'ঝগড়া করে বউ বাথরুমে তালা লাগিয়ে বাপের বাড়ি চলে গেছে।এদিকে বাথরুমে থাকতে থাকতে আমার অবস্থা যায় যায়।
উপায় না পেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিলাম।
'বাড়িওয়ালার মেয়ে নাদিয়া,তুমি যদি আমার এই পোস্ট দেখতে পাও তাহলে তাড়াতাড়ি মটর ছাড়ো।ট্যাংকিতে পানি নাই। অনেক্ষন ধরে বাথরুমে বসে আছি।আর যদি পারো তাহলে আমার বাথরুমের তালাটা খুলে দিয়ে যেও।'
'ওমা পোস্ট দেওয়ার সাথে সাথেই দেখি আমার বউ সাদিয়া কমেন্ট করছে,আমি বাড়িতে এসে তারপর তোমার তালা খুলতাছি।'
'অদ্ভুত আমি বললাম বাথরুমের তালা খুলতে কিন্তু সাদিয়া বলতেছে আমার তালা খুলবে।মানে কি?'
'মিনিট দুয়েক পর বাথরুমে পানি আসলো আর একটু পরেই সাদিয়া তালা খুলে দিলো।'
'আমি ভয়ে ভয়ে বাথরুম থেকে বের হয়ে জিজ্ঞেস করলাম-"মটরটা চালু দিলো কে?"
'ওমনি পিছন থেকে কেও একজন বললো-"আমি চালু দিয়েছি দুলাভাই।"বলেই কি সুন্দর এক লজ্জা সূচক হাঁসি।'
'সাদিয়া কে উদ্দেশ্য করে বললাম-"দেখছো তোমার বোন কতো ভালো,বলার সাথে সাথেই মটর চালু দিয়েছে।"
'সাদিয়া আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো-"দুজনের মধ্যে কি চলে এসব?"
'আমি আর নাদিয়া একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
সাদিয়া আবার বললো-"কি হলো বলো না কেন?"
-"আজব,আমাদের মধ্যে আবার কি চলবে?"
-"তাহলে নাদিয়াকে মোটর চালু দিতে বললে আবার তালা খুলে দিতে বললে কেন?"
-"তুমিই তো সকাল সকাল ঝগড়া করে বাথরুমে তালা মেরে বাপের বাড়ি চলে গেছো।এদিকে বাথরুমে পানিও নাই।তাই কোনো উপায় না পেয়ে ফেসবুকে এমন পোস্ট দিলাম।"
-"আমাকে নিয়ে এমন পোস্ট দিতে পারতা না?"
-"তোমাকে নিয়ে দিলে লাভ হতো কি?তুমি তো বাপের বাড়ি চলে গেছো?"
-"আমি বাপের বাড়ি গেছি না?
-"তুমিই তো তালা লাগিয়ে বললে, তুমি বাপের বাড়ি চলে যাচ্ছো?তুমি আর আমার সংসার করবে না।এখন তুমি কই গেছিলে সেটা আমি জানবো কি করে?"
'সাদিয়া চিৎকার দিয়ে বললো-"এটাই আমার বাপের বাড়ি।আর আমি নাদিয়ার রুমে ছিলাম।"
'মাথায় হাত দিয়ে বললাম-"হায় আল্লাহ, আমার তো মনেই ছিলো না যে এটাই তোমার বাপের বাড়ি আর আমার শ্বশুর বাড়ি।এই বাড়িতে থাকতে থাকতে এখন এটা নিজের বাড়িই মনে হয়!"
-" ঘরজামাই থাকলে তো এমনি মনে হবে?"এখন বলো নাদিয়ার সাথে তোমার কি সম্পর্ক?"
-"সত্যি বলছি নাদিয়ার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নাই।বিশ্বাস না হলে নাদিয়াকে জিজ্ঞেস করো।"
'সাদিয়া,নাদিয়াকে জিজ্ঞেস করলো আমার সাথে নাদিয়ার কি সম্পর্ক?'
'নাদিয়া হুংকার দিয়ে বললো-" বিশ্বাস করো আপু, দুলাভাই মিথ্যা কথা বলছে।"
'সাদিয়া রাগি চোখে আমার দিকে তাকালো।আমি ভয়ে ডুক গিললাম।অদ্ভুত নাদিয়ার সাথে আমার আবার কিসের সম্পর্ক?'
'সাদিয়া আবার জিজ্ঞেস করলো-"তাহলে বল,তোর সাথে নিলয়ের কিসের সম্পর্ক? "
'নাদিয়া হাতে উড়না পেছাতে পেছাতে বললো-"আমার সাথে নিলয় ভাইয়ার শালি দুলাভাই এর সম্পর্ক।"
'এবার যেনো আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।সামনে তাকিয়ে দেখি দুবোনের এক বোনও নাই।পেত্নী নাকি?এক নিমিষেই দুজন উধাও।'
'রাতে খাবার টেবিলে পায়ে মশার কামড়ে পা নাড়া দিতেই পা গিয়ে লাগলো নাদিয়ার পায়ে।'
'নাদিয়া চিৎকার করে বলে উঠলো-"দেখো আপু দুলাভাই আমাকে লাত্থি দিচ্ছে।"
'শ্বশুর শ্বাশুরি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে আবার খাওয়ায় মন দিলো।কিন্তু সাদিয়া রাগী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়েই রইলো।'
'রাতে শুয়ে শুয়ে মোবাইল টিপতেছি আর সাদিয়া তা দেখতেছে।হঠাৎ করে ইমু থেকে নোটিফিকেশন এলো।
সেখানে নাদিয়া নামের একটি মেয়ের একাউন্ট থেকে মেসেজ এসেছে I Love You..'
'মেসেজটা দেখেই সাদিয়ার সন্দেহের মাত্রা আরও বেড়ে গেলো।সাদিয়া তো আর জানেনা যে, ইমু থেকে এমন অদ্ভুত নোটিফিকেশন এসে হাজারো সিঙ্গেল ছেলের মন ভেঙে দেয়।'
'নোটিফিকেশন দেখার পর সাদিয়া শান্ত স্বরে বললো -"আচ্ছা তুমি আমাকে বাদে আর কয়জনকে ভালোবাসো?আর কয়টা মেয়ের সাথে তোমার রিলেশন আছে?"
'আমি মুখে হাত দিয়ে বললাম-"নাউজুবিল্লা, বিশ্বাস করো তুমি ছাড়া অন্য কোনো মেয়েকে আমি ভালোবাসি না। আর কারো সাথে আমার রিলেশন নাই।"
-"তাহলে সেদিন রাতে যে টুনটুনির আম্মু নামের এক নাম্বার থেকে কল এসেছিলো সেই মেয়েটা কে?"
-"আরে ওটা আমার অফিসের এক কলিগের নাম্বার। উনার মেয়ের নাম টুনটুনি, তাই টুনটুনির আম্মু লিখে সেইভ করে রাখছি।উনি আমার বয়সেও অনেক বড়।"
-"সত্যি বলছো তো?"
-"হুম একদম সত্যি!"
-"আমাকে বিয়ের আগে কয়টা প্রেম করছো, একদম সত্যি বলবা।"
-"করছি কয়েকটা এতো কিছু মনে নাই।"
'সাদিয়া মন খারাপ করে বললো-"আচ্ছা যাইহোক, তুমি নাকি আগে কবিতা লিখতে? আমাকে একটা কবিতা শুনাও না।"
'বউ হঠাৎ এতো রোমান্টিক হয়ে উঠলো।আমার কবিতা শুনতে চাচ্ছে।এই কবিতা লিখে স্কুল কলেজে কত মেয়ে পটাইছি আর আজ নিজের বউ সেই কবিতা শুনতে চাচ্ছে।'
'খুশি খুশি ভাব নিয়ে বললাম-"তা কেমন কবিতা শুনতে চাও?"
-"তোমার লাইফ স্টোরি নিয়ে কবিতা বলো!"
'অদ্ভুত, মানুষ চায় রোমান্টিক কবিতা আর এই মেয়ে কিনা আমার লাইফ স্টোরির কবিতা শুনতে চায়?'
'যাইহোক, বউ বলে কথা।সাদিয়ার কথামতো কবিতা বলা শুরু করলাম-" ল্যাংটা ছিলাম,ভালো ছিলাম,সুখেই ছিলাম।"
"মা বাবার কথা শুনে স্কুলে ভর্তি হইলাম।"
"স্কুলে ছিলো এক সুন্দরী মেয়ে,অনিকা তার নেইম।"
"প্রাইমারী লাইফে অনিকার সাথেই আমার প্রথম প্রেম।"
"কোনো রকম পাশ করে হাই স্কুলে উঠিলাম।"
"ক্লাস নাইনে সুমাইয়ার সাথে প্রেম করিলাম।"
"সুমাইয়া তো সুমাইয়া,খালি থাকে বই নিয়া।"
"সারাক্ষণ আমারে দেয় পড়ালেখার চাপ,তাই সুমাইয়ার সাথে করছিলাম ব্রেকাপ।"
"ক্লাস টেনে আসলো মিম।"
"খায় খালি ডিম।"
"মিমের ছিলো ঘন লম্বা কেশ।"
"ডিম খাইনা বলে মিমের সাথে রিলেশন শেষ।"
"নুসরাত ছিলো ইন্টারের ক্রাশ।"
"প্রেমের অভিনয় করে সেও দিয়েছিলো বাঁশ।"
"তারপর আর প্রেমের কাছে না গিয়ে চাকরি নিয়েছি বড়।"
"বাপ মা আইসা বলে তাড়াতাড়ি বিয়া করো।"
"তারপর বিয়া করলাম সাদিয়াকে,সে হইলো মোটা।"
"শ্বশুর বাড়ি থাকি বলে সে দেয় খোটা।"
"খাইয়া খাইয়া মোটা বানাইতেছে সাদিয়া তার দেহ।"
"সারাক্ষণ শুধু করে আমায় সন্দেহ।"
'কবিতা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই সাদিয়া রাগের ঠেলায় বালিশ দিয়ে কয়েকটা বাড়ি মেরে ফুঁপিয়ে কান্না করতে করতে বললো-"ইউ চিটার, বাটপার,প্রতারক। এতগুলা প্রেম করে শেষমেশ আমাকে বিয়ে করে ঠকালি।আবার আমার বাপের বাড়িতে থেকে আমাকেই বলিস মোটা।আমি খাইয়া খাইয়া মোটা হই আর তোকে সন্দেহ করি তাই না।
যা তোর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নাই।আমার বাপের বাড়িতে থেকে আমাকে ঠকানো তাই না,যা বের হ আমার রুম থেকে।কালকেই তোকে আমি ডিভোর্স দিবো।'
'সাদিয়া ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দিলো।
আমি বসে বসে ভাবতে লাগলাম।
অদ্ভুত, তার বাবা আমার হাই লেভেলের চাকরি দেখে আমার ব্যাপারে সবকিছু জেনেই আমাকে জামাই বানাইছে।নিজেই আমাকে ঘর জামাই রেখেছে।আর তার মেয়ে বলে কিনা আমি আমি চিটার, বাটপার, প্রতারক।ওরে বাটপার, ওরে চিটার।'
'আমিও রাগের ঠেলায় শ্বশুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লাম।থাকব না ওই বাড়িতে,করবো না সাদিয়ার সাথে সংসার।'
'হাটতে হাটতে ডিপ্রেশনে পরে একটা কবিতা বললাম-"বাপ মায়ের পছন্দে বিয়া করছিলাম।"
"লাখ টাকা যৌতুক পাইছিলাম।"
"বউ আমার সেই লেভেলের মোটা।"
"খাইয়া খাইয়া দেয় আমারে খোটা।"
"যৌতুক নিয়ে বিয়ে করে খাইলাম মার।"
"যার কারনে ভাঙলো আমার সংসার।"
সমাপ্ত
লেখাঃ Shohag Hasan Niloy
Nice article .