আস সালামুআলাইকুম, আজ লিখছি একটি মুভির কথা নিয়ে।
সিনেমা: No Smoking
ডিরেক্টর: অনুরাগ কাশ্যপ
অভিনয়: জন আব্রাহাম, পরেশ রাওয়াল, আয়েশা টাকিয়া
জনরা: Mystery / Psychological
IMDb: 7.2/10
পার্সোনাল রেটিং: 8/10
Life is very, very complicated and so films should be allowed to be too
-David Lynch
আমার দেখা বলিউডে একমাত্র জটিল মুভি No Smoking, যা “কে” নামের একজন চেইন স্মোকার (জন আব্রাহাম) কে নিয়ে। এই স্মোকিং এর জন্য সে তার পরিবারের সবার কাছে অপ্রিয়। এক সময় তার স্ত্রী (আয়েশা টাকিয়া) তাকে ডিভোর্স দেয়ার কথা বলে। নিরুপায় হয়ে কে একটি নিরাময় কেন্দ্রে যায়। তারপরই শুরু হয় অদ্ভুত সব ঘটনা। আস্তে আস্তে 'কে' হারিয়ে যায় বাস্তব আর কল্পনার এক জগতে। এখন আসলে কোন জগৎটি আসল, আর কোন জগৎ টি কল্পনা; তার আসল মিনিং কি; তা জানতে হলে দেখতে হবে এই অসাধারণ সাইকোলোজিক্যাল থ্রিলার মুভিটি। সিনেমায় নায়ক জন হলেও আসল হিরো ডিরেক্টর অনুরাগ নিজেই, যে এরকম মুভি বলিউডে করার সাহস দেখিয়েছে।
Movie Explanation:
(little spoiler)
প্রথমেই বলি, এই মুভি দেখে সাধারণত দুই ধরণের রিঅ্যাকশনের যে কোন একটি হবে। প্রথমটি হলো, 'কি অসাধারণ একটি মুভি দেখলাম'। আরেকটি হলো, 'কি বালের মুভি দেখলাম, মাথা-মুন্ডু কিছুই বুঝলাম না'। যাদের দ্বিতীয় টাইপের রিঅ্যাকশন হবে, তাদের জন্যই এই এক্সপ্লেইনেশন।
মেইন প্লট এক্সপ্লেইন করার আগে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে একটু বলে নেই। আমাদের সমাজে অনেকেই অনেক কিছু হতে চায়। কিন্তু সমাজ আর পরিবারের চাপে সে তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারে না। জীবনটা নিয়মের বেড়াজালে পড়ে মানুষ এক যন্ত্র হয়ে যায়, যার নিজের আত্মার ইচ্ছের কোন মূল্যই নেই। এই রকম একটি কন্সেপ্টকেই মেটাফোরের মাধ্যমে দেখিয়েছে ডিরেক্টর কাশ্যপ।
এখন মুভির টাইমলাইনটা একটু লক্ষ্য করা যাক। 'কে' -একজন ডোন্ট কেয়ার টাইপের মানুষ। তার এই ধূমপানের জন্য অনেকের কাছে সে অপছন্দের। তার ভাইয়ের একটি ফুসফুস নষ্ট। এদিকে তার স্ত্রী তাকে এক ধূমপান নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে যায় এবং ডাক্তার তার কাছ থেকে এক টাকা দাবি করে, কিন্তু তার কাছে তখন টাকা থাকে না। এর পরেই সে একটি বিশাল স্বপ্ন দেখে, আর মুভির কনফিউসিং প্লট এখান থেকেই শুরু।
মুভির কনফিউসিং প্লটের এক্সপ্লেনেশনঃ
সাইবেরিয়াঃ
সাইবেরিয়া মূলত একনায়কতন্ত্র দ্বারা পরিচালিত রাশিয়ার একটি অঙ্গরাজ্য। এখানে 'কে' বন্দিদশা থেকে মুক্তি চায়। আর বাইরে গিয়ে দুইটি জিনিস পায়, সিগারেটের প্যাকেট আর বাথটাব। এখানে সিগারেট দ্বারা তার আত্মার ইচ্ছা আর বাথটাব দিয়ে সমাজের ইচ্ছা বোঝানো হয়েছে। যখনই সে সিগারেটের প্যাকেট বেছে নেয়, তখনই দেখা যায় রাশিয়ান মিলিটারি তাকে গুলি করে, অর্থাৎ সমাজ তাকে মেরে ফেলে।
বউ / সেক্রেটারিঃ
'কে' -এর সেক্রেটারি, বউ একই মেয়ে। একবার সেই মেয়ে 'কে' -এর বউ থাকে, আবার কখনো সে অফিসের সেক্রেটারি। এটা কিভাবে সম্ভব? মুলত সেক্রেটারি হলো 'কে' -এর সাবকনশান্স মাইন্ড দ্বারা সৃষ্টি। সে আসলে যেভাবে তার সেক্রেটারিকে চায়, সেভাবেই সপ্নে সে দেখে।
ভাইয়ের সুইসাইডঃ
'কে' মনে করে যে তার ভাই এর অসুস্থতার জন্য সে নিজে দায়ী। তাই সে স্বপ্নে তার ভাইকে মেরে ফেলার জন্য নিজেকে দায়ী করে।
কাঁটা আঙ্গুলঃ
'কে' বুঝতে পারে যে তার বাজে স্বভাবের কারণে সবার ক্ষতি হচ্ছে। তাই তার আত্মার ইচ্ছা, মানে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দেয়। আর যে দুটি আঙ্গুল কাটা, সেই আঙ্গুল দিয়েই সে সিগারেট খেত। আর কেউ যখন সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দেয়, কিন্তু বাকিদের সিগারেট খাওয়া দেখে, তখন মনে হয় কি যেন মিসিং। তাই যখন সে তার বন্ধুদেরও সিগারেট খাওয়া (আত্মার ইচ্ছা নষ্ট করা) ছাড়াতে পারে, তখন দেখা যায় সে তার কাটা আঙ্গুল ফিরে পেয়েছে।
প্রিজন সিনঃ
মুভির রিয়েল টাইমে একসময় 'কে' দেখতে পায়, তার স্ত্রী Schindler’s List -মুভি দেখছে। সেই মুভির প্রিজন সিন তার মাথায় গেথে যায়। পরে সে স্বপ্নে কল্পনা করে, প্রিজন এমন এক জায়গা যেখানে তাদের সবার আত্মার ইচ্ছেকে বন্দি করে রাখা হয়।
বাথটাবঃ
আগেই বলেছি যে বাথটাব সমাজের প্রতিচ্ছবি। যখন সে সাইবেরিয়াতে বাথটাব বেছে নেয়, তখন সে আসলে তার আত্মার ইচ্ছাকে মেরে ফেলে। তার ফলেই আত্মা প্রিজনে যায় আর পরবর্তীতে পুড়ে যায়। তার পরেই সে ঘুম থেকে উঠে দেখে তার দুই আঙ্গুল কাটা, মানে সে তার আত্মার ইচ্ছা তথা স্মোকিং ছেড়ে দিয়েছে।
বাবা বাঙালিঃ
বাবা বাঙালি (পরেশ রাওয়াল) একজন ডাক্তার যাকে 'কে' স্বপ্নে বাবার রূপ দেয়, এই চরিত্র দ্বারা কাশ্যপ আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে বুঝিয়েছে, যা সবসময় আমাদের নিয়মের ভিতরে চলতে সাহায্য করে। এই ক্যারেক্টর দিয়ে সিনেমার সেন্সর বোর্ড আর টোটালিটারিয়ান সরকারকে বুঝিয়েছেন। টোটালিটারিয়ান সরকার বলতে এমন এক সর্বগ্রাসী রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে বোঝায়, যেখানে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী দলের স্থান নেই।
(চেনা লাগছে কি? লাগলে চুপ থাকেন, বেশি আলাপের দরকার নাই উগান্ডাকে নিয়ে 😉)
এক টাকার কয়েনঃ
আমরা অনেক সময়ই জীবনে ছোটখাট ভুল করি, যার জন্য পরে পস্তাতে হয়। এখানে রিয়েল লাইফে সে ডাক্তারকে এক টাকার কয়েন দেয়নি, যার জন্য স্বপ্নে সে তার ফল ভোগ করা দেখেছে।
আশা করি আপনাদের ভালো লেগেছে।
Please don't forget to like, comment & subscribe.
Thank you...
I've not watched this movie. Any way, different article & good one