আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই সঠিকভাবে পরিচর্যা করাটাও অত্যন্ত জরুরী।শিশু ও পথ শিশু শব্দ দুইটিকে আলাদা মনে হলেও শিশু- পথশিশু কিন্তু একই।শিশু তো শিশুই এর কোনো ভেদাভেদ নেই।শুধু মাত্র রাস্তায় জীবন-যাপন করে বলে আজ তাদের পরিচয় পথ শিশু।
পথেঘাটে বা রাস্তায় বেড়ে ওঠা শিশুদেরই পথ শিশু বলা হয়। পথ শিশুদের বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই এই কচি,কমল মুখ গুলো পরিচিত হয় নতুন অনেক অভিজ্ঞতার সঙ্গে।ওদের ভেতর কঠিন বাস্তবতা এমন ভাবে জায়গা করে নেয়,ওরাই একসময় হয়ে ওঠে নেশাখোর,ছিনতাই,টোকাই ও ফুল বিক্রেতা।
এদের জন্মটা পরিবারকে আনন্দ দেয় না।এদের বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্নটাও বাড়ে হয়তো সেই ভাবনায় কোথাও আকাশ কুসুম কল্পনা থাকেনা। ওদের স্বপই ভালোভাবে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকা।
অন্য শিশুরা যখন পরিবারের আদর নিয়ে স্কুলে যেতে ব্যস্ত থাকে ঠিক তখনি তার ফেরি করে নিয়ে বেড়ানো খাবার কিংবা খেলনা,ফুল কেউ কিনুক সেটা নিয়ে ব্যস্ত থাকে।ওদের স্বপ্ন থাকে পেট পুরে খাওয়া।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার পথ শিশু রয়েছে।রাস্তাঘাট,বাস টার্মিনাল,রেলপথ,অফিস চত্বর,শপিংমল এর সামনে,পার্ক ও খোলা আকাশের নিচে তাদের বাস।বড় অসহায় তারা,শিশুদের মানসিক বিকাশ পাওয়ার জন্য যা যা দরকার,এই পথ শিশুরা এই সব গুলো থেকে বঞ্চিত।পায় না ভালো আচরণ ও।ওদের মাঝে খুব রুক্ষতা ফুটে উঠলেও আছে ভালোবাসা।
সর্বনাশা মাদকে হাজার হাজার পথ শিশু আসক্ত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য মতে পথ শিশুদের ৮৫ ভাগই কোনো না কোনো ভাবে মাদক সেবন করে।
একটি শিশু কখনো পথ শিশু হয়ে জন্ম নেয় না।জন্মের পর প্রতিটি শিশুই তার নাগরিক অধিকার নিয়েই জন্মায়।আজ যে শিশু ভালোভাবে কথা বলতে শিখেনি তাকেও জীবিকার তাগিদে ভিক্ষা করতে হয়।তার কাছে জীবনের মানেই হলো ক্ষুদা নিবারনের জন্য ভিক্ষাবৃত্তি করে বেঁচে থাকার লড়াই।
এদের দুরবস্থার জন্য দায়ী সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা।দেশের সুবিধাবঞ্চিত সুরক্ষা ও তাদের অধিকার লক্ষ্যে প্রতিবছর পালিত হয় শিশু দিবস।
চিকিৎসকদের ভাষায়,শিশুরা মোটামুটি যা শেখে পরবর্তী জীবনেে এ শিক্ষা বিরাট প্রভাব ফেলে।তাই এ সময়ে যদি পথ শিশুরা যদি লাঞ্চিত হয়,অপমানিত হয়,কুশিক্ষা গ্রহন করে,ছিনতাই করে,ভিক্ষা,সমাজের বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে পরিচিত হয় তাহলে সেটা তাদের জন্য এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বিরাট হুম হিসেবে দেখা দিতে পারে।
যেসব শিশুর নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অভাব রয়েছে তারা অন্যায়ের দিকে পা বাড়ায়।শিশুদের নৈতিকতার শিক্ষা দিতে হবে।শিশুদের পরিপূর্ণ বিকাশের ওপর জাতীয় সমৃদ্ধি নির্ভরশীল।পথ শিশুদের উন্নয়নের ব্যাপারে শুধু সরকারি কার্যক্রম নয়,সচেতনতার সাথে কাজ করতে হবে।আজকের শিশু যেহেতু আগামী দিনের কর্ণধার,তাই পথশিশুদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।পথ শিশুদের অধিকার কেড়ে নিয়ে তাদের অনিশ্চয়তায় ফেলে দেওয়া কখনো ঠিক হবে না।ওদেরও অধিকার আছে,সেটা কারো কাছে লাঞ্চিত না হওয়ার,দু'বেলা পেট ভরে খাবার খাওয়ার।
চাইলে সম্ভব এই পথ শিশুদের ভালো থাকার ব্যবস্থা করা।কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন একটু স্বদিচ্ছা। আর ওদের জন্য বরাদ্দ অর্থ,লুটে না খাওয়ার মানসিককতা।তাইলে ওরা ভালো থাকবে,বেড়ে উঠবে সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে।