দেড় লক্ষ বছর আগের রহস্যময় পাইপ বা চৈনিক রহস্যের উপর কিঞ্চিৎ আলাপ -পর্ব এক

0 8
Avatar for Tazim21
4 years ago

প্রথমে এই প্রতিবেদনটি পড়ার পরে প্রথমে ধাক্কা খেয়েছিলাম। কেন ? প্রথম পর্বে এই ধাক্কা নিয়ে কথা বলছি আর পরের পর্বে এর রহস্যভেদ নিয়ে কথা বলবো। এর আগে একটি বিষয় নিয়ে জানলাম তা বলি। ওপার্ট (Oopart বা out of place artifact) বলে একটি শব্দ আছে যার মানে হলো প্রত্নতাত্বিক /ঐতিহাসিক বস্তু বা নিদর্শন যা ওই সময়ের না ,আরো আগের বলে ধারণা করা কোনো কিছু। একটু খটকা লাগছে ? এর মানে হলো মানুষ যে সময়ে যা করেছে তার থেকে অনেক এগিয়ে থাকা কিছু। যেমন ধরুন ,আপনি মধ্যযুগের বা তার আরো আগে যদি কোন বৈদ্যুতিক বাল্ব অথবা ধরুন কোন আজকের মোবাইল ফোন ইত্যাদির নমুনা পান তবে কি করবেন ? প্রথমেই তো বিস্ময়ে কি হবে তা আর বললাম না এরপরে ? ইতিহাস থেকে বাকি মানব ইতিহাস আবার নতুন করে লেখার উপক্রম হবে। এই ধরণের দাবি বাজারে প্রচুর আছে এবং এর উপরে আমাদের এক বড় সংখ্যক মানুষ গোটা পৃথিবী জুড়ে মনে করেন ভিনগ্রহীর সৃষ্টি আবার কেউ কেউ আরো একটু এগিয়ে ভাবেন উন্নত সব সভ্যতার আগেই ছিল আমরা জানি না । ব্যক্তিগত ভাবে যাই মনে করি তাতে কিছু আসে যায় না কারণ যুক্তি আর তথ্য নিয়ে মানে আরো সোজা কথায় বিজ্ঞানের ভিতের উপরে তা নির্নয় করা হবেই। যাই হোক , এই সব কথা রেখে এই পর্বে এই রহস্যের রোমাঞ্চ তুলে ধরছি। পরের পর্ব হবে অন্য কিছু।

এই ওপার্টস (Ooparts) বস্তুটি যতবার মানুষের কাছে উঠে এসেছে ততবার বিজ্ঞানবিদ বা যুক্তির পথে চলা মানুষদের কাজ একটু বেড়েছে। কারণ অবশ্যই এই ধরণের বস্তু গুলোর উপরে আমাদের অগাধ আস্থা আর পেলেই খাই গোছের একটা মানসিকতা। যাই হোক আসুন এই চমক নিয়ে জানি।

এমনিতেই পৃথিবীর নানান প্রান্তে পিরামিড জাতীয় বস্তুর রহস্য আমাদের প্রচুর আকর্ষিত করে এর মধ্যে গত ২০০০ সালের কিছু পরে পৃথিবীর মানুষের কাছে খবর আসে চিনে একই ধরণের কিছু নিদর্শন আর তার অতীব রহস্যের বিষয়। দেশটির তিব্বতের এক প্রান্তে কুইংহাই প্রদেশে একটি প্রাকৃতিক অথবা অপ্রাকৃতিক কোনো ওই ধরণের স্থাপনা থাকার কথা আর বাইগ্যং বলে একটি পাহাড়ের পাশে তিনটি গুহার মধ্যে কিছু পাইপ বা নল থাকার কথা জানা যায়। এই নলগুলো গুহা থেকে চলে গিয়েছিল পাশের একটি নোনা জলের হ্রদের দিকে। একই সাথে এই হ্রদের মধ্যে আবার বাইরে এর তীরে ও পাওয়া গিয়েছিল।এই নল বা পাইপ আকৃতির বস্তু গুলো নানান মাপের। কিছু খড়কে কাঠির আবার কিছু সাধারণ মাপের মতো। এই গুলো ওই গুহার মাঝেরটির মধ্যেই এই গুলো পাওয়া গিয়েছিল।বাকি গুলো তে ? ওই গুলো প্রাকৃতিক নানান কারণে ধ্বসে অগম্য এবং বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর ভিতরের কিছু দেখা যায় নি।

বহুদিন ধরেই এই জায়গাটি চীনের ওই অঞ্চলের মানুষের কাছে রহস্যময় একটি জায়গা বা আরো নির্দিষ্ট করে বললে কোনো উচ্চমানের সভ্যতার বিচরণ ভূমি হিসেবে ধারণা করা হতো। এরই সুবাদে ২০০২ সালে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চীনের একটি গবেষক দল সর্বপ্রথম বৈজ্ঞানিক ভাবে এই বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করতে ওই জায়গায় যায়।চীনের নিজস্ব খবর বা নানান প্রসঙ্গে আপনি বাইরের কোনো মাধ্যম তো সে ভাবে পাবেন না ,তাই নির্ভর করতে হয় এবং তখন ও হয়েছে জিনহুয়া বলে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রিত সংবাদ মাধ্যমের উপরে।

এই সংবাদ সংস্থার সূত্র ধরে দেখতে পাই নয়জনের একটি দল দীর্ধদিনের এই রহস্যের বিষয়টি জানতে ওই দিকে গিয়েছিল। প্রাসঙ্গিক একটি মানচিত্র রাখলাম তাতে অবস্থানের একটা আন্দাজ পাবেন। এই জায়গাটি চীনের একটি জনবিরল ডেলিংগার থেকে এটি ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কথিত ওই পিরামিড বা পাহাড়ের মতো একটি বস্তুর ঠিক পাশে দুটি জোড়া হ্রদ আছে যাদের লাভার্স লেক বলা হয়। এর একটি মিষ্টি জলের আর অন্যটি নোনা জলের। এই তথাকথিত ভিনগ্রহীর তৈরী স্থাপনা ইত্যাদির জায়গাটি ওই নোনা হ্রদের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত অনেকটাই পঞ্চাশ /ষাট মিটার উঁচু একটি ঢিপি।এর সামনে আছে তিনটি গুহা যার মুখ গুলো তিনকোনা ধাঁচের। মাঝের গুহাটি সব চেয়ে বড় আর এর ভূতল সমতল জমির থেকে দু মিটার উঁচুতে। এই গুহার উপর থেকে নেমে এসেছে তথাকথিত একটি পাইপ বা নল আর নিচে মানে মাটিতে ঢুকে গিয়েছে আরো একটি।দুটো ই মাটির উপরে বলে স্পষ্ট ভাবেই দৃশ্যমান হয়। একই সাথে গুহার উপরে বেশ কয়েক ডজন নানান মাপের কথিত পাইপ বা নল পাহাড়ের দিকে চলে গিয়েছে। প্রত্যেকটি এই ধরণের পাইপ লালচে বাদামি রঙের ঠিক যেরকম রঙ ওই আশেপাশের পাথরগুলোর।

এই দলে বিবিধ মতামত থাকলেও বা প্রাকৃতিক কারণে এর সৃষ্টি বললেও একজন গবেষক মানে চৈনিক এক গবেষক ইয়াং জি এই জিনহুয়ার কাছে দাবি করে যে এই পিরামিড বা এই নানান বস্তু উন্নত কোন সভ্যতার সৃষ্টি। এর জন্য ভিনগ্রহীর থাকার কথাও সে উড়িয়ে দেয় নি। তার মতে এই বস্তুর বা নিদর্শনের উপরে বৈজ্ঞানিক গবেষণা করা অতীব জরুরি ,এতে উঠে আসতে পারে এই উন্নত সভ্যতার ছোঁয়া থাকা বা না থাকা। পাঠক , এই কথা গুলো একটু মাথায় রাখুন পরে এই প্রসঙ্গ আবার আসবে।

এরপরে এই ভিনগ্রহী তত্বের বিশ্বাসী বা আগের উন্নত সভ্যতা ইত্যাদি বিষয়ে সরব হওয়া মানুষ থেকে এই বিষয়ে আস্থা না রাখা পক্ষ সবাই নড়েচড়ে বসে। একই সাথে এই গবেষকদের একাংশ এবং এই লোকটি দাবি করে যে অত্যাশ্চর্য কোনো প্রযুক্তির কারবার এই জায়গায় হচ্ছে কি না তার একটা সরেজমিনে পরীক্ষা করা দরকার। আরো কি বলা হয় ? এই জায়গায় আসল চমক। চৈনিক সংবাদসূত্র জিনহুয়া এই দলের সূত্র উল্লেখ করে আবার জানায় যে ওই পাইপ জাতীয় বস্তুগুলোর বয়েস প্রায় দেড় লক্ষ বছর !! আশা করি এবার পাঠক একটু নড়ে চড়ে বসবেন। আর যাঁরা মানব ইতিহাস নিয়ে সম্যক অবগত তাঁরা প্রথমে হেসে উঠবেন কারন মানুষ তো সভ্য হতে শুরু করেছে স্রেফ হাজার কুড়ি বছর আগে থেকে ,আবার ওই সময়তে ও স্রেফ পাথরের আর আরো পরে মানে হাজার পাঁচেক বছর আগে পর্যন্ত তো ব্রোঞ্জ ইত্যাদির ব্যবহার করেছে। তাঁদের জন্য ও চমক হলো এক শ্রেণীর গবেষক দাবি করেছিল এই নল গুলো যা পাওয়া গিয়েছে তা লোহার তৈরী !

লোহার পাইপ দেড় লাখ বছর আগের ! কিমাশ্চর্য্যম ! আরো প্যাঁচ হলো ওই অঞ্চলে মানুষের বসবাস বা বিচরণ স্রেফ হাজার তিরিশেক বছর আগের থেকে। আবার এই সময়ে গোটা দুনিয়ার বাকি মানুষের মতোই এই মানুষ জাতীয় জীবরা ভ্রাম্যমান ছিল তাই পাইপ বানানো একটু বেশি রঙিন হয় যে ! যেহেতু একটি মূলধারার গবেষক এই দাবি করেছিলেন তাই বিষয়টি তো ভাবার বিষয়। এক দিকে মঙ্গোলিয়ার সীমান্ত আবার অন্যদিকে চিররহস্যময় তিব্বতের মহিমা আর আগের নানান কল্পনায় এই রহস্যময় কোনো সভ্যতার কথা নিয়ে বিষয় বেশ নতুন ধরণের একটি রহস্যের দরজা খুলে দিলো। এর সাথে কল্পনার পাখা মেলে দিলো নানান প্রশ্নের মাধ্যমে। এই জায়গাটির দুটি হ্রদে কেন নোনা জলের সাথেই ওই নল গুলো এলো এই প্রশ্ন তো উঠে এলো আরো বলা হলো উচ্চ ভূমির একটি প্রাকৃতিক অবস্থান বা বায়ুমন্ডল পাতলা থাকা মহাকাশযানের ওঠা নামার জন্য আদর্শ একটি জায়গা বলে প্রচার ও করা হলো। আরো সোজাসুজি বললে এটি ওই উন্নত সভ্যতার জীবদের একটি রকেট বা মহাকাশযান লন্চিং প্যাড বলে অবিহিত করা শুরু হলো।

এই জিনহুয়ার বর্ননা অনুযায়ী বা দেওয়া ছবি ধরে দেখা গেলো উপরে বলা নানান মাপের এই সব পাইপ বা নল গুলো হ্রদের তীরে ছড়িয়ে আছে আর সঙ্গে পাথরের নানান অদ্ভুত রূপ ধরে থাকা একটা রূপ ও দেখা গেলো। কিছু নল আবার হ্রদের ভিতরে ঢুকে যাওয়ার ও নমুনা দেখা গেলো।

একে তো এই জায়গা আগেই অনেকের কাছে আদর্শ একটি মহাকাশ যান উৎক্ষেপণের জায়গা বলে ধারণা করা হয়েছিল এর উপরে এই জায়গার থেকে স্রেফ সত্তর কিলোমিটার দূরে চীনের একটি মানমন্দির মানে মহাকাশ নিরীক্ষণ কেন্দ্র তৈরী করা আরো বেশি করে এই রহস্য বা ভিনগ্রহী ইত্যাদি থাকার ধারণা পোক্ত করে দিলো। ধরে নেওয়াই হলো গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এই বিষয়েই নজরদারি করতে বা নিরীক্ষা চালাতে চৈনিক কর্তৃপক্ষ এই মানমন্দির তৈরী করেছে।

পাইপ কেন এতো আগ্রহের বিষয় ?

স্রেফ কার্বন বিকিরণে এর বয়েস নির্ণয়ের দাবি না , এই নল গুলোর স্থানীয় পর্যায়ের বিশ্লেষণের যে খবর জিনহুয়া দিয়েছে তা ও চোখ কপালে তোলার মতো বিষয়। এই গুলোর মধ্যে ৮ শতাংশ বস্তু কি তা নাকি ধরা যাচ্ছে না। এছাড়া একই সাথে স্থানীয় প্রশাসন কে সূত্র করে জিনহুয়া বললো এই পাইপ বা নল গুলো স্থানীয় পর্যায়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং এর ৮ শতাংশ বস্তু কি তা ধরা যাচ্ছে না। বাকি বস্তুর মধ্যে ফেরিক অক্সাইড , সিলিকন অক্সাইড বা ক্যালসিয়াম অক্সাইড এর উপস্থিতি আছে বলে জানানো হলো। সিলিকন ডাইঅক্সাইড আর ক্যালসিয়াম অক্সাইড দীর্ঘকাল লোহা আর আশেপাশের বেলেপাথরের এক সাথে থাকার ফলে তৈরী হয়। এর ফলে লোহার উপস্থিতি এবং সময়ের প্রাচীনতা অন্য ভাবেও প্রমাণিত হয়।

এর জটিলতা আরো বেড়ে যায় যখন এই নয় জনের দলের এক ভূমিকম্প বিষয়ক প্রশাসক জেঙ জিয়াডং ২০০৭ সালে এই নল বা পাইপ এর একটি অংশ কে উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয় পদার্থের সংস্পর্শে এসেছিল দাবি করেন। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো তেজস্ক্রিয় বস্তুর সাথে সংস্পর্শে আসা কোনো অন্য বস্তুর উপরে প্রভাব থেকে যায় হাজার হাজার বছর। প্রশ্ন ওঠে তবে কি এই নল গুলো তেজস্ক্রিয় কোন বস্তু পরিবহনের জন্য প্রাচীন কোন সভ্যতা বা এই ভিনগ্রহী কোনো প্রাণীর দল ব্যবহার করতো ?

নল গুলো ফাঁপা হওয়ার বদলে নিরেট মানে ভরাট থাকার কারণ হিসেবে ভূগর্ভের লোহা আর ম্যাগমা পরে উঠে এসে এই কাজ করেছিল বলে দাবি ও করা হয়। এর সাথে ওই পিরামিড আকৃতির এই জায়গা বা তিনটি গুহার আকৃতি ইত্যাদি আরো রহস্য বাড়িয়ে দিয়েছিল। একই সাথে এই পিরামিড আকৃতির বস্তু ঠিক কি ভাবে তৈরী হলো তাই নিয়েও প্রশ্ন উঠে গেলো।

যে প্রশ্ন গুলো উঠে এসেছিল তার মধ্যে সব থেকে বড় প্রশ্ন হয়েছিল এই দেড় লক্ষ বছর বা এর আশেপাশের সময়ে পাইপ বা নল এলো কি ভাবে ? তবে কি আমাদের বৈজ্ঞানিক নানান দাবি বা মানুষের ইতিহাসের ধারা কে আমরা ভুল ভেবেছি ? সত্যিই কি গ্রহান্তরের জীব এসেছিল এই পৃথিবীতে ? নানান কীর্তির স্বাক্ষর রেখেছে কি ?

এর উত্তর দেবো পরের মানে দ্বিতীয় বা শেষ পর্বে তার আগে আরো একটা চা পানের বিরতি।

তথ্যসূত্র :

১. এই রহস্যের সূত্রপাত করা চৈনিক কাগজ , আজকে আর মূল জায়গায় পাবেন না তবে অন্তর্জাল সব ধরে রাখে [https://web.archive.org/web/20071217230233/http://news.xinhuanet.com/english/2002-06/19/content_448113.htm](https://web.archive.org/web/20071217230233/http:/news.xinhuanet.com/english/2002-06/19/content_448113.htm)

২. একটু সবার চেনা উইকিপিডিয়া থেকে [https://en.wikipedia.org/wiki/Baigong_pipes](https://en.wikipedia.org/wiki/Baigong_pipes)

3. রহস্যের জমজমাট একটা পটভূমি তৈরী করেছিল চৈনিক আরো একটি সূত্র ,যথারীতি এটি ও আজকে মূল সাইটে নেই [https://web.archive.org/web/20150729071602/http://tech.sina.com.cn/other/2003-10-13/1656243360.shtml](https://web.archive.org/web/20150729071602/http:/tech.sina.com.cn/other/2003-10-13/1656243360.shtml)

৪. একই ভাবে বহির্বিশ্বের একটি মাধ্যম ওই সময়ে এই খবর কে পুঁজি করেছিল , যথারীতি , 'আজি তাঁর চিহ্ন মাত্র নাই ' তাই অন্য ভাবেই বের করতে হয় [https://web.archive.org/web/20160318132149/http://www.ourstrangeplanet.com/the-baigong-pipes-nature-or-aliens/](https://web.archive.org/web/20160318132149/http:/www.ourstrangeplanet.com/the-baigong-pipes-nature-or-aliens/)

Sponsors of Tazim21
empty
empty
empty

1
$ 0.01
$ 0.01 from @Sunny1234
Sponsors of Tazim21
empty
empty
empty
Avatar for Tazim21
4 years ago

Comments