চেঙ্গিস খাঁর নারকীয় ভোজসভায় একদিন

0 2
Avatar for Writer
Written by
4 years ago
Sponsors of Writer
empty
empty
empty

সারি সারি ফেলে রাখা হয়েছে অসংখ্য চমরি গাই, শুয়োর। অল্প কিছু ঘোড়া।

এরা এখনও জীবিত। তবে সামান্য সময়ের জন্যই। সবগুলোর চার পা দড়ি দিয়ে বাঁধা। প্রত্যেকটা পশুর সামনে খঞ্জর নিয়ে দাঁড়ানো একজন করে সৈনিক।

বিশাল মাঠের সামনে রাজকীয় মঞ্চ। সবচেয়ে উঁচু জায়গায় সিংহাসনে বসা তেমুজিন। প্রত্যেকটা সৈনিক তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে।

তেমুজিন আস্তে করে মাথাটা ঝোঁকালেন। সাথে সাথে প্রত্যেকটা পশুর বুকের মাঝে ফুটো করে ঢুকিয়ে দেয়া হলো খঞ্জর। নারকীয় কাতর যন্ত্রনায় প্রকম্পিত হয়ে উঠলো আশপাশ। তেমুজিনের ঠোঁটে ফুটে উঠলো ক্রুঢ় একটা হাসি।

আজকের এই আয়োজনের কারণ আছে। তাঁর প্রধান শত্রু জমুখা-কে তুলে দিতে এসেছে জমুখারই জেনারেলরা। বিষয়টা খুবই কৌতুহলদ্দীপক। কেন জমুখাকে তারই জেনারেলরা তুলে দিতে এলো, তেমুজিনের এখন জানতে ইচ্ছে করছে। থাক, আস্তে আস্তে জানলেই হবে। কৌতুহল পুষে রাখতে তেমুজিন পছন্দ করেন।

জমুখা-কে বেঁধে ফেলে রাখা হয়েছে। ঐ পশুগুলোরই মতোন। তার সামনে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে আছে জমুখার জেনারেলরা।

তেমুজিন সামনের মাঠে তাকালেন। বুক ফুটো করে প্রত্যেকটা পশুরই তাজা হৃদপিণ্ডটা বের করে আনা হয়েছে। সৈনিকেরা হাতে চাপ দিয়ে হৃদপিণ্ডের রক্ত ঝরিয়ে দিচ্ছে সদ্যমৃত পশুর গায়ে। মঙ্গোল বাহিনীর পশুবধ প্রক্রিয়া এমনই। এই পশুর মাংস দিয়েই হবে আজকের উৎসবের ভোজ।

এবার তেমুজিন তাকালেন জমুখার জেনারেলদের দিকে- কী কারণে তোমাদের সম্রাটকে বন্দী করে এনেছো?

- মহান তেমুজিন, জমুখা আপনার সাথে বহু বছর যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছেন। বেশ কয়েকবার তিনি পরাজিতও হয়েছেন। আমরা তার সাথে থাকতে আর ভরসা পাচ্ছি না। আমরা আপনার বাহিনীতে যোগ দিতে চাই।

তেমুজিন তৃপ্তির হাসি হাসলেন। প্রেমময় একটা হাসি দিলেন পাশে বসে থাকা স্ত্রী বোর্তের দিকে। নিষ্ঠুর প্রকৃতির পুরুষ তিনি, কিন্তু বোর্তেকে পাওয়া তাঁর জীবনের ভাগ্য বলে মনে করেন।

স্ত্রীর থেকে মুখ ঘোরালেন জেনারেলদের দিকে- তোমাদের এই ভরসায় আমি খুশি হয়েছি। জমুখাকে পরাজিত করার মাধ্যমে এই অঞ্চলে আমার আর কোন প্রতিদ্বন্দ্বি রইলো না। সম্ভবত পুরো পৃথিবীই একসময় আমার পদানত হবে। আমি টের পাই। আজকে থেকে আমি নিজের নাম রাখলাম চেঙ্গিস খান। সমগ্র বিশ্বের সম্রাট।

সমস্ত মঙ্গোল বাহিনী হুঙ্কার দিয়ে উঠলো- জয়, চেঙ্গিস খানের জয়।

প্রিয় পাঠক, আমরা এখন থেকে তেমুজিনকে চেঙ্গিস খান বলেই সম্বোধন করবো।

জমুখার জেনারেলরা মুখে হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তেমুজিন প্রথমে নিজেকে পুরষ্কৃত করলেন। সম্ভবত এইবার তাদের পুরষ্কৃত করবেন।

চেঙ্গিস খান বললেন- কিন্তু তোমরা যেটা করেছো, নিজের সম্রাটের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা। আমার সাম্রাজ্যে বিশ্বাসঘাতকের শাস্তি একটাই। উত্তপ্ত পানিতে সেদ্ধ করে মৃত্যু। তোমাদের সবাইকে এই মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করলাম।

জেনারেলরা হতভম্ব। এই অমোঘ দণ্ড এড়াবার ক্ষমতা তাদের নেই।

মঙ্গোলদের অভিধানে দেরী বলে কোন শব্দ নেই। সাথে সাথেই জ্বালানো হলো চুল্লি। তাতে মস্ত পিপায় গরম হতে লাগলো আগুন।

এইসব সময় চেঙ্গিস খানের একটা উল্লাস বোধ হয়। কেন হয়? পৈশাচিকতায়ই কি তাঁর আনন্দ? সম্ভবত। চেঙ্গিস খান রাজকী মঞ্চ থেকে চুল্লীর দিকে আগালেন। মৃত্যুদৃশ্য দেখার আনন্দ তিনি কাছে থেকে পেতে চান।

একেকজন জেনারেলকে টগবগ করতে থাকা পানির মধ্যে হাত-পা বেঁধে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। উৎসুক সেনাবাহিনীর প্রবল হর্ষধ্বনির মাঝে তাদের কাতর ধ্বনি হারিয়ে যাচ্ছে। চেঙ্গিস খানের প্রবল সুখানুভূতি হলো। পাশে দাঁড়ানো রাণী বোর্তের গণ্ডদেশে মমতা নিয়ে একটা চুম্বন করলেন। রাণী শিউরে উঠে চোখ বুজলেন। সম্রাট আরেকবার তৃপ্তির নিশ্বাস ফেললেন।

জমুখাকে দড়ি খুলে সামনে দাঁড় করানো হয়েছে। চেঙ্গিস খান তার চোখের দিকে তাকালেন। এই সেই জমুখা। তাঁর এক সময়ের প্রবল বন্ধু। চেঙ্গিসের স্ত্রী বোর্তেকে তাতাররা একসময় তুলে নিয়ে গিয়েছিলো। জমুখার সাহায্য নিয়েই তাকে উদ্ধার করেছিলেন। আর এখন? সময়... সময় মানুষকে কত দূরে নিয়ে যায়।

নরম সুরে চেঙ্গিস খান বললেন- তুমি আমার চরমতম শত্রু জমুখা। কিন্তু একসময় তুমি আমার বন্ধুও ছিলে। সেই বন্ধুত্বের খাতিরে তোমাকে আমি ক্ষমা করতে চাই।

জমুখা বললেন- মাফ করবে তেমুজিন। দুঃখিত, চেঙ্গিস খান। আমি ক্ষমা পেতে চাই না। তাহলে মানুষ আমাকে কাপুরুষ ভাববে। কাপুরুষের জীবন থেকে মৃত্যু ভালো।

চেঙ্গিস খান কি খুশিই হলেন? সম্ভবত। শত্রুর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নেই। জিজ্ঞেস করলেন- কীভাবে চাও তুমি মৃত্যু?

- বীরপুরুষের মৃত্যু তো একভাবেই হয়। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে মেরুদণ্ড ভেঙে মৃত্যু।

চেঙ্গিস খান মাথা দোলালেন। মৃত্যুর ধরনটা তাঁর পছন্দ হয়েছে।

সূর্য মাথার উপরে উঠে এসেছে। দুপুরের ভোজের পরেই তাহলে জমুখার মরণটা দেখা যাক। সুখের শিহরণটা মাত্রই একবার পেয়েছেন, সাথে সাথেই আবার পেলে ব্যাপারটা পানসে হয়ে যাবে।

খাদ্য পরিবেশন করা হলো প্রথমে ঘোল। উৎকৃষ্ট দইয়ের সাথে পানি মিশিয়ে এই ঘোল তৈরী করা হয়েছে। মঙ্গোল জাতি এই দিয়েই তাদের খাদ্য শুরু করে।

ধীরে ধীরে এলো চমরি গাইয়ের কাবাব। সেদ্ধ করা শুয়োরের মাংস। পাহাড়ি হরিণের মাংসের স্যুপ। বেছে বেছে অভিজাতদের সামনে পরিবেশন করা হয়েছে আস্ত ঘোড়ার রোস্ট।

চেঙ্গিস খানের সামনে পরিবেশন করা হয়েছে সদ্য বধ করা গর্ভবতী এক ঘোড়ার পেট থেকে বের করা বাচ্চা ঘোড়ার রোস্ট। পেট থেকে বের করা বাচ্চা ঘোড়ার রোস্ট চেঙ্গিস খানের খুব পছন্দ। হাড় খুব নরম। মুখে পুরলে মড়মড় করে ভেঙে যায়।

খাবার শেষে পরিবেশন করা হলো ঘোড়ার দুধ থেকে প্রক্রিয়াজাত মদ্য। এর নাম কুমিস। কুমিস পান না করলে মোঙ্গলরা খাদ্যগ্রহণ অসম্পূর্ণ মনে করে।

চেঙ্গিস খান কুমিস পান করতে করতে জমুখার মৃত্যুদৃশ্যের সুখকল্পনায় মত্ত হলেন। আচ্ছা, আবার কি তিনি পুলক অনুভব করবেন? বোর্তেকে বক্ষলগ্না করে আবার কি তিনি চুম্বন দিতে উৎসাহী হবেন? কে জানে!

কুমিসের পানপাত্রে একটা গভীর চুমুক দিয়ে চোখ খুললেন চেঙ্গিস খান- প্রিয়তমা বোর্তে, আমি তোমাকে ভালোবাসি।

 

1
$ 0.00
Sponsors of Writer
empty
empty
empty
Avatar for Writer
Written by
4 years ago

Comments