১৪ বছর ৭ মাস ১৯ দিন।
এতগুলো দিন পরে আমি ফিরে এসেছি। খিড়কির দোরে দাঁড়িয়ে আছি।
চারপাশটা কেমন যেন অচেনা হয়ে গিয়েছে। শুধু চেনা সেই বাড়িটা আগের মতই তার জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।
বাড়িটা দেখেই এক নিমিশের মধ্যে চোখের উপর কত কথা মনে পড়ে গেল। এইতো উত্তরের ঘরটা আমার ছিল। জানালাটা বন্ধ...নইলে উঁকি দিলে বোধ করি ছাদ থেকে নেমে আসা সেই সৌর বিদ্যুতের তারটা দেখতে পেতাম। কত স্মৃতি, কত গল্প সব একদিন আমি উপেক্ষা করেছিলাম ভাবতেই এক মিশ্র অনুভুতি হল।
এখন ভাবলে মনে হয় বেশ তো ছিলাম। তাহলে এমন কেন হল?
আসলে আমিই আর পারছিলাম না নিম্ন মধ্যবিত্ত হয়ে বেঁচে থাকতে। তাই এক অন্ধকার রাতে বাবা- মা, বোনগুলো কাউকে কিছু না বলেই বেরিয়ে পরেছিলাম......কোন এক অজানায় এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সন্ধানে।
আজ এত গুলো বছর পর আমি এসেছি এই দীন পরিবারের কাছে......একজন সফল মানুষ হয়ে।
হ্যাঁ সফল মানুষ। চোখের পলকে ভেনিস থেকে চট্টগ্রামে আসা আমার কাছে কোন বড় ব্যাপার না। অনেক আগেই সেই ক্ষমতা অর্জন করেছি।
তবে আজ কেন এলাম?
সাহসের অভাবে......
হয়ত সবাই ধরে নিয়েছে আমি মারা গিয়েছি, এত দিনের মৃত মানুষকে হঠাৎ চোখের সামনে দেখলে তারা তাকে গ্রহণ করবে নাকি দূরে ঠেলে দিবে এই সংশয় আমার অতিমাত্রায় বিলম্বের কারণ।
সব কিছুকে উপেক্ষা করে যখন খিড়কিতে দাঁড়িয়ে আছি তখন বার বারই আর এক ভয়ংকর অনুভুতি আমাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে।
বাবা-মায়ের কালো চুল গুলো কি পেকে গিয়েছে? সব পেকে গিয়েছে? তারা কতটা বুড়ো হয়েছে? তারা কেমন আছে? সেই দীন পরিবার আমাকে ছাড়া কেমনভাবে দিন কাটাচ্ছে?
জানিনা যে ভাবনা গুলো কখনো ভাবিনি আজ এত কাছে এসে হঠাৎ করে সেগুলোই কেন আমাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।
আমি জানিনা খিড়কি থেকেই প্রস্থান ঘটবে আমার নাকি সান্ধ্য ভ্রমণের সেই অভ্যাসের দরুন মা আমাকে দেখে ফেলবে।
আচ্ছা মা কি আমাকে চিনতে পারবে?......
nothing to say