EX গার্লফ্রেন্ড যখন বস
পর্ব_০২
এ কথা বলে আমি হাটা দিলাম, ফারিয়া কান্না করছে আর আমাকে ডাকতেছে, আমি কিছু না বলে চুপচাপ হাটতে লাগলাম।
সেদিন ফারিয়া আমাকে অনেকবার কল দিয়েছিলো কিন্তু আমি ধরিনি। পরে ওর নাম্বার ব্লক দিয়ে দিলাম।
আসলে আমিও ফারিয়াকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু এই ভালোবাসা ফারিয়াদের পরিবার কখনো মেনে নিবে না। কারণ ফারিয়া হচ্ছে ধনী পরিবারের মেয়ে। তার দাদার অনেক নাম ডাক।
আমার মতো গরিব ছেলের কাছে জীবনেও ওদের মেয়ে তুলে দিবে না।
এছাড়া আমারও কোনো চাকরী বাকরী নেই। টিউশনি করিয়ে নিজের পড়ালেখার খরচ নিজেই চালাই। আবার বাড়িতে পাঠাতে হয়।
ঘরে বাবা মা অসুস্থ এবং ছোট বোনটার পড়ালেখার খরচ চালানো। সব কিছু মিলিয়ে ফারিয়াকে বিয়ে করা জীবনেও সম্ভব নয়।
তারচেয়ে ভালো, ও ওর মতো থাক, আমি আমার মতো। ফারিয়া আমার ছেয়ে ভালো কোনো ছেলেকে বিয়ে করতে পারবে।
আমাকে বিয়ে করা মানে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারা। সব দিক দিয়ে চিন্তা করলাম ফারিয়ার সাথে আর রিলেশন continue না করাই উচিত।
সেদিন আমিও অনেক কেঁদেছি, কিন্তু পরিবারের কথা চিন্তা করে পাথর হয়ে গেছি। এখনো ফারিয়াকে ভালোবাসি, কিন্তু এখন আর কিছুই করা সম্ভব নয়।
অনেক কষ্টে চাকরিটা পেয়েছি। কিন্তু সেটাও দেখি ফারিয়াদের কোম্পানি। কি আছে কপালে আল্লাই ভালো জানে।
পুরনো কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি মনে নেই।
পরের দিন শুক্রবার ছিলো, তাই অনেক দেরি করে ঘুম থেকে উঠলাম। আয়মানকে কল দিলাম...
আমিঃ হ্যালো দোস্ত কি অবস্থা?
আয়মানঃ এইতো আছি, তোর কি অবস্থা?
আমিঃ মোটামুটি, বিকালে দেখা করিস কথা আছে।
আয়মানঃ বিকালে আমাদের বাসায় চলে আসিস, বাইরে যাবো না আর আম্মাও তোকে আসতে বলেছে।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে আসবো।
আয়মানঃ ওকে।
এরপর দুপুরে নামাজ পড়ে খাওয়া দাওয়া করে একটু ঘুমিয়ে নিলাম। বিকালে আয়মানদের বাসায় গেলাম...
কলিংবেল বাজালাম, একটু পর আন্টি এসে দরজা খুলে দিলো...
আন্টিঃ আরে অনি! কতো দিন পর আসলে। আসো আসো ভিতরে আসো।
আমিঃ তো আন্টি কেমন আছেন?
আন্টিঃ এই তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
আমিঃ জ্বি আমিও ভালো আছি। আয়মান কোথায়?
আন্টিঃ ও ছাদে আছে, যাও উপরে যাও।
এরপর আমি উপরে গেলাম। দেখলাম আয়মান বসে বসে গান শুনতেছে...
আমিঃ কিরে কি করিস?
আয়মানঃ কিরে আসছিস? এই তো বসে আছি।
আমিঃ হুম মাত্র আসলাম।
আয়মানঃ তো বল আর কি অবস্থা?
আমিঃ তোর সাথে কিছু কথা ছিলো।
আয়মানঃ তো বল! এতো অনুমতির কি আছে?
আমিঃ আমি যে তোকে আগে আমার gf. এর কথা বলতাম মনে আছে?
আয়মানঃ হুম, তুই যে কোনো কারণ ছাড়া ব্রেকআপ করে দিলি ওটা?
আমিঃ হুম ওটা।
আয়মানঃ তো এখন কি হইছে?
আমিঃ তোকে যেই ফারিয়ার কথা বলতাম সেই ফারিয়াই হচ্ছে আমাদের বর্তমান বস।
আয়মানঃ কিহ! তুই কি সত্যি বলছিস?
আমিঃ হুম।
আয়মানঃ তাহলে তো ভালোই, এখন আনার রিলেশন continue কর। অফিসের মালিক তুই হয়ে যাবি।
আমিঃ তুই কি পাগল, আমার চাকরি থাকে কিনা সেটা নিয়ে চিন্তায় আছি। আর তুই বলছিস রিলেশন করতে।
আয়মানঃ ফকিন্নি তখন ব্রেকআপ করলি কেন? এবার মজা বোঝ।
আমিঃ আরে ব্যাটা ইচ্ছা করে করছি নাকি, ওর ভালোর জন্যই তো করছি। দোস্ত যদি চাকরিটা চলে যায়।
আয়মানঃ আরে তুই পাগল নাকি, চাকরি কি বললেই চলে যাবে। দেখনা কি হয়।
আমিঃ হুম, মনে হয় না বেশি দিন টিকবে।
আয়মানঃ সেটা পরে দেখা যাবে। আগে নিজেকে স্টিল রাখ।
আমিঃ হুম।
সেদিন আয়মানদের বাসা থেকে আসতে অনেক রাত হয়ে গেছে। বাসায় এসেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরের দিন ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেরি হয়ে যায়, উঠে দেখি অলরেডি ৯.০০ টা বেজে গেছে। তাড়াতাড়ি রেড়ি হয়ে অফিসে গেলাম। প্রায় ১০.০০ টা বাজে। মোবাইল নিয়ে দেখি আয়মান অনেক গুলো কল দিছে।
silent মুড থাকার কারণে ধরতে পারিনি। যাওয়ার পর আয়মান বললো...
আয়মানঃ কিরে এতো দেরি কেন? তোকে ম্যাম ওনার রুমে যেতে বলেছে।
আমিঃ কেন বলেছে কিছু জানিস?
আয়মানঃ মনে হয় দেরি করে আসছিস তাই। গিয়ে দেখ।
আল্লাহ মোরে রক্ষা করো, চাকরিটা বাঁচাও। আস্তে আস্তে উনার রুমের কাছে গেলাম।
আমিঃ ম্যাম আসবো?
ফারিয়াঃ হুম আসুন।
কি কপাল মাইরি, যাকে প্রতিদিন ঠ্রেড দিতাম, তুই তুকারি করতাম, কথায় কথায় রাগারাগি করতাম আর আজ মাইনক্যা চিপায় পড়ে ওরের আপনি করে বলতে হচ্ছে।
তারপর আমি ভিতরে গেলাম, একটা চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে আছি। ম্যানেজারও সেখানে ছিলো।
ফারিয়াঃ রফিক (ম্যানেজার) সাহেব! উনাকে কাগজটা দেন।
ম্যানেজার আমাকে একটা কাগজ ধরিয়ে দিলো। শেষ পর্যন্ত চাকরিটা চলে গেলো। মা বাবার চেহারা গুলো চোখের সামনে ভাসতে লাগলো।
আমি ভয়ে ভয়ে কাগজটা পড়তে লাগলাম, পড়েই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো।
কারণ আমাকে ফারিয়ার সেক্রেটারি বানানো হলো, সব সময় উনার সাথে থাকতে হবে। কিন্তু কেন এটা করলো বুঝতে পারলাম না। মন খারাপ হয়ে গেলো।
কাগজটা নিয়ে বেরিয়ে আসলাম, আয়মান জিজ্ঞেস করলো...
আয়মানঃ কিরে কি বলেছে?
আমিঃ (কাগজ টা ওর হাতে দিলাম)
আয়মানঃ বাহ! তোর তো প্রমোশন হয়েছে। বিকালে ট্রিট দিবি।
আমিঃ নারে দোস্ত, আমাকে সেক্রেটারি বানাইছে মানে কোনো কাহিনী আছে। তুই ও কে ছিনিস না। ও ঠিকই প্রতিশোধ নিবে।
আয়মানঃ আরে ব্যাটা তোর মাথায় এগুলো ছাড়া ভালো কোনো চিন্তা আসেনা। কিছু করবে না। চুপচাপ কাজ কর।
এরপর কাজ শুরু করে দিলাম..
একটু পর পিয়ন এসে বললো..
পিয়নঃ ম্যাম আপনাকে ডাকছে?
আমিঃ কেন? কাজ করতেছি ম্যাম দেখতেছে না?
পিয়নঃ কেন সেটা ম্যাম কে জিজ্ঞেস করেন।
আমিঃ ওকে যাচ্ছি, আপনি আসতে পারেন।
একটু পর ফারিয়ার কাছে গেলাম....
আমিঃ ম্যাম ডেকেছেন?
ফারিয়াঃ হুম, আপনাকে আমার প্রাইভেট সেক্রেটারি বানানো হয়েছে। আজকে তেমন কোনো কাজ নেই। কাল সকালবেলা আমার বাসার সামনে থাকবেন।
আমিঃ কিন্তু ম্যাম আমার কাজ তো অফিসে।
ফারিয়াঃ ভুলে যাবেন না আপনি আমার সেক্রেটারি। সো যেটা বলেছি সেটা।
আমিঃ ওকে ম্যাম।
পরের দিন ফারিয়াদের বাসার সামনে গেলাম।
চলবে........
3
15
এখনকার সময় মোটামুটি সবারই কমবেশি গার্লফ্রেন্ড থাকে। কেউ একটা নিয়ে খুশি তো কারো দশটা হইলেও সে খুশি না।যদি প্রথম ভালোবাসার গার্লফ্রেন্ড এক্স হয়ে যায় তবে তার কথা কখনও ভোলা যায় না।