অসমিকরণ (পর্ব১)

2 5
Avatar for faruk420
3 years ago

পেতে যাচ্ছিলাম প্রমোশন হয়ে গেলাম ভাইরাল।

একই পরিবারের ৫ জনকে খুন এবং বাড়ি লুট করার আসামিকে ধরার কেইসটা আমিই নিয়েছিলাম। দেড় মাসের মাথায়ই আমি এরেস্ট করতে পারছিলাম।

কিন্তু এরেস্ট যাকে করেছি সে এক প্রভাবশালীর ছেলে।এরেস্ট করার পর অন্য কারো মাধ্যমে আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।

সাচপেন্ড হয়েছি এক বছরের।আমার হাতে এই মুহূর্তে কোনো ডকুমেন্টস নাই। মাথা নিচু করে বেড়িয়ে এলাম পুলিশ অফিসারদের সামনে থেকে।

আমি আয়ান চৌধুরী। সিনিয়র ইইন্সপেক্টর। বাসা যশোর জেলায়। দুইমাস আগে বদলী হয়ে নতুন জেলায় এসেছি। এখানে এসে একটা কেইস হাতে নিয়েছি। খুন এবং ডাকাতির কেইস। এক বিত্তশালীর ছেলে ডাকাতি করতে গিয়ে পরিবারের সবাইকে খুন করে দিয়েছে। আমার আগে এখানে যে অফিসার ছিলো সে টানা দুই মাস ইনভেস্টিগেট করেও খুনীকে ধরতে পারে নি। তাই আমাকে এখানে ট্রান্সফার করা হয়েছে। কারণ পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এ আমার মোটামুটি ভালোই নামডাক আছে।

এখানে এসে কেইস টা নিয়ে যতটুকু ঘাটাঘাটি করলাম তাতে মনে হচ্ছেনা কেইস টা এতটাও জটিল। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এখানে কেউই মুখ খুলতে চাচ্ছেনা, অথচ সবাই জানে সবকিছু। এই কারণে কোন সাক্ষ্য বা প্রমাণ ও পাচ্ছিনা। অনেক কষ্টে কিছু প্রমাণ যোগাড় করলাম। কিন্তু বিপত্তি বাঁধলো অন্য জায়গায়। আসামীর বাবা এখানকার মেয়র। তিনি যথেষ্ট প্রভাবশালী এবং সম্পদশালী। অবৈধ টাকার পাহাড় জমিয়েছেন। অনেক অপকর্ম করেন। কিন্তু ভয়ে কেউ কিছুই বলে না। তিনি আমাকে ডেকে পাঠালেন এবং হুমকি দিলেন যে যদি আমি প্রমাণ গুলো যেন আদালতে না দেই। তাহলে নাকি আমার ক্ষতি করে দিবেন।

আমি ওনার কথায় কোনো রকম কান না দিয়ে নিজের কাজে মন দিলাম। কারণ কর্মসূত্রে এসব লোকেদের আগে থেকেই জানা আছে। এরা এমন হুমকি দিয়ে থাকে। বিষয় টাকে ততটা আমলে নিলাম না।

রিজভী কে গ্রেফতার করেছি। কিন্তু কোর্টে পেশ করার আগের দিন রাতে আমার বাসায় চুরি হয়। রাতে শোয়ার আগে বেলকনি দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিলাম আর শশীর কথা ভাবছিলাম চোখ বন্ধ করে। হঠাৎ কেউ আমার মুখে কিছু একটা চেপে ধরলো। তারপর আর আমার কিছুই মনে নেই। সকালে চোখ খুলে রাতের ঘটনা মনে করতেই বুঝতে পারলাম কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে। বাসা ভালো করে চেক করে বুঝতে পারলাম আমার বাসা চুরি হয় আর চোর শুধুমাত্র কেইস এর ফাইল টা নিয়ে যায়। বুঝতে পারলাম সব মেয়র এর ষড়যন্ত্র। এইবার বুঝতে পারলাম যে আমার আগের অফিসার কেন কেইস টা সলভ করতে পারে নি কিংবা ইচ্ছে করেই করে নি।

পরদিন রিজভীর বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ দেখাতে না পারায় সে মুক্তি পেয়ে গেলো। আর আমি অপদস্ত হলাম।

মেজাজ পুরোটাই বিগড়ে গেল। তাও নিজের রাগ সামলে বাসায় রওনা দিলাম। বাইক নিয়ে কিছুদূর যাওয়ার পরেই কোত্থেকে একটা গাড়ি এসে পেছন থেকে ধাক্কা দিলো। আমি বাইকের ব্যালেন্স রাখতে না পেরে সামনের রিকশার ওপর পড়লাম বাইক নিয়ে। রিকশায় এক মহিলা আর একটা বাচ্চা ছিলো। এক্সিডেন্টে তারা গুরুতর আহত হলো। আমি গিয়ে ছিটকে রাস্তার অইপাশে গিয়ে পড়লাম। পেছনের গাড়ি থেকে কয়েকটা ছেলে এসে আমার গায়ে এক বোতল মদ ঢেলে দিলো।

মদ খেয়ে গাড়ি চালিয়ে এক্সিডেন্ট করার অপরাধে আমাকে এক বছরের জন্য সাসপেন্ড করা হলো। আমি তাদের বুঝাতে পারলাম না এসব কিছুই চক্রান্ত ছিলো। তাছাড়া মেয়র এর হাত উপরমহল পর্যন্ত। তাই আমার কথা কেউ মানলো না, আর মানলেও তারা মেয়র এর বিরুদ্ধে কখনোই যাবে না।

চিন্তা করলাম মেয়র সাথে লাগতে যাবো না। তার ছেলেকে শাস্তি দিতে গিয়ে আমার পরিবারের কোন ক্ষতি না করে দেয়। এছাড়াও আমার সকল কাজের মনযোগ এর কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে শশী। আমি অন্য কোন কিছু নিয়ে ভাবতে চাইনা এই মুহূর্তে।

চাকরি বিহীন দুইমাস কেটে গেল। তবে তেমন একটা অসুবিধা হয়নি। বিন্দাস কেটেছে। একদিন সকালে রাস্তায় হাটছি আর সিগারেট টানছি। প্রতিদিন ভোরে আমি রাস্তায় হাটতে বের হই। হঠাৎ রাস্তার মধ্যে ভিড় চোখ পড়লো। মনে হচ্ছে কোন কিছু কে ঘিরে কিছু মানুষ জটলা বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে। আর কি সব বলাবলি করছেম আমি ভিড় ঠেলে একটু এগিয়ে দেখলাম একটা লাশ পড়ে আছে রাস্তার সাইডে।

সবাই দাঁড়িয়ে আছে। কেউ লাশের গায়ে হাত দেয়নি। লাশ টা উপুড় হয়ে আছে। শার্টের রক্ত শুকিয়ে গেছে। মৃত্যুর বেশ কয়েক ঘন্টা কেটে গেছে হয়তো। হতে পারে কেউ রাতে খুন করে রেখে চলে গেছে। আশেপাশের লোকজনের সাথে কথা বললাম। তাদের কথা বেশ আশ্চর্যজনক লাগছে। এই রাস্তাটা নির্জন হলেও লোকের যাতায়াত যে একদম নেই তা নয়। লোকজন সবসময় ই চলাচল করে। সে হিসেবে লাশ আরো আগে চোখ পড়ার কথা। একজনের কথা শুনে বেশ অবাক হলাম। তিনি নাকি মিনিট বিশেক আগে এখান থেকে একবার গিয়েছিলেন তখন এখানে কোন লাশ ছিলো না। পরে আবার যাওয়ার সময় এই লাশ দেখতে পান। এইটুকু সময়ে খুন করা হয়নি। হয়তো অন্য জায়গা থেকে এনে এখানে ফেলা হয়েছে। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব? রাস্তায় সবসময় লোকজন থাকে তাই অন্য জায়গা থেকে এনে ফেললে তা কারো না কারো চোখে পড়বে।

পুলিশ চলে আসলো। এসে লাশ টা ঠিক করতেই এখানকার লোকজনের চোখ কপালে উঠে গেছে। এটা তো শুভ! খুব নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে। গলা কাটা হয়েছে। আর পেটে অসংখ্য ছুড়ির আঘাত। তবে মুখ টা অক্ষত। হয়ত মুখ দেখে যাতে সহজে চেনা যায় এই জন্য। এখানকার এক বিত্তশালী বাবার ছেলে। যার ভয়ে এলাকার সবাই কাঁপে সে এইভাবে পড়ে আছে দেখে সবাই অবাক হয়ে গেছে। সবার চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ। পুলিশ সবার সাথে কথা বলে লাশ নিয়ে চলে গেছে। এই শুভর ব্যাপারে চারমাসে কিছুটা জেনেছি। যত ধরনের খারাপ কাজ সব করতো। মারামারি, ধর্ষন, ডাকাতি সহ সব ধরণের অন্যায় কাজে সে জড়িত থাকতো। শুভর মৃত্যুতে এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়েছে ঠিকই তবে খুশিও হয়েছে।

পুলিশ এই কেইস টা নিয়ে বেশ অনুসন্ধান চালাচ্ছে। উপরমহল থেকে চাপ দিচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব কেইস টা সলভ করার জন্য। কিন্তু কোনো ক্লু পাচ্ছে না। দিনরাত এক করে দিয়েছে অথচ খুনিকে খুঁজে পাচ্ছে না।

কেইসে দায়িত্বরত অফিসার এর রহস্যজনক মৃত্যু কেইস টায় রীতিমতো আগুনে ঘি ঢালার মতো অবস্থা হয়েছে। তার মৃত্যু ও একই ভাবে হয়েছে। একই সময়ে।

এরই মধ্যে ডিপার্টমেন্ট থেকে কল আসলো। আমাকে জয়েন করতে বললো। এবং এই কেইস টা আমাকে হ্যান্ডেল করতে দিলো। কেইস টা নিয়ে ব্যাপক ঘাটাঘাটি করলাম।

দুটো খুন একইভাবে হয়েছে। রাতে খুন করে রাস্তার পাশে বড় গাছে উঠিয়ে রেখেছে। পরে কোন ভাবে লাশ রাস্তার পাশে পড়েছে। একটা ব্যাপার কিছুতেই মাথায় আসছে না। শুভর সাথে হয়তো কারো শত্রুতার জের ধরে খুন করে দিয়েছে। কিন্তু পুলিশ অফিসার কেন?

হয়তো খুনি চায় না তাকে ধরা হোক। নয়তো অফিসার এর সাথে ও শত্রুতা রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে টিম এর অন্যদের সাথে আলোচনা করলাম। কিন্তু নাহ, আমিও কোনো ক্লু পাচ্ছিনা৷ লাশের গায়ে কোনো ফিঙ্গার ফ্রিন্ট ছিলো না। আর যে ছুড়ি দিয়ে খুন করা হয়েছে সেটাও পাওয়া যায় নি।

খুনি খুব চালাক। অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় খুন করে সব প্রমাণ মুছে দিয়ে। এই জন্য কোনো ভাবেই কিছু পাচ্ছিনা। এইদিকে উপর মহল থেকে চাপ এসেছে। শুভর বাবা তার ছেলের খুনি কে যেভাবেই হোক বের করতে চান।

শুভর শত্রুর অভাব নেই। অনেকেরই অনেক ক্ষতি করেছে। এদের মধ্যে যে কেউ ই খুন টা করতে পারে। আরো ভালো ভাবে তদন্তে নেমে পড়লাম।

সকালে তড়িঘড়ি করে সিঁড়ি থেকে নামতে গিয়ে কার সাথে যেন ধাক্কা খেয়ে দেয়ালের সাথে বারি খেলাম। রেগে কিছু বলতে যাবো তখনই দেখছি চশমা পরা এক মেয়ে কাচুমাচু হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। দেখে খুব সাধারণ মনে হলো। চোখে মুখে ভয় আর অনুশোচনার ছাপ দেখতে পেয়ে কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না।

"পরেরবার থেকে দেখেশুনে চলবেন"

এইটুকু বলে চলে এলাম। মেয়েটাও আস্তে করে মাথা নাড়লো।

অফিসে গিয়ে ফাইল নিয়ে ঘাটাঘাটি করছি। তখনই একটা কল আসলো,

রিসিভ করতেই আরেকটা ধাক্কা খেলাম....

[চলবে....]

#অসমীকরণ (১পর্ব)

লেখাঃ Md. Nazmul Huda

Please like,comment and subscribed☺

4
$ 0.00
Avatar for faruk420
3 years ago

Comments

Already subscribe.

$ 0.00
3 years ago

ok..

$ 0.00
3 years ago