"-আকাশটা ধুসরে ধুসরময় হয়ে আছে।গুড়ুম গুড়ুম শব্দ ভেসে আসছে যেন দূর থেকে।রাতের নিকশ কালো অন্ধকারে চারিদিকটা ছেয়ে আছে।
রাস্তার ল্যাম্পোস্ট এর হালকা আলো আর নিকশ কালো অন্ধকার মিলে বারান্দায় অনেকখানি জায়গা জুড়ে আলো-আধারী পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
আর বিভিন্ন যানবাহনের গাড়ির হর্ন রাতের শহরের ব্যাস্ততাময় মুহুর্ত জানান দিয়ে যাচ্ছে।
বারান্দার একপাশে থাকা বেত এর ছোট রকিং চেয়ার টায় বিজ্ঞ ব্যাক্তির মত বসে আছে মিহি।মাঝে মাঝে আনমনে হয়ে পিচঢালা রাস্তার দিকে চেয়ে আছে এক নজরে।
কিছু একটা খুব অস্বস্তিবোধ করাচ্ছে তাকে।সাদাফ কে নিয়ে প্রচুর টেনশন হচ্ছে তার। তার কিছু হলো না তো?
সন্ধ্যা থেকেই কয়েকবার ফোন দেওয়া হয়েছে সাদাফ নামক অস্তিত্বকে।কোনো রেস্পন্স পায়নি।আবার বাইরের গুমোট আবহাওয়ার সাথে নিজের ভেতরকার অস্বস্তিটাও সন্ধ্যা থেকেই আবিষ্কার করেছে নিজের মধ্যে।
"এমন কেনো লাগছে? কোনো কারণ ছাড়াই কি অস্বস্তি লাগে নাকি? নাহ হয়ত পরিবেশ টাই মন খারাবির! ধুর মন খারাবির পরিবেশ হয় নাকি? সাদাফ ঠিকাছে তো? সাদাফ!সাদাফ!সাদাফ! এমন অস্বস্তি তো প্রতিদিনই হয়।কিন্তু আজ এই অস্বস্তির সাথে অস্থিরতাও মিশেছে প্রচুর পরিমানের অস্থিরতা।কিছু হারানোর পুর্বাভাস!! ধুরর "
মিহির এসব ভাবনার মাঝখানেই তার পাশে থাকা মুঠোফোন এর শব্দ তার কাছে ঝংকার তোলে।চকিতে বাস্তবে ফিরে আসে মিহি।খুব দ্রুততায় ফোন হাতে নিয়ে দেখে এক হাস্যোজ্জল মুখ ফোনস্ক্রিনে ভেসে উঠছে।দেরী নাহ করে ফোন রিসিভ করে মিহি।
-"কি হয়েছে তোমার?"
তার কথায় তার অস্থিরতা স্পষ্ট।হঠাৎ এভাবে কথাটা বলে মিহি চুপ হয়ে যায়।কেমন যেন ওপারের কথা শুনতে চাওয়ার অদম্য ইচ্ছে জেগে যায়।
ওপারের মানুষটা মিহির কন্ঠ শুনে অবাক হয়।
-"কিছুই হয়নি তো।ঠিক আছি আমি মিহিপাখি।"
ওপারের বলা এই ছোট্ট কথাটিতে যেন মিহির স্বস্তি হয়না।তবু যথাসম্ভব নিজেকে শান্ত রেখে মিহি ফোনালাপ সারে।
-"ওহ আচ্ছা। ঠিকাছে।খেয়েছো তুমি?"
-"না বাসায় ঢুকলাম মাত্র।
কিছু কি হয়েছে? টেনশন করছিলে?"
-"না কিছু হইনি। ফোন ধরছিলে না তাই।"
-" উফফ সরি সরি মিহিপাখি।আসলে ফোন সাইলেন্ট এ ছিলো আর বিজিও ছিলাম।খেয়াল করিনি। সরি."
-"হিহি,আচ্ছা সমস্যা নেই। যাও ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নাও।আমি অপেক্ষা করছি।"
-"আচ্ছা ঠিকাছে।আল্লাহ হাফেজ"
-"আল্লাহ হাফেজ"।
মিহি।মাদিহা ইসলাম মিহি।অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। আর তার ভালোবাসার মানুষ "সাদাফ" সে তার পড়াশোনা শেষ করে আপাতত ভবঘুরে হয়ে আছে।মাঝে মাঝে অবশ্য চাকরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু এটে উঠতে পারছেনা।
সাদাফ, মিহি দুজনেই মধ্যবিত্ত পরিবারের।তাই স্বপ্ন পূরনের দৃঢ় মনোভাব নিয়ে আগানোটা যথেষ্ট কঠিন।মধ্যবিত্ত দের সম্মান হারানোর ভয়টা থাকে একটু বেশী।তাই কিছু করার আগে ভাবতে হয়,অনেক ভাবতে হয়।চুড়ায় উঠার আগেই তাদের সব কিছু ভেবে চিন্তেই প্রথম কদম ফেলতে হয়। তাই অবস্থান এর দিক দিয়ে সবচেয়ে ধৈর্যশীলতার গুণ টা আয়ত্ব করে নিতে হয়।
সাদাফ এর ফোন রেখেই মিহি চোখ বুজে বিছানায় শুয়েছিলো।এর মাঝেই খাওয়ার টেবিলে ডাক পড়ে তার। "আসছিই" বলে চেচিয়ে শোয়া থেকে উঠে পড়ে মিহি।গায়ে ওড়না জড়িয়ে ডাইনিং রুমে যায় সে।ডাইনিং এ তার চাচ্চু,চাচী আম্মু, আর চাচাত বোন একজন বসে তার অপেক্ষা করছে।সে সবার দিকে সৌজন্যতামূলক হাসি ছুড়ে দিয়ে বসে পড়ে।
খেতে খেতে তার চাচ্চু বলে,"মিহি তোর পড়াশোনা কেমন চলছে রে?"
-"এইত আলহামদুলিল্লাহ চাচ্চু, ভালো যাচ্ছে।"
-"আচ্ছা!নামাজ পড়ে নিয়েছিস?"
-"হুম চাচ্চু।"
-"তোর নামে অনেক কিছুই কানে আসছে মিহি।কিন্তু প্রত্যেকটা গার্ডিয়ানেরই একটা সুপ্ত বিশ্বাস থাকে।তা আমারও আছে তোর প্রতি।তাই তোকে কিছু বলছিনা।কিন্তু হ্যাঁ অতীত ভুলে যাস নাহ।তোর খারাপ লাগতেই আমারে আমার কথায়।কিন্তু আমি যা বলি তা একবাক্যেই।
মুহুর্তেই মিহির চোখ ছলছলিয়ে উঠে।মিহির চোখের জল আটকানোর চেষ্টা যেন হাড়ভেঙে পড়ে।অতীত! বাবা-মা শব্দ দুটো খুবই বেদনার খুবই।আবারো অতীত স্মৃতি হাতড়ানো যে কতটা কষ্টের বর্ণনাযোগ্য নাহ।
চুপচাপ খাওয়া শেষ করে উঠে বসে মিহি।আর চাচা কে উদ্দেশ্য করে বলে,
-"আমি বিশ্বাস ভাঙব নাহ চাচ্চু।"
-"তুমি ভেবোনা যে আমরা তোমাকে নিজের মেয়ে থেকে আলাদাভাবে দেখছি বা আলাদাভাবে ট্রিট করছি,তোমরা দুইজনেই সমান।তোমাদের স্বাধীনতাও দিয়েছি।কিন্তু লাগামহীনতা পছন্দ নাহ।আর আমি বিশ্বাসও করি তোমরা আমাকে লাগামহীন ব্যাবহার উপহার দিবেনা"
এতক্ষন এসব কথা চুপচাপ শুনে যাচ্ছিলো মিহির চাচাত বোন মেঘা।আর টুপটুপ মিহির দিকে তাকাচ্ছিল সে।আর ভাবছে তার বাবা কেনো মিহি কে অতীতের বিষাক্ত কথা বলছে।মিহি আপু আজ রাতে আবার এসব ভেবে কাঁদবে।আর মিহি আপুর কি কথাই বা আব্বু শুনেছে??
#চলবে
কান্না লুকিয়ে যে একবার হাসতে শিখে গেছে,
তুমি তাকে আর কাঁদাতে পারবে না ।