ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে কোনও ঝড়ো বাতাস যখন স্ট্যাচুটির গায়ে আছড়ে পড়ে তখন মূর্তিটি ৩ ইঞ্চি ও টর্চটি ৫ ইঞ্চি পর্যন্ত নড়তে থাকে!
আমরা সবাই মোটামুটি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে অবস্থিত স্ট্যাচু অব লিবার্টি সম্পর্কে জানি। তবে, স্ট্যাচু অব লিবার্টি ঘিরে এমনই কিছু অজানা তথ্য রয়েছে যা আপনি হয়ত আগে জানতেন না!
প্রথমত, এই স্থাপনাটির আসল নাম কিন্তু স্ট্যাচু অব লিবার্টি না! এর নাম হল “এনলাইটেনিং দ্য ওয়ার্ল্ড”। একহাতে একটি মশাল এবং অপরহাতে একটি বই হাতে নিয়ে নিউ ইয়র্ক শহরে দাঁড়িয়ে আছে “স্ট্যাচু অব লিবার্টি” নামে বহুল পরিচিত এই স্থাপনাটি। এটি একহাত দিয়ে যে বইটি ধরে আছে সে বইয়ের ওপরে লেখা আছে একটি তারিখ, আর তা হল “৪ জুলাই, ১৭৭৬”।এই তারিখেই ব্রিটিশ শাসন থেকে যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীন হয়েছিল!
সে যাইহোক, ৯৩ মিটার লম্বা এই মূর্তিটির ওজন হল প্রায় ২০৪ মেট্রিক টন। পুরো মূর্তির মধ্যদিয়ে একটি সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়েছে যেটা দিয়ে মাটি থেকে একদম ওপরের মশাল পর্যন্ত যাওয়া যায়। প্রতিবছর প্রায় ৪০ থেকে ৫০ লাখ মানুষ স্ট্যাচু অব লিবার্টি দেখতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে আসেন।
এই মূর্তিটির মাথায় অলংকারের মত দেখতে সাতটি সূচালো লোহা বের হয়ে আছে, এগুলো আদতে সাতটি মহাসমুদ্রের প্রতি ইঙ্গিত করেই তৈরি করা হয়েছে। স্থাপত্যশৈলীর এক চমৎকার এবং উৎকৃষ্ট উদাহরণ এই স্ট্যাচু অব লিবার্টি নামক মূর্তিটি ডিজাইন করেছিলেন ফ্রেডরিক আগাস্ট বার্থহোলডি নামক এক ফরাসি মূর্তি ডিজাইনার।পরবর্তীতে ১৮৮৬ সালে ফ্রান্সের সরকার মূর্তিটি দুইদেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কটি আরো জোরাল করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে উপহারস্বরূপ প্রদান করে।
এর মজার একটি তথ্য হল যে ব্যক্তি এর ডিজাইন করেছিলেন তিনি তার নিজের মা ক্যারলোটের আদলে এই মূর্তিটির চেহারা তৈরি করেছিলেন। ১৯৮৪ সালের দিকে এই মূর্তিটির মশালটি পরিবর্তন করা হয়েছিল। পূর্বের সাধারণ লোহার পরিবর্তে সেখানে ২৪ ক্যারেট স্বর্ণ দিয়ে তৈরি একটি মশাল প্রতিস্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে ১৮৮৬ সালে যখন এই মূর্তিটি স্থাপন করা হয় তৎকালীন এই স্ট্যাচু অব লিবার্টি ছিল পৃথিবীর সবচাইতে বড় লোহার তৈরি মূর্তি।
এই স্ট্যাচুর আরেকটি মজার বিষয় হল ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে কোনও ঝড়ো বাতাস যখন এই মূর্তির গায়ে আছড়ে পড়ে তখন মূর্তিটি ৩ ইঞ্চি ও টর্চটি ৫ ইঞ্চি পর্যন্ত নড়তে থাকে।
এছাড়া প্রতিবছর স্ট্যাচু অফ লিবার্টি প্রায় ৬০০ বজ্রপাত সহ্য করে টিকে আছে। আর এই চমৎকার দৃশ্যটি ২০১০ সালের দিকে একজন ফটোগ্রাফার তার ক্যামেরায় বন্দি করেছিলেন। আর যে দ্বীপটিতে স্ট্যাচুটি রাখা আছে তার নাম ছিল “বেডলে আইল্যান্ড”, তবে ১৯৫৬ সালের দিকে এই দ্বীপের নাম পরিবর্তন করে “লিবার্টি আইল্যান্ড” নামে নামকরণ করা হয়।
সেসময়ে এই মূর্তিটি তৈরি করতে প্রায় পাঁচ লাখ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ অর্থ খরচ হয়েছিল, যার বর্তমান মূল্য দশ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এদিকে স্ট্যাচু অব লিবার্টিকে ইমিগ্রেশন এর প্রতীকও বলা হয়ে থাকে, কেননা উনিশ শতকের দিকে প্রায় ৯০ লাখ মানুষ সমুদ্রপথে যখন যুক্তরাষ্ট্র পাড়ি জমান তখন এই মূর্তিটির সবার প্রথমে চোখে পড়ত।
স্ট্যাচু অফ লিবার্টি ঘিরে দু’টি দুঃখজনক ঘটনাও রয়েছে, আর সেটা হল এপর্যন্ত দুইজন মানুষ স্ট্যাচু অফ লিবার্টি থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। দু’টো ঘটনাই কাছাকাছি সময়ে হয়েছিল, যারমধ্যে প্রথম ঘটনাটি ১৯২৯ সালে ও দ্বিতীয় আত্মহত্যার ঘটনাটি ১৯৩২ সালে হয়েছিল। বর্তমানে এই স্ট্যাচুর সিঁড়িটি দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বন্ধ রাখা হয়েছে।
Excellent