স্মার্ট বুয়া

20 44
Avatar for anika22
4 years ago

'নাম কি?'

- অরিন।

'কি বললা?'

- জ্বে, ভালা নাম মাইশা ফাইরুজ, ডাকনাম অরিন।'

.

সালেহা বেগম প্রচন্ড অবাক হলেন। সোজা বাংলায় যাকে বলে টাস্কি খাওয়া। কাজের মেয়ের নাম অরিন হয় এটা উনি বাপের জম্মেও কখনো শুনেন নাই৷ জিজ্ঞেস করলেন, 'সত্যিই তোমার নাম অরিন?'

- জ্বে খালাম্মা৷ মিছা কথা কইতাম ক্যারে!

.

মেয়েটার বয়স চব্বিশ পঁচিশ হবে। দেখতে মোটামুটি সুন্দর আছে। গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা। বাসাবাড়িতে কাজের খোঁজে এসেছে। সালেহা বেগম এরকম কাউকেই খুজছিলেন। উনি গুলশানের এই বিশাল ফ্লাটে একা একাই থাকেন। কাজের পাশাপাশি কথা বলার মত একজন মানুষ উনার দরকার। সালেহা বেগমের তিন সন্তান, স্বামী গত হয়েছেন বছর চারেক আগে। বড় ছেলে কানাডা থাকে। দুই মেয়ে যার যার শ্বশুরবাড়ি। একা বাড়িতে দিন আর কাটেনা।

.

- তোমার মা আছে?

- জ্বে না, মইরা গেছে। আমার জন্মের দুই বছর আগে!

- বলো কি! তুমি কার পেটে হয়েছ?

- আমার আব্বা আমগো বস্তির এক বেটির লগে পিরিতি করেছিলো। হের প্যাডে। আমি তারে চাচি ডাকি।

- সর্বনাশ। তোমার নিজের মা কে চাচি ডাকো! তোমার বাপ বেঁচে আছে?

- নাহ, হেয় মরছে আমার মায়েরও মেলা আগে।

- আশ্চর্য! তাহলে তোমার জন্ম কিভাবে?

- আমার বাপ যে বেটির লগে পিরিতি করেছিলো হে আমার বাপ মরার পর আরেক বেটার লগে গেছিলো ভাইগা। তারে আমি চাচা ডাকি।

- কি আশ্চর্য! তোমার বাবা মা কে তুমি চাচা চাচি কেন ডাকো?

- তারা তো আমার আসল বাবা মা না। আমার আসল বাবা মা তো আমার জন্মের মেলা আগেই..

- চুপ থাকো, একদম চুপ।

.

সালেহা বেগমের মাথা ঘুরতে লাগলো। তিনি মাথায় পানি নিয়ে আসলেন। বললেন, 'তোমার এই স্টাইলিশ নাম কে রেখেছে?'

- আমার চাচি রাখছেন।

- যে তোমারে গর্ভে ধারণ করেছে?

- জ্বে, ঠিক ধরেছেন।

- সে আছে কই?

- জানিনাহ, ভাইগা গেছে। বারোভাতারি ধরনের মহিলা। ভাগাভাগির ওপরে থাকে।

.

সালেহা বেগম চিন্তায় পড়ে গেলেন। এই মেয়েকে রাখা কি ঠিক হবে কিনা। জিজ্ঞেস করলেন, 'কাজকর্ম কি কি পারো?'

- সবই পারি। তয় থালাবাসন ধুইতে পারুম না খালি।

- কেন?

- হাতের নখ নষ্ট হয়া যায়!

.

সালেহা বেগম খেয়াল করে দেখলেন মেয়ের নখগুলো সুন্দর করে কাটা। সরু সরু। নেলপলিশ দেয়া। সে ব্লাউজের ভেতর থেকে একটা ফোন বের করে টিপতে লাগলো।

- এই মেয়ে, এটা আইফোন না?

- জ্বে, আইফোন ইলেভেন।

- সর্বনাশ, কোথায় পেয়েছ?

- আমার এক্স বয়ফেরেন্ড দিছিলো আমারে।

- তুমি প্রেমও করো?

- জ্বে না, এহন সিঙ্গেল আছি। করতাম আগে। পোলার বাপের দুইটা গার্মেন্টস আছিলো। বিরাট বড়লোক।

- তাকে তুমি কোথায় পেয়েছিলে?

- ফেসবুকে। ফেসবুকে আমার মেলা ফলুয়ার। তিরিশ হাজারের উফরে। ছবি দিলে দুই হাজার কইলজা আহে।

- মানে?

- হারট রিয়েকশন।

- বলো কি! তুমি লেখাপড়া জানো নাকি?

- জ্বে, চারটা ভাষা জানি।

- কি কি ভাষা?

- এইযে ধরেন আফনের লগে কইতাছি, কামের বেডির ভাষা। আরেকটা হইলো শুদ্ধু ভাষা। যেমন, আমাকে তুমি ভালোবাসা দিয়ে মেরেই ফেলো। ছিন্নভিন্ন করে দাও আমায়। আরেকটা ধরেন, ন্যাকামি ভাষা। এই আমাল বাবুতা খাইছে, আমাল বাবুতা কখন ঘুমাবে গো। আরেকটা ইশমাট ভাষা। ইউ কি করো? ইউ কি খেয়েছ? আই তো তোমাকে লাভ করে ফেলেছি।

.

'মাশাল্লাহ। আজ থেকেই কাজ শুরু করে দাও। আর তোমার কিছু বলার আছে?'

- জ্বে, আপনাগো উয়াইফাইয়ের পাসউয়ার্ড টা কন। নুটিফিকেশন চেক করাম।

.

একমাস যাবৎ অরিন কাজ করছে সালেহা বেগমের বাসায়। কাজেকর্মে বেশ পটু। শুধু একটাই সমস্যা, সারাদিন ফোন টিপে। আর গভীর রাত পর্যন্ত কার সাথে যেন ফোনে কথা বলে। সালেহা বেগম শুনেন একদিন বলছে, 'আমার মম তো আমাকে কিচ্ছু করতে দেয় না। পানিটাও ঢেলে দেয় কাজের লোক। য়্যাই, বিয়ের পর কিন্তু আমাকে দিয়ে একদম কাজ করাতে পারবা না বলে দিলাম। প্রমিজ করো। এক্ষুনি করো।'

.

সালেহা বেগম ধরলেন, 'কিরে, কার সাথে এতো কথা বলিস? তুই না সিঙ্গেল।'

- ইয়ে মানে খালাম্মা, আপনাগো দোয়ায় নয়া পেরেম শুরু করেছি।

- ছেলে কে? কি করে?

- পোলার নাম সাদমান সাকিব। বুয়েটে পড়ে। ইলেকটিকাল ইনজিনিয়ার।

- আসলেই বুয়েটে পড়ে?

- জ্বে খালাম্মা। বুয়েট মেডিকেল ছাড়া পেরেম করি না। শিক্কিত পুলা ছাড়া পেরেম কইরা স্বাদ নাই।

.

পুরো বিষয়টাতে সালেহা বেগম বেশ মজা পেলেন। শীঘ্রই উনার বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাড়ালো অরিনের প্রেমিকের গল্প শোনা। অরিনও খুব ভালো গল্প করতে পারে।

.

'বুঝলেন খালাম্মা, হেইদিন বিরাট ঘটনা ঘটছে। আমার এক্স বয়ফেরেন্ড আমার প্রুপাইল পিকচারে দিছে কইলজা। মানে হারট। হেইডা দেইখা হে বিরাট দুক্ষু পাইছে। দুক্ষু পাইয়া খাওন দাওন দিছে ছাড়ান। আমি এতো বুঝাই হ্যারে যে, 'বাবু আমি তুয়ারেই বালুবাসি, হে খালি কয় তুমি আমার লগে প্রুতারনা কইরছো। আমি না খায়া নিজেরে শেষ কইরা দিয়াম।'

- তারপর, তারপর?

- হেরপর যে খালাম্মা দুইটা দিন আমার উফরে এমুন গজব গেছে। শেষমেশ হের রাগ ভাঙানির লাইগা দিলাম নুড পিকচার।

- সেইটা কি?

- হেইটা খালাম্মা লজ্জার কথা। ন্যাংটা ছবি।

- ছি ছি! নাউজুবিল্লাহ। এইসব দিস নাকি!

- নিজের দেইনাই। গুগুল থেকে নামায় দিছি।

- ওহ, তাইলে ঠিক আছে। এইসব আর দিস না।

- জ্বে আচ্ছা।

.

আরেকদিন অরিন ফ্যানের সাথে ওড়না ঝুলাচ্ছিলো। সালেহা বেগম দৌড়ে গেলেন।

- কি ব্যাপার, সুইসাইড করবি নাকি? সর্বনাশ।

- আরে না, খালাম্মা কি যে কয়। এইটার ছবি তুইলা আমার বাবুরে পাঠায়াম খালি। ইমুশুনাল বিলাকমেইল করতাছি। আপনি চিন্তা নিয়েন না।

- কি বিষয়ে ব্লাকমেইল?

- হেই আমারে গুড নাইট না বইলা ঘুমায় গেছেগা। হের লাইগা। কাল সকালে উইঠা যখন ফাসের ছবি দেখব তহন এক্কেরে বিচি কান্ধে!

- ইস! কিসব কথা বলিস! তো কাল যখন দেখবে তুই মরিস নি, তখন কি বলবি?

- তহন কমু ফ্যান ভাইঙ্গা পড়ছিলাম। কোমরে বেদনা!

.

কিছুদিন পর অরিন কাচুমাচু গলায় বললো, ইয়ে মানে খালাম্মা আমার বয়ফেরেন্ড বাইত আইতে চায়।'

- আচ্ছা আসতে বলিস, আমাকে কি বলবি? আমি তোর মা?

- জ্বে না, আমার আব্বা আম্মা তো বিদ্যাশ। হ্যারে তাই কইছি।

- তাইলে? আমি কে?

- আফনে কামের বেডি।

- কি বলিস এসব!

- জ্বে খালাম্মা। একবেলা একটু অভিনয় পারবেন না?

সালেহা বেগম মজাই পেলেন পুরো বিষয়ে। রাজি হলেন।

অরিন বললো, 'আরেকটা কথা, হের নাম কিন্তু ফয়সাল।'

- তুই না বলছিলি সাকিব?

- হের লগে বেরেকাপ হইছে। এইডা নতুন মাল। ঢাকা বিশশুবিদ্যালয়ে পড়ে। ইকোনোমিকস!

- কি আশ্চর্য! এতো তাড়াতাড়ি ব্রেকাপ, আবার প্রেম?

- জ্বে খালাম্মা, ফেসবুক পেরেমের ধারাই এমুন।

.

ফয়সাল এসে দীর্ঘক্ষণ অরিনের সাথে গল্প করে গেল। সালেহা বেগম দুইবার নাস্তা দিলেন। উনি রান্নাঘর থেকে আসার পর একবার দেখলেন তড়িঘড়ি করে দুজন সরে গেল। অরিনের লিপিস্টক এলোমেলো।

ফয়সাল যাওয়ার সময় সালেহা বেগমকে একশো টাকা বখশিশ দিলো। অরিন উনার দিকে চেয়ে বললেন, 'কুলসুম, ভাইয়াকে সালাম করো।'

সালেহা বেগম মাথা নিচু করে বললেন, 'সালামালিকুম ভাইজান।'

.

একদিন অরিন বললো, 'খালাম্মা, আফনেরে একটা আইডি খুইলা দেই?'

- আমি কি করব ফেসবুকে!

- পোলা পটাবেন। পোলা পটাইয়া মজা আছে!

- ইস! কি যে বলিস। আমার কি সেই বয়স আছে?

- বয়স দিয়ে কাম কি আফনের? অন্য একজনের ছবি দিয়াম। আফনে খালি কথা কইবেন। আমি শিখায় দিমুনে।

সালেহা বেগম লাজুক হাসলেন, 'আচ্ছা, দিস একটা আইডি খুইলা।'

.

এমন সময় অরিনের ফোনে ফোন আসলো। অরিন ফোন কেটে দিলো। সালেহা বেগম জিজ্ঞেস করলেন, 'কিরে রিসিভ কর?'

- নাহ, ঝামেলা আছে।

- কি ঝামেলা? কার ফোন? ফয়সালের?

- নাহ, হের লগে তো বেরেকাপ। এইটা আরেক পুলা। নাম সৈকত। চেহারা সুন্দর দেইখা দুইদিন কথা কইছিলাম। পরে শুনি হেই নাকি হারভাডে পড়ে। নামই শুনিনাই হেই বারচিটির। বাপও নাকি ছুডোখাডো চাকরি করে। হেই লাইগা আর কথা কইনা। বুয়েট মেডিকেলের পোলা ছাড়া পেরেম জমে না ঠিক। মনও বহে না। একটা কেলাস আছে না আমার! নুড ছড়াইলে বুয়েটিয়ানের অভাব নাই।

.

সালেহা বেগম মাথা নাড়লেন, 'ছি ছি ছি! নাউজুবিল্লাহ!'

.

.

পরিশিষ্টঃ

- বাবু কি করো?

-

- হ্যা আমিও বসে আছি। তোমার কথাই ভাবছি। ভাবছি, আমার বাবুটা খেয়েছে কিনা।

-

- না, আম্মু বাসায় নেই। তোমাকে খুব মিস করছি। কবে যে আমাদের বিয়ে হবে।

-

- আমার আব্বু বলেছে মাস্টার্স কমপ্লিট না হলে বিয়ে দিবে না। তুমি আর দুই বছর আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারবা না? আমার লক্ষী বাবুটা!

-

- এই রাখছি, শুনো আব্বু ডাকে!

.

সালেহা বেগম ফোন রেখে দিলেন। এখন রনির ফোন করার টাইম। সে বিজি পেলে সমস্যা। বড় ছেলেকে আরেকটা ফোন পাঠাতে বলেছেন কানাডা থেকে। দুইটা ফোন হলে ঝামেলা কমবে। আজকালকার ছেলেদের সাথে প্রেম টেকানো খুব প্যারা। তাও ভালো, উনার লাস্ট দুইটা প্রেমের বয়সই একবছর হলো। শুকুর আলহামদুলিল্লাহ!

.

.

.

লেখাঃসোহাইল রহমান

.

.

গল্পঃস্মাট বুয়া!

25
$ 0.00
Avatar for anika22
4 years ago

Comments

Fantastic story . Hope you will support me . I will do like comment and also subscribe you . Hope I will be happy if you will visit my profile and see my all post and subscribe me . Thanks

$ 0.00
4 years ago

Smart story

$ 0.00
4 years ago

Besh mojar golpo..

Apnake subscribe diyechi... back korben plz..

$ 0.00
4 years ago

Nice article

$ 0.00
4 years ago

Nice story

$ 0.00
4 years ago

ha ha

$ 0.00
4 years ago

How funny

$ 0.00
4 years ago

tnx apu😁

$ 0.00
4 years ago

good story

$ 0.00
4 years ago

amazing writer, so good article, carry on, a will support you

$ 0.00
4 years ago

tnx😌😌

$ 0.00
4 years ago

Nice

$ 0.00
4 years ago

tnx😴😴😴😴

$ 0.00
4 years ago

Nice story

$ 0.00
4 years ago

থাংকু 😴😴😴😴

$ 0.00
4 years ago