কথা হচ্ছে, কারা ওয়াসওয়াসা বা শয়তানের ধোঁকায় পরে আছি তা জানতে হবে। নিজের মধ্যে কিছু লক্ষণ বা পরিবর্তন দেখা গেলে আপনি বুঝে যাবেন যে, আপনি ওয়াসওয়াসা রোগে আক্রান্ত ।এই পরিবর্তন গুলো কি ? নিজেকে নিজে প্রশ্ন করুন।তাহলেই উত্তর আপনার সামনে আপনাআপনিই চলে আসবে। আসুন জেনে নেই প্রশ্নগুলো :-
১. আপনি কি কারণে-অকারণে চিন্তিত থাকছেন? মাথায় বিক্ষিপ্ত চিন্তা ঘোরাঘুরি করার কারণে দৈনন্দিনের কাজ, নামাজ, ইবাদত, যিকির, তিলাওয়াত ইত্যাদিতে মন বসছে না?
২. আপনি অথবা আপনাদের পরিবারের কোন একজন কি হঠাৎ পরিবর্তন হয়ে গেছে? কেমন যেন উদাস ভাব চলে এসেছে, কিছুই ভালো লাগছে না।
৩. নামাজ বা ওযু নিয়ে বেশি দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন? বারবার মনে হচ্ছে ঠিকমতো ওযু হচ্ছে না, নামাজের এই অংশটা ঠিকমত হল না।
৪. পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অথবা পরনের কাপড় নিয়ে আপনি কি অতিরিক্ত চিন্তা করছেন?
৫. আপনি কি অপ্রয়োজনে টয়লেট বা বাথরুমে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করছেন?
৬. আপনি কি আপনার প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে বাজে স্বপ্ন দেখছেন? যা আপনাকে ভীত করছে?
৭. আপনার কানে কি ফিস ফিস করে শোনা যাচ্ছে আপনি কুফরের দিকে ধাবিত হচ্ছেন (কুফরি করছেন)?
৮. আপনি কি ওযু-গোসল বা ইস্তিঞ্জার সময় এক অঙ্গ বারবার ধুচ্ছেন? তবুও মনে হচ্ছে ধোয়া হয়নি ঠিকমতো..
৯. আপনার বারবার মনে হচ্ছে যে, ওযু ভেঙ্গে যাচ্ছে? মনে হচ্ছে প্রসাবের ফোঁটা পড়ছে, অথবা সবসময় মনে হচ্ছে বায়ু বের হয়ে যাচ্ছে? কিন্তু আপনি নিশ্চিত হতে পারছেন না?
১০. আল্লাহ, রাসুল অথবা তাদের ব্যাপারে, ইসলামের মৌলিক ব্যাপারে অবমাননাকর মাথায় চিন্তা আসে?
১১. মুরব্বি, উস্তায বা বয়োজ্যেষ্ঠদের সামনে বসলে, তাদের সাথে কথা বলতে লাগলে কি আপনার ভেতর থেকে কেউ বারবার বেয়াদবির জন্য উস্কে দিতে চায়?
১২. আপনি কি কোন অদ্ভুত শব্দ কণ্ঠ শুনতে পাচ্ছেন? কারো সাথে এটা নিয়ে আলোচনা করলে ভাবছে, আপনি প্যারানয়েড বা পাগল হয়ে যাচ্ছেন!
১৩. আপনি কি নামাজের রাকাত ভুলে যাচ্ছেন? অথবা অন্য আরকানগুলোর ব্যাপারে ভুল হচ্ছে? সাজদাহ একটা দিয়েছেন না দুইটা দিয়েছেন সন্দেহ লাগছে? আর এসব কি প্রায় দিনই হচ্ছে?
১৪. নামাজে সাজদা করতে গেলে মনের মধ্যে বিভিন্ন অশ্লীল ছবি কিংবা দেবদেবীর মুর্তি ভেসে উঠছে? . .
উত্তর যদি হয় “হ্যাঁ!” . তবে বুঝে নিন, আপনি শয়তানি ওয়াসওয়াসা রোগে আক্রান্ত। এইবার কীভাবে মুক্ত হতে পারি শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে তা নিচে আলোচনা করা হল:-
#মুক্তির_উপায় -
খেয়াল করার বিষয় হচ্ছে, এক-দুইদিন এরকম হতেই পারে। কিন্তু সবসময়ই বা দিনের পর দিন যদি আপনার মাঝে দেখা যায়,
তবে বুঝতে হবেঃ - “হ্যাঁ! সত্যিই আপনি শয়তানি ওয়াসওয়াসা রোগে আক্রান্ত। " .
[] মনের বিভিন্ন রকমের ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার কিছু উপায়ঃ . সর্ব প্রথম মনে রাখা দরকার আল্লাহর সেই বাণীটি, “নিশ্চয় শয়তান তোমদের প্রকাশ্য শত্রু" আর শত্রুর কাজই তো শত্রুতামী করা। শয়তান যেহেতু বাহিরগত ভাবে কোন কিছু করতে পারে না, তাই মনে মনে শয়তানি করে জ্বালায়। আর লক্ষ্য তার একটাই বান্দা যেন আল্লাহ থেকে দুরে থাকে। আল্লাহর সন্তুষ্ট মূলক কাজ যেন না করতে পারে। আর তার সাথেই যেন জাহান্নামের সাথী হয়। . >> বাঁচার কিছু উপায়ঃ
১:- সাধ্যমত গোনাহ থেকে বিরত থাকার প্রচেষ্টা। .
২:- মনে আসা ধারনা গুলোকে পাত্তা না দেওয়া। . > অর্থাৎঃ- মনেই যা ই আসুক না কেন। এই ধারনা গুলাকে মূল্যায়ন না দেওয়া। কেননা কথায় আছে না, লাই দিলে মাথায় উঠে। দেখবেন যত মূল্যায়ন দিতে যাবে,দিন দিন তত বেড়ে যাবে। তাই কোন আমলে বারবার ভূল মনে হলে হোক, আপনারটা আপনি করেই যাবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পাক, আপনার অবস্থা সম্পর্কে বড়ই ভালো জানেন। আর আমাদের আল্লাহ, অন্তত ক্ষমাশীল ও দয়ালু। .
৩:- সদা পাক পবিত্র থাকাঃ > অপবিত্রতা শয়তানের বড়ই পছন্দের। .
৪:- মনে আসা খারাপ ধারনার বদলে সাজা স্বরুপ কিছু নেক আমল করা। > অর্থাৎঃ- আপনার ইবাদতে বা কর্মে যখন শয়তান কোন উল্টাপাল্টা ধারনা দিয়ে বেগাত করাতে চাইবে, এর প্রতিশোধ মূলক আপনি কিছু নির্দিষ্ট নেক আমল করা শুরু করে দিন। যেমনঃ- যখনি এমনি উল্টাপাল্টা ধারনা আসবে নামাজে বা ওযুতে, এর বিপরিতে আমি ১০০/২০০ বার আল্লাহ পাকের নামের জিকির করবো, কিংবা ২ রাকাত করে কিছু নফল নামাজ আদায় করে দিবো। আর নিশ্চয় শয়তান এই কাজ পছন্দ করবেনা। শয়তান যখন দেখবে, আপনাকে একটাতে আটকাতে গিয়ে আপনি আরো বেশী নেক আমল করতে শুরু করে দিয়েছেন, তখন ধীরে ধীরে দেখবেন এমন ধারনা আসা বন্ধ করে দিবে শয়তান। . প্রখ্যাত তাফছির কারক, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রহঃ) এর কাছে এক ব্যক্তি এসে বললেন, আমার মনে বিভিন্ন সন্দেহ মূলক ওয়াসওয়াসা আসে, যার কারনে ইবাদত কর্ম কোন কিছুই ঠিক ভাবে করতে পারিনা। এর থেকে প্রতিকারের কি উপায়? . তখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রহঃ) তাকে কোরআনের একটি আয়াত শিখিয়ে দিয়ে বললেন, যখনি এমন হয় তখন তুমি আয়াতটি পড়িও। আয়াতটি হলোঃ- ।"হুওয়াল আউয়ালু, ওয়াল আখেরু, ওয়াজ্জাহেরু, ওয়াল বাতেনু, ওয়া হুয়া বি কুল্লি শায়্যিন আলিম।” (সূরা হাদীদ ৩) বেশী বেশী "আউজু বিল্লাহ....... পড়া।” একদিনে যে সব সমাধান হয়ে যাবে তা কিন্তু না, আবার একদমই যে অসম্ভব তা ও না। অসীম কিছু পেতে গেলে তো কষ্ট ত্যাগ ও অসীম হওয়া বাঞ্চনিয়। শয়তান যেমন শতানের কাজে লেগেই থাকে, ঠিক তেমনি আমাদের ও আমাদের নেক কাজে লেগেই থাকতে হবে। শয়তান আমাদের প্রকাশ্য শত্রু, তাই তার কাছে হার মানলে চলবেনা। যে বিয়াদব আমাদের আল্লাহর সাথে বিয়াদবি করেছে, তাকে কোন ভাবেই জিততে দেওয়া যাবেই না। এইটাই হোক মনের প্রতিজ্ঞা। আমাদের প্রচেষ্টা যখন থাকবে কঠিন ভাবে, আল্লাহ পাক রহমত দিয়ে অবশ্যই সহযোগীতা করবে।🍁