তেরশ বছর আগের কথা

2 12
Avatar for Syeda
Written by
4 years ago

মদীনার বাজার। পড়ন্ত বিকেলে একজন খদ্দের এসে দাড়ালেন একজন সাহাবার দোকানে। একটা পণ্যের দাম শুনে কিনতে সম্মত হলেন ক্রেতা। কিন্তু তাকে আশ্চর্য করে দিয়ে সাহাবা দূরের আরেকটি দোকান দেখিয়ে বললেন পণ্যটি সেখান থেকে কিনতে। দাম একই, জিনিসও একই।

আপনি যদি ব্যবসায়েরছাত্র হন তাহলে লাফিয়ে উঠে বলবেন এই জন্যই ইহুদিরা সারা দুনিয়া নিয়ন্ত্রণ করে; মুসলিমরা ব্যবসা বুঝেই না। খদ্দের মানে হাতের লক্ষী। হাতের লক্ষী কেউ পায়ে ঠেলে? আপনি যদি ঝানু ব্যবসায়ী হন তাহলে বলবেন দুই ক্ষেত্রে খদ্দেরকে প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে পাঠানো যায়: যদি ক্রেতা বেশি খুঁতখুঁতে হয় আর যদি ক্রেতা ঠিক যা চাইছে সেটা আমার কাছে না থাকে। কিন্তু এছাড়া ক্রেতাকে ফিরিয়ে দেওয়া মানে ব্যবসায় লাল বাতি জ্বলা।

যাহোক, আমাদের ঘটনার ক্রেতাও হয়ত এসব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে গেলেন অন্য দোকানটায়। পণ্যটা কিনে ফেরতআসলেন প্রথম দোকানে। সাহাবা তখন অন্য আরেকজন খদ্দেরের সাথে কথা বলছেন। এটাই আল্লাহর বিধান—যত টাকার বিক্রি হওয়ার কথা ছিল, তত টাকার বিক্রি হবেই। এটা আল্লাহর দেওয়া রিযক্‌। যা আসার কথা ছিলো তা আসবেই। মাঝখান থেকে আমাদের পরীক্ষা হবে—সেই রিযক্‌ টাপেতে গিয়ে আমরা কী হালালে সন্তুষ্ট থাকলাম নাকি হারামের ডুবে গেলাম।

সাহাবা জিজ্ঞেস করলেন ক্রেতাকে, ‘পাওনি তোমার জিনিস?’

– পেয়েছি, কিন্তু আমি অন্য একটা জিনিসের জন্য এসেছি।

– কী?

– তুমি যার কাছে আমাকে পাঠিয়েছিলে সে আমারই ধর্মের মানুষ—ইহুদি। আমরা তোমাদেরপছন্দ করি না। কিন্তু তুমি একজন ব্যবসায়ী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে আমাকে পাঠালে,মুসলিম হয়ে একজন ইহুদিকে ব্যবসার সুযোগ করে দিলে? কেন?

– কারণ আল্লাহ আমাকে আজকের মত যথেষ্ট রিযক্‌ দিয়েছেন। আর ও বেচারা সকাল থেকে বসে আছে–আজ কোন বিক্রিই হয়নি ওর। তারও তো পরিবার আছে। একজন খদ্দের পেলেও তার ন্যুনতম চাহিদাটুকু হয়ত মিটবে।

ক্রেতাটি হতবাক হয়ে ভাবল—যে ধর্ম মানুষের কল্যাণের কথা এভাবে মানুষকে ভাবতে শেখায় সেটা সত্য বই মিথ্যা হতে পারে না। প ণ্যকিনতে এসে ইহুদি ব্যক্তিটি জান্নাত কিনে নিয়ে চলে গেল।

ইসলাম কিন্তু এভাবেই পৃথিবীতে ছড়িয়েছে। তাত্ত্বিক আলোচনার মাধ্যমে না, জীবনে প্রতিফলনের মাধ্যমে।

সাহাবারা হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের ছাত্র ছিলেন না, তারা রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাসজিদে নববীর ছাত্র ছিলেন। তাদের অভিধানে মনোপলি, কম্পিটিটর, গ্রোথ কার্ভের মতো কঠিন সব ধারণা ছিলোনা। তারা এই পৃথিবীতে আল্লাহর দেওয়া রিযক্‌ তারা বান্দাদের সাথে ভাগ করে নিতেন। তারা দু’হাত উপুড় করে মানুষকে দিতেন, কারো কাছে ব্যক্তিগত প্রয়োজন মেটাতে হাত পেতে ভিক্ষে মাঙতেন না। শোষণ-লুন্ঠন-প্রবঞ্চনা-প্রপঞ্চনা তো দূরের কথা।

এই ইসলাম মানা, একে সমাজে পুর্নপ্রতিষ্ঠা করে ন্যায়বিচার ফিরিয়ে আনা যদি মধ্যযুগে প্রত্যাবর্তন হয়, তেরশ বছর পিছু হাঁটা হয়তাহলে মন্দ কী? যারা এই যুগের মাৎসন্যায় থেকে ছিঁটে-ফোটা ভাগ পেয়ে সুখে আছে বলে ভাবছে তাদের জন্য ইসলাম কষ্টকর হবে। কিন্তু ইসলামী শরিয়াহ মেনে নেওয়াতে দেশের সিংহভাগমানুষের জন্য মঙ্গলকর। মুখে গণতন্ত্রের কথা বললাম কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠের মঙ্গল চাইলাম না এটা কী মুনাফিকি নয়? ইসলামী শরিয়াহ বাঘের গুহা নয়—সাম্যতা আর ন্যায়বিচারের বিধান। ইসলাম মেনে ব্যবসা করলে সবাই উপকৃত হবে। ইসলামি আইনে বিচারকরলে মানুষ ইনসাফ পাবে। ইসলাম অনুযায়ী দেশ চালালে কেউ আঙুল ফুলে কলাগাছ হতে না পারলেও সবার ঘরে খাবার থাকবে। অন্তত ক্ষুধার জ্বালায় কাউকে আত্মহত্যা করতে হবে না।ইসলামের আগমনে কলাগাছওয়ালারা বেজার হবে। ইসলাম ঠেকাতে তারা আমাদের ভুল বোঝাবে—কিন্তু আমাদের কল্যাণের জন্যই আমাদের চোখ খোলা দরকার। ইসলাম সম্পর্কে জানা দরকার। ইসলাম মেনে নেওয়া দরকার।

আল্লাহ ক্ষুধা-তৃষ্ণার উর্ধ্বে। পাথরের দেবতার মতো তিনি ভোগ চান না। মানুষ কাজ করে তাকে খাওয়াবে সে সুযোগই নেই। আল্লাহচান মানুষ যেন পৃথিবীতে ভালো থাকে। সেজন্যই ইসলামী শরিয়াহ তাদের কাছে পাঠিয়েছেন।আমরা এই সহজ সত্যটা যত তাড়াতাড়ি বুঝব ততই মঙ্গল।

3
$ 0.00
Avatar for Syeda
Written by
4 years ago

Comments

খুবই সুন্দর একটা কাহীনি। খুবই ভালো লাগলো। একটু পড়েই বাদ দিতে চেয়েছিলাম কিন্ত পড়ে এতো ভালো লাগলো যে পুরাটাই পরছি। আপনার গল্প টা অনেক পছন্দ হয়েছে অনেক ভালো লাগছে

$ 0.00
4 years ago

Interesting story , I never seen this kind of story. I like your story with this beautiful Article. Thanks for sharing us...

$ 0.00
4 years ago