শিক্ষার ক্ষতি হচ্ছে কিন্তু জীবন না থাকাটা বড় ক্ষতি

2 11
Avatar for himu
Written by
3 years ago

গোলাম রহমান
অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিন
মনোয়ারা

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে গত ১৭ই মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। দেশের ও আন্তর্জাতিক করোনা পরিস্থিতি এখনও আগের মতো অবস্থাতেই আছে। তারপরও অনেকে মনে করছেন আসছে সেপ্টেম্বরেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া দরকার আবার অনেকে মনে করছেন সেটা মোটেও ঠিক কাজ হবে না। তাদের মতে, শিক্ষার ক্ষতি হচ্ছে কিন্তু জীবন না থাকাটা তো সবচেয়ে বড় ক্ষতি। এমন পরিস্থিতিতে কী ভাবছেন অভিভাবক, শিক্ষাবিদ ও সমাজবিজ্ঞানীরা?

নাটোরের বাসিন্দা শিল্পী রানী সন্তানের স্কুল দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় খানিকটা উদ্বিগ্ন। স্কুল খোলা থাকলে নিয়মিত পড়ার রুটিনটা অন্তত ঠিক থাকতো, এখনতো শেখা সবকিছুও ভুলতে বসেছে। কিন্তু সন্তানকে এমন পরিস্থিতিতে স্কুলে পাঠাতেও ঠিক ভরসা পাচ্ছেন না তিনি। তার মতে, ও তো আর বললেই মাস্ক মুখে রাখবে না বা নিয়ম মেনে হাত ধুবে না। তাতে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়বে। সবমিলিয়ে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত শিল্পী মনে করেন, অবশ্যই শিক্ষার থেকে জীবন আগে।

তবে এখনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে নন শিক্ষাবিদ গোলাম রহমান। বলেন, অনেকেই হয়তো ভাবছেন আর কতদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা যায় কিন্তু এই সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়াটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। কারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‍খুলে দিলেই অগণিত শিক্ষার্থী স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে। এত ভীড়ে সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা কি সম্ভব হবে?

তিনি যোগ করেন, এই সংকট শুধু আমাদের দেশের না পুরো বিশ্বেরই এখন এই সংকট। আমেরিকাতেও অনেক স্কুল খুলে দেওয়া হচ্ছে কিন্তু আশঙ্কা হচ্ছে কিছুদিন গেলেই সেখানে আবার সংক্রমণের হার তীব্রভাবে বেড়ে যাবে। অনেক গবেষণায় ম্যাপ এঁকে তা দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদেরও দেশেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিলে আক্রান্তের সংখ্যা মাল্টিপ্লাই করবে।

সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপের গুরুত্ব অনেক বোঝাতে গোলাম রহমান বলেন, বিশ্বে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি শুরুর সময়ে আমরা কঠোর অবস্থান পালন করলে আমাদের এতটা ভুগতে হতো না। একইভাবে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় আর কয়েক মাস বন্ধ থাকলে খুব বড় ক্ষতি হবে না।

পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিক্ষার্থীদের এই ঘাটতি পুষিয়ে নিতে নানান পদক্ষেপের পরামর্শও দেন তিনি। বলেন, কোর্স কমিয়ে, পরের শিক্ষাবর্ষে ছুটি কমিয়ে অথবা একই সঙ্গে অল্প অল্প করে বাড়তি কোর্স দিয়ে এই ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।

তবে এভাবে আর দীর্ঘসময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার পক্ষে নন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিন। চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, দেশের করোনা পরিস্থিতি এখনো উন্নতির দিকে যায়নি। এখনো প্রতিদিন অনেক অনেক মানুষ আক্রান্ত শনাক্ত হচ্ছেন কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও তো এতদিন বন্ধ রাখা যায় না।

তিনি যোগ করেন, এখন দেশের দুর্যোগকাল চলছে। এমন দুর্যোগ আরো আসতে পারে। তাই সবাইকে সেসব দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। গত ছয় মাস সরকার এককভাবে সব কিছু সামলাচ্ছিলো এখন সবাই মিলে তা সামলাতে হবে। সেজন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক প্রতিষ্ঠান সবাইকেই তৈরি হতে হবে। যেন ভবিষ্যতে এই ধরনের কোনো দুর্যোগ আসলে সবাই তা মোকাবেলা করতে পারে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে মত দিয়ে তিনি বলেন, এখন খুলে দিলে সবাই নিজেরা নিজেদের নিরাপত্তার প্রস্তুতি নিবে। তাতেই আদতে দেশের লাভ হবে। বন্ধ রেখে তা হবে না। সবাইকেই এমন দুর্যোগ মোকাবেলার কৌশল শিখতে হবে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত মনোয়ারা খাতুন।চাঁপাই নবাবগঞ্জের শংকরবাটী পোল্লাডাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তিনি। জানালেন, শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা প্রায়ই প্রশ্ন করছেন স্কুল কবে খোলা হবে? কেননা, দীর্ঘসময় স্কুল বন্ধ থাকায় তারা একেবারেই পড়াশোনার বাইরে। ফলে যেটুকু শিশুরা শিখেছিলো তা আবার বিস্মৃতির মুখে। শিক্ষিত বাবা- মা যাও সন্তানকে কিছুটা পড়াশোনার ধারায় রাখতে পারছেন গ্রামের অশিক্ষিত বা স্বল্পশিক্ষিত বাবা- মায়ের দ্বারা তা সম্ভব হচ্ছে না মোটেও।

কিন্তু তারপরও এখনই স্কুল খুলে দেওয়াটা ঠিক হবে না বলেই মনে করছেন তিনি। বলেন, করোনা পরিস্থিতি এখনো একই জায়গায় আছে। তাই এখনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। বিশেষ করে গ্রামের দিকে মানুষ তো আর অতটা সচেতন নয়। কেউই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে না। আবার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দূরত্ব বজায় রেখে ক্লাস করানোর সুযোগও নেই। তাই তা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। সব কিছুই বিবেচনায় রাখতে হবে।

এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার ক্ষতি পরে পুষিয়ে নেওয়া গেলেও জীবনের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া কঠিন হবে বলেই মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।

10
$ 0.00
Sponsors of himu
empty
empty
empty
Avatar for himu
Written by
3 years ago

Comments

হ্যা সত্যি বর্তমানে শিক্ষায় মনোনিবেশ করার থেকে জীবনের দিকে খেয়াল রাখাটাই সবচেয়ে ভালো। শিক্ষার শেষ নাই কিন্ত জীবন একবার চলে গেলে আর পাওয়া যাবে না ভালোই লিখছেন

$ 0.00
3 years ago

thanks for watching my new article.

$ 0.00
3 years ago