সর্বশাস্ত্রে পারদর্শী পণ্ডিত মশাইর ইচ্ছে হলাে পাঁঠার মাংস খাবেন । পাঁজি পুঁথি দেখে দিনক্ষণ গণনা শেষে শুভ মুহূর্ত নিরূপণ করে যাত্রা করলেন হাটে । হাটে গিয়ে নাদুসনুদুস পাঁঠা পেয়ে গেলেন একটা । পণ্ডিত মশাই খাবেন তাই বিক্রেতা দামও একটু কমিয়ে রাখল । কম দামে নাদুসনুদুস পাঁঠা পেয়ে মনের আনন্দে পণ্ডিত মশাই পাঁঠাটিকে কাঁধে উঠিয়ে বাড়ির পথে ফিরছেন । পণ্ডিত মশাইর কাঁধে নাদুসনুদুস পাঁঠা দেখে রাস্তায় প্রতারণার উদ্দেশ্যে অপেক্ষমাণ পাঁচ ঠগ মুহূর্তে বুদ্ধি স্থির করে ফেলল । বেশ খানিকটা দূরতু নিয়ে রাস্তার ধারে অপেক্ষা করতে লাগল । পণ্ডিত মশাই প্রথম ঠগের কাছাকাছি যেতেই ঠগ এগিয়ে এসে পণ্ডিত মশাইকে প্রণাম করে বলল , ঠাকুর ! আপনার মত সজ্জন ব্রাহ্মণ এই গ্রামে কেউ নেই । কিন্তু আপনার কাধে কুকুর কেন । পণ্ডিত মশাই রেগে গেলেন তার কথায় । বললেন , কুকুর কোথায় , এটা তাে পাঠা । প্রথম ঠগকে ফেলে পণ্ডিত মশাই এগিয়ে গেলেন । দ্বিতীয় ঠগের কাছে আসতেই সে এগিয়ে প্রণাম করে বলল ঠাকুর । আপনার মত সজ্জন ব্রাহ্মণ এই ইউনিয়নে নেই । কিন্তু আপনি কুকুর কাঁধে নিয়ে যাচ্ছেন কেন । পণ্ডিত মশাই তার প্রতিও আগের মত বিরক্তি প্রকাশ করে এগিয়ে গেলেন । কিছুক্ষণ পর তৃতীয় ঠগ এগিয়ে এসে পণ্ডিত মশাইকে প্রণাম করে বলল , ঠাকুর আপনার মত ব্রাহ্মণ এই পুরাে থানায় নেই । কিন্তু আপনার কাধে কুকুর কেন । পণ্ডিত মশাইর তখনও নিজের বিবেচনার উপর আস্থা প্রবল । তিনি আগের মতই বিরক্তি প্রকাশ করে এগিয়ে চললেন । এবার চতুর্থ ঠগ এগিয়ে এসে ভক্তি গদগদভাবে প্রণাম করে বলল আপনার মত ব্রাহ্মণ পুরাে জেলায় নেই । কিন্তু ঠাকুর আপনার আজ কী হলাে , অস্পৃষ্য কুকুরকে আপনি কাঁধে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ? [ সনাতন হিন্দু ধর্ম অনুসারে কুকুর এক নিকৃষ্ট প্রাণী । কোন ব্রাহ্মণ এটি স্পর্শ করতে পারেন না । ] পণ্ডিত মশাই এবার একটু ভাবলেন । আমি তাে দেখে শুনে নাদুসনুদুস পাঁঠা কিনলাম । কিন্তু এর আগেও তিনজন এটাকে বলছে কুকুর । এ - ও বলল কুকুর । ঠিক আছে একটু কাঁধ থেকে নামিয়ে দেখি । ” পণ্ডিত মশাই পাঠাটাকে কাঁধ থেকে নামিয়ে লেজ নেড়েচেড়ে ভাল করে দেখলেন । দেখে আবার নিশ্চিত হলেন এটি কুকুর নয় পাঠা । আবার পাঠাটিকে কাঁধে চড়ালেন । কিন্তু কাঁধে চড়ালে কি হবে - আসলে পণ্ডিত মশাইর নিজের উপর বিশ্বাসের ভিত তখন নড়বড়ে হয়ে গেছে । তা না হলে দেখে শুনে কেনা পাঠাকে আবার পরীক্ষা করতে যেতেন না । এরপর পঞ্চম ঠগ যখন প্রণাম শেষে বলল ঠাকুর ! আপনার কাধে কেন কুকুর ? তখন পণ্ডিত মশাইর নিজের উপর বিশ্বাস পুরােটাই ভেস্তে গেল । জলজ্যান্ত পাঠাটাকে কাঁধ থেকে নামিয়ে জোরে এক লাথি মারলেন । আক্ষেপ করে বললেন , কার মুখ দেখে যে আজ যাত্রা করেছিলাম ! কিনলাম পঠা হয়ে গেল কুকুর ! আর ওদিকে পণ্ডিত মশাই দৃষ্টির আড়ালে যেতেই পাঁঠাটাকে ধরে মজা করে খাওয়ার জন্যে নিয়ে গেল ঠগেরা নিজেদের আস্তানায় ।
রি - অ্যাকটিভ হওয়ার কারণে , অন্যের কথার পণ্ডিত মশাইর পাঠা ঠগেরা খেলাে । আসলে আপনি যখন নিজস্ব বিচার বিবেচনার পরিবর্তে অন্যের উস্কানিতে বা অন্যের প্ররােচনায় বা অন্যের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বা উত্তেজিত হয়ে পদক্ষেপ নেন , তখন তা ‘ ক্রিয়া ' নয় , তখন তা হয় ‘ প্রতিক্রিয়া । আর প্রতিক্রিয়া কখনও ‘ ক্রিয়ার মত ফলপ্রসূ হয় না । প্রতিক্রিয়া সব সময় ব্যর্থতা ডেকে আনে ।
well written