বিয়ে বাড়িতে গিয়েছি দুটো উদ্দেশ্যে এক. বিয়ের দাওয়াত খেতে। দুই. ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখতে। আমার সাথে মা আর খালা আছেন।
ভাইয়া দেশের বাইরে থাকেন। সেই মোতাবেক একজন উপযুক্ত সুন্দরি সুশীল ভালো মেয়ে খুঁজতে হবে। কিন্তু অবাক হওয়ার বিষয় হাতে হারিকেন নিয়েও পাচ্ছি না পছন্দ মত। তাই এখন এখানেও খুঁজা।
কেউ সুন্দর হলে হাইট কম। কেউ লম্বা হলে চেহারা তেমন মায়াবী না। কারো নাক বুচা। কারো কণ্ঠ ভালো না। আবার সব দিকে মিললে পরে জানা যায় মেয়েটার মত নেই অন্য জায়গায় মত দেওয়া। এসব ঝামেলা হচ্ছে।
খাবার টেবিলে আমরা বসে বসে একটা মেয়েকে খেয়াল করছি বেশ অনেক্ষণ যাবত। মা আর খালার মোটামুটি সব দিক দিয়ে পছন্দ হয়েছে উনাদের আমারও ভাবি হিসেবে মানাবে বেশ। মা বললেন, যা তোর তো প্রায় সমবয়সী হবে কোনো ছুতা ধরে কথা বলে দেখ। কথাবার্তা কেমন.!
আমিও খুশি মনে ভাবলাম ভালো ই হবে এই মেয়ে হলে। খাওয়া শেষ করে মা বললেন যা কথা বলে আয় বাকি ঠিকানা সবকিছু আমরা মেনেজ করছি তুই মেয়ের সাথে কথা বল গিয়ে।
আমি হাসি মুখে মেয়েটার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম,
-- আপনি রিনি না..? ( আমি) এমনি এমনি বললাম।
-- জ্বি না, আমি শুভা।
-- ও আচ্ছা। আমার কোচিং এ পরিচিত একজনের মত লাগছিল যার নাম রিনি আরকি। ( আমি) সরি। আপনি কি করেন?
-- এইত অনার্স ফাইনাল দিলাম। আপনি? আপনার নাম কি?
-- আমি ইতি। অনার্স ফোর্থ ইয়ার।
এরপর ই মেয়েটা আমাকে বলল, মেয়েটার মোবাইল দিয়ে কয়েকটা ছবি তুলে দিতে। বিভিন্ন ভাবে সুন্দর সুন্দর করে আমি ছবি তুলে দিলাম। মনে মনে খুশি ই হলাম। যাক আমার মত ছবি পাগলি একজন পাওয়া যাবে বেশ জমবে আমাদের। এরপর মেয়েটা আমার হাত ধরে বলল, চল আমরা সেলফি উঠি। আমি খুশি মনে পোজ দিচ্ছি। আর মা এবং খালাকে ইশারায় বুঝিয়ে দিচ্ছি সব পারফেক্ট।
বাহ, মেয়েটা বেশ মিশুক। আমাদের সাথে খুব মানাবে। একটু পরে ই একজন মহিলা আসলেন মেয়েটা পরিচয় করিয়ে দিল, ইনি তার মা। আমি সালাম দিলাম।
বিদায় নিব মা ডাকছে। শুভা মানে আমার হবু ভাবিকে বললাম, যাই কেমন। শুভা হাত ধরে বলল
-- দাড়াও দাড়াও তোমার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার দিয়ে যাও কথা হবে সেখানে। একদিন মিট করে ফুচকা খাব কেমন। (শুভা)
কত ভালো মেয়েটা। দিলাম। আম্মুকে এসে বললাম। সব ঠিক আছে একে ই আমার ভাবি চাই ই চাই।
বিয়ে থেকে বিদায় নিব। ঠিক তখন শুভা আমাকে ডাক দিল পিছন থেকে। মা বললেন যা দেখে আয়। গেলাম।
-- ইতি তোমার পার্স টা ভুলে গেছ।
-- ওহ, থ্যাংক্স। ( আমি)
-- ভাইয়া দেখ, আমার নতুন বান্ধবি। ইতি। ইতি ইনি আমার আপু আর ইনি ভাইয়া। আমি সালাম দিয়ে চলে এলাম।
পরদিন মা কে বললান তারাতারি শুভাকে ভাবি বানাও। একসাথে অনেক মজা করব। ভাইয়াকেও বলা হয়েছে বিষয়টা। আমার খুশিতে ঘুম হচ্ছে না। শাড়ি পরব, সাঁজব, নতুন ভাবিকে নিয়ে অনেক ঘুরাঘুরি করব। কত মজা হবে। চোখে কাজল, হাতে কাচের চুড়ি, ঠোঁটে লিপস্টিক। কিন্তু লিপস্টিক এর কালার কি হবে সেটা নিয়ে কনফিউজড হয়ে যাই। এসব চিন্তা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি খেয়াল নেই।
সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙল, তারাতারি উঠ। কাজ আছে।
-- উফফ, ভাইয়ার বিয়েতে সাঁজতেও দিবে না ঠিক মত। আমি ঘুমের ঘুরে বলছি এসব।
হঠাৎ শুভার মেসেজ মানে হবু ভাবির আরকি। উনার কিসের ট্রাম পেপার এর জন্য কয়েকটি বই লাগবে। ইকনোমিক্স এর। যেহেতু আমি আছি তাই আমাকে বলা। আমিও মায়ের সাথে কথা বলে বললাম আমাদের বাসায় চলে আসতে। এই সুযোগে যারা দেখেন নি তারাও দেখে নিবে একবার আমার হবু ভাবিকে।
মা খুশি যাক ভাইয়াকেও এক সুযোগে ভিডিও কলে কৌশলে দেখিয়ে দিব। মা বাবা চাচা চাচি আর খালা খালুকে কল দিলেন। শুভা বিকেলে আসবে। অবুজ বালিকা বুঝতে পারছেনা ! এসব। ভাবতেই অন্যরকম আনন্দ লাগল।
আসবে আসবে বলে সন্ধ্যা ছয়টা বাজে। ঠিক ৬:৩০ উপস্থিত হল শুভা। তবে একা না... ওর মা বাবা বোন ভাইকে নিয়ে।
যাওয়ার সময় আমার হাতে আংটি পড়িয়ে গেল।
বিয়ে বাড়িতে এই উদ্দেশ্যে যে আরো অনেক আসতে পারে বুঝা উচিত ছিল।
ঘরের সবাই আলহামদুলিল্লাহ বললেন। ভাবা যায় এসব..! নিজের গর্তে নিজে পা ঠুকালাম। শুভা মুচকি মুচকি হাসছে। এরকম করলে মেয়ে ।
( কারো মিষ্টি কথায় ভুলতে নাই, যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে উল্টো যা তোমার বিপরীত)
বিপরীত ক্রিয়া
ফাবিহা ফেরদৌস
২৬/০৯/১৯
সবকিছুরই একটা বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া রয়েছে