ইসলামপুরের কুমারটুলী বা আহসান মঞ্জিল

0 10
Avatar for Writer
Written by
3 years ago
Sponsors of Writer
empty
empty
empty

ইসলামপুরের কুমারটুলী নামে পরিচিত পুরনো ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে বর্তমান ইসলামপুরে আহসান মঞ্জিল অবস্থিত। এটি ব্রিটিশ ভারতের উপাধিপ্রাপ্ত ঢাকার নওয়াব পরিবারের বাসভবন ও সদর কাচারি ছিল। অনবদ্য অলঙ্করন সমৃদ্ধ সুরম্য এ ভবনটি ঢাকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য নিদর্শন।

নওয়াব আব্দুল গনির পিতা খাজা আলিমুল্লাহ ১৮৩০ সালে ফরাসিদের নিকট থেকে এই কুঠিটি ক্রয়পূর্বক সংস্কারের মাধ্যমে নিজ বাসভবনের উপযোগী করেন। পরবর্তীতে নওয়াব আব্দুল গনি ১৮৬৯ সালে এই প্রাসাদটি পুন:নির্মাণ করেন এবং প্রিয় পুত্র খাজা আহসানুল্লাহর নামানুসারে এর নামকরণ করেন আহসান মঞ্জিল।

 

পরিদর্শনের সময়সূচি:

গ্রীষ্মকালীন সময়সূচি: (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) - (শনিবার-বুধবার) সকাল ১০.৩০ টা – বিকাল ৫.৩০ টা। শুক্রবার- বিকেল ৩.০০ টা – সন্ধ্যা ৭.৩০ টা।

শীতকালীন সময়সূচি: (অক্টোবর –মার্চ) - (শনিবার-বুধবার) সকাল ৯.৩০ টা – বিকাল ৪.৩০ টা। শুক্রবার – দুপুর ২.৩০ টা – সন্ধ্যা ৭.৩০ টা।

বৃহস্পতিবার – সাপ্তাহিক ছুটি ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন জাদুঘর বন্ধ থাকবে।

 

টিকেট কাউন্টার

আহসান মঞ্জিলের পূর্ব পাশে যে ফটকটি উন্মূক্ত, তার ডান পাশে টিকেট কাউন্টার অবস্থিত। কাউন্টার হিসেবে যেসব কক্ষ ব্যবহৃত হচ্ছে , পূর্বে এগুলো সৈনিকদের ব্যারাক ও গার্ডরুম ছিল।

 

টিকেটের মূল্য তালিকা

প্রাপ্ত বয়স্ক বাংলাদেশি দর্শক = ৫ টাকা জনপ্রতি, অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাংলাদেশি শিশু দর্শক (১২ বছরের নিচে) = ২ টাকা জনপ্রতি, সার্কভুক্ত দেশীয় দর্শক = ৫ টাকা জনপ্রতি, অন্যান্য বিদেশি দর্শক = ৭৫ টাকা জনপ্রতি, উল্লেখ্য যে, প্রতিবন্ধি দর্শকদের জন্য কোন টিকিটের প্রয়োজন হয় না ও পূর্ব থেকে আবেদনের ভিত্তিতে ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামূল্যে জাদুঘর দেখতে দেয়া হয়।

আহসান মঞ্জিল জাদুঘর ছাত্র-ছাত্রীদের বিনা টিকিটে প্রবেশ করতে দেয়া হয়ে থাকে।

অগ্রিম টিকিটের কোন ব্যবস্থা নেই। তবে উল্লিখিত দিনগুলোতে আহসান মঞ্জিল বন্ধ হওয়ার ৩০ মিনিট আগ পর্যন্ত টিকেট সংগ্রহ করা যায়।

 

দর্শনীয় জিনিস

ঢাকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য নিদর্শন হলো আহসান মঞ্জিল। নবাব পরিবারের স্মৃতি বিজড়িত এই প্রাসাদটি বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

বর্তমানে আহসান মঞ্জিলের মূল প্রাসাদটি গ্যালারি আকারে রূপান্তর করা হয়েছে। মোট গ্যালারি ২৩ টি। ১৯০৪ সালে তোলা ফ্রিৎজকাপের আলোকচিত্র অনুযায়ী বিভিন্ন কক্ষ ও গ্যালারিগুলো  সাজানো হয়েছে।

গ্যালারি নং

বিবরণ

০১.

উনিশ শতকের সৈনিকের বর্ম, ভবনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, সংস্কারপূর্ব ও পরবর্তী আলোকচিত্র ও পেইন্টিং। আহসান মঞ্জিল নিলামে বিক্রির জন্য এবং নতুন ভবন তৈরির নির্দেশ নামা।

০২.

নবাবদের ব্যবহৃত আলমারি, তৈজসপত্র, ফানুস ও ঝাড়বাতি।

০৩.

প্রাসাদ ডাইনিং রুম, নবাবদের আনুষ্ঠানিক ভোজন কক্ষ্ এটি।

০৪.

বক্ষস্ত্রান ও শিরস্ত্রান, হাতির মাথার কংকাল (গজদন্তসহ), অলংকৃত দরমা বেড়া/কাঠ ছিদ্র অলংকরন সম্বলিত।

০৫.

প্রধান সিড়িঘর নিচতলা। দরজার অলংকৃত পাল্লা, ঢাল-তরবারি, বল্লম, বর্শাফলক।

০৬.

স্যার আহসানুল্লাহ জুবিলী মেমোরিয়াল হাসপাতালে ব্যবহৃত অত্যাধুনিক কিছু সরঞ্জামাদি ও খাতপত্র এখানে প্রদর্শিত হচ্ছে।

০৭.

মুসলিম লীগ কক্ষ। এ কক্ষটি নবাবদের দরবার হল হিসেবে ব্যবহৃত হতো। নিখিল ভারত মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠাকালে শাহবাগের সম্মেলনে আগত সর্ব ভারতীয় মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দর একটি বড় তৈলচিত্র এই গ্যালারিতে আছে।

০৮.

বিলিয়ার্ড কক্ষ। ১৯০৪ সালে তোলা আলোকচিত্র অনুযায়ী বিলিয়ার্ড টেবিল, লাইটিং ফিটিংস, সোফা ইত্যাদি তৈরি করে সাজানো হয়েছে।

০৯.

সিন্দুক কক্ষ- ঢাকার নবাবদের কোষাগার হিসেবে ব্যবহৃত কক্ষ। এতে আছে ৯৪ লকার বিশিষ্ট বৃহদাকার লোহার সিন্দুক। বড় কাঠের আলমারি ও মাঝারি ও ছোট কয়েকটি সিন্দুক। লোহার গ্রীল, দরজার পাল্লা ইত্যাদি।

১০.

নওয়াব পরিচিতি- এই গ্যালারিতে ঢাকার নওয়াব পরিবারের স্বনামধন্য ব্যক্তিদের পরিচিতি ও বংশ তালিকা এবং নবাবদের কাশ্মীরবাসী আদিপুরুষ থেকে সাম্প্রতিক কাল পর্যন্ত বংশ তালিকা ও ইংরেজীতে লেখা আহসানউল্লাহর ডায়েরি ও উর্দূতে জমি পত্তন দেয়ার দলিল।

১১.

প্রতিকৃতি- এই গ্যালারিতে খ্যাতনামা, দেশবরেণ্য রাজনীতিবিদ, সমাজসেবী, ভূস্বামী, বুদ্ধিজীবী, সমাজসংস্কারক, কবি সাহিত্যিক ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের তৈলচিত্র ছবি রয়েছে।

১২.

নওয়াব সলিমুল্লাহ স্মরণে- নওয়াব সলিমুল্লাহর ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন সময়ের আলোকচিত্র, নবাবের ব্যবহার্য ব্যক্তিগত ও অফিসিয়াল জিনিস।

১৩.

প্রতিকৃতি- নবাব পরিবারের সদস্যগণদের অন্দর মহলে প্রবেশ করার জন্য রংমহল থেকে পশ্চিমাংশের একটি গ্যাংওয়ের মাধ্যমে যাতায়াত করতেন। বর্তমানে তা নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে বন্ধ।

১৪.

হিন্দুস্তানি কক্ষ-১৯০৪ সালে ফ্রিৎজকাপের তোলা আলোকচিত্র অবলম্বনে এই গ্যালারি নির্মাণ ও সংস্কার কাজ চলছে।

১৫.

প্রধান সিড়িঘর দোতলা- সাদা সিমেন্টের ভাস্কর্য, আলোকচিত্র ও খোদাই করা কাঠের সিড়ি লাল গালিচার্য এবং ছাদে কাঠের অলংকৃত সিলিং।

১৬.

লাইব্রেরি কক্ষ- এই গ্যালারির সংস্কার কাজ চলছে।

১৭.

কার্ডরুম- ঢাকার নওয়াবদের তাশ খেলার কক্ষ। সংস্কার চলছে।

১৮.

নবাবদের অবদান ঢাকায় পানিয় জলের ব্যবস্থা। এ কক্ষটি গেষ্টরুম হিসেবে ব্যবহার হতো। এখানে পানির ড্রাম, আইসক্রীম, বালতি, কফি তৈরির মেশিন, কফির কাপ, কুলফি গ্লাস, পানির ট্যাপ, অলংকৃত বালতি রয়েছে।

১৯.

স্টেট বেডরুম-রাজকীয় অতিথীদের থাকা ও বিশ্রামের জন্য এই বেডরুম, শোবার খাট, আলমারী, ঘড়ি, ড্রেসিং টেবিল, আয়না, তাক, টেবিল-চেয়ার এখানে রয়েছে।

২০.

নওয়াবদের অবদান ঢাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। ঢাকায় বিদ্যুৎ, কেরোসিন বাতি, হারিকেন চুল্লি, হারিকেন সার্চ বাতি, দেশে বিদেশে জনকল্যাণ কাজে ঢাকার নওয়াবদের অর্থদানের বিবরণ, সিগন্যাল বাতি, বিভিন্ন দেশী বৈদ্যুতিক বাল্ব, কেরোসিন চালিত পাখা, বিভিন্ন প্রকার কাঁচের লাইট, মোমবাতি ষ্ট্যান্ড, ফানুস ইত্যাদি।

কিভাবে যাওয়া যায়:

ঢাকার গুলিস্থান থেকে সরাসরি বাস সার্ভিস চালু আছে। এছাড়া প্রাইভেট কার বা অটো সিনজি যোগেও যাওয়া যায়।

 

1
$ 0.09
$ 0.09 from @TheRandomRewarder
Sponsors of Writer
empty
empty
empty
Avatar for Writer
Written by
3 years ago

Comments