নিসঙ্গ ভেজা হাইওয়ে । হাইওয়ের পাশের গাছগুলো মৃদু বাতাসে যেনো দুলছে ।
ছাতা মাথায় নিয়ে নিসঙ্গ পথ ধরে আপন মনে হাটছে বৃষ্টি ।
রাহাত আজকেও দেরি করতেছে । খুব বিরক্ত লাগছে বৃষ্টির ।
বৃষ্টি হাটতে হাটতে রাস্তার পাশে একটা গাছের নিচে গিয়ে দাড়ালো । সে দুচোখ ভরে দেখতে লাগলো ভেজা প্রকৃতির অদ্ভুত সোন্দর্যটাকে ।
এমন সময় হটাত্ পিছন থেকে সুন্দর গলায় কেউ গান গেয়ে উঠলো ।
“বৃষ্টি নেমেছে আজ , আকাশ ভেঙ্গে ,
হাটছি আমি এই মেঠো পথে ।
মনের ক্যানভাসে ভাসছে তোমার ছবি ।
বহুদিন তোমায় দেখি না যে ।”
গানটা এবং গান গাওয়া কন্ঠটা বৃষ্টির অতি পরিচিতো মনে হচ্ছে । ঝট করে পিছনে ফিরলো বৃষ্টি ।
দেখে রাহাত দাড়িয়ে আছে । মুখে মিষ্টি হাসি । হাত দুটো ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে একসাথে ধরে আছে সে ।
“আর আসছো কেনো ? না আসলেই পারতা !” রাগত গলায় বলল বৃষ্টি ।
“না । মানে . . . ইয়ে । ঐ যে রিকশা পাই নাই তো । তাই হেটে আসতে দেরি হয়ে গেছে ।” কাচুমাচু মুখে বলল রাহুল ।
–ঢং কইরো না । তোমাকে আমার চিনা আছে । তুমি ইচ্ছে করে হেটে আসছো । বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে আসার জন্য ।
চুপ করে রইলো রাহাত।
“চুপ করে আছো কেনো !” ধমকে উঠলো বৃষ্টি ।
“না মানে । মজা লাগতেছে ।” মুচকি হেসে বললো রাহাত।
“কি ! আমার কথাগুলা তোমার কাছে মজা লাগতেছে !” আরো রেগে গিয়ে বলল বৃষ্টি ।
“না মানে . . . .ক্লাসে যখন কোন ছাত্রের সবচেয়ে প্রিয় টিচারটা ছাত্রটাকে ইচ্ছেমত বকে । তখন যেমন অনূভূতি হয় । আমারও ঠিক একই অনূভূতি হচ্ছে ! আপনার কল্যানে আমি আবার আমার পিচ্চিকালে পদার্পন করতে পারলাম । আপনাকে ধন্যবাদ ম্যাডাম !” হাসতে হাসতে বলল রাহাত ।
রাহাতের এ ধরনের কথা শুনে আর রেগে থাকতে পারলো না বৃষ্টি। হেসে ফেললো সে ।
বৃষ্টির হাসি দেখে রাহাত গেয়ে উঠলো
“আমার সপ্নে দেখা রাজকন্যা হাসে ,
সাত সাগর আর তের নদীর পাড়ে ।”
-সাগর-নদী কোথায় পাইলা ? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো বৃষ্টি।
রাহাত হাইওয়ের পাশে একটা ডোবাকে দেখিয়ে বলল “ধরে নাও ওটাই সাগর । তুমি রাজকন্যা । আর আমি রাজপুত্র । রাজকন্যা সাগরপাড়ে অধীর আগ্রহে বসে ছিলো কখন রাজপুত্র আসবে !
রাজপুত্র আসতে দেরি করায় রাজকন্যা তো মহাক্ষেপা ! রাজপুত্র আসলো । রাজকন্যার মন ভালো করলো ।আর রাজকন্যা আবার খিলখিল করে হেসে উঠলো” বলে মুচকি একটা হাসি দিলো রাহাত ।
বৃষ্টি এবার আর হাসি আটকে রাখতে পারলো না । খিল খিল করে হাসতে লাগলো । হাসতে হাসতে চোখ দিয়ে পানি চলে এলো তার ।
হাসি থামতেই বলল “তুমি এতো সুন্দর করে কিভাবে ভাবো রাহাত ?”
রাহুল বন্যার হাত ধরে বললো “সুন্দর মানুষকে নিয়ে সুন্দর ভাবনাই আসে ।” বলেই একটা চোখ টিপ দিলো সে ।
বৃষ্টি আস্তে আস্তে বলল”রাহুল তুমি আসলেই কি আমাকে ভালবাসো ? এভাবেই কি সবসময় আমার হাত ধরে রাখবে ?”
রাহাত বলল “যতটুক মনে পরে প্রথম প্রশ্নটার উত্তরটা ৪ মাস আগেই পেয়ে গিয়েছো । আর দ্বিতিয়টার উত্তর হলো আমি শুধু তোমার হাত না তোমাকেই ধরে রাখবো ।”
বৃষ্টির চোখ তখন অশ্রুসিক্ত আর রাহাতের মুখে মিষ্টি হাসি ।
ছাতা মাথায় হাইওয়ের একটা গাছের শিকড়ের উপর বসে আছে বন্যা । তার চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পরছে ।
রাহাত আজকেও দেরি করছে । বৃষ্টির কিছুই যেনো ভাল লাগছে না।
বৃষ্টিরও বিরাম নেই । টিপটিপ করে পরেই চলছে ।
ভেজা হাইওয়ে ধরে দৌড়ে এলো রাহাত । বৃষ্টিকে এভাবে বসে থাকতে দেখে বুঝতে পারলো কোন একটা সমস্যা হয়েছে ।
আস্তে করে ডাক দিলো সে”বৃষ্টি । রাজকন্যা ।”
বৃষ্টি আস্তে করে মুখ ফিরিয়ে তাকালো রাহাতের দিকে । তার চোখ থেকে পানি পড়ছে । চোখ দুটো অসম্ভব লাল । বুঝা যাচ্ছে অনেক্ষন কেদেঁছে সে ।
রাহাতের বুকটা একটা মোচড় দিলো যেনো । আস্তে করে বললো “কি হয়েছে রাজকন্যা?”
কান্না জড়ানো গলায় বৃষ্টি বললো “তুমি কথা রাখো নি রাহাত । আমি এখানে একা বসে ছিলাম । কতো মানুষ হেটে যাচ্ছিলো । তাকিয়ে দেখছিলো আমাকে । আর আমি একা ছিলাম । একদম একা ।
তুমি আমার পাশে থাকো নি ।”
রাহাতের বুকে যেনো শেল বিধলো । আস্তে করে বলল “বিশ্বাস করো বন্যা । আমি ইচ্ছা করে দেরি করিনি ।
ইদানিং খরচটা অনেক বেড়ে গেছে । তাই এই সময়ে একটা টিউশুনি থাকে আমার ।
তোমাকে বলিনি কেননা তাহলে তুমি আসতে না । তোমার ঐ সুন্দর মুখটাও আমার দেখা হতো না । বিশ্বাস করো অনেক চেষ্টা করি একটু তাড়াতাড়ি বের হওয়ার । কিন্তু হয়ে উঠে না ।
কিন্তু আমি সবসময়ই তোমার পাশে ছিলাম , আছি , থাকবো । অনেক ভালবাসি তোমাকে । অনেক” হড়বড় করে কথাগুলো বলে ফেললো রাহাত।
বৃষ্টি এসব কথা শোনার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলো না ।রাহাতকে এভাবে কথাগুলো বলায় এখন খারাপ লাগছে বৃষ্টির ।
আস্তে করে বললো “রাহাত । I'm so sorry . . . তুমি আমাকে মাফ করে দাও, please . .”
রাহাতের মুখে হাসি ফুটলো । তার চোখে চিক চিক করছে পানি ।
হটাত্ বৃষ্টির বেগ বেড়ে গেলো । রাহাত দু হাত উজার করে বৃষ্টির স্পর্শ নিতে লাগলো । হটাত্ গান গেয়ে উঠলো সে
“বৃষ্টি নেমেছে আজ আকাশ ভেঙ্গে . . . হাটছি আমি. . ”
এতটুক বলেই থেমে গেলো সে ।
কি যেনো ভাবলো । তারপর দৌড় দিয়ে হাইওয়ের পাশে ধানের ক্ষেতে নেমে পরলো ।নেমেই উচ্চস্বরে গান গাইতে লাগলো. . . .
“বৃষ্টি নেমেছে আজ আকাশ ভেঙ্গে ,
হাটছি আমি এ মেঠো পথে ।”
বৃষ্টি অশ্রুসিক্ত চোখে , ঠোটে একটুকরো মধুর হাসি ফুটিয়ে রাহাতের ছেলেমানুষী দেখতে লাগলো ।
একটু দূরে গিয়ে রাহাত ইশারা করলো বৃষ্টিকে । বৃষ্টি হাতের ছাতাটা ছেড়ে দিলো । সেটা উড়ে গিয়ে পরলো ডোবাটাতে ।
বৃষ্টি আস্তে আস্তে ক্ষেতের আইল দিয়ে হেটে আসলো রাহাতের দিকে ।
রাহাত তার দিকে একটা হাত বাড়িয়ে দিলো । লাজুকভাবে হাতটা ধরলো বৃষ্টি ।
রাহাত গাইতে লাগলো . . . .
“এ পথ যদি শেষ না হয় , তবে কেমন হতো তুমি বলো তো. . . ”
অঝোরে বৃষ্টি পরছে তখনো । আকাশের একপ্রান্তে একটুকরো রংধনু ফুটে উঠেছে । যেনো তাদেরকে দেখেই প্রকৃতি সাতরং এর মাধুরী মিশিয়ে হেসে উঠেছে।
অসম্ভব সুন্দর একটা গল্প, আমার অনেক ভালো লেগেছে যা বলে বোঝাতে পারবোনা। ধন্যবাদ আপু আপনাকে এতো সুন্দর একটা আর্টিকেল আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য।