ক্রাশ (পর্ব ১)

0 11
Avatar for faruk420
3 years ago

একদিন মাঝ রাস্তায় একটা ছেলে আমার ওড়না টেনে ধরেছিলো।

আমি পেছন ফিরে ছেলেটার হাতে আমার ওড়না দেখে কোন সাত পাঁচ না ভেবে তার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়েছিলাম।

কিন্তু আমি জানতাম না ছেলেটা সাধারণ কোন ছেলে না।সে গুন্ডা মাস্তান টাইপের ছেলে।

আর সেদিন থেকেই আমি ওই ছেলের নজরে পড়ি।

ছেলেটাকে থাপ্পড় দিয়ে বলেছিলাম,বাসায় কি মা বোন নাই?

ছেলেটা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলো।

তারপর আমি তাকে অভদ্র বলে বাসায় চলে আসি।

আমাদের এলাকার পাশের এলাকাটা নাম করা এলাকা।

মানে,খারাপ হিসেবে পরিচিত।

যদি কেউ শোনে আমি এই এলাকার মেয়ে তাহলে সবাই বলে,ওই এলাকার মানুষ গুলো খুব খারাপ।

আর ওখানেই এই মেয়ের বাসা,তাহলে ওরাও খারাপ।

আসলে দুই এলাকা পাশাপাশি হওয়ায় আমাদের এলাকার মানুষ দেরও সবাই খারাপ বলে।

পাশের এলাকার মানুষ গুলো মারামারি,ঝগড়া,এসব নিয়েই দিন পাড় করে।

আর অর্পন ওই এলাকার ছেলে।

আর তারও খারাপ হিসেবে খুব নাম ডাক আছে।বখাটে ছেলে একটা।

মারামারিই তার পেশা।

তবে আমি এর আগে তাকে কখনো দেখিনি।

বাসায় এসে আম্মুকে বললাম,আম্মু জানো একটা ছেলে আজ রাস্তায় আমার ওড়না টেনে ধরেছিলো।

আর আমি তাকে থাপ্পড় মেরেছি।

আম্মু আমাকে ভালো করেছি বলবে কি তা না।

উল্টো বলছে,তুই কি করেছিস এটা?

যদি ওই ছেলে তোর কোন ক্ষতি করে ফেলে?

এলাকার অবস্থা ভালোনা বলে সবাই অল্প বয়সেই এখানকার মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেয়।

আমার আব্বুর স্বপ্ন আমি অনেক পড়াশোনা করবো তাই তিনি আমাকে পড়াচ্ছেন।

কিন্তু আব্বু তো বিদেশ।

বাসায় ছেলে মানুষও নেই।খুব সাবধানে থাকতে হয় তাই আমাদের।

পরের দিন ঘুম থেকে উঠেই শুনি আম্মুর চিল্লাচিল্লি।

আমি চোখ ডলতে ডলতে ঘুম থেকে উঠে আম্মুকে জিজ্ঞেস করি,

হইছে টা কি?

সকাল সকাল চিল্লাচ্ছো কেন?

-তুই জানিস তুই কাকে থাপ্পড় দিছিস?

-কাকে?

-আরে ওই ছেলের নাম অর্পন। পাশের এলাকার।

নাম করা বখাটে ও।

মারামারিতে সবার আগে।

খুব খারাপ ছেলে।আর তুই কিনা ওকেই মারলি?

আজ থেকে তুই আর বাসার বাইরেই যাবিনা।

আজ থেকে কলেজেও যেতে হবেনা তোর।

বাসায় বসে বসে পড়বি।

পরীক্ষার সময় পরীক্ষা দিবি।

আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম,তুমি কিভাবে জানলে যে ওই ছেলেকেই আমি মেরেছি?

আরে ওই ছেলে ওর বন্ধু পাঠাইছে বাসায়।

আর বলছে,এটাই নিহিনদের বাসা না?

আমি বলছি হ্যাঁ কোন সমস্যা?

তখন ওই ছেলে আমাকে বল্লো আপনার মেয়ে কার গায়ে হাত তুলছে জানেন?

অর্পনের গায়ে।

আল্লাহ্‌।এই মেয়ে নিয়ে আমি কি করবো।

মানুষ ও চিনেনা।

-আম্মু প্লিজ এভাবে চিল্লাচিল্লি করোনা,আমি যাবোনা বাসার বাইরে।

এবার শান্তি?

-হুম শান্তি।

এরপর আমি কলেজ যাওয়া বন্ধ করে দেই।

কিন্তু ওইদিকে অর্পন আমাকে খুঁজে হয়রান।

আমি প্রায় ৪ দিন ক্লাসে যাইনা।

আর সে এইদিকে আমার বান্ধবীদের বলে দিয়েছে,আমি যদি পরের দিন কলেজে না যাই তাহলে সে সোজা আমাদের বাড়ীতে এসে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাবে।

আমার বান্ধবী বর্ষা আমাকে কথা গুলো জানায়।

আমি কথা টা শুনে প্রচুর ভয় পাই আর আম্মুকে বলি।

কিন্তু আম্মু আমার চেয়ে বেশি ভীতু।

সে চিন্তায় নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দেয়।

আমি পরের দিনও কলেজে যাইনা।

এইদিকে পরের দিন অর্পন বর্ষাকে বলে,

ও তো আসলোনা,ঠিক আছে কোন সমস্যা নাই।

আমিই রাতে ওদের বাসায় যাবো।

ওকে বলে দিও।

রাত তো হয়েছে ঠিকই।

কিন্তু আমার আত্মা তো কাঁপছে।

ভয়ে কলিজা শুকায় গেছে।

হঠাৎ করে রাত ১২ টায় দেখি অনেক জোরে জোরে আতসবাজির আওয়াজ।

আম্মু বলে,এত রাতে এগুলা করছে কে?

আমি উত্তর দিলাম,

আমি কিভাবে জানবো?

রাতে আম্মুকে আর বোনকে নিয়ে এক সাথে শুই।

আর বার বার মনে পড়ছে বর্ষার বলা কথা গুলো,

ও বলেছিলো,

অর্পন নাকি অনেক আগে একটা মেয়েকে ভালবেসেছিলো।

মেয়েটাও ওকে ভালবাসতো।কিন্তু হঠাৎ মেয়েটা চেঞ্জ হয়ে যাওয়ায় অর্পন একদিন মেয়েটাকে ডেকে নিয়ে ইচ্ছা মত বাশ দিয়ে পিটায়।

পরে মেয়েটাকে হসপিটালে ভর্তি করা লাগে।

পরে মেয়েটাকে ওর পরিবার ভারত পাঠিয়ে দেয়।

এই ছেলে খুবই খারাপ।

কিছু দিন আগেও নাকি এক ছেলেকে মেরে হসপিটালে পাঠিয়েছে।

শুধু মাত্র ওর বাবা চাচার অনেক দাপট বলে কেউ নাকি ওর কিছু করতে পারেনা।

ভয়ে গা ছমছম করছে।

সারারাত আমি শুয়ে আছি ঠিকই কিন্তু চোখে এক বিন্দু ঘুম নেই।

মনে মনে ভাবতে থাকি সকাল হলেই আজ আমি কলেজে যাবো।

আর তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করবো সে কি চায় আমার কাছে।

কিন্তু সকাল বেলা হঠাৎ দেখি আম্মুর চিৎকার।

আম্মু চিৎকার করে ডাকছে আমাকে,

নিহিন নিহিন,দেখে যা।

এখানে আয়।

আমি দৌড়ে এসে যা দেখি,তা দেখার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।

চলবে,

#১ম_পর্ব

1
$ 0.00
Avatar for faruk420
3 years ago

Comments