আবেগ কি মানুষকে বোকা বানায়??

0 11
Avatar for Susmita
3 years ago

আবেগপ্রবণ মানুষেরা নিজেদেরকে বোকা ভাবে।বিশেষ করে আঘাত পেলে।বেশির ভাগ আবেগপ্রবণ মানুষের মতো আমারো আবেগ নিয়ে আবেগপ্রবণ অনেক কথা বলার আছে।তারপর ভাবলাম আসলে বলাটা যতটা সহজ,গুছিয়ে লিখাটা ততটাই কঠিন।আমার উদ্দীপনা কিঞ্চিৎ কমে গেল।ভাবলাম আবেগপ্রবণ আসলেই খুব বোকা।তারপর ভাবলাম আমার এরকম ভাবাটাই আসল বোকামি।পৃথিবীর বেশির ভাগ বড় ও ভালো কাজ গুলো হয়েছে গভীর আবেগের জায়গা থেকে।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ,কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,নেলসন ম্যান্ডলা,আইনস্টাইন আমার জানামতে এরা সবাই আবেগপ্রবণ ছিলেন।নিজের আবেগ প্রয়োগ করেছেন বিভিন্নভাবে মানুষের ভালোর জন্য।সাধারণত বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আমরা আবেগের কথা ভাবি না।কিন্তু স্বয়ং আইনস্টাইন বলেছেন বিজ্ঞানের জ্ঞানের চেয়ে কল্পনার ভূমিকা বড়।আবেগ ছাড়া কল্পনা হয় না।সুতরাং বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও আবেগ প্রয়োজন।

আসলে আবেগ কি??

প্রচলিত মনোবিজ্ঞানের ভাষায়,আবেগ মানুষের মতিষ্কের একধরনের সংকেত পদ্ধতি।আমাদের যদি কিছু ভালো না লাগে তাহলে আমরা রেগে যাই।না হলে আমাদের মনে ভয় বা ঘৃণার সঞ্চয় হয়।মন খারাপ হয়।আবার কিছু ভালো লাগলে আমরা খুশি হই।এই সংকেত গুলো আমাদের মতিষ্ক আগে অনুধাবন করে।সংকেত পেয়ে আমরা আমাদের যুক্তি,অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নিই কি করব।কিন্তু আবেগের জায়গা থেকে বেশির ভাগ মানুষের অবস্থানই এক।খারাপ কিছু দেখলে বেশির ভাগ মানুষ রেগে যায়,মন খারাপ করে,ভয় করে অথবা ঘৃণা অনুভব করে।এই আবেগ অনুভব করার মতো কিছু নেই,বরং যদি এই অনুভূতি না আসে,তাহলে বলতে হবে যে শারীরিক, মানসিক ভাবে লোকটা অসুস্থ।

বিষয়টাকে যদি একটু অন্যভাবে দেখি।ধরুন আপনার হাত অবশ হয়ে আছে।এই অবস্থায় আপনি লক্ষ না করে আগুনে হাত রাখলেন।আপনার হাত পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে কিন্তু আপনি কিছুই টের পাবেন না।হাত যদি অবশ না থাকতো তাহলে আপনি অবশ্যই ব্যাথা পেতেন এবং সময়মতো হাত সরিয়ে নিতেন।দৈহিক ব্যাথা বা আনন্দ যেমন আমাদেরকে শারীরিক বিষয় সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে ঠিক তেমনি আবেগও আমাদের মানসিক বিষয় সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।আমরা নিশ্চয়ই মনে করব যে হাত পুড়ে যাচ্ছেে কিন্তু সেটা অনুভব করতে না পারাটা একটা অসুস্থতা।ঠিক সেরকমই আমাদের মনে করা উচিত যে একজন আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে,কিন্তু আমার কোনো ধরনের অনুভূতি হচ্ছে না সেটাও এক ধরনের অসুস্থতা।

এখন বোকামির বিষয়টাই আসি।আগুনের উপর হাত রেখেছেন।প্রচন্ড ব্যাথা করছে কিন্তু আপনি হাত সরাচ্ছেন না।সেটা হলো বোকামি।ঠিক সেরকম কেউ আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে,আপনার মনে আপনার প্রচন্ড রাগ বা মন খারাপ করছে কিন্তু আপনি সে বিষয়ে কিছু বুঝতে পারছেন না সেটাও বোকামি।আপনার মন কিন্তু আপনাকে সংকেত দিচ্ছে কিন্তু আপনিই সেই অনুযায়ী কাজ করছেন না।এ অবস্থায় আবেগের দোষ দিয়ে কি লাভ???

এটা হচ্ছে যে, অনেক সময় আমাদের জৈবিক অভিজ্ঞতা এতই জটিল হলে যে আমরা কোনো ধরনের আবেগ অনুভব করি না।বেশির ভাগ পরিস্থিতিতে আমাদের মনে বিভিন্ন ধরনের আবেগের সঞ্চার হয়।

সেই অনুভূতি গুলো যথার্থ গুরুত্ব দিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা এবং বুদ্ধি কাজেে লাগিয়ে ঠিকঠাক সিদ্ধান্ত নিতে পারাটাই বুদ্ধিমত্তার পরিচয়।এই বুদ্ধি সবার সমান থাকে না।আমারও যে খুব একটা আছে সেটা আমি দাবি করছি না।থাকলে বছরের পর বছর আমাকে কষ্ট দেওয়ার পরও আমি লিভারপুলকে সমথর্ন করতাম না।তবে হ্যাঁ আমি আমার মতিষ্কে আবেগপ্রবণ মনকে দোষ দিই না।আবেগ আছে বলেই আমি বাংলাদেশ জিতলে আনন্দ ।কোনো দুঃখের গান শুনলে মন খারাপ হয়।আবার শুনতেও ভালো লাগে।

আমাদের আবেগ আমাদের ভালো খারাপ অনেক কিছু বলার চেষ্টা করে।আবেগ কি বলছে তা একটু ভালো করে শোনার চেষ্টা করলে হয়ত আমরা আরেকটু সুখী হব।নিজেদের হয়তো অতটা বোকা মনে হবে না।

2
$ 0.01
$ 0.01 from @TheRandomRewarder
Avatar for Susmita
3 years ago

Comments