-স্পর্শা তোর ইয়ান ভাইয়ার সাথে রিলেশন হইছে জানাস নাই কেন আমাদের?
হিমের এই প্রশ্নের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না স্পর্শা।আড়চোখ নিয়ে সে হিমকে বলে,,
-কি বললি?কার সাথে রিলেশন?
-কেন?সিনিয়র ইয়ান ভাইয়ার সাথে।তুই খুব লাকি রে স্পর্শা।!ভার্সিটির সব মেয়েদের ক্রাশ রামিম ইসলাম ইয়ান তোর বফ!
-তুই কি ভুল ভাল বকতেছিস?লোকটারে আমার দুই চোখে সহ্য হয় না!উনি নাকি হবে আমার বফ!
-তুই তো গিরগিটির থেকেও ফার্স্ট রঙ পাল্টাস।
-রঙ পাল্টাই মানে?কি বলতে চাইতেছিস?এখন লাল আছি পরে নীল হবো?
কথা বলার এক পর্যায়ে স্পর্শা খেয়াল করে এনা ওর দিকে তাকিয়ে মুচকী মুচকী হাসছে। নিশ্চয়ই এই মেয়ে কোনো কলকাঠি নেড়েছে! স্পর্শা তেড়ে যায় এনার দিকে।
-এই মেয়ে হাসিস কেন?
-মেরিড স্ট্যাটাস দিতি।রিলেশন তো বেমানান।
-কিসের মেরিড কিসের রিলেশন?
-ওয়েট!
এনা ফোন বের করে স্পর্শার ফেসবুক আইডিতে ঢুকে।ফোন স্পর্শার সামনে নিয়ে বলে,,
-দেখ!
ফোনে নিজের আইডি দেখে স্পর্শার চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায়।স্ক্রিনে স্পর্শা স্পষ্ট দেখতে পারছে "In a relationship with Ramim Islam Iyan" কিন্তু এইটা তো স্পর্শা দেয় নি।কালকে এসাইনমেন্ট করেই সে শুয়ে পড়ে।আর তাছাড়াও স্পর্শা ফেসবুকে খুব কম আছে।ইনস্ট্রাগ্রাম টুইটারেই স্পর্শা ঘোরাফেরা করে বেশি।
স্পর্শা থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে।হিম স্পর্শার সামনে তুড়ি বাজায়। স্পর্শার ধ্যান ভাঙে।হিম স্পর্শাকে বলে,,
-দোস্ত ট্রিট দে।তুই মিঙ্গেল হইছোস।
-উঠায় নেও খোদা!আমি এই স্ট্যাটাস দেই নাই।
-তো ভুতে দিছে তাই তো?
-ভুত না!মানুষেই দিছে।খবর আছে ওই মানুষের আজকে।
-কাহো না দোস্ত তুমহে উসছে পেয়ার হেয়
কাঁধ দিয়ে ধাক্কা দিয়ে স্পর্শাকে বলে।স্পর্শা এক রাশ বিরক্তি নিয়ে বলে,,
-বলছে তোমায়?তোরা সব গুলা পাগল হইছিস।পাবনা মেন্টাল হসপিটালে কয়েকদিন থেকে আয়।
"আমার নাম মিতা, চুলে বাঁধি ফিতা,কানে পড়ি দুল,ভালোবাসার ফুল"
-এই কে ছড়া কাটে রে!
স্পর্শা ফোনের রিংটোন শুনে কথাটা বলে উঠে হিম।এনা হাসতে হাসতে বলে,,
-কেউ না!এইটা ওইযে পেঁচীর ফোনের রিংটোন!
স্পর্শার ফোন তখনও বেজে যাচ্ছে।কিন্তু তার কল রিসিভ করার নাম নেই।হিম স্পর্শাকে বলে,,
-কিরে কল রিসিভ কর।
-করতাছি।বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম থুরি আসসালামু আলাইকুম
তাড়াফুরো আর রাগের মাথায় কল রিসিভ করতে গিয়ে স্পর্শা ভুলে সালামের জায়গায় বিসমিল্লাহ বলে ফেলে।তা দেখে হিম আর এনার হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা।
-ওই স্পর্শা এইগ্লা কি বলিস।তুই বিসমিল্লাহ বলে কল রিসিভ করিস নাকি?
ও পাশ থেকে বলে উঠে স্পর্শার বড় ভাই স্পর্শ। স্পর্শা জবাবে বলে,,
-মেজাজ গরম তাই তিল বলতে গিয়ে তাল বলে ফেলছি।আর তুমি সালামের জবাব দিছো?
-ওয়া আলাইকুম আস সালাম।শুনলাম তোরে নাকি কুকুরে কামড় দিছিলো?
-কে বলছে তোমায়?
-কে আবার ইয়ান।ইঞ্জেকশন নিতে গিয়ে যে তুই ইয়ানের চড় খেয়েছিস এইটাও জানি আমি।
-বেটা আমায় শান্তিতে থাকতে দিবে না।সব লিক করে প্লাস ভাইরাল করে।এত পেট পাতলা কেন?আমার প্রেজটিজের ফালুদা বানায় কি এত মজা পায় বেটায়!
নিজেই নিজেকে কথা গুলো বলতে থাকে স্পর্শা।কোনো জবাব না পেয়ে ওপাশ থেকে আবার স্পর্শ বলে,,
-কিরে আবার কুকুর কামড়াইলো নাকি?
-তোমায় কামড়াইছে।মেজাজ গরম আর ফোন দিবা না।
কথাটা বলেই স্পর্শা ফোন কেটে দেয়।স্পর্শা ফোন কাটার সাথে সাথেই হিম আর এনা দুই জনে একসাথে বলে উঠে,,,
-বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
-তোরা ভালো হবি না।
কথাটা বলেই স্পর্শা হনহন করে বেরিয়ে যায়।
-আমার প্রেজট্রিজের ফালুদা বানায় তুমি কি এমন মজা পাও?
বাসায় ঢুকতে না ঢুকতেই স্পর্শার এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয় ইয়ান।ঠান্ডা মাথায় ইয়ান বলে,,
-বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।কেন?কি হইছে?
-গুষ্টি সহ আমার পিছনে পড়ছে সবাই।
-ঝগড়া শুরু করার আগে বিসমিল্লাহ বললাম যাতে শয়তান ঝগড়ার মাঝখানে না আসতে পারে।
-রিলেশনশীপ স্ট্যাটাস দিছো কেন?
-মেরিড দিলে ভালো হইতো তাই না?সরি বাবু।একদম মাথায় ছিলো না বিষয়টা।তুমি কষ্ট করে দিয়ে নেও।
-ধ্যাত
কথাটা বলেই স্পর্শা হনহন করে ইয়ানের সামনে থেকে চলে যায়।ইয়ান স্পর্শাকে ক্ষেপাতে পেছন থেকে আবার বলে উঠে,,,
-বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
-বেটা বদ।
পাশের ঘর থেকে বালিশ ঢেল দেয় স্পর্শা ইয়ানের দিকে।ইয়ান খোপ করে বালিশটা ধরে নেয় আর বলে,,
-দিয়া দিলা কিন্তু একেবারে।পরে কিন্তু চাইলে পাবা না।
স্পর্শা আবার রুম থেকে হনহনিয়ে ইয়ানের কাছে আসে।হ্যাচকা টান দিয়ে বালিশটা নিয়ে যায় আর বলে,,
-না চেন ছে জিনে দে গি না চেন ছে মারণে দেগি।
-রাগ উঠলে মানুষ গান গায় জানতাম না।
-ছাগল আমি গান গাই নাই।
-তাহলে?
-আমি হিন্দিতে আমার মনের কথা বললাম!
-মানে?
-মানে আমায় শান্তিতে বাঁচতেও দিবা না আবার মরতেও দিবা না।
-ওমাগো বড়লোক্স!হিন্দিতে নিজের মনের কথা বলে!
চলবে,,,,