজও রয়ে গেছে। তুমি তোমার বাবার ঘৃণার মেয়ে নও.... ভালোবাসার....

মেরিন: মিথ্যা... মিথ্যা ...মিথ্যা। সব মিথ্যা। সবাই মিথ্যাবাদী। সবাই খারাপ....

বলেই মেরিন গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো। নীড়ও পিছে ছুটলো। গাড়ি নিয়ে মেরিনের পথ আটকালো। এরপর মেরিনের সামনে গিয়ে দারালো।

মেরিন: আমার পথ ছেরে দাও নীড়...

নীড়:ছারবোনা.... গাড়ি থেকে নামো...

মেরিন : আপনি সরবেন কি না?

নীড় : না।

মেরিন : না সরলে কিন্তু....

নীড় : কিন্তু... আমার ওপর দিয়ে চালাবে?

মেরিন: ....

নীড়: আমার ওপর দিয়ে চালাবে? বলো....

মেরিন : ....

নীড় : চালাও...

মেরিন : .....

নীড় : কি হলো.... চালাও...

মেরিন মাথা নিচু করে বসে রইলো।

নীড় : নামো...

মেরিন: ....

নীড় : নামতে বলেছি কিন্তু.....

মেরিন নেমে এলো। নীড় মেরিনের কাধে হাত দিয়ে হাটতে লাগলো।

নীড় : সত্য থেকে না পালিয়ে সত্যে মোকাবেলা করতে কবে শিখবে? তোমার, আম্মুর জীবন থেকে যেমন ১২ বছর হারিয়ে গেছে তেমনি বাবার জীবন থেকেও। please accept this....

মেরিন : আমি যে বাবার সাথে অনেক খারাপ ব্য...

নীড় : সবটাই সময়ের দোষ ছিলো..... চলো আবার নতুন করে জীবনটা শুরু করি।

নীড় মেরিনকে নিয়ে বাসায় ফিরলো। বাবা-মেয়ের মিল হলো। মেরিন কবিরকে বুকে জরিয়ে কাদতে লাগলো। কবিরও এতো বছর পর মেয়েকে বুকে জরিয়ে কাদতে লাগলো। সব সমস্যা মিটে গেলো। মেরিনের জীবনও স্বাভাবিক হয়ে গেলো।

.

কিছুদিনপর....

নীড় office থেকে এসে দেখে মেরিন টেবিল calendar এর পাতা উল্টাচ্ছে।

নীড় : কি করছে আমার বউটা?

মেরিন: তোমার ভাগ্য গননা....

নীড় : ভাগ্য গননা?

মেরিন: হামম।

নীড় : মানে?

মেরিন: দেখি দেখি তোমার কপালে কি লেখা?

নীড়:😒।

মেরিন: উফফ...

চুলগুলো সরাও না...

নীড়:🙄🙄।

মেরিন: অলস কোথাকার? আমি সরিয়ে দিচ্ছি... মেরিন সরিয়ে দিলো।

মেরিন: 😱🤭।

নীড়: কি হলো?

মেরিন: তোমার কপালটা তো ভীষন ভালো গো।

নীড় মেরিনের কাধে হাত রেখে নাকে নাক ঘষে

বলল: তোমার মতো বউ পেলে তো সবারই কপাল ভালো হবে?

মেরিন: তাই বুঝি? তোমার কপাল আরো বেশি ভালো হতে চলেছে। আজ থেকে ঠিক ৯মাস পর ১টা ছোট্ট নীড় আসতে চলেছে.... যার নাম হবে নির্বন....

নীড়: মান.... সত্যি? 😍😍...

নীড় মেরিনকে কোলে নিয়ে ঘুরতে লাগলো।

নীড়: উহুহু... আমি বাবা হতে চলেছি..thank u আল্লাহ thank u জান... its the best gift in my life... i just love you...

খবরটা শুনে খান বাড়ি চৌধুরী বাড়িতে ধুম পরে গেলো। মেরিনের জীবন থেকে সকল ঘৃণার অবসান ঘটলো।

.

(sorry ... কালকে বলেও গল্প না দেয়ার জন্য। next গল্প

#পারফেক্ট_ভিলেন । আর নীড়-মেরিনই থাকবে। তবে ৩দিন পর থেকে গল্প পাবেন। কারন আমি ভীষন অসুস্থ। )

.

❤❤সমাপ্ত❤❤

1
$ 0.00
Avatar for hsnbijoy
3 years ago

Comments