স্বপ্ন দেখা মেয়েদের খুনী শুধু শ্বশুরবাড়ির লোকজন না, নিজের পরিবারও

0 7
Avatar for Writer
Written by
4 years ago
Sponsors of Writer
empty
empty
empty

ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়া একটা মেয়েকে তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা মেরে ফেলেছে- এরকম অভিযোগ করছে মেয়েটার পরিবার। তারা বলছে, মেয়েটাকে মেরে লাশ সিলিং থেকে ঝুলায়ে দিয়ে সেটাকে আত্মহত্যা বলে চালানো হয়েছে। আর লাশ রেখে পালিয়ে গেছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন।

তো, মেয়ের বাড়ির লোকদের কেন এরকম ধারণা হল যে মেয়েটাকে খুনই করা হইছে?

কারণ, সুমাইয়া নামের ওই মেয়েটাকে নাকি শ্বশুরবাড়িতে বহুদিন ধরে অত্যাচার করা হচ্ছিল। নিউজে লেখা- ‘সুমাইয়ার চাচাতো ভাই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এজি হাসান অভিযোগ করেন, তার বোনকে শ্বশুর বাড়ির লোকজন দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন করে আসছিলেন। পারিবারিক কলহের জেরেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি তার বোনের হত্যার বিচার দাবি করেছেন।’

তো, এখন আপনারা আমাকে বলেন তো, মেয়ের খুনী কি ওই শ্বশুরবাড়ির লোকেরা একাই? মেয়ের বাপ মায়ের বাড়ির লোকেরাও কি সমান খুনী না?

নিউজে দেখলাম, মেয়েটা ইসলামিক স্টাডিজে পড়ত ঢাবিতে। তার স্বপ্ন ছিল সরকারি চাকরি, ইত্যাদি।

তো যে মেয়ে ঢাবিতে পড়ে, যার স্বপ্ন বিসিএস দিয়া ক্যাডার হওয়া, সেই মেয়ে দিনের পর দিন শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতিত হন আর বাড়ির লোকেরা, বাপে মায়ে ভাইয়ে বোনে কাজিনে সেটা জানে, তাও তারা মেয়েটারে ওই অন্ধকার গহ্বর থেকে বের করে আনেন নাই কেন? এখন মেয়ে খুন হয়ে গেছে, এখন কানতেছেনই বা কেন?

 

আমার বোন আইনজীবী। স্বনামধন্য মানবাধিকার সংস্থায় কাজ করত, এখনও করে। তার কাছে শুনতাম, বহু মেয়ে অত্যাচারে অতীষ্ঠ হয়ে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চায়, স্বামীকে ডিভোর্স করতে চায়; পারে না, শুধুমাত্র বাপ মা ভাই বোনের চাপে পড়ে। আপনজনরাই তাকে সংসার টিকায়ে রাখতে অত্যাচার সহ্য করতে বলে। তারাই শিখায়- 'স্বামী শ্বশুর একটু মারে ধরেই, মেয়েদের একটু মানায়ে নিতে হয়। মেয়েদের এত তেজ ভাল না।'

এইভাবে বহু মেয়ে বাপের বাড়ির চাপে দিনের পর দিন মার খায়, গালি খায়, অপমান সহ্য করে। তার যাবার কোন জায়গা নাই। তার মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিছে তারই পরিবার আর এই সমাজ। তার আত্মবিশ্বাস আর সাহসের পথ রুদ্ধ করে দিছে তারই বাপে-মায়ে। কিন্তু একটা মানুষ আর কতটা পারে?

একদিন তাই সব হিসাব চুকায়ে দিয়ে সে হয় আত্মহত্যা করে, অথবা মার খেতে খেতে একদম মরে যায়। খুন হয়। যে খুনটা বহুদিন ধরে হচ্ছিল, যে প্রাণটা নিয়ে বহুদিন ধরে টানাহ্যাচরা চলছিল, কোন এক রাতে সেই মূল্যহীন প্রাণ একেবারে বেরিয়ে যায়, হুশ করে।

এরপর বাপে কান্দে, মায়ে কান্দে, ভাইয়ে কান্দে, বোনে কান্দে, খালা মামা চাচা খালু ফুপু সবতেই কান্দে। এই কান্না ভণ্ডামির কান্না। এই কান্না আরো একদল খুনীর কান্না, এই কান্না আরেক ধরণের অনার কিলিং- পরিবারের সম্মান আর সমাজের কুচ্ছিত নিয়ম বাঁচাতে একটা জীবন্ত মেয়েকে সবাই মিলে হত্যা করে। এই হত্যার দায় দুই পরিবারকেই নিতে হবে।

 

1
$ 0.03
$ 0.03 from @Namirah
Sponsors of Writer
empty
empty
empty
Avatar for Writer
Written by
4 years ago

Comments