সমাজের উপকারী পাখি হিসেবে স্থান করে নিয়েছে দোয়েল। কত রকমের ক্ষতিকর পোকামাকড় সে খায়। এ পাখি ধানের পোকা খায়। শাক-সবজির পোকাকে খেয়ে ধ্বংস করে। পাট বিনষ্টকারী বিচ্ছুকে খেয়ে সাবাড় করে। এই সাদা-কালো পাখিটি বাংলাদেশের জাতীয় পাখি। পাশাপাশি বাংলাদেশের
অন্যতম শ্রেষ্ঠ গায়ক পাখি। এ পাখির আছে বুক ভরা সাহস। আছে চোখ ভরা স্বাধীনতা। চাল-চলনে আরও আছে আভিজাত্যের ছাপ। বাংলাদেশের এমন কোনো শহর বা গ্রাম নেই, যেখানে দোয়েল পাখি দেখা যাবে না। সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়-টিলায় দেখা যায় এ পাখি। আরও আছে সুন্দরবনে। আছে রাজধানীজুড়ে। দোয়েল পাখির বাসা বাঁধতে সময় লাগে দুই থেকে পাঁচ দিন। একসঙ্গে বা এক দিন বিরতি দিয়ে চারটি ডিম পাড়ে। ১৪ দিন তা দেওয়ার
পর ডিম থেকে বাচ্চা ফোটে। দোয়েল বুদ্ধিমান ও সাহসী পাখি। তবুও বাসা বাঁধার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময় বোকামির পরিচয় দেয়। সব সময় মানুষ চলাচল করছে, এমন জায়গায় ও বাসা তৈরি করে। বাংলাদেশের যেসব পাখি বাসা বাঁধার গান গায়। গান গেয়ে আশপাশের সব পাখিকে বাসা বাঁধার খবর
জানায়। এই পাখির জন্য শীত-গ্রীষ্ম নেই। বর্ষা ও শরৎ নেই। গান সে গাইবেই। বাসা বাঁধার গান শুরু হয় শীত মৌসুমে। এ পাখির বাসা তৈরির উপকরণ যে কোনো গাছের অত্যন্ত সরু ডাল। মানুষের চুল। গবাদি পশুর পশম ও লোম। শুকনো দূর্বাঘাস। আরও আছে খড়, উলুঘাস, সাপের খোলস, ধানের শুকনো কুটো, গাছের সরু-সরু শিকড়-বাকড়। পাট ও কলাগাছের শুকনো আঁশ। প্রয়োজন না হলে দোয়েল এক নাগাড়ে বেশি দূর ওড়ে না। মাটিতে লাফিয়ে লাফিয়ে খাদ্য খোঁজে। ধান কিংবা ভাত খাবার জন্য এ
পাখি গৃহস্থের গোলাঘর, কিংবা রান্না ঘরেও ঢুকে পড়ে। উঠান, বাড়িজুড়ে ওদের অবাধ চলাচল। বন-বাগানের মাটিতে খাবার খোঁজার সময় অতি সহজে বেজি ও বন বিড়ালের খপ্পরে পড়ে চরম বিপদ ডেকে আনে। আবার অনেক সময় পোষা বিড়ালও খপ করে ধরে ফেলে। দোয়েলের খাবার তালিকায় আছে
বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ, কেঁচো, খেজুরের রস। দোয়েল পাখি ১৮ থেকে ২২ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। বেশির ভাগ সময় তার লেজ পিঠের ওপর খাড়া হয়ে থাকে। পালকের প্রান্তে, পিঠের কাছটাতে যেন শরতের লম্বাটে মেঘ। চোখের
মণির রং পিঙ্গল। লেজের কাছের পালকে সাদা দুটি টান। ঠোঁট কালো। খাজকাটা ডানা। গলা-মাথা-বুক ও কপাল চকচকে কালো। চোখের পাশটা ঘন কালো। পায়ের উপরিভাগসহ পেট সাদা। বুজানো অবস্থায় ডানা কালচে। পায়ের রং কালছে ধাতব। নখ কালো। লেজের তলায় বাদামি লালচে।