আর আজ, "রাতুলকে দেখেই আশেপাশের মানুষ চুপ হয়ে যায় এক মুহূর্তে। সময় মানুষকে কোথায় গিয়ে দাঁড় করায়! "
রাতুল গাড়ি চালাচ্ছিল, আর পাশের সিটে " মিহিরের মা বসে বারবার রাতুলের কাছে ক্ষমা চাচ্ছেন,"
রাতে বাসায় ফেরার সময় মিহির ওর মাকে বাসায় পৌঁছে দেয়ার অনুরোধ করার জন্যই তাঁকে সঙ্গে করে আনা।
রাতুল উনাকে আশস্ত করার জন্যই বলে উঠলো : " মিহির আসলে আমার ভাগ্যেই ছিলো না", আপনি এর জন্য নিজেকে দায়ী ভাববেন না।"
আচ্ছা, আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি, "হসপিটালে শুধু আপনি আর মিহির ছাড়া কাউকেই দেখতে পেলাম না বা
মিহিরের স্বামী ! "
মিহিরের মা কথা গুলো শুনে এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কিছুক্ষন চুপ করে থাকলেন, তারপর নিজ থেকেই উনি কথাগুলো বলতে লাগলেন, " তুমি মনে হয় ঐ ঘটনার পরে আর মিহিরের কোন খোঁজ খবর রাখনি, না রাখাটাই স্বাভাবিক, তোমার আঙ্কেল মানে মিহিরের বাবাও মারা যাওয়ার আগে তোমার খোঁজ নিয়েছিলেন, তখন তুমি দেশের বাইরে ছিলে। "
: মানে ! " আঙ্কেল মারা গেছেন! কত দিন হলো ?
মিহিরের মা ~ " বছর আট হবে! মিহিরের ডিভোর্স এর পর থেকেই তোমার আঙ্কেল ভিতর থেকে খুব অনুতপ্ত হতে থাকেন । মিহিরের বিষন্ন মুখ উনি সহ্য করতে পারেননি । তাই উনি তোমার খোঁজ নিয়েছিলেন। যখন জানতে পারলেন তুমি দেশের বাইরে আর তোমার মা / বাবাও অন্য জায়গায় সেটেল হয়েছেন, তারপর থেকেই উনি একদম বিছানায় পড়ে যান। এর কিছুদিনের মাথায় উনি আমাদের ছেড়ে চলে যান। আর মিহিরের ভাই মাহিন বউ বাচ্চা নিয়ে এখন লন্ডন থাকে। তাই দেখতে ---"
: সরি আন্টি, " আমি আপনার মন খারাপ করে দিলাম । "
~ না বাবা, " মন খারাপের কি আছে! যা বাস্তব তা হাজার কষ্ট হলেও আমাদের মেনে নিতে হয়। "
: " আমি আর কিছু জানতে চাই না! এমনিতেই আজ সারাদিন আপনি অনেক টেনশনে ছিলেন প্রিয়ন্তিকে নিয়ে। "
~ " তা ঠিক! প্রিয়ন্তি আর মিহিরকে নিয়েই আমার এখন যতো চিন্তা " কি দিয়ে কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা। তবু্ও আমাকে আজ বলতে দাও, আমাকে -- থামিও না!"
"উনি মনে করেছিলেন, মিহিরের জীবন উনি নিজ হাতে নষ্ট করেছেন।"
আসলে, "আমরা মা বাবারা সন্তানের মঙ্গল করতে গিয়ে অনেক সময় ভুল করে ফেলি, তাদের মতামতের কোনো গুরুত্ব দেই না। ভাবি, বিয়ে হয়ে গেলে স্বামী, সংসার, সন্তান পেলে সব ভুলে যাবে। কিন্তু সেই স্বামীই যদি শারীরিক / মানসিক নির্যাতন করে সেখানে আর যাই হোক সংসার করা সম্ভব না ! "
"শুধু টাকা পয়সা, বাড়ি গাড়িই জীবনে সুখ এনে দেয় না। প্রকৃত মানুষ যদি জীবন সংগী না হয়, তাহলে সে-ই সম্পর্ক আর এগানো সম্ভব না।"
আমি তোমাকে এই কথা গুলো কেন বলছি জানো বাবা ! "তুমি আর মিহির ছিলে সম বয়সী , তোমাদের বিয়ে হলে হয়তো তোমরা নিজেদের মানিয়ে গুছিয়ে চলতে পারবে না, তোমাদের এই আবেগ ভালবাসাটাও একটা সময় থাকবে না । আর তোমার ডক্টর হিসাবে যোগ্য করে গড়ে তুলতে অনেক সময়ের ব্যাপার ছিলো।"
তাই
আমরা মিহিরকে গ্রিন কার্ড পাওয়া আমেরিকা প্রবাসী ছেলে দেখেই বিয়ে দিয়ে ছিলাম, এর বেশি আর খোঁজ নেয়া হয়নি। এটাই ছিলো আমাদের সবচেয়ে বড় ভুল। "
রাতুল: থাক না আন্টি এসব কথা !
মিহিরের মা ~ শুধু তোমার আঙ্কেল না আমারও মনে হয় তোমার মন ভেঙে আমরা মিহিরকে সুখি করতে চেয়েছিলাম, আল্লাহ বোধ হয় এই জন্যই আমাদের এতো বড়ো শাস্তি দিলেন!
রাতুল : আন্টি, আমিতো আগেই বললাম " মিহির আমার ভাগ্যেই নেই। সবাই যে তার প্রিয় মানুষকে পায় এমনও নয়। আমি নাহয় তাদের দলে ই থাকলাম "।
আপনি এসব নিয়ে আর টেনশন করবেন "
মিহিরের মা ~ " শিক্ষা মানুষকে উদার করে, প্রকৃত মানুষ সব সময় নত মস্তকে থাকে,
কথা গুলো এই জন্যই বলে বোধ হয়। "
রাতুলঃ" মানে!"
মিহিরের স্বামী মিহিরকে বিয়ে করেছিলো ঠিকই কিন্তু ওকে যোগ্য সন্মান দেয়নি এমনকি আমরা ওর শশুড়/ শাশুড়ী আমাদের সাথেও তার দাম্ভিকতা দেখিয়েছে। শুধু কি তাই, " আমাদের এতো সুন্দর মেয়েটার উপর শারীরিক, মানসিক নির্যাতন করতো। উশৃঙ্খল জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলো ওর স্বামী। তারপরও মিহির অনেক চেষ্টা করেছিলো মানিয়ে নিতে কিন্তু যখন দেখলো ওর এতো সুন্দর মেয়েটাকে জন্মের পর থেকেই ওর স্বামী অবহেলা করছে তখন মিহির চলে আসে। যে মানুষটার কাছে নিজের সন্তানেরই কোন মূল্যায়ন নেই, তার সাথে আর কোন সম্পর্ক নেই। তাই সব সম্পর্ক শেষ করে চলে আসে, মিহির ।"
রাতুল : কি বলছেন?
~ " প্রিয়ন্তিকে তুমিতো দেখলে, কত সুন্দর আমার নাতনি! তারপরও জন্মের পর থেকেই ওর বাবা বলতো, নাকটা এমন কেন ! ঠোঁটটা এমন কেন ! গাঁয়ের রংটা এমন কেন"-- আরও কত কি!
: "কি বলছেন আন্টি! কোন বাবা তার সন্তানকে এভাবে অবমাননা করে? "
~ পৃথিবীটা কতো বড়! এখানে কত মানুষ, এক একজনের মন মানসিকতাও এক একরকম। কারও সাথে কারও টার মিল নেই । তবুও কিছু কিছু মানুষ এতো বেশি ব্যতিক্রম হয় যে তাদেরকে মানুষের দলে ফেলা সম্ভব না। মিহিরের স্বামীও তাদের দলে।
" আমাদের ইসলাম ধর্মের কোথাও বলে নাই স্বামীর নির্যাতন মুখ বুঝে সহ্য করতে, বরং বলা হয়েছে তোমার যদি কাউকে ভালো না লাগে তার উপর অত্যাচার না করে তাকে তার যোগ্য সন্মান দিয়ে চলে যেতে দাও।"
রাতুলঃ "আপনাদের জীবনে এতো কিছু ঘটে গেছে আমি কিছুই জানি না। আসলে সেই ঘটনার পরে আমিও স্কলারশিপ নিয়ে দেশের বাইরে যাই। দু'বছর হলো দেশে এসেছি। " এসেই নিজেকে পুরোপুরি নিয়োজিত করেছি এই পেশায়। আর ছুটির দিন গুলোতে এনজিও সংস্থার সাথে দুস্থ মানুষের চিকিৎসা সেবা দেই। আমি ভেবেছিলাম ---"
মিহিরের মা ~ " আমি তোমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরেছি, বাবা। আগে না বুঝলেও এখন বুঝতে পারি, সময়ের সাথে সাথে মানুষ অভিজ্ঞাত অর্জন করে। বয়স হয়েছে আমার, মিহিরকে এটাই বুঝাতে পারিনা, প্রিয়ন্তিকে নিয়ে ওর যেমন চিন্তা মিহিরকে নিয়ে আমারও ঠিক তাই।"
"মিহির শিক্ষিত একজন মেয়ে, দেখতে শুনতেও ভালো, ১৪/১৫ বছর আগে টিভিতে যে বিজ্ঞাপন করেছিলো তার জন্য এখনো অনেক মানুষ ওকে মনে রেখেছে। ঐ সময় ঐ বিজ্ঞাপনটার জন্য মিডিয়া পাড়ায় অনেক মানুষের নজরে পড়ে ছিলো ও। সেই সূত্র ধরেই আরও কত বিজ্ঞাপন / নাটকে অফার আসে ওর কাছে, কিন্তু ও কোন কিছুতেই রাজি হয় না।
ও যে প্রডাক্টের বিজ্ঞাপন করেছে তার পঁচিশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ওই প্রডাক্টের বিজ্ঞাপনে এ পর্যন্ত যারা যারা অভিনয় করেছে তাদের সবাইকেই নিয়েই তৈরি করবে এবারের বিজ্ঞাপন। কিন্তু মিহিরকে রাজি করাতে পারছে না প্রোডিওসার । আমাকে অনেক বলেছে আমি যেনো মিহিরকে রাজি করাই। প্রিয়ন্তি অসুস্থ ছিলো বিধায় আমি কিছু বলিনি। ইনশাআল্লাহ প্রিয়ন্তি সুস্থ হলে দেইখো বাবা, তুমি ওকে রাজি করাতে পারো কিনা !
"আমি ওর মা, আমি চাই ও আগের মতো হাসুক, ভালো থাকুক। "
রাতুল কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে " কি বলছেন আন্টি, আমি ওকে রাজি করাবো কিভাবে? আমি যে মিহির কে চিনতাম এই কয়েক বছরে সেই মিহিরের অনেক পরিবর্তন, এই মিহিরকে আমি চিনি----
2
21
Nice brother.