"ডিম থেরাপি'র" অন্য পদ্ধতি ➡️ হোয়াইট রুম টর্চার(রিমান্ড)

31 36
Avatar for Suvankar
4 years ago

হোয়াইট রুম টর্চার: যেখানে চরম মানসিক শাস্তি


রিমান্ড’ এই শব্দটা শুনলেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। সাধারণত আমাদের দেশে অপরাধীদের শাস্তি বা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এই ধরনের ব্যবস্থা করা হয়। এর শাব্দিক অর্থ ‘তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আদালত থেকে হাজতে পাঠানো’। তবে এই তদন্ত/জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে নানামহলে নানান রকম কথা প্রচলিত আছে।

অনেকেই এটিকে বর্ণনা করতে গিয়ে বেতের আঘাত, পানিতে চুবানো, ডিম থেরাপি সহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন। ব্যাপারটা এমন যে, বিভিন্ন দেশে অপরাধীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় যথেষ্টরকম শারীরিক শাস্তি দেয়া হয়, যেগুলো সহ্য করতে না পেরে অপরাধী তার অপরাধগুলো স্বীকার করে নেয়।

এখন কথা হচ্ছে, পৃথিবীর সমস্ত দেশেই কি অপরাধীদেরকে শুধুমাত্র শারীরিক শাস্তিই দেয়া হয়?

উত্তর হচ্ছে> না। 

আজকে এমন এক শাস্তির কথা বলবো যেখানে কোনোরূপ শারীরিক নির্যাতন করা হয় না। বরং আপনাকে সময়মতো খাবার দাবারও দেয়া হবে, একইসাথে থাকার জন্য একটা জায়গাও।

নিশ্চয়ই ভাবছেন এটা তাহলে কোনো শাস্তি হলো ?

ধবধবে সাদা রুম


এবার আসি আসল কথায়, এই বিশেষ ধরনের শাস্তিটির নাম ‘হোয়াইট টর্চার’ বা ‘হোয়াইট রুম টর্চার’

বর্তমান সময়ে পৃথিবীর জঘন্যতম দশটি শাস্তির মধ্যে এটি একটি। গত কয়েক দশক আগে থেকে শুরু হয়ে এখন অব্দি এটি চলছে ইরান, আয়ারল্যান্ড, আমেরিকা, ভেনিজুয়েলা এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশে।

এটি মূলত একধরনের মানসিক শাস্তি। অনেক অপরাধী আছেন যারা ভীষণ সাহসী, শারীরিক শাস্তির তোয়াক্কা করেন না; তাদের জন্য এই বিশেষ ব্যবস্থা। যাতে তাদের মধ্যে ভয় তৈরি হয়।

প্রথমত আপনাকে একটি সম্পূর্ণ আলাদা রুমে নেয়া হবে যেটি থাকবে সাউন্ডপ্রুফ মানে আপনার রুমে বাইরের কোনো শব্দ আসবেনা এবং ভেতর থেকে কোনো শব্দও বাইরে যাবে না।

এখন আসি রুমের বৈশিষ্ট্যে: ধবধবে সাদা রঙের একটা রুম, ফ্লোর একদম সমতল এবং সাদা রঙের; দেয়াল সাদা রঙের, মাথার উপরের ছাদও সাদা। রুমে ২৪ঘন্টা সাদা আলো জ্বলবে এবং খুব বিশেষায়িতভাবে লাইটটি সেট করা থাকবে যাতে করে রুমের কোত্থাও বিন্দুমাত্র ছায়াও না পড়ে।

রুমের সকল ব্যবহার্য দ্রব্যাদি সব সাদা


কোনো প্রকার জানালা থাকবে না, থাকলেও কয়েক মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের ফাঁকা, আর সেখান থেকেও তাকানো যাবে না কারণ বাইরে পুরু নেটের আস্তরণ।

এরপর আসি অন্যান্য জিনিসপত্রে; আপনার পোষাক পুরোটাই ধবধবে সাদা, বিছানা, বালিশ, বেডশিট ধবধবে সাদা।

ডাইনিং টেবিল (সাদা)


আপনি টয়লেটে যাবেন, টয়লেটের দরজার নিচ থেকে আপনাকে টিস্যু দেয়া হবে; যার রঙও থাকবে সাদা।

খাবার হিসেবে আপনি পাবেন কেবল ভাত, যেটিও সাদা বর্ণেরই। যে প্লেট এ করে দেয়া হবে সেটাও সাদা রঙের।

ওখানে কর্মরত কেউ আপনার কাছে খুব একটা আসবে না। কর্মচারীরা এক বিশেষ ধরনের জুতো পড়েন, যেটা পায়ে দিয়ে হাঁটলে কোনোপ্রকার শব্দ হয় না। মানে হচ্ছে আপনি বাইরের একটা শব্দও শুনতে পাবেন না। আর বন্দীরত অবস্থায় কারো সাথে কথা বলাও নিষেধ। আপনি শুধুমাত্র নিজের সাথেই কথা বলতে পারবেন।

আপনার আশেপাশের সবকিছু সাদা দেয়ার কারণে আপনি আস্তে আস্তে অনুভূতি শক্তি হারাবেন (sensory deprivation).

শুরুরদিকে আপনি ঘ্রাণশক্তি হারাবেন একইসাথে খাবারের স্বাদও। পুরো রুম সর্বক্ষণ সাদা আলোয় ভর্তি থাকায় আপনি ঠিকঠাক ঘুমুতেও পারবেন না। ফলশ্রুতিতে খুব দ্রুতই আপনার হ্যালুসিনেশন (অলীক কিছুতে বিশ্বাস করা) শুরু হবে।

ক্রমেই আপনি মানসিক বিকারগ্রস্থ হওয়া শুরু করবেন। একসময় আপনার পুরো ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়েরই কাজে ব্যাঘাত ঘটবে এবং আপনি চলৎশক্তিহীন/অসাড় হয়ে পড়বেন।

সাধারণত অপরাধ অনুযায়ী একজন অপরাধীকে কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত এসব রুমে আটকে রাখা হয়।

হোয়াইট রুম থেকে বেরোনোর পর এমন অবস্থা হয় যে,সে কাউকেই আর চিনতে পারে না।

সাময়িক স্মৃতিভ্রম হয়। সে কোথায় ছিলো,কেনো ছিলো বা আগে কি করতো সবকিছুই ভুলে যায়।

পরবর্তীতে অনেক সময় নিয়ে এটা সারলেও এর প্রভাবগুলো সারাজীবনের সঙ্গী হয়ে যায়।

আমির আব্বাস ফখ্রাভার নামক এক ব্যক্তিকে প্রথম এই শাস্তি দিয়েছিলো ইরান সরকার। এছাড়াও সত্তরের দশকে জার্মান সাংবাদিক এবং সন্ত্রাসী উলরিক মেনহফকেও এমন হোয়াইট রুম টর্চার সেল এ রাখা হয়েছিল।

তিনি তার বর্ণনায় বলেন, মাঝেমধ্যে আমার মনে হতো যেন আমার মাথা ফেটে সব বের হয়ে যাচ্ছে।

একবার তার সাথে একজন দেখা করতে এসেছিলেন, কিন্তু সে যাওয়ার পর তার মনেই হয়নি যে কেউ কখনও তার সাথে দেখা করতে এসেছিলেন। মুক্তির ২ বছর পর উলরিক আত্মহত্যা করে মারা যান।

সায়েদ ইবরাহীম নবাভী একজন ইরানিয়ান সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন। ইরান সরকার তাকে হোয়াইট রুম টর্চার সেলে বন্দী করেন। তিনি বলেন, ঘুমের ঔষধ নেয়া ছাড়া তিনি একটা রাতও ঘুমাতে পারেননি।

প্রচন্ড রকম একাকিত্ব তাকে গ্রাস করে নিয়েছিলো এবং ২০০৪ সালে মুক্তির পরও তার মধ্যকার সেই একাকিত্ব দশার অনুভূতিটা কাটেনি। তার মতে তার অনূভুতি শক্তি হ্রাসের পাশাপাশি আরও কিছু মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছিল। যেমন তিনি বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে, তার স্ত্রী কিডন্যাপ হয়েছে এবং তার বন্ধু বান্ধব পুলিশের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাকে ফাঁসিয়েছে।

 আমির ফখ্রাভার নামক ১৭ বছর বয়সী একজন ছাত্রকেও এমন হোয়াইট রুম টর্চারে আট মাস আটকে রাখা হয়েছিল। মুক্তির পর সে তার নিজের বাবা মা কেও চিনতে পারেনি।

বহুল আলোচিত এই টর্চার সেল নিয়ে বেশ কিছু সিনেমা, সিরিজ এবং বইও রচিত হয়েছে।

THX 1138 এবং White Chamber এ মুভি দুটিও এই হোয়াইট রুম টর্চার এর উপর ভিত্তি করেই নির্মিত

➡️➡️➡️➡️➡️➡️➡️➡️➡️➡️➡️➡️➡️➡️➡️➡️⤵️⤵️⤵️⤵️

পোস্ট টি পড়ে যদি আপনি নতুন কিছু শিখতে পারেন এবং উপকৃত হয়ে থাকেন,তাহলে অবশ্যই এই পোস্ট টিতে একটি লাইক দিবেন এবং অবশ্যই কমেন্ট করে আপনার মতামত জানাবেন ।
আর এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ সুন্দর সুন্দর পোস্ট সবার আগে পড়তে চাইলে ,অবশ্যই আমার আইডি@Suvankar SUBSCRIBE করতে ভুলবেন না।

PLEASE LIKE COMMENT & SUBSCRIBE @Suvankar
Sponsors of Suvankar
empty
empty
empty

10
$ 0.00
Sponsors of Suvankar
empty
empty
empty
Avatar for Suvankar
4 years ago

Comments

It's a mental torture for a person. It is really very painful. I have known the matter some days ago

$ 0.00
4 years ago

ঠিক,এটি মূলত একধরনের মানসিক শাস্তি। অনেক অপরাধী আছেন যারা ভীষণ সাহসী, শারীরিক শাস্তির তোয়াক্কা করেন না; তাদের জন্য এই বিশেষ ব্যবস্থা। যাতে তাদের মধ্যে ভয় তৈরি হয়।

$ 0.00
4 years ago

Already subscribed.
নতুন কিছু জানতে পারলাম। thank you...

$ 0.00
4 years ago

I also subscribed you dear brother 💝 Thank you and also welcome 💝

$ 0.00
4 years ago

হোয়াইট সেল সম্পর্কে অনেককিছুই জানলাম, ধন্যবাদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। তবে অপরাধী কখন স্বীকার করতো সেই ব্যাপার নিয়ে কিছু লিখেন নি এবং আদৌ তারা স্বীকার করেছিলো কি না।

$ 0.00
4 years ago

আমি যতো টুকু জানি ততটুকুই লিখতে চেষ্টা করেছি ভাইয়া।বেশি বাড়িয়ে লিখি নি।এই বিষয়ে পরবর্তীতে আরো তথ্য জানতে পারলে।তখন আমি আপনাদের এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানা তে পারবো। আপনার জানার কৌতুহল দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি ।এরকম জানার কৌতূহল যাদের ভিতর থাকে তাদের কে আমি খুব পছন্দ করি ব্যাক্তিগতভাবে। ধন্যবাদ ভাইয়া ।সাথেই থাকবেন।💞💞💞

$ 0.00
4 years ago

যাইহোক, আপনার লিখনী পদ্ধতি দারুণছিলো

$ 0.00
4 years ago

Thank you dear 💝

$ 0.00
4 years ago

Nice article

$ 0.00
4 years ago

Thanks brother 💝

$ 0.00
4 years ago

Welcome

$ 0.00
4 years ago

নতুন কিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ।

$ 0.00
4 years ago

Thanks for reading my articles. Welcome dear 💝

$ 0.00
4 years ago

Welcome. Don't forget to check my articles also.❤️

$ 0.00
4 years ago

Such an informative article Europe. I didn't know about White room before that. I think it is a type of mental torture to the people who did crime. And when they came out from that room they lose their mental strength. Nice article obviously.

$ 0.00
4 years ago

Yes dear,you are absolutely right dear. And also thanks for your supporting me 💕 I hope I get support from you. Thak you dear.Stay tuned 🙂

$ 0.00
4 years ago

Best try to support you. can I expect the same ?

$ 0.00
4 years ago

Just amazing dear. 💕💕💕💕💕💕

$ 0.00
4 years ago

Thanks dear brother for your feedback 😌🙂

$ 0.00
4 years ago

অসাধারণ লেখা

$ 0.00
4 years ago

ধন্যবাদ

$ 0.00
4 years ago

ডিম থেরাপি'র বদলে এই পদ্ধতির ব্যবহার শুরু করতে হবে আমাদের দেশে,কি বল বন্ধু? ‌

$ 0.00
4 years ago

Good Information

$ 0.00
4 years ago

Thanks dear for your supporting me 💓 stay connected with me always dear brother 💝

$ 0.00
4 years ago

Welcome

$ 0.00
4 years ago

You are most welcome dear 💝

$ 0.00
4 years ago

😍😍

$ 0.00
4 years ago

🤩🤩🤩🤩🤩😍😍😍😍

$ 0.00
4 years ago