এক যুবকের 'সাহসী' হয়ে ওঠার গল্প

5 14
Avatar for himu
Written by
4 years ago

যেদিন বিয়ে করি সেদিনও আমার মাসিক ইনকাম ছিল ছয় হাজার টাকা। বিয়ে করব শুনে বন্ধুরা অবাক হয়ে বলল,

: কীইইহ! বিয়ে করবি? তোর যা বেতন! বউকে খাওয়াবি কী?

: আল্লাহই খাওয়াবে। তোরা কেন টেনশন করছিস? - বললাম আমি।

বন্ধুরা ঠোঁট উল্টালো,

: রাখ তোর ওইসব আজগুবি কথা। ইনকাম না থাকলে আল্লাহ কি মুখে তুলে খাওয়াবে? পাগলামি ছাড়। আগে নিজের পায়ে দাঁড়া। তারপর বিয়েটিয়ে নিয়ে ভাবিস।

আমি ওদের কথা গায়ে মাখলাম না। নিজের পায়ে যতটুকু দাঁড়িয়েছি ততটুকুতেই সন্তুষ্ট থেকে আর্লিবিয়ের সুফল নিয়ে ভাবলাম, এবং বিয়ে করে ফেললাম।

তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ফেলায় অফিসে আমার সহকর্মীরা হাসাহাসি শুরু করল। কেউ কেউ ক্ষেপে গেল। পারে না গালমন্দ করে। সুহাস, আমার এক মর্যাদা নিচে কাজ করে, সেও উপহাস করে বলল,

: দাদা! একী কল্লেন!...এই বয়সেই?...আরেকটু ভেবে নিলে কিন্তু পাত্তেন।

অথচ, আমি দেখছি, জামান সাহেব, আমাদের জেনারেল ম্যানেজার, বেশি বয়সে বিয়ে করার কুফল প্রতিনিয়তই ভোগ করে চলছেন। একসমুদ্র আফসোস তাঁকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।

জামান সাহেবের বর্তমান বয়স ছিচল্লিশ প্লাস। বিয়ে করেছেন সাঁইত্রিশেরও পরে। তাঁর বড় ছেলের বয়স সবেমাত্র আট। ছোটগুলা তো আরও ছোট! চাকরিতে টিকে থাকতে পারবেন আর কয় বছরই বা? এরপর? ছেলেকে মানুষ করতে করতে চলে যাবে বেশ কয়েক বছর। মেয়ে বিয়ে দেয়ার সময় তাঁর বয়সের আর কীইবা বাকি থাকবে?

বেচারা প্রায়ই মুষড়ে পড়েন। কোনো কাজে তাঁর টেবিলে গেলে এ সংক্রান্ত কথাবার্তা তুলে ধরেন।

: আর পারি না, সাইফুল সাহেব! কাজের এত চাপ! স্বাস্থ্যে কুলায় না।

: অবসর নিয়ে নিলেই তো পারেন, স্যার!

জামান সাহেবের কন্ঠে আক্ষেপ ঝরে পড়ে,

: অবসর নিলে সংসার চলবে কী করে? বউ-বাচ্চাকে খাওয়াব কী? ছেলেটা মাত্র ক্লাস ফাইভে পড়ছে। এখনই যদি অবসর নেয়ার কথা ভাবি, ক্যামনে চলবে? কেন যে আরও আগে বিয়ে করলাম না!

সেই একই কথা। 'বউকে খাওয়াব কী?' যেটা আমি এখন, এই তেইশ বছর বয়সে শুনছি, সেটা জামান সাহেব পঞ্চাশে গিয়েও ভাবছেন। তার মানে, বেশি বয়স করে অথবা স্টাবলিস্ট হয়ে বিয়ে করলেই যে বউকে খাওয়ানোর টেনশন কমে যাবে - সেই পলিসি এখানেও মার খাচ্ছে।

আসলে বউকে খাওয়ানোর দায়িত্ব একমাত্র রিযকদাতার। পঁচিশ কিংবা পঞ্চাশ বছর বয়সি স্বামীর না। এটা সবাইকে বুঝতে হবে।

তাছাড়া অল্প বয়সে বিয়ে করার অনেকগুলো সুফলের মধ্যে একটা মজার সুফল হচ্ছে, কেয়ারিং-শেয়ারিং। অফিস শেষে ঘরে ফিরলাম, একজনকে দেখছি আমার অপেক্ষায় বসে আছে। আমাকে না খাওয়ানো পর্যন্ত সে খাচ্ছে না। ক্লান্তশ্রান্ত আমাকে এটা ওটা বলে সান্ত্বনা দিচ্ছে।

কাজে যাওয়ার সময় হলো। একজন এসে খাবারভর্তি টিফিনবক্সটা ভালোবেসে হাতে তুলে দিচ্ছে। হাসিমুখে বিদায় জানাচ্ছে। 'সময় মতো খেয়ে নিও' বলে কেয়ার করছে। ফোন করে বলে- কী করো? খেয়েছ? আজ তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরো কিন্তু!

'বুড়ো বয়সী' বউরা কি এগুলা করবে? তাদের তো তখন 'বাস্তববাদি' হয়ে ওঠার বয়স। স্বামীর আয় কেন কম? আর কয় বছর কাজ করলে একটা ফ্ল্যাট কিনতে পারবে? একটু-আধটু উপরি ইনকাম করলে কী এমন হয়ে যায়?- এই ভাবনায়ই সময় চলে যাবে। রোমান্টিকতা করার তাদের মুড কোথায়?

তারচে এই ভালো অল্প বয়সে বিয়ে করে ফেলেছি। আলহামুলিল্লাহ, আল্লাহ তা'লা বেশ ভালোই রেখেছেন আমাদের। ঝগড়া-ঝাটি যে হয় না তা কিন্তু না। ঝগড়া হয়, চিমটা-চিমটি হয়, কথা বন্ধ থাকে, বন্ধ থাকে মুখ দেখাদেখিও! এরপর আবার সব আগের মতো। সব ঠিকঠাক। আবার খুনসুটি, ঝগড়া-ঝাটি....! এ এক মধুর অভিজ্ঞতা!

3
$ 0.00
Sponsors of himu
empty
empty
empty
Avatar for himu
Written by
4 years ago

Comments

caliye jan vai earn hobe....nice likhechen amake subcribed kore rakhun pase thakbo

$ 0.00
4 years ago

apu ami payment tulbo kivabe

$ 0.00
4 years ago

earn hoina too

$ 0.00
4 years ago

Carry-on.. Amak subscribe korun ami apnak subscribe korbo

$ 0.00
4 years ago

ok sister

$ 0.00
4 years ago