আমাদের জীবনটা আসলে কী? আমরা কি সেটা কখনো ভেবে দেখেছি?
রক্তমাংসে গড়া শরীরের ভেতর এক টুকরো হৃৎপিন্ড--এর নাম ই কি জীবন?
--নাহ জীবনকে আসলে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়না।।
জীবন আসলে একটা অদ্ভূত মায়ার নাম,,,সৃষ্টিকর্তার দেয়া অসাধারণ এক উপহার ।
আমরা যতইই বড় হতে থাকি ,জীবনের প্রতি আমাদের মায়া ততই বাড়তে থাকে।।। একটা সময়ে এসে আমরা প্রেমে পড়ে যাই----জীবনের প্রেমে।
আচ্ছা এই যে মায়া --এর শুরুটা কোথায় সেটা কি আমরা জানি?
আমরা যখন খুব ছোট তখন থেকেই একজোড়া মায়াবী হাতের পরশ আমাদের মোহাচ্ছন্ন করে রাখে,, আমাদের সকল কষ্ট ভুলিয়ে দেয়,,,আমাদের মনে মায়ার অনুভূতি জাগায়,,, বুঝতে শেখায় কিভাবে মায়া করতে হয়,, কিভাবে জীবনকে ভালোবাসতে হয় আর সে মানুষটা অন্য কেউ নয়,,, সে যেন পৃথিবীর বুকে যেন এক টুকরো সর্গ--- জগতের সবচাইতে মধুর সে ধবনি--- মা
এখান থেকেই আমরা বুঝতে শিখি,,, মায়াটা আসলে কি? সত্যিকারের মায়া, সত্যিকারের ভালবাসার Definition আমরা এখান থেকেই পাই,,, তাই আমরা পরবর্তীতে ঠিক এই ভালবাসাটাই ছড়িয়ে দিতে চাই,,,খুজে পেতে চাই,,,হোক না সে মায়াটা কারও মুখে লুকিয়ে থাকা এক টুকরো হাসিতে অথবা কারও অপলক নিষ্পাপ চোখের চাহনিতে,,,
তবে জীবনের এই মায়াকে সবাই-ই কি উপলব্ধি করতে পারে?
মনে ত হয়না --- যদি সত্যিই উপলব্ধি করতে পারত তবে কেন মানুষ নিজেই নিজের জীবনকে শেষ করে দেয়,,,এটা কী করে সম্ভব??
হুমম,,,সম্ভব,। এটা তখনই সম্ভব যখন জীবনের মায়া কাউকে আর টানেনা? কোন মায়ার বাধনই তাকে আর বেধে রাখতে পারেনা,,তাকে পেয়ে বসে খুবই খুবই খারাপ একটা অনুভূতি,,,, যার নাম হতাশা (frustration)
তবে হতাশার ও প্রকারভেদ আছে,,,, লেভেল আছে,,,, যারা হতাশায় ভুগে নিজের জীবনপ্রদীপ নিজেই নিভিয়ে দেয়,,,তারা হতাশার চরমতম লেভেলে থেকেই এই কাজ করে।
তবে আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা কথায় কথায় হতাশ হয়ে যাই,,,আমাদের হতাশ করার জন্য কারো কিছু করা লাগেনা,,, আমরা নিজেরা নিজেরাই হতাশ হই,,,,পরীক্ষা খারাপ হলে হতাশ হই,,,ল্যাবে কোড মিলাতে না পারলে হতাশ হই,,,মাসের শুরুতে টিউশনির টাকা না পেলে হতাশ হই,,,কোন মেয়ের কাছে পাত্তা না পেলেও হতাশ হয়ে যাই!
আসলে যা বললাম এগুলোর কোনটাই হতাশ হবার মত কিছুই নয়,,,
আপনি এক্সামে মার্কস কম পেতেই পারেন,টিউশনির টাকা একটু দেরিতে পেতেই পারেন,,,কোন মেয়ে আপনার Feelings না বুঝে আপনাকে অবহেলা করতেই পারে,,,,কিন্তু তাই বলে আপনি কেন হতাশ হবেন? কারণ হতাশার উলটো পিঠেইতো আছে মায়া, জীবনের মায়া!
হতেই পারে আপনার জীবনের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাচ্ছে,,,ব্যক্তিগত পারিবারিক সামাজিক মানসিক নানা ধরণের সমস্যায় জর্জরিত আপনার জীবন,,,জীবন নিয়ে আপনি বীতশ্রদ্ধ, বিরক্ত,কিন্তু তারপর ও আপনি হতাশ হবেন না,,,কারণ জীবন মানেই হতাশা নয়,, জীবন মানেই মায়া,,,
আপনি গ্লাসের অর্ধেকটা কীভাবে দেখবেন,,,সেটা আপনার উপরই নির্ভর করে,,,, যদি আপনি বলেন --গ্লাসের অর্ধেকটা ফাকা তবে বুঝতে হবে আপনি জীবনের মায়াকে এখনো উপলব্ধি ই করতে পারেননি
আর যদি আপনি বলেন --কই গ্লাসের অর্ধেকটাতো ভরা--তাহলে আপনি বুঝবেন,,, নাহ আপনাকে দিয়েই হবে ---আপনি পারবেন,,আপনার ভেতর সেই জেদটা আছে-- দরকার শুধু একটু Inspiration,,,তাহলেই আপনি পারবেন,,,মায়াময় জীবনকে উপভোগ করতে পারবেন।
ছোটবেলায় আমার সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষক আমাকে একবার সান্তনা দিয়েছিলেন এই বলে যে,,
" মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয় আড়ালে তার সূর্য হাসে। "
কথাটা আমার মনে গেঁথে গিয়েছিল,,, আর তাই ত জীবনে অনেক কঠিন,, অনেক বাধা, অনেক কষ্ট, অনেক অসম্ভবের সম্মুখীন হলেও কখনোই হেরে যাইনি,, স্যারের বলা কথাটা মনে করেছি,,,আর সবসময় এটা বিশ্বাস করে এসেছি,,,
“কখনো হার মানা যাবেনা,,, জিততেই হবে,,, “
জীবনে চলার পথে অনেক চ্যালেঞ্জ ই হয়তো আসবে , অনেক কঠিন মূহূর্তই হয়তো আসবে...তার কোন টাতে আমি হেরে যেতেই পারি,,,,কিন্তু আমি কেন সেখানেই থেমে থাকবো? নতুন উদ্যম নিয়ে, সাহস নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বো নতুন চ্যালেঞ্জে,,,কারণ একটাই --মায়াময় জীবনকে আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি।। খুজে পেয়েছি জীবনের সত্যিকার অর্থ,,,
অনেকেই আমাকে বলে তারা হতাশ,,, কারণ তারা এই জীবনের কোন অর্থ খুজে পায়না? এ ব্যাপারটাকে আসলে এভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি আমি – তারা হতাশ বলেই জীবনের অর্থ খুজে পায়না আবার উল্টোভাবে বলতে গেলে বলা যায়...তারা জীবনের অর্থ খুজে পায়না বলেই হতাশ ।
আসলে জীবনের অর্থ এক এক জনের কাছে এক এক রকম---আমার কাছে জীবনের অর্থ যা আপনার কাছে সেটাই হবে—এমন কোন কথা নাই—তবে জীবনের অর্থ খুজে পেতে কিছু ব্যাপার আছে যা অনুঘটক হিসাবে কাজ করে ...একটা শিশু কোন পরিবেশে বড় হয়েছে...কাদের সংস্পর্শে সে থেকেছে এসব যেমন ভূমিকা রাখে ঠিক তেমনি ধর্ম,সমাজ এসবের ও ভূমিকা আছে। আর এসবে ভিন্নতা থাকে বলেই জীবনের অর্থ আমাদের কাছে এক এক ভাবে ধরা দেয়।
মানুষের অনেক সমস্যাই থাকে যেসব কাউকে বলেও বোঝানো সম্ভব নয়...আসলে কঠিন পরিস্থিতিতে না পড়লে বোঝা যায়না পুরো ব্যাপারটা্ , Feel করা যায়না। তবে আপনি যত কঠিন পরিস্থিতিতেই থাকুন না কেন একটা ব্যাপার সবসময়ই মাথায় রাখবেন –কখনোই হতাশ হওয়া যাবেনা...সব সময়ই আপনাকে আশাবাদী হতে হবে...সামনে হয়ত আপনি বাধার প্রাচীর দেখতে পাচ্ছেন...আশাবাদী হবার মত হয়ত কিছুই নাই... কিন্তু তারপর
ও আপনি এটা মনে রাখবেন—সবকিছুরই বিপরীতধর্মী দুইটা দিক থাকে –অন্ধকারের বিপরীতে যেমন থাকে আলো, মন্দের বিপরীতে যেমন থাকে ভালো...হতাশার বিপরীতেও ঠিক তেমনি থাকে আশা নামের আলো...তবে আপনি কতটুকু আশাবাদী হতে পারবেন এটা নির্ভর করে আপনার মানসিক দৃঢ়তার উপর...আপনার মানসিক শক্তি যত বেশি আপনি ঠিক ততটাই আশাবাদী—
আপনার হতাশা থেকে থাকলেও তার লেভেল কতটুকু হবে তা আপনার মানসিক শক্তির সমানুপাতে ওঠানামা করে...এ কারণেই দেখবেন...অনেক মানুষ চরম বিপদেও আশা হারায় না আর কেউ কেউ অল্পতেই ভেঙ্গে পড়ে—
হতাশার ডোমেইন যার যত ছোট সে তত বেশি আশাবাদী জীবন নিয়ে --- হতাশ হবার মত অনেকগুলো কারণ থাকলেও তারপর ও আসলে আমাদের আশা নিয়েই থাকতে হবে...জীবনের নতুন মানে খুজে নিতে হবে...
আমাদের হাতের কাছে আমরা চাইলে অনেক উদাহরণ খুজে পেতে পারি...অনুপ্রেরণা নিতে পারি। আমাদের কঠিন অবস্থায় আমরা ভাবি যে—আমরাই মনে হয় দুনিয়াতে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছি—সবচেয়ে কষ্টের মাঝে আছি। কিন্তু আদতে আমাদের চেয়েও শত কষ্টের মাঝে যে অনেক মানুষই বেচে আছে সেটা আমরা কখনোই ভেবে দেখিনা অথবা ভেবে দেখার প্রয়োজন ও
মনে করিনা । সত্যি বলতে কী , সৃষ্টিকর্তা প্রতিটি মানুষকেই তার সহনশীলতার লেভেল অনুপাতে পরীক্ষা নিয়ে থাকেন।তিনি কাউকেই তার সহ্যসীমার বাইরে পরীক্ষা নেন না। এটা অবশ্যই আমাদের মনে রাখতে হবে।।
আমরা যেটা সর্বোচ্চ করতে পারি তা হল আমরা চেষ্টা করে যেতে পারি...আমরা যা চাই--সেটা মন থেকে সৃষ্টিকর্তার কাছে চাইবো...কিন্তু এটা ধরে বসে থাকলে চলবেনা যে আমি চাইলাম আর কোন কিছু না করেই পেয়ে গেলাম...জীবনটা এত সহজ নয় ...আমাদের চাওয়া যতটা তীব্র হবে আমাদের সেই অনুপাতে পরিশ্রমটাও হতে হবে...তবে তাই বলে ব্যাপারটা এমন নয় যে চাওয়া আর পরিশ্রমের অনুপাত মিললেই আমাদের হয়ে যাবে। এর সাথে আরো একটা ব্যাপার জড়িত –যেটার নাম ভাগ্য...সবকিছুর পরও আমাদের ভাগ্যটাই বড় কথা...আপনার অনেক কষ্ট অনেক পরিশ্রমের পর ও আপনার কাঙ্খিত ফলাফল পেতে না-ই পারেন কিন্তু তাই বলে আপনি হতাশ হলে তো হল না...আপনাকে জীবনের মায়াকে উপলব্ধি করতে হবে...অন্তর থেকে গভীরভাবে অনুভব করতে হবে...তাহলেই আপনি বুঝবেন আপনি জীবনের সবচাইতে কঠিন পরিস্থিতি যার চাইতে কঠিন আর কোনভাবেই সম্ভব নয়---এমন পরিস্থিতিতেও হাল ছেড়ে দেননি ...আশা হারাননি ।
তাই আসুন জীবনকে উপভোগ করার চেষ্টা করি কারণ জীবন ত একটাই...আর সে জীবনের সময়কাল ও খুবই সংক্ষিপ্ত । কেন আমরা হতাশ হয়ে আমাদের এই অল্প সময়টাকে নষ্ট করব...নিজের ভেতরের মায়াকে আমরা জাগিয়ে তুলি ,ছড়িয়ে দেই সবার মাঝে...জীবনের মাঝে...অদ্ভূত মায়ায় আলোকিত করে তুলি নিজেদের জীবন।
Nice article support me