আমাদের জীবনে এমন অনেক রহস্যজনক ঘটনা ঘটে যা শুনতে গল্পের মতো লাগলেও এর আড়ালে সত্য লুকিয়ে থাকে। ঘটনাগুলো এতটাই অপ্রত্যাশিত যে কখনো আমরা ভাবতেই পারি না, আমাদের সাথে এরকম ঘটনা ঘটবে। আজ আপনাদের সামনে আমার জীবনের এরকমই আরেকটি ঘটনা নিয়ে এসেছি।
তখন সাল ২০১৩। আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। দিনটার কথা আমার এখনো মনে আছে। আমি রাজশাহিতে তখন সান ডায়াল নামের এক কোচিং সেন্টারে ইংরেজি টিচার। কিছু প্রাইভেট পড়াই কোচিং এর বাইরে। তো সেদিন প্রাইভেট পড়ানোর জন্য চলে যাই আমার এক ছাত্রের বাসায়। এলাকার বর্ণনা দেয়াটা জরুরী। রাজশাহীতে বাংলাদেশ ব্যাংক এর মাঠের পাশে আমার সেই ছাত্রের বাসা। ওর বাসায় যেতে হলে কয়েকটা গলি আছে। শেষ গলি পার হলে ওর বাসা পড়ে। আমার কোচিং সেন্টার থেকে ওর বাসায় যেতে হলে প্রথমে অটোরিকশা নিতে হয়, তারপর রিক্সা দিয়ে বা হেঁটে ওর বাসা পর্যন্ত যেতে হয় । যেদিন শরীর ক্লান্ত থাকত সেদিন রিকশা দিয়ে যেতাম ওর বাসায়।তবে রিক্সাটা ওর বাসা পর্যন্ত যেতে পারে না, গলি পর্যন্ত যেতে পারে।
ওর বাসার সামনে একটা দোকান আছে, না তেমন হাই ফাই কোন দোকান না, চা সিগারেট বিক্রি করে। সেদিন আমি রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া দিতে যেয়ে দেখি আমার কাছে খুচরা টাকা নেই। আমি রিকশাওয়ালা কে খুচরা দিতে বললে সে অপারগতা জানায়। আমি তাকে বলি,” ঠিক আছে, আপনি একটু দাঁড়ান, আমি দোকান থেকে টাকা এনে আপনাকে দিচ্ছি । “ সে রাজী হয়। দোকানদার আমার পরিচিত কারণ আমাকে সে নিয়মিতই আমার ছাত্রের বাসায় যাওয়া-আসা করতে দেখে আর পড়ানো শেষ করে আমি তার দোকান থেকে চা খাই। সে আমাকে রিক্সা ভাড়ার টাকাটা দেয়। আশ্চর্যের ব্যাপার তখন ঘটে যখন আমি ভাড়াটা ওই রিক্সাওয়ালাকে দিতে যাই। দোকান থেকে ওই রিক্সা দূরত্ব সর্বোচ্চ 30 সেকেন্ডের হবে। ভাড়া টা নিয়ে ওর কাছে যেতে আমার খুব বেশি হলে ১ মিনিটের মত লেগেছে। আমি যেয়ে দেখি সেখানে কোন রিক্সা বা কোন রিক্সাওয়ালা নেই।
ঘটনাটা প্রথমে আমার কাছে অতটা রহস্যজনক লাগেনি। কারণ আমি ভেবেছি হয়তো আশেপাশে কোথাও গেছে এখনি চলে আসবে। আপনারা বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা, আমি তিরিশ মিনিট সেই রিকশাওয়ালার জন্য অপেক্ষা করেছি কিন্তু সে আসে নাই। তারপর আর কোন উপায় না দেখে সেই দোকানদারকে টাকাটা দেই আর বলি যদি কেউ আসে তাহলে তাকে দিয়ে দিয়েন। আমার ছাত্রকে পড়ানো শেষ করে যখন বের হয়ে আসি, দোকানে গিয়ে জিজ্ঞেস করি কেউ এসেছিল কিনা? দোকানদার আমাকে বলে কেউ আসেনি। আজকে পর্যন্ত আমার জীবনে এমন কোন রিক্সাওয়ালা দেখিনি যে ভাড়া না নিয়ে এভাবে চলে যাবে। তখন আমি দোকানদারকে ঘটনাটা বলি।
সব শুনে দোকানদার আমাকে বলে, এই এলাকাতে এর আগেও এরকম ঘটনা ২ ৩ বার ঘটেছে। প্রতিবারই কোন এক রিক্সাওয়ালা ভাড়া না নিয়ে চলে গেছে। শেষবার যার সাথে এরকম ঘটনা ঘটেছে, সেই লোকের ভাষ্যমতে রিক্সাওয়ালার পা নাকি ঘোড়ার পায়ের মতো দেখতে। জানিনা, এই কথাটা কতটুকু সত্য, কারণ আমি অন্ধকারে তার পায়ের দিকে তাকাই নি। শুধু এতোটুকু জানি এরপরেও যতবার আমি ওই ছাত্রের বাসায় গিয়েছি, প্রতিবারই সেই রিকশাওয়ালা কে খোঁজার চেষ্টা করেছি। সেই চায়ের দোকানদারের কাছে আজও সেই টাকাটা দেয়া আছে আর বলা আছে যদি কোনদিন সেই রিকশাওয়ালা আসে তাহলে যেন থাকে সেই টাকাটা দিয়ে দেয়।
এই গল্পটা হয়তোবা ভৌতিক বা সুপার ন্যাচারাল না কিন্তু নিঃসন্দেহে রহস্যজনক বটে। শুধু এতটুকু চিন্তা করুন, যদি কোনদিন এরকম কোন ঘটনা আপনার সাথে ঘটে, তাহলে আপনি কি করবেন?
যদি আমার এই অভিজ্ঞতা আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে এই পোস্ট এ একটি লাইক আর সাবস্ক্রাইব করবেন। ভবিষ্যতে আমি চেষ্টা করব এরকম আরো কিছু রহস্যজনক অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করার।
This story is very enjoyable. Your writing system is very unique. Carry on your website post.