একদিন নির্জন এক বনে ছিলো একটি বনফুল। সে খুব নিসঙ্গ ও একাকী ছিল। তার সারাটদিন একা একাই কাটাতে হতো।এই নিসঙ্গতার যন্ত্রনা বড়ই নির্মম হয়, তার কাছে এটি সহ্য করা দুঃসাধ্য মনে হচ্ছিল।নিসঙ্গতার এমন নিঠুর নির্মমতায় জন্য তার জীবনের প্রতি ঘৃনা হতো।
তারপর , হঠাৎ একদিন এক পড়ন্ত বিকেলের এক স্নিগ্ধতায় দেখা হলো বনফুলের সাথে একটা প্রজাপতির । প্রজাপতিটার ডানার রঙটা ছিল নীল তার সেই নীল ডানায় নানা রঙ্গের ছড়াছড়ি ছিল। বনফুল মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলো সেই প্রজাপতির দিকে,তার দৃষ্টি যেমো ফেরাতেই পারছিলো না। তার প্রথম দেখাতেই ভালোবাসার বীজ অঙ্কুরিত হতে থাকে বনফুলের মনে। বনফুলকে খুব অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রজাপতি
বললো, " তুমি এমন নিলরজ্জের মতো এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন?" প্রজাপতির তখন তার সুমুধর কন্ঠ শোনে বনফুল কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেললো।সে বোকার মতো তাকিয়েই থাকে প্রজাপতির দিকে। প্রজাপতি বনফুলের কোনো উত্তর না পেয়ে সে চলে গেলো।
হঠাৎ এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত নেমে এলো , আকাশে মুচকি হেসে দেখা দিলো চাঁদের। তখন বনফুল কিছুতেই ভুলতে পারছেনা প্রজাপতির কথা শুধু তাকে নিয়েই তার সব জলপান কল্পনা । তার দৃষ্টির সামনে বার বার ভেসে আসছে শুধু প্রজাপতির প্রতিচ্ছবি, তার সুমধুর কন্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হয়ে কর্ন দিয়ে প্রবেশ করেছে মনে নানান ভাবনার সৃষ্টি করছে প্রজাপতির। এদিকদিয়ে প্রজাপতির ও বার বার মনে পড়ছে বনফুলের কথা। সে বনফুলের বোকা বোকা চেহারা কথা মনে করে একা একাই হাসছে । সেই রাতে বনফুল-প্রজাপতি কারোই ভালো ঘুম হয়নি।
পরদিন খুব সকালেই প্রজাপতি ছোটে আসে বনফুলের কাছে। প্রজাপতিকে আসতে দেখেই অভিমানের সুরে বনফুল বলেতে লাগলো, "আসতে এতো দেরি হলো কেনো? আমি কখন থেকে অপেক্ষা করছি।" অনর্গল বলেই যাচ্ছে বনফুল, প্রশ্নের পর প্রশ্ন করছে। প্রজাপতি কিছুই বলছে না, মিটিমিটি করে শুধু হাসছে আর বনফুলের চঞ্চলতা দেখে মুগ্ধ হচ্ছে ।তারপর বনফুলের কথার ঝুড়ি যখন কিছুটা হালকা হলো তখন প্রজাপতি তাকে বললো, "এতো কথা বলতে পারো তুমি! এতো প্রশ্ন করতে পারো! আমি তোমার এতো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না, আমি কি বলি তা তুমি শোনো- আমি খুব ভালোবাসি তোমাকে ,তুমি জানো, কাল সারাটারাত তোমার কথা ভেবে ভেবে আমি একটুও ঘুমাতে পারিনি বনফুল। সত্যি আমি তোমাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি।" তখন বনফুল কিছু না বলে জড়িয়ে ধরলো প্রজাপতিকে। সেই থেকে দুজন আবদ্ধ হয়ে গেলো প্রেমবন্ধনে।
তারপর প্রতিদিন বনফুলের কাছে আসতো প্রজাপতি। সারাদিন তারা গল্প করতো দুজন মিলে। তাদের এই মান-অভিমান, হাসি-টাট্টায় দিন কাটছিল তাদের দুজনের।
হঠাৎ একদিন কথায় কথায় অনেক রাত হয়ে যায়, সেদিন প্রজাপতি থেকে যায় বনফুলের কাছেই। বনফুলের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে প্রজাপতি। হঠাৎ শুরু হলো প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি ঘুম ভেঙ্গে গেলো তাদের দুজনেরই । প্রজাপতি খুব ভয় পেয়েছিলো তখন, তাই বনফুল তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে রাখলো শক্তকরে। তুমুল ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে, বনফুল ভিজে একাকার হলেও, প্রজাপতি তেমন একটা ভিজেনি। হঠাৎকরে কোথা থেকে একটা গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়লো বনফুলের মাথার উপর। তখন বনফুল ধাক্কা দিয়ে দুরে সরিয়ে দিলো প্রজাপতিটাকে। বনফুল কিছু বলার সুযোগ পেলোনা না তাকে, চলে যেতে হলো তার প্রিয়তমাকে ছেড়ে দূরে না ফেরার দেশে।
ারপর কিছুক্ষন পর ঝড় থামল, প্রজাপতি খুব কষ্টে গাছের ডালের নিচ থেকে বের করলো বনফুলের প্রানহীন দেহটাকে । খুব কেঁদেছিলো সেদিন প্রজাপতি বনফুলের প্রানহীন দেহ নিয়ে জড়িয়ে ধরে। আজো খুব কাঁদে প্রজাপতি তার বনফুলকে মনে করে, আজো খুজে বেড়ায় সে তার বনফুলের স্মৃতি সবুজ পাতার ভীড়ে।
Wow !!! Oshadharon ekta golpo. Amar onek beshi valo laglo pore. Thank you very much sister. Khub sundor story.